
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০১ এএম
আশঙ্কা ও উদ্বেগের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

জিয়া আহমদ
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গত জুলাই-আগস্টের সফল ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের সাত মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর যখন দেশ মোটামুটি একটা স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেছে, তখন একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তাকে আর কেউ এড়িয়ে যেতে পারছেন না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত কয়েক মাসে বারবার এ নির্বাচনের বিষয়ে মুখ খুলেছেন এবং মোটামুটিভাবে একটা টাইমলাইনও দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রাক-নির্বাচনি কিছু সংস্কার সম্পন্ন করে আগামী ডিসেম্বর ২০২৫-২০২৬-এর প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হবে। তার মতে স্বল্প সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মতামত দিলে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন হবে। আর তারা যদি আরও বেশি কিছু সংস্কার চান, তাহলে নির্বাচন ২০২৬-এর প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো মোটামুটিভাবে এ প্রস্তাবকে গ্রহণ করেছে বলেই প্রতীয়মান হয়।
কিন্তু নবগঠিত রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র শীর্ষ নেতৃত্ব এখনো এ বিষয়টা মানতে চাইছেন না। জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করার এ প্রচেষ্টা তাদের তরফ থেকে কিন্তু নতুন না। তাদের নতুন দল গঠনের অনেক আগে থেকেই, যখন তারা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সদস্য হিসাবে সক্রিয় ছিলেন এবং পরবর্তীকালে যখন তারা ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ নামে আরেকটি সংগঠন তৈরি করে সেই সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য দিয়েছেন, তখনো তারা নির্বাচন বিলম্বিত করার লক্ষ্যে নানা বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের এ নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাওয়ার কারণটা কী?
৫ মার্চ ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির’ মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে দেবেন না। এর পরপরই ৬ মার্চ, ২০২৫ তারিখে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম রয়টার্সের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে। এর আগে তাদের বক্তব্য ছিল সংস্কার শেষ না করে এদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। বস্তুত তারা যখন যে দাবিই তুলছেন, তা মানা না হলে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ হতে দেবেন না বলে শর্তজুড়ে দিচ্ছেন। এতে মনে হওয়া অস্বাভাবিক না যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান না করাটাই মূল দাবি; আর উত্থাপিত দাবিগুলো মূলত দৃষ্টিকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কৌশল।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই যখন বিএনপি অবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তুলেছিল, তখন থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এ দাবিকে নস্যাৎ করে দেন। বস্তুত দেশের জনগণও সে সময়ে নির্বাচনের দাবিকে সমর্থন করেনি। দেশের জনগণ নির্বাচন ও রাজনীতির ক্ষেত্রে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রত্যাশা করছিল, যাতে দেশে ভবিষ্যতে কোনো স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় আসতে না পারে বা কোনো নির্বাচিত সরকারও যাতে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। বিএনপি দ্রুতই জনগণের এ প্রত্যাশা অনুধাবন করে এবং গণদাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষণা দেন, তার দল অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার জন্য যৌক্তিক সময় দেবে। দেশের জনগণ সে ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের প্রথিতযশা ও বিশিষ্ট নাগরিকদের আহ্বায়ক হিসাবে নিযুক্তি দিয়ে প্রথমে ৬টি ও পরে আরও ৯টি মোট ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও আইনগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য গঠিত সংস্কার কমিশনগুলো গত জানুয়ারিতেই সরকারের কাছে তাদের সুপারিশ সংবলিত রিপোর্ট দাখিল করেছে, যা এখন ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে’ পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার নেতৃত্বে গঠিত ‘ঐকমত্য কমিশন’ দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সঙ্গে ৬টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোসহ সব সুপারিশ নিয়ে আলোচনা শেষে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষর করবে। এই ‘জুলাই সনদ’ হবে দেশের সংস্কারের মূল ভিত্তি। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সংস্কারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেবে, সেগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃকই অবিলম্বে বাস্তবায়িত হবে। অবশিষ্টগুলো পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়িত করবে। চমৎকার সিদ্ধান্ত!
কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সরকার গঠিত হলে সে সরকার দেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ নানা গণমুখী কাজ শুরু করলে বর্তমানে যারা পতিত স্বৈরাচারের ফেলে যাওয়া স্থানে দখল বাণিজ্য, বদলি-পদায়ন বাণিজ্য ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত আছে, তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে নানা নাশকতামূলক কাজ শুরু করে দিয়েছে। এসব কাজে তারা নানা ইসলামি ও প্রগতিশীলতার নতুন নতুন ব্যানার তৈরি করে পরিকল্পিতভাবে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নাজুক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এবং এদের সঙ্গে অবধারিতভাবে (প্রকাশ্যে বা আড়াল থেকে) মদদ জুগিয়ে যাচ্ছে পতিত আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। তাদের মূল পরিকল্পনা হলো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, যাতে দেশের সরকারের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। সেরকম অবস্থায় তাদের পরিকল্পনা দেশের বিদ্যমান ‘জনগণের সরকার’কে বিদায় দিয়ে ‘সংবিধান’বহির্ভূত এবং গণআকাঙ্ক্ষার বিপরীতে একটি সরকারকে ক্ষমতায় এনে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ইচ্ছা/পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। যে ভারত গত পনেরো বছর বাংলাদেশের নির্বাচনকে এদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে আখ্যায়িত করে গোপনে ও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সব রকমের চেষ্টা করেছে, তারা এখন বিদেশের নানা ফোরামে বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে নানা পরামর্শ দিচ্ছে এবং মন্তব্য করছে। তারা এখন চায় বাংলাদেশে একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ নির্বাচন, যাতে দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার রাস্তাটা উন্মুক্ত হয়। অথচ এ ভারতই গত বাংলাদেশের বিগত ৩টা নির্বাচনের সময় সব দলের অংশগ্রহণে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের বিষয়ে শুধু যে নিশ্চুপ ছিল, তা নয়; তারা আওয়ামী সরকারকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে গেছে ওই অবৈধ ও বানোয়াট নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠানে। বস্তুত ভারত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রাখার বিনিময়ে গত পনেরো বছরে বাংলাদেশের কাছ থেকে যে পরিমাণ অবৈধ সুযোগ-সুবিধা পেয়ে এসেছে, তা এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা উন্মত্তের মতো আচরণ করছে। তাই তারা কয়েকদিন পরপরই নতুন নতুন ইস্যু নিয়ে অপপ্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পতিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অবৈধ উপায়ে অর্জিত বিপুল ধনসম্পদ। এ আওয়ামী লুটেরা আবার তাদের আগের লুটপাটের রাজত্বে ফিরে যাওয়ার অলীক বাসনায় এ অরাজক কর্মকাণ্ডে তাদের সঞ্চিত বিপুল অর্থ থেকে বিনিয়োগ করছে।
ভারতের স্বার্থে ভারত এটা চাইছে, কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের একটা অংশ বুঝে বা না বুঝে তাদের ছক অনুযায়ী কাজ করছে কেন? সমস্যা হলো, ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের কাছে বৃহত্তর দেশীয় স্বার্থ বারবার পরাজিত হয়েছে এই দেশে। গত পনেরো বছরে দেশের সবচেয়ে নিপীড়িত ও নির্যাতিত বিএনপি ও জামায়াতের একটা ক্ষুদ্র অংশের নেতাকর্মীরা পতিত আওয়ামী লীগের ফেলে যাওয়া অঞ্চলে চাঁদাবাজি ও দখল বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাদেরকে কোনো ছাড় না দেওয়ায় তাদের চাঁদাবাজি কমে এসেছে। অন্যদিকে নবগঠিত এনসিপির নেতাকর্মীরা বদলি/পদায়ন বাণিজ্যে এককভাবে সক্রিয় থাকার পর সম্প্রতি দখল, চাঁদাবাজিসহ আরও নানা দুষ্কর্মে জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের বেশ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। নবীন দলের নেতৃত্ব এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তারা আশু আরও কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি তাদের আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে।
নবগঠিত এনসিপির নেতাদের মনে একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাদের জয়লাভের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ বিষয়ে যদিও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে আগামী নির্বাচনে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হবেন। একইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী যদি নাও হন, তাহলেও দেশের রাজনীতিতে তারা ইতোমধ্যেই একটা ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছেন। খুবই ইতিবাচক কথা। বস্তুত বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যদিও নবগঠিত কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে সেরকম বিজয়ের ইতিহাস নেই, তবুও ভালো ফলাফলের নজির তো আছেই। সেক্ষেত্রে দেশের জনগণের ওপর আস্থা রাখতে হবে। প্রথমবার না হলেও দ্বিতীয়বারে তারা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতেই পারেন। আর নির্বাচন পেছালেই যে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসবে, সে নিশ্চয়তাই বা কোথায়?
আরেকটি গ্রুপ বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে খুবই সক্রিয়, যারা চাইছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার আগামী ৩-৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পুনর্গঠন করুক। এ দলের যুক্তিও ধোপে টেকে না এ কারণে যে, প্রফেসর ইউনূসের সর্বাত্মক সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত সাত মাসে বড় কোনো সংস্কার কাজ করতে সক্ষম হয়নি। তাছাড়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন ৮৪-ঊর্ধ্ব বয়সে রয়েছেন। এক্ষণে দীর্ঘদিন রাষ্ট্র পরিচালনায় তার আগ্রহ বা সক্ষমতা আছে, এমনটা মনে করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সাত মাস সময়কালে যথেষ্ট সাফল্য আছে। এ রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বাড়েনি। ফেব্রুয়ারি মাসে মুদ্রাস্ফীতি গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। দেশের আর্থিক খাত শক্তিশালী হচ্ছে। কিন্তু সংস্কারের ক্ষেত্রে সাফল্য ধরা দেয়নি। এ সরকার এখনো আমলাতন্ত্রকে সম্পূর্ণ স্বৈরাচারমুক্ত করতে সমর্থ হয়নি। প্রশাসনের গত পনেরো বছরের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বঞ্চনা নিরসনের জন্য সরকার পদক্ষেপ নিলেও কার্যত তা কায়েমি স্বার্থবাদী আমলাদের নিজেদের ব্যক্তিগত ও তাদের অনুগ্রহভাজনদের পুরস্কৃত করার কর্মকাণ্ডে পর্যবসিত হয়েছে। এখনো শতাধিক বঞ্চিত-নির্যাতিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজেদের শার্টের আস্তিনে চোখের পানি মুছতে হচ্ছে। দেশে শত শত যোগ্য কর্মকর্তা বসে থাকলেও অযোগ্য, অপদার্থ ও স্বৈরাচারী ভাবধারার আমলাদের সিন্ডিকেট সরকারের সব ভালো পদক্ষেপগুলোকে বিলম্বিত ও নাকচ করে দিচ্ছে। গত ২০০৯ সালে দেশে পুলিশ বাহিনীর সদস্য ছিল এক লাখ ২৫ হাজারের মতো, যা ২০২৪ সালে দুই লাখে দাঁড়িয়েছিল। ধরে নেওয়া যাক এরই মধ্যে এক লাখ পুলিশ সদস্য আওয়ামী অনুগত, তাহলেও অবশিষ্ট এক লাখ পুলিশ সদস্য দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে যথেষ্ট হওয়ার কথা। তারপরও তারা কেন ব্যর্থ হচ্ছেন? এর অন্যতম মূল কারণ হলো বাইরের চাপ। পুলিশ কোনো আসামি ধরলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা থানায় ছুটে যাচ্ছেন আসামিদের ছাড়িয়ে আনতে। আর ‘বৈষম্যবিরোধী’ কেউ যুক্ত থাকলে পুলিশের পক্ষে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনো গত্যন্তর থাকে না। দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো, প্রশাসনের ও পুলিশ বিভাগের আমলাতন্ত্রের এ বিষয়ে অনীহা। তৃতীয় কারণ, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রী নেতারা অর্থের বিনিময়ে পেশাদার সন্ত্রাসীদের নিয়োগ করেছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর লক্ষ্যে। এসব কারণে নির্বাচন যতই পেছানো হোক না কেন, বিদ্যমান শাসনব্যবস্থায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতির সম্ভাবনা আসলে ক্ষীণ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর; কারণ জনসমর্থন ও নির্বাচনের মাধ্যমে প্রদত্ত ‘ম্যান্ডেটের’ কারণে তারা প্রকৃত অর্থেই ক্ষমতাশালী হবেন এবং তারা চাইলে যে কোনো খাতেই উন্নতি অবধারিত।
বাংলাদেশে এ মুহূর্তে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা খুবই প্রয়োজন। একটি নিরপেক্ষ সরকার হিসাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার সে কাজটাই করতে চাচ্ছে। এতে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমস্যা হলেও দেশের সামগ্রিক স্বার্থে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সমর্থন ও তার উদ্যোগকে স্বাগত জানানো উচিত। এক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় হলে সমগ্র জাতিকে দীর্ঘদিন ধরে অনেক মূল্য দিতে হতে পারে, সে কথা ভুললে চলবে না।
জিয়া আহমদ, এনডিসি : সাবেক সরকারি কর্মচারী, নিরাপত্তা বিশ্লেষক