Logo
Logo
×

লাইফ স্টাইল

মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তির উপায়

Icon

ইশরাত হাসান

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০১৮, ১১:২৩ এএম

মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তির উপায়

মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তির উপায়, সংগৃহীত

আপনি যতই নির্দোষ হন না কোন কেউ আপনার বিরুদ্ধে শত্রুতা করে মিথ্যা মামলা করলে, প্রাথমিক অবস্থায় আপনি বেশ মানসিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবেন এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে সবাই যে ভুলটা সবচেয়ে বেশি করে তা হলো পালিয়ে যাওয়া। মিথ্যা মামলার নিরান্নব্বই ভাগই ফৌজদারি মামলা। এজন্য বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

 

আইন হলো ভালো নাগরিকদের আত্মরক্ষার জন্য। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ আইনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করতে অভ্যস্ত। আইন যেখানে মানুষকে অপরাধের হাত থেকে রক্ষা করার কথা, সেখানে আইনকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে হয়রানি করে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য।

অনেক সময় দেখা যায়, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রভাবশালী কিছু খারাপ লোক নানা রকম মিথ্যা মামলা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হল জমি নিয়ে মামলা। আইন অনুযায়ী, থানায় মামলা হওয়ার আগেই ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করেন তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু বাস্তবে বেশিভারগ ক্ষেত্রেই এটি মানা হয় না।

এখন প্রশ্ন হলোকীভাবে মিথ্যা মামলার অভিযোগ থেকে রেহাই পাবেন? মানসিকভাবে যতটা সম্ভব শান্ত থাকুন। মনে রাখতে হবে,  আইনের চোখে আপনার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আপনি নিরপরাধ।

এজাহারের কপি

যদি আপনার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়, তাহলে এজাহারের কপিটি সংগ্রহের চেষ্টা করুন। আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করুন। নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবেন।

চার্জশিট বা অভিযোগপত্র

চার্জশিট বা অভিযোগপত্র হয়ে গেলে, নিম্ন আদালতে জামিন চাইতে হবে। জামিন না হলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হবে। আপনি মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করতে পারেন। অব্যাহতির আবেদন নাকচ হলে উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন।

জামিনের আবেদন

যদি এমন হয় যে, আপনি জানতে পারলেন না আর হঠাৎ পুলিশ এসে আপনাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গেল, তাহলে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে। তখন আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করতে হবে।

আত্মসমর্পণ

যদি থানায় মামলা না হয়ে আদালতে মামলা (সিআর মামলা) হয়, তাহলে আদালত সমন দিতে পারেন কিংবা গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে হাইকোর্ট বিভাগে আগাম জামিন চাইতে পারেন।

পাল্টা মামলা দায়ের

দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে মিথ্যা অভিযোগকারী বা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আপনি পাল্টা মামলা দায়ের করতে পারেন। এছাড়া ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন। মিথ্যা নালিশ আনয়নকারী সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ করা যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ

কোনো পুলিশ কর্মকর্তা আমলযোগ্য নয় এ রকম কোনো মামলায় মিথ্যা প্রতিবেদন দিলে তার বিরুদ্ধেও এ ধারা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ প্রদান করা যায়।

ইদানিং নারী ও শিশু নির্যাতনের মিথ্যা মামলা অনেক বেড়ে গেছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে ভুয়া ও মিথ্যা মামলা দায়েরের ফলে সামাজিকভাবে অপদস্থ হওয়া ছাড়াও মামলার খরচ জোগাতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অনেকেই।

নারী ও শিশু নির্যাতনের মিথ্যা মামলা বা অভিযোগের শিকার হলে আইনের মধ্যে থেকেই আদালতে লিখিত পিটিশন দায়ের করার মধ্য দিয়ে প্রতিকার পেতে পারেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারায় মিথ্যা মামলা বা অভিযোগের দায়ে অপরাধীর সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের  বিধান রাখা হয়েছে।

আইন যথার্থভাবে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হোক, কোনো নিরপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার না হোক সেটাই সবার প্রত্যাশা।

আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

[প্রিয় পাঠক, আপনিও দৈনিক যুগান্তর অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন-jugantorlifestyle@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]

মিথ্যা মামলা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম