
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
গাজায় গণহত্যা শুধু নিন্দা প্রকাশে থামবে না

বেলেন ফার্নান্দেজ
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67db4a6d5d54f.png)
হামাসের সঙ্গে ইসরাইল যে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করে আবারও পূর্ণমাত্রার গণহত্যা শুরুর সিদ্ধান্ত নেবে, তা শুধু সময়ের ব্যাপার ছিল। বাস্তবেও দেখা গেল, এক রাতের মধ্যে ইসরাইলি সেনাবাহিনী একের পর এক আক্রমণ করে ৪ শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল, এ হামলায় আহত হলো আরও অর্ধসহস্রাধিক ফিলিস্তিনি। এই সংখ্যা অবশ্যই বাড়বে, কারণ ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে আরও মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে।
কিন্তু এ বর্বরতার শেষ কোথায়? ইসরাইলের এ বর্বর আচরণের কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ব এ হত্যাযজ্ঞ বন্ধে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যেসব বিবৃতি দেওয়া হয়ে থাকে বা নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, তা কোনো কাজেই আসে না। উদাহরণস্বরূপ, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার ভলকার তুর্ক ঘোষণা করেছেন যে, ‘ইসরাইলের এ আক্রমণ অঞ্চলটিতে আরও দুর্ভাগ্য যোগ করবে এবং শুধু ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর ওপর ইসরাইলের সামরিক শক্তির ব্যবহার তাদের ওপর আরও কষ্টের পাহাড় চাপাবে, যারা ইতোমধ্যে বিপর্যয়কর অবস্থায় রয়েছে।’
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোরও প্রায় একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের এই হামলা ‘একটি মহান ট্র্যাজেডি’ এবং সেখানকার মানুষ, যাদের অনেকেই ধ্বংসস্তূপের ওপর তাঁবু খাটিয়ে বসবাস করছে, তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলবে। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাসপার ভেল্ডক্যাম্পও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি এক পোস্টে মন্তব্য করেছেন এই বলে যে, ‘এ অঞ্চলে জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো উচিত এবং সমস্ত শত্রুতা স্থায়ীভাবে শেষ হওয়া উচিত।’ সুইজারল্যান্ডও ‘যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতিতে ফিরে যাওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র গাজায় নতুন ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানানোর প্রয়োজনবোধ করেনি। যদিও অনেকের মতে, প্রতিক্রিয়া না জানানোর এ বিষয়টি অপ্রত্যাশিত নয়। যেহেতু এই দেশটি শুরু থেকেই গণহত্যায় সহায়তা করে আসছে, অর্থাৎ প্রথমে জো বাইডেন প্রশাসনের অধীনে ও এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে, কাজেই তারা চুপচাপ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে, ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট নিশ্চিত করে বলেছেন যে, গাজায় সর্বশেষ আক্রমণ চালানোর বিষয়ে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরামর্শ করেছে এবং ট্রাম্পও ‘স্পষ্টই’ জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ হামাস গোষ্ঠী শুধু ইসরাইলের জন্যই নয়, তাদের জন্যও হুমকি। কারণ হামাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও সন্ত্রাসী হামলার শিকার করতে চায়। কাজেই তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে। হামাসের প্রতি ট্রাম্পের পূর্ববর্তী হুমকির পুনরাবৃত্তি করে, লেভিট সতর্ক করেছেন এই বলে যে, তা না হলে সব কিছু ভেঙে পড়বে।
উল্লেখ্য, পশ্চিমা সমর্থনে ইসরাইলি আক্রমণের কারণে গাজার মানুষ আগে থেকেই চরম অমানবিক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। ধারাবাহিক হামলার কারণে এ উপত্যকায় নরকে পরিণত হয়েছে আগেই। যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত সমর্থন নিয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ২০২৩এর অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অন্তত ৪৮ হাজার ৫৭৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে, গাজার সরকারি গণমাধ্যম নিহতের এ সংখ্যা প্রায় ৬২,০০০ বলে জানায়। এ হিসাবে হাজার হাজার নিখোঁজ ফিলিস্তিনিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ার কারণে যাদের মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। অবশ্য এসবের মাঝেই ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে একটি দুর্বল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। মার্চের শুরুতে যখন ইসরাইল গাজা উপত্যকায় সমস্ত মানবিক সহায়তা বিতরণ বন্ধ করে দেয়, যা স্পষ্টই যুদ্ধাপরাধের সমতুল্য, তখন যুক্তরাষ্ট্র উলটো পরিস্থিতির অবনতির জন্য হামাসকে দোষারোপ করে। এটি চরম অন্যায় হলেও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এ আচরণ ছিল স্বাভাবিক।
হামাস প্রতিবাদ জানালেও ইসরাইল চুক্তির শর্তাবলি সোজাসুজি পরিবর্তন করেছে এবং তা করেছে একপাক্ষিকভাবে, যেমনটা তারা আগেও বারবার করেছে। ইইউ পরে এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলের সব ধরনের মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এ অঞ্চলের মানুষকে অমানবিক পরিণতির দিকে পরিচালিত করতে পারে। কিন্তু ইসরাইল যাই করুক না কেন, সব দোষ হামাসের। এরই মধ্যে গাজায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক বর্বরতার নিন্দা আসতে শুরু করেছে। অবশ্য তাতে কী, ইসরাইল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এসব নিন্দা ও আপত্তি খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। দিন শেষে, এসব সাধারণ নিন্দা, সমালোচনা ও যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান ইসরাইলের অপকর্মকে কোন বাধা দেয় না। কাজেই শুধু নিন্দা ও যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানে ইসরাইল তা অপকর্ম বন্ধ করবে না, বিশ্বনেতাদের এজন্য চাই শক্ত পদক্ষেপ।
আল জাজিরা থেকে ভাষান্তর
বেলেন ফার্নান্দেজ : আল জাজিরার কলামিস্ট