বাংলা ভাষা ও আমাদের হীনম্মন্যতা

নাসিম উদ্দিন
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67b50ce937fe8.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা তথা পুরো ভারতবর্ষের ভাগ্যাকাশে নেমে আসে ঘন এক অমানিশা। ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত পেরিয়ে যখন পূর্বাকাশে সূর্য উদিত হলো, তখন পেরিয়ে গেছে ১৯০টি বসন্ত। ১৭৫৭ সালে ভারতবর্ষ যখন ব্রিটিশদের অধীনে চলে আসে, তখন পুরো বিশ্বের জিডিপির ২৫ থেকে ৩০ শতাংশই সরবরাহ করত আজকের ভারতবর্ষ। আবার ভারতবর্ষের সবচেয়ে বেশি জিডিপি সরবরাহ করত বাংলা অঞ্চল। অথচ ১৯৪৭ সালে জিডিপির সেই পরিমাণ ৩-৪ শতাংশে এসে পৌঁছায়। অর্থাৎ অর্থনীতির পুরো বারোটা বাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি ইউটিউবে একজন মার্কিন নাগরিকের পুরোনো একটি সাক্ষাৎকার দেখছিলাম একটি চ্যানেলে। ভদ্রমহিলা ইংরেজি ভাষাভাষী হওয়ার পরও তিনি অনর্গল বাংলা ভাষায় কথা বলেছিলেন। বরং সেই চ্যানেলটির সাংবাদিক কিছু জায়গায় ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ করায় ভদ্রমহিলার কাছে তিনি কিছুটা বিব্রত হন। একটি বাক্যে পাঁচটি শব্দ থাকলে অন্তত দু থেকে তিনটি শব্দ ইংরেজিতে না বললে মান-সম্মান যেন আমাদের থাকে না! আমাদের সমাজ এলিট বলে মনে করে না।
বিশ্বের অনেক দেশ তার নিজের ভাষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। চীনে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ ইংরেজিতে কথা বলে। ব্যাপারটা এমন নয় যে, তারা চাইলে ইংরেজিতে কথা বলতে পারবে না। যারা বিশ্বের অধিকাংশ জিনিস তৈরি করতে পারে, তাদের কাছে অন্য একটি ভাষা শেখা বেশ মামুলিই মনে হবে। আমরা কেন অন্যের ভাষা শিখতে যাব, বরং আমাদের ভাষা অন্যরা শিখবে-এই মনোভাব তাদের অনন্য করেছে। চীনের পাশাপাশি ব্রিটিশ, আমেরিকান, জার্মান বা ফরাসিরাও তাদের ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমরা যারা দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাই বা অন্য কোনো কাজে যাই, তাদের আইইএলটিএস, জিআরইসহ বিভিন্ন ভাষার দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা আমাদের বার্তা দিতে চায় যে, তোমরা আমাদের ভাষা শেখার মাধ্যমে আমাদের স্ট্যান্ডার্ডে আসতে পারবে। কাজেই আমরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে সেই যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টায় নামি।
১৯৫২ সালের রফিক, জব্বার, সালামসহ অনেক শহিদ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দুনিয়ার বুকে তুলে ধরেছেন বাংলা ভাষার মাহাত্ম্য। কিন্তু আমরা এ আত্মত্যাগের পরও বাংলা ভাষায় কথা বলতে হীনম্মন্যতাবোধ করি। ইংরেজি, মান্দারিন, জার্মান, ফরাসি কিংবা অন্য ভাষা শেখা অপরাধ নয়, বরং দক্ষতা। সাম্রাজ্যবাদী চিন্তা-চেতনা দূর করে বাংলা ভাষাকে ধারণ করতে পারলেই রফিক-জব্বার-সালামের মতো অসংখ্য ভাষা শহিদের আত্মা শান্তি পাবে, গড়ে উঠবে অদম্য হার না মানা বাঙালি জাতি।
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়