
প্রিন্ট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৪ এএম
বিরাজনীতিকরণই কি তাহলে মূল লক্ষ্য?

জিয়া আহমদ
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
আরও পড়ুন
রমজানের আগে থেকেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিটা গোলমেলে মনে হচ্ছিল, ঈদের পর তা আরও অস্বচ্ছ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাই গণ-অভুত্থানের পর গত আট মাসে ড. ইউনূসের সরকার মোটামুটি সব গুছিয়ে এনেছে। ১৬ বছরের মধ্যে এবারের রমজানেই দেশের জনগণ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস অতিরিক্ত দাম ছাড়াই কিনতে পেরেছে। তাছাড়া দেশের সব সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে এবার মাস শেষ হওয়ার আগেই বেতন-বোনাস হয়েছে। ফলে ঈদটা যথার্থেই উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল মানুষের কাছে। এমনকি যে গার্মেন্ট শ্রমিকরা প্রতি ঈদের আগে বেতন-বোনাসের দাবি নিয়ে সড়ক অবরোধ করতে বাধ্য হয়, এবার সরকারের উদ্যোগে সে সমস্যারও সমাধান হয়ে গিয়েছিল। ফলে সাধারণ মানুষের এবারের ঈদ নিয়ে খুব বেশি আফসোস করার কিছু ছিল না।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি চীন সফর করেন। অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সফরে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি ও ৭টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। আশু ফলাফল বিবেচনায় এটি হয়তো খুব সামান্য, কিন্তু এ সফরের মাধ্যমেই বাংলাদেশ ১৭ বছর ধরে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখা সম্প্রসারণবাদী শক্তির বাঁধন ছিন্ন করে নিজ স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করেছে, যার সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়ায় এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক সমীকরণ সম্পূর্ণ বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
ড. ইউনূস এরপর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনের সাইডলাইনে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকও করেন। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এটাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম বৈঠক। এর আগে বাংলাদেশের তরফ থেকে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের জন্য অনুরোধ করা হলেও ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সাড়া না পাওয়ায় এর আগে দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠক অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। এবারও বৈঠক অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় থাকলেও কথিত আছে, কোনো এক বড় শক্তির প্রভাবেই এ বৈঠকটি অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়েছে। সে যাই হোক, এ বৈঠকে অংশ নিয়ে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের গত গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়ে তাদের যে অস্বীকারের মানসিকতা, তা থেকে বের হয়ে এলেন। এ পর্যন্ত সবই প্রত্যাশিত ও সঠিক পথে চলেছে। গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও ড. ইউনূসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০২৫ বা ২০২৬-এর প্রথমার্ধেই একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নবনির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে অন্তর্বর্তী সরকার বিদায় নিবে। দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রত্যাশাও সে রকমই। গোলযোগটা সম্ভবত এ জায়গাটিতেই।
উন্নত দেশগুলোতে সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনগণের ভোট যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি দেশের শক্তিশালী পক্ষগুলোরও সেখানে অংশগ্রহণ থাকে, বিশেষত বড় ব্যবসায়ীদের। আমেরিকার মতো দেশে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রকাশ্য চাঁদা দেওয়া, সংবাদমাধ্যম ব্যবহার করে দীর্ঘমেয়াদে কোনো দলের পক্ষে প্রচারণা-সবই আইনগতভাবে শুদ্ধ। তৃতীয় বিশ্বের কোনো কোনো দেশে সামরিক বাহিনীও সরকারের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকে। বিদ্যমান বাস্তবতায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় সরকার পরিবর্তনের জন্য প্রকাশ্য পথ হিসাবে একমাত্র গণতান্ত্রিকভাবে অনুষ্ঠিত ‘পপুলার ভোট’কেই আইনসিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এভাবে সরকার পরিবর্তন করা হলে তাতে দেশের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য দিক দিয়ে শক্তিশালী (কিন্তু সংখ্যায় অল্প) মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন প্রায়ই ঘটে না। স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালে সমাজের এ ক্ষমতাশালী অংশ (বিশ্ব মোড়লের সম্মতিতে) সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে জনপ্রিয় সরকারগুলোকে অপসারণ করত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ বদলে যাওয়ার কারণে এখন সামরিক শাসনকে আর বৈধতা দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে উপায় কী?
২০১৫-১৬ সালের দিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকালে বিশ্ব একটি নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়, সেটা হলো ‘ডিপ স্টেট’। ২০১৫-১৬তে প্রথম শোনা গেলেও আমেরিকায় এই ‘ডিপ স্টেটের’ অস্তিত্ব কয়েক দশক ধরেই বিদ্যমান। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, ‘ডিপ স্টেট’ হলো অবৈধ কিন্তু ক্ষমতাশালী এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গোপন নেটওয়ার্ক, যারা একটি দেশের সরকারে থেকে আলাদাভাবে কাজ করে তাদের নিজস্ব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে। ‘ডিপ স্টেট’ সাধারণত গোপনীয় ও ষড়যন্ত্রেরও ইঙ্গিত বহন করে। এছাড়াও ‘ডিপ স্টেট’ শব্দ দিয়ে সরকার ও জনগণের ওপর সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনীসহ আমলাতন্ত্রের অশুভ প্রভাবকেও বোঝানো হয়ে থাকে। ঐতিহাসিকভাবেই দেশের মানুষের মনে বিভিন্ন গোপন শত্রু, গোপন গ্রুপ বা সংগঠন এবং সিভিল ও মিলিটারি আমলাতন্ত্রের গোপন গ্রুপ নিয়ে সবসময়েই শঙ্কা থাকে, যারা নির্বাচিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। এই গোপন গ্রুপগুলোই বর্তমানে ‘ডিপ স্টেট’ হিসাবে চিহ্নিত হয়।
বাংলাদেশেও ‘ডিপ স্টেটের’ ধারণা এবং এর কার্যক্রম খুব নতুন নয়। ২০০৫ সালের দিকে দেশের ‘সুশীল সমাজ’কে সামনে রেখে তাদের কার্যক্রম প্রথম প্রকাশিত হয়। কিন্তু ২০০০ সালের আগে থেকেই তারা বিএনপি ও এর শীর্ষ নেতৃত্বকে হেয়প্রতিপন্ন করার মিশন নিয়ে মাঠে নামে। ফলে ৫ বছরের মধ্যেই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব সম্বন্ধে তারা দেশে-বিদেশে একটি মিথ্যা ও অন্যায় ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়, যার মাশুল বিএনপি নেতৃত্বকে আজও দিতে হচ্ছে। সে যাই হোক, ২০০৫-২০০৬ সালে শক্তিশালী এ গ্রুপ বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, গোলটেবিল বৈঠক ইত্যাদির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো দেশের ক্ষমতা কাঠামোতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। এবং পরবর্তীকালে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে ২০০৭ সালে একটি ছোটখাটো অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়, যা ১/১১ নামে সমধিক পরিচিত। সমস্যা হলো, ১/১১ সময়কালে সংগঠকদের মধ্যে ব্যবসায়ীরা অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ফলে গঠিত সরকার দেশের ব্যবসায়ীদের কায়েমি স্বার্থে আঘাত হানা শুরু করে এবং খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা হারায়। তাছাড়া খুব স্বল্প সময়ে অনেক ‘সংস্কারমূলক’ কাজে হাত দেওয়ায় তারা কোনো কাজই সম্পূর্ণ করতে না পেরে জনগণের আন্দোলনের মুখে একটি নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।
২০০৮ সালের নীলনকশার নির্বাচনের পর বাংলাদেশের ‘ডিপ স্টেটের’ ওপরও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিপত্য সূচিত হয় এবং তারা ওই স্বৈরাচারী সরকারের আমলে আর মাথা তুলে দাবি জানাতে সক্ষম হয়নি। ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভুত্থানের পর এই ‘ডিপ স্টেট’ আবার তার কার্যকলাপ শুরু করে। বাংলাদেশি ‘ডিপ স্টেট’ গত পনেরো-ষোলো বছরে যথেষ্ট পরিমাণে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীসহ আরও বিভিন্ন গোষ্ঠী যুক্ত হয়েছে। ফলে বর্তমানে তারা আর্থিক দিক দিয়ে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী এবং বর্তমানে তাদের অধীনে অনেক মিডিয়ার মালিকানা থাকায় তারা মিডিয়াকেও নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা অর্জন করেছে (বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়া)। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি বা অন্য যে কোনো দল যখনই নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলছে, তখনই তারা একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণের শিকার হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে নেতৃবৃন্দের ব্যক্তিগত চরিত্রহননের কাজটাও শুরু করে দিয়েছে। শুধু বিএনপি বা জামায়াত নয়, এই ‘ডিপ স্টেটের’ আক্রমণের শিকার হচ্ছে নবগঠিত এনসিপিও। ‘ডিপ স্টেট’ বিএনপি-জামায়াতকে দেশের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক হিসাবে ইতোমধ্যেই প্রায় প্রতিষ্ঠিত করে ছেড়েছে, এখন এনসিপির নেতৃবৃন্দের একেকজনকে টার্গেট করে তাদেরকেও চাঁদাবাজ, তদবিরবাজ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে দিচ্ছে।
একই সঙ্গে তারা ড. ইউনূসের মতামতের তোয়াক্কা না করেই তাকে আগামী ৩/৫ বছর বা আমৃত্যু সরকারপ্রধান হিসাবে রাখার জন্য মিডিয়া ক্যাম্পেইন শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু ড. ইউনূস তো সরকারপ্রধান হিসাবে থাকার জন্য লালায়িত নন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ৬৪ বছর সম্মান অর্জনের জন্য পরিশ্রম করেছেন; এখন শেষ বয়সে তিনি বদনাম হতে পারে এমন কোনো কাজ করবেন না। তাছাড়া তিনি গত ৮ মাসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া একাধিক ভাষণে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২৫-এর শেষ বা ২০২৬-এর জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদের নির্বাচন হবে, সংস্কারের পরিধির ওপর নির্ভর করে। এখন পর্যন্ত তার সে বক্তব্যে সংশয় সৃষ্টি হয় এমন কোনো তথ্য চোখে পড়েনি। এমনকি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ধরে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোকে অযোগ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্রহননের যে ‘সিন্ডিকেটেড’ প্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে, তার উদ্দেশ্যটা কী?
এর এক বা একাধিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রথমত, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার একটি অপচেষ্টা। এ কারণে গত ৮ মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আগেই ভালো ছিলাম’ টাইপের বক্তব্যকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা লক্ষ করা গেছে। গত সাড়ে পনেরো বছরে পতিত আওয়ামী লীগ অবৈধ পথে দুর্নীতির মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্ত সংগ্রহ ও সঞ্চয় করেছে, তাতে এ ধারণাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলো ও তার নেতৃবৃন্দকে দুর্বল করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের শর্ত হিসাবে ওইসব দলকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বড় কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে বা ‘ডিল’ করতে বাধ্য করা। তৃতীয়ত, দেশে রাজনৈতিক সরকারের পরিবর্তে একটি অনির্বাচিত হাইব্রিড সরকার প্রতিষ্ঠা করা, যার অংশ হতে পারে বর্তমান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের একাংশ, সাবেক আমলা, সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ীরা। সেই সরকারের উদ্দেশ্য হতে পারে উন্নয়ন ও জাতীয়তাবাদী ধারণাকে সামনে এনে ও তার চর্চা করে যতদিন সম্ভব ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখা। তারা মনে করছে, ড. ইউনূসের বিশাল জনপ্রিয়তা ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণে তাকে প্রধান করে সরকার গঠন করা হলে সেই সরকার ১/১১ সরকারের চেয়ে অনেক ভালো করবে। এটা অনেকটা সেই ‘মাইনাস-২’-এর মাধ্যমে বিরাজনীতিকরণের ধারণার অনুরূপ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তৃতীয় সম্ভাবনাটার দিকেই পাল্লা ভারী।
উদ্দেশ্য যাই হোক, সেটা যে এই দেশ ও দেশের গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গণতন্ত্রের অনেক ত্রুটি আছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার গঠন ও পরিচালনার জন্য যেসব পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে, তাতে গণতন্ত্রের চেয়ে ভালো কোনো পদ্ধতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে কারণে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে দেশ দূরে সরে যায় এ ধরনের যে কোনো কার্যক্রমের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
গত ৯ মার্চ ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলনে আগত বিনিয়োগকারীদের তরফ থেকে প্রশ্ন ওঠে, দেশে স্থিতিশীল সরকার না থাকায় তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তা টেকসই করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করা হবে? এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে একটি দেশপ্রেমিক ও স্থিতিশীল সরকারের কোনো বিকল্প নেই। আর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক নির্বাচনেরও কোনো বিকল্প নেই। ড. ইউনূস আমাদের মাথার মণি; তাকে যে কোনো মূল্যে দেশের মঙ্গলের জন্য আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু ‘ডিপ স্টেট’ বা অন্য যে শক্তিগুলো যেভাবে বা যে প্রক্রিয়ায় তাকে রাখতে চাইছে, সেটা সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড় কথা, এ ধরনের কোনো বিতর্কিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনিও ক্ষমতায় থাকতে চাইবেন না। তাছাড়া দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীও কোনো ধরনের বিরাজনীতিকরণকে পছন্দ করে না, অন্তত ১/১১ সরকারের সময়কালের অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। ফলে এ ধরনের কোনো চেষ্টা নেওয়া হলে তা হবে আত্মঘাতী। বর্তমানে বাংলাদেশ পতিত স্বৈরাচারের পক্ষ ও গণতন্ত্রকামী জনগণ-এ দুই ভাগে বিভক্ত। স্বৈরাচারের পতন হলেও তাদের রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও প্রতিবেশী দেশের সর্বাত্মক সমর্থন। সে কারণে দেশে আরও বিভেদ তৈরি হওয়ার আগেই একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে মাথায় নেওয়াই হবে বিচক্ষণতার পরিচায়ক।
জিয়া আহমদ : সাবেক সরকারি কর্মচারী ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক