বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির আস্থার প্রতীক

কর্নেল ইব্রাহিম ফারুক
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম হয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চালিকাশক্তি ছিল তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত সব বাঙালি অফিসার ও সৈনিক। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সেনাসদস্যরা নানাভাবে বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হয়; যার ফলে স্বাধীনতার এ সূচনালগ্নে তারা আর বসে না থেকে, এ দেশে পালিয়ে আসে আর মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। এ সামরিক অফিসার ও সৈনিকরা ১১টি সেক্টরে বিভক্ত হয়ে যুদ্ধের কমান্ড পর্যায়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, আর এভাবেই সূচনা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর।
রণক্ষেত্রে জন্ম নেওয়া একটি সেনাবাহিনী অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ অনেক দক্ষ, সুসংগঠিত এবং দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বপরিমণ্ডলে আজ একটি পরিচিত ও গর্বিত নাম। এছাড়াও দেশের এবং জনগণের সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে আসছে; যা দেশ তথা সমগ্র জাতির জন্য কল্যাণকর। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যমুনা সেতু নির্মাণে সার্বিক দায়িত্ব পালন, দেশের মেগা প্রজেক্টখ্যাত পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন, হাতিরঝিল প্রজেক্ট, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিরাপত্তা, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহণ, টুঙ্গিপাড়ায় বিটিসিএল ওয়াইফাই প্রকল্প, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা, আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন, দুর্যোগব্যবস্থাপনা, এফডিএমএন সংকটব্যবস্থাপনা, স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, ই-পাসপোর্ট, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-সম্প্রীতি উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচন, শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান, চিকিৎসাক্ষেত্রে অবদান, জাতীয় উন্নতিতে অবদান, কোভিড-১৯ ইত্যাদি।
দেশের সর্বপ্রথম বৃহত্তম সেতু যমুনা বহুমুখী সেতু। ১৯৯৪ সালে প্রথম যমুনা সেতুর কাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৮ সালে সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। যমুনা সেতু নির্মাণের সময়ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং নির্মাণের পর থেকে এখন পর্যন্ত সেতুর সার্বিক তত্ত্বাবধান, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার সার্বিক দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্টগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পর্যবেক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা দিচ্ছে। এছাড়া হাতিরঝিল রাজধানীর মানুষের চলাচলের জন্য ২০১৩ সালে তৈরি করা হয়। এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা পানি নিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজধানীর যানজট নিরসন এবং সৌন্দর্যবর্ধন। এ প্রকল্পের নির্মাণ, তদারকি এবং বাস্তবায়নসহ সার্বিক দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয় সেনাবাহিনীর ‘স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনে’র ওপর, যা স্বল্প সময়ে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে। এ কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (এডরা), পরিসর পরিকল্পনা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশকে ‘গ্রেট প্লেস অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ প্রদান করেন।
দেশের বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে মেগা প্রজেক্টগুলোর অন্যতম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ১,১৩,০৯২ কোটি টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়) ব্যয়ে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ, রক্ষণাবেক্ষণ, পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণ ও প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড, যা দেশের মানুষের কাছে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। দেশে প্রথম পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহণের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহণের কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। পাইপলাইন স্থাপনের পর বছরে ২৭ থেকে ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিবহণ করা সম্ভব হবে, যা পর্যায়ক্রমে ৫০ লাখ টন পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এ প্রজেক্ট সফল হলে জ্বালানি তেলের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি দেশের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ঢাকা শহরের মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোডে ফ্লাইওভার, বনানী রেলক্রসিংয়ে ওভার পাস নির্মাণ, ৩০০ ফিট পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, ১০০ ফিট খাল খনন প্রকল্প ও ধানমণ্ডি লেক উন্নয়ন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক অবকাঠামো এবং জলাশয় নিষ্কাশনব্যবস্থার নির্মাণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী ও ড্রেজিং বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্প, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার নিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়নমূলক প্রকল্প, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫) : নর্দান রুটের এলিভেটেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনগুলোর ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের আওতায় বাস্তবায়নকারী ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-১) আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনগুলোর ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ, রাজউক পূর্বাচল ৩০০ ফিট মহাসড়ক থেকে এভিনিউ সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের রুট এলাইনমেন্টের মধ্যে অবস্থিত ইউটিলিটি শিফটিং এবং স্ট্রাকচার অপসারণ প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান রয়েছে; যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন ব্রিজ, কালভার্ট, ওভারব্রিজসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উন্নয়নমূলক কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা ও তার আশপাশের সড়কব্যবস্থার উন্নয়ন এবং যানজট নিরসনে হাতিরঝিল ইউলুপ, ঢাকা শহরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সিফটিংয়ের কাজ, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণে সেনাবাহিনী অবদান রেখেছে। তাছাড়া অত্যন্ত স্বল্প সময়ে মেঘনা-গোমতী ব্রিজের মেরামত কাজ সম্পন্ন করে সেনাসদস্যরা ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় মুক্তারপুর সেতু সংযোগ সড়কে থেকে মুক্তারপুরে অবস্থিত দুটি সেতুর বিকল্প সড়ক নির্মাণ, সংস্কার এবং পুনঃনির্মাণ কাজ সেনাবাহিনী সম্পন্ন করেছে। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারটিও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতাবিশিষ্ট সড়কগুলো সেনাবাহিনী নির্মাণ করায় পাহাড়ি জনপদে এসেছে উন্নয়ন ও প্রাণের স্পন্দন। বর্তমানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
২.
বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জানমাল রক্ষা, ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসাসেবা প্রদানে সেনাবাহিনী যে আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তা দেশবাসীর কাছে প্রশংসিত। চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের উদ্দেশে চলমান প্রকল্পে সেনাসদস্যরা দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। এছাড়া বন্ধুপ্রতিম অনেক দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাতে কাজ করে সেনাসদস্যরা বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছেন। ২০২৩ সালে তুরস্কে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা প্রদানসহ সেনাবাহিনী থেকে একটি উদ্ধারকারী দল তুরস্কে গমন করে উদ্ধার কাজে সহায়তা প্রদান করেছে, যা বাংলাদেশ-তুরস্কের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে।
১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে ফিরেছে স্থায়ী শান্তি। এছাড়া কক্সবাজার বিচসংলগ্ন ৮০ কিলোমিটার কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন সম্পন্ন করে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছে। এভাবে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়ে দেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে সেনাবাহিনী। দেশের ক্রান্তিলগ্নে ‘অপারেশন থান্ডারলাইট’ ও ‘অপারেশন টুইলাইটে’র মাধ্যমে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে যে কোনো জাতীয় সমস্যা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী আপামর জনসাধারণের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হিসাবে সুপরিচিতি পেয়েছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে সারা দেশে দক্ষ ও যোগ্য সামরিক কর্মকর্তা তৈরির জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১২টি ক্যাডেট কলেজ পরিচালনা করে আসছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিকল্পে দেশে ৪৪টি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ১৯টি ইংলিশ ভার্সন ও দেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে উন্নতির জন্য আর্মি মেডিকেল কলেজ, রিং সেক্টরের উন্নতি এবং অবদানের জন্য এমআইএসটি, বিইউপির মতো দেশের অনেক নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে দেশে সুনাগরিক গড়ে তোলার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সেনা পরিবার কল্যাণ সমিতির পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে প্রয়াস স্কুল প্রতিষ্ঠা একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। দেশের চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়ন ও ক্ষেত্র প্রসারিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ (এএফএমসি) এবং ২০১৪ সালে ৫টি সেনানিবাসে মেডিকেল কলেজ ও আর্মি নার্সিং কলেজ (চট্টগ্রাম, বগুড়া, কুমিল্লা, যশোর ও রংপুর) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর মতো মহামারির প্রাক্কালে কোভিডে আক্রান্ত রোগীর আইসোলেশনের ব্যবস্থা এবং দেশের জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে ‘ইনএইড টু সিভিল পাওয়ারে’র আওতায় সহায়তা এবং দেশে আক্রান্ত কোভিড রোগীর চিকিৎসায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিকিৎসকরা ছিলেন প্রথম সারির যোদ্ধা।
৩.
দেশের স্পোর্টস সেক্টরকে এগিয়ে নিতেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। দেশের ফুটবলের উন্নয়নে আর্মি ফুটবল দল পরিচালনা, বক্সিং প্রতিযোগিতা, ভারোত্তোলন, দৌড় (১০০ মিটার স্প্রিন্ট এবং ৪০০ মিটার রিলে), অ্যাথলেটিকস, আর্চারিসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজনসহ বিদেশের মাটিতে নানা প্রতিযোগিতায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্বর্ণ, রৌপ্য এবং পদকসহ সম্মানজনক স্থান অর্জন করে আসছে; যা বাহিনী এবং দেশের জন্য সম্মানের ও গর্বের।
দেশ ও জাতির পরম বন্ধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যখন দেশব্যাপী বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, পুলিশসহ অধিকাংশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অকার্যকর ছিল, তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে মোতায়েন থেকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে দেশ-বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সেতু নির্মাণ থেকে শুরু করে হাতিরঝিল, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের মতো বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টসহ, আশ্রয়ণ, দারিদ্র্যবিমোচন ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনাবাহিনী যেভাবে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করে আসছে, তা প্রশংসনীয়। বর্তমানে সেনাবাহিনী শুধু অভ্যন্তরীণ বিষয়েই নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদের সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের পরিচয় দিয়ে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করে চলেছে। যেখানেই মেগা প্রজেক্ট, সেখানেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি নির্ভরতার নাম। কর্মস্পৃহা ও পেশাদারত্বে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি অপরিহার্য নাম। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দুর্যোগকালীন দেশের ও দেশের মানুষের পাশে থেকে সেনাবাহিনী বহু দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। জাতির গর্বে গর্বিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাই আজ সবার আস্থার প্রতীক।
কর্নেল ইব্রাহিম ফারুক, বিজিবিএম : সেনা কর্মকর্তা