একটি বিজ্ঞাপন ও সংস্কারের শেকড় বাকড়

আহমাদ সালাহুদ্দীন
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৩ পিএম

সংস্কারের ডালপালাও বলতে পারতাম শিরোনাম। বলতে পারলাম না। কারণ সংস্কারের কেন এবং কতভাবে দরকার তা বুঝানোর জন্য এর শেকড় বাকড় আগে বুঝা দরকার। যেগুলোকে বাদ দিয়ে ডালপালায় যাওয়া যায় না। প্রথমে বলে নেই যে এটি একটি প্রতীকী আলোচনা। এটিকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে আমি সংস্কার বিষয়ে বৃহত্তর একটি আলোচনার অবতারনা করছি মাত্র।
বিষয়টি খুব সাধারণভাবে বুঝার জন্য সরকারি বিজ্ঞাপনের ছবিটি দেখুন। বিজ্ঞাপনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মেলার খবর দেয়া হয়েছে। জনসাধারণকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। সরকারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তর এ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনুষ্ঠিত হবে তাদের দপ্তরের ভেন্যুতে। এমন একটি বিষয়ে আমন্ত্রণ সেটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ মুহূর্তে।
সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছিলেন, ১ অক্টোবর বা ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন ব্যাগ বন্ধ হবে । আরও বলা হয়েছিল, এ মেলায় জনসাধারণকে জানানো হবে পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে আমাদের কি কি বিকল্প হাজির আছে। সুতরাং সবকিছু আমাদেরকে যথেষ্ট আশাবাদী করার মত উদ্যোগ ছিল। কিন্তু আসলে কি আমরা খুব আশাবাদী হতে পেরেছি এ উদ্যোগে? কিংবা এ বিজ্ঞাপনে?
বিজ্ঞাপন প্রকাশের দিন শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর দেখার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা করেছিলাম, আমি অবশ্যই যাব। কিন্তু যেতে পারলাম না। রওনা দেওয়ার পর দেখি ভুল করেছি, এটি শুধুমাত্র ২৯ সেপ্টেম্বর একদিনের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেতে পারলাম না। পরদিন অফিস থাকায় অফিস সময় মেনে মেলা হবার কারণে আর যাওয়াই হল না। গভীর হতাশা বোধ করলাম।
অনেকগুলো প্রশ্ন। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি মেলা এভাবে আয়োজন করা কি ঠিক হয়েছিল? আয়োজকরা কি সত্যি চেয়েছেন অনেক আগ্রহী মানুষ সেখানে যান এবং তাদের কাজের পরিপূর্ণ একটি রূপ দেখতে পান?আয়োজকরা কি ঠিকমত তাদের হোম ওয়ার্ক করেছিলেন? তাদের কি মনে হয় ওনারা সামগ্রিক কাজটি ভালোভাবে করতে পারবেন এ বিষয়ে সর্বসাধারনের আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন? পরিকল্পনা দেখে তা মনে হয়নি। এবং এতদিনে আমরা তা বুঝতে পারছি।
অনেকগুলি কারনে এই হতাশা। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মেলা শুধুমাত্র একদিনের জন্য হতে পারেনা। অফিস সময় মেনে এটি শুধুমাত্র একদিন করার অর্থ হল ওনারা অনেক অনেক দর্শনার্থী মেলায় আসুক চাননি। এটি প্রদর্শন করা হয়েছে একটি সরকারি অফিসে যেটি সর্বসাধারনের পরিচিত জায়গা না। হওয়া উচিত ছিল শেরে বাংলা নগরের চীন-মৈত্রী আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারের মত কোন জায়গায় এবং কয়েকদিন ধরে। অফিস সময়ের পরেও এবং ছুটির দিনে।
স্বল্প পরিসরে আয়োজন করার কারণে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন জাগে, ওখানে প্রদর্শন করার মত যথেষ্ট প্রকারের এবং পদের পলিথিনের বিকল্প দ্রব্যাদি ছিল কি? থাকলে সেগুলো কারা উৎপাদন করছে? এগুলি কি প্রচলিত বাজার ব্যবস্থায় সব জায়গায় সহজল্ভ্য হবে? যা উৎপাদিত হচ্ছে তা কি আমাদের বিপুল চাহিদা পূরণ করতে পারবে?
বিকল্প হিসেবে যা উৎপাদিত হচ্ছে সে গুলো কি সব ধরনের ব্যবহারকারীদের জন্য সাশ্রয়ী? মোটকথা হল যথেষ্ট গবেষণা এবং বিবেচনা করে কি আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যা আমাদের এই পরিবর্তন কে একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে নাকি আরো একটি ব্যর্থ উদ্যোগের দিকে নেবে। হতে পারে আমার সব আশঙ্কাই ভুল এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষ সব বিষয়ে গভীরভাবে সবকিছু বিবেচনা করেছেন এবং সে অনুযায়ী সবকিছু বাস্তবায়ন করেছেন এবং সফল হয়েছেন, তাহলে অনেক অনেক মোবারকবাদ জানাতে পারতাম। কিন্তু এত সময় পরেও ঠিক বুকে হাত দিয়ে বলতে পারছি না আমরা এবারও সফল হব কিনা।
সংস্কার একটি গভীর বিষয়। এটিকে বিবেচনা করতে হবে এর জটিল এবং ডিটেইল জালের মধ্যে। এবং সফলতা খুঁজতে হবে এর স্থায়িত্বশীলতায়। এখানে মনে রাখতে হবে যে একটি সমাধান দেয়ার ক্ষেত্রে একজন গবেষক বা উদ্ভাবক যেমন গুরুত্তপুর্ন তেমনি একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক পক্ষ, নীতিনির্ধারক, উৎপাদক, বাজারের নানান খেলোয়াড়, সর্বোপরি ব্যবহারকারী এবং তাদের জটিল মানসিক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনকারী মন। সংস্কারের বিষয় ভেদে বিভিন্ন পক্ষ নির্ধারিত হবে এবং তাদের সকলকে বিবেচনায় নিয়েই সেগুলো পরিকল্পনা প্রনয়ন যেমন করতে হবে তেমনি একই ভাবে সাফল্যের লক্ষে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
আশা করি আমরা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সংস্কারের বিষয় যেমন নির্ধারণ করবো তেমনি এর শেকড়বাকড় বুঝতে পারেন এমন বিশেষজ্ঞ নেতৃত্বেই সেগুলো করানোর চেষ্টা করব এবং আস্তে আস্তে এর ফল ডালপালায় ফুলে ফলে সুশোভিত করে জাতির সামনে উপস্থাপিত করতে পারবো। আজকে না হোক আগামীকাল যেন সাফল্য আমাদের হাতের নাগালে চলে আসবে এ আশাবাদ রাখতে চাই।
লেখক: উন্নয়ন গবেষক
যোগাযোগঃ ahmad.salahuddin48@gmail.com