Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

রাজনৈতিক ‘দুধমা’

Icon

জুবায়ের বাবু

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনৈতিক ‘দুধমা’

ছবি: সংগৃহীত

‘দুধমা’ আমাদের জীবনে, গল্প-সাহিত্যে, এমনকি ধর্মেও একটি আলোচিত চরিত্র। দুধমা হলেন এমন মা, যিনি অন্যের শিশুকে নিজের স্তন্য পানের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত লালন-পালন করে থাকেন। বিশ্বের অনেক দেশে, অনেক জাতি গোষ্ঠীতে এর প্রচলন সুপ্রাচীনকাল থেকেই দেখা যায়। গ্রিক পুরাণ, এমনকি ধর্মগ্রন্থ বাইবেল, তাওরাতেও এই দুধ মায়ের উল্লেখ আছে। আর ইসলাম ও আরবের সংস্কৃতিতেও এ দুধ মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। সাধারণত পারিবারিক বা সামাজিক প্রথা কিংবা শিশুর প্রয়োজনে পরিবার ‘দুধমা’ নিযুক্ত করে থাকেন। ‘দুধমা’ অনেক সমাজে ঐতিহ্য, আভিজাত্য ও বিত্ত-বৈভবের প্রতীক হয়েও দাঁড়িয়েছিল।

ইউরোপের অনেক রাজা-বাদশাহও ‘ওয়েট নার্স’ বা দুধমার কাছে বেড়ে উঠে রাজ্য শাসন করেছেন। এবার ইতিহাসের পাতা থেকে এ চরিত্রটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই প্রকাশ্যে এসেছে সম্পূর্ণ এক নতুন রূপে। যার নাম ‘রাজনৈতিক দুধমা’।

এখানে রাজনৈতিক শিশুরা মানে কর্মীরা জন্ম নেয় এক আদর্শের ঘরে; কিন্তু রাজনৈতিক প্রয়োজনে দুধ খেয়ে বেড়ে ওঠে অন্য এক আদর্শের কোলে। তবে একটা পার্থক্য সুস্পষ্ট : এই ‘রাজনৈতিক দুধমা’ নিযুক্ত হয় অনেকটা গোপনে কোনো এক রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্তে, অপরদিকে অন্য রাজনৈতিক দলটি ‘দুধমা’ হয়ে ওঠে নিজের অজান্তেই। বিশেষ করে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধসে পড়া আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে কিছু নেতা যখন দাবি করে বসেন-আসলে তারা অন্য দলের কর্মী, তখনই আলোচনাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে কি বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগ ছিল তাদের ‘রাজনৈতিক দুধমা’? শুধু যে আওয়ামী লীগই রাজনৈতিক ‘দুধমা’ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে তা নয়, বিএনপিও যে রাজনৈতিক ‘দুধমা’ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়। অনেক গুপ্ত বাহিনী এখনো সুপ্ত অবস্থায় দুধ পান করে চলেছে সুসময়ের অপেক্ষায়। তবে বিষয়টি যে একদম নতুন তা নয়, ১৯৭১ সালের পর অন্য দলের অনেক কর্মীর জাসদের রাজনীতিতে ঢুকে পড়ার ঘটনা তো আমাদের অনেকের জানা। প্রথাগত ‘দুধমা’ যেমন কখনোই প্রকৃত মায়ের সম্মান অর্জন করে না, রাজনৈতিক দুধমার ক্ষেত্রেও তাই। এ বিষয়টি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সবাইকে বুঝতে হবে।

নির্মাতা ও ব্রডকাস্টার, যুক্তরাজ্য

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম