রাষ্ট্র সংস্কারের হাওয়া কোন পথে

এমদাদুর রহমান উদয়
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67b50eb74df67.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
জুলাই-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা ও সমৃদ্ধি অর্জন করা ছিল একটা অন্যতম চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাসের কিছু বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। সরকার কর্তৃক সংস্কারকাজ এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে। তবে নিকট অতীতে লম্বা সময় ধরে চলে আসা বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির জাল ছিঁড়ে সংস্কারকে সমুন্নত করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। দেশের মানুষের মুক্তির জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থায় জেঁকে বসে থাকা সব ধরনের অচলাবস্থার নিরসন প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন জনগণের মৌলিক চাহিদা ও মানবাধিকারকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
কঠিন এ সময়ে সম্প্রীতির এক মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এ দেশের জনগণ। বিপ্লব-পরবর্তী আকস্মিক বন্যায় সবার একযোগে এগিয়ে আসার মানসিকতা এর সর্বোৎকৃষ্ট প্রমাণ। অপরদিকে আমাদের প্রবাসী দক্ষ জনশক্তির প্রদত্ত কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স অদ্যাবধি আমাদের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে ভূমিকা পালন করে চলেছে। এ ছাড়াও নতুন করে বৈদেশিক বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত করেছে। অর্থাৎ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নয়নে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরেও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এবং ব্যবসা খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন হয়েছে, যা মোট দেশজ উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার প্রসার ও মুক্ত রাজনৈতিক ভাবধারার প্রকাশ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। দেশের রাজনৈতিক চিন্তায় তরুণদের অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছে, যা প্রশংসার দাবিদার। কেননা তারুণ্যের শক্তিই দেশের রাজনৈতিক ভাবধারার উন্নয়নে ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিনির্মাণে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যেই দেশের রাজনৈতিক চিন্তায় তরুণদের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই তরুণ প্রজন্মই আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার কান্ডারি হবে বলে মনে করেন তিনি।
তবে বিপ্লব-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারের পথে কিছু অভ্যন্তরীণ জটিলতাও সৃষ্টি হয়েছে, যা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে আমরা প্রায়ই ছোট-বড় নানা দাবি আদায়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও মোড়ে মোড়ে রাজপথ অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে দেখি। এতে রাস্তায় দীর্ঘ যানজটসহ অনাকাঙ্ক্ষিত জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও ঘটে। তাই এসব সমস্যা সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ থাকা প্রয়োজন। আমরা দেখেছি, বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে দেশে অন্যায়-দুর্নীতি কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে বেড়েছিল চুরি, রাহাজানি, চাঁদাবাজি ও মব জাস্টিসের মতো বিষয়গুলো। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কারের পর দেশে অপরাধের হার অনেকাংশেই কমে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করলে এদেশকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের জনগণ হিসাবে আমাদের যেসব দায়িত্ব রয়েছে, সেগুলোও সততার সঙ্গে পালন করে জাতির পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। ইতোমধ্যেই সব ধরনের অপরাধ দমনে ও অপরাধীদের বিচার নিশ্চিতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ দেশব্যাপী চলমান রয়েছে। এর আওতায় দলমত নির্বিশেষে সব ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
আগামীর রাষ্ট্র গঠনে ছাত্রসমাজই হবে অন্যতম চালিকাশক্তি। তাই দেশের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ একান্ত আবশ্যক। দুর্নীতি ও অপরাধমুক্ত জনবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে তাই ছাত্র-জনতার এগিয়ে আসা জরুরি। এক্ষেত্রে মেধাবী, দেশপ্রেমিক, সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত ও সততার অধিকারী ছাত্রদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা জরুরি। তাদের রাজনৈতিক ম্যান্ডেট হতে হবে জনমুখী, দুর্নীতিমুক্ত ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর। বর্তমানে যেসব রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র সংস্কার ও দেশ গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছে, তাদেরও জনবান্ধব হিসাবে নিজেদের প্রস্তুত করে গড়ে তোলা উচিত। তবেই আমরা সবাই একত্রে একটি সুন্দর, দুর্নীতিমুক্ত ও বাস উপযোগী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়