ফাইল ছবি
সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন দাবিতে আন্দোলনে নামছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সচিবালয় থেকে গ্রাম পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজ, রিকশাচালক থেকে রেলকর্মী—সর্বত্রই দাবির মিছিল। রাজধানী ঢাকা যেন হয়ে উঠেছে ‘দাবির শহর’। প্রশ্ন উঠছে, দাবির আন্দোলন থামছে না কেন?
দাবির আন্দোলনের
ধরন
দাবির আন্দোলনগুলো
বিভিন্ন ধরনের। কিছু দাবি যৌক্তিক ও সময়োপযোগী, যেমন শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা
বৃদ্ধি, রেলকর্মীদের চাকরির নিশ্চয়তা ইত্যাদি। আবার কিছু দাবি অযৌক্তিক ও ভোগান্তিমূলক,
যেমন: অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা, অযৌক্তিক ভাতা বৃদ্ধির দাবি ইত্যাদি। এই
অযৌক্তিক দাবিগুলো সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছে।
দাবির আন্দোলনের
কারণ
দাবির আন্দোলনের
পেছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করছে। প্রথমত, সরকার পতনের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হওয়া শূন্যতা
ও অনিশ্চয়তা বিভিন্ন গোষ্ঠীকে তাদের দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নামার সুযোগ করে দিয়েছে,
যা রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতা ও অনিশ্চয়তার কারণে আরও উসকে দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, দেশের
অর্থনৈতিক সংকট, যেমন মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব ও আয়বৈষম্য, সাধারণ মানুষকে নাজুক করে
তুলেছে, যার ফলে বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের অর্থনৈতিক দাবি নিয়ে রাস্তায় নামছেন। তৃতীয়ত,
সামাজিক অস্থিরতা, বিশেষ করে শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধারণ
মানুষের অসন্তোষ বাড়ছে, যা দাবির আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে। চতুর্থত, অন্তর্বর্তী সরকারের
দুর্বলতা ও সিদ্ধান্তহীনতা দাবির আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছে, কারণ অনেকেই মনে করছেন যে
এই সরকারের আমলে দাবি নিয়ে রাস্তায় নামলে সেসব দাবি পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
দাবির আন্দোলনের
প্রভাব
দাবির আন্দোলনগুলোর
প্রভাব ব্যাপক। একদিকে, যৌক্তিক দাবিগুলো আদায় হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান
উন্নত হতে পারে। অন্যদিকে, অযৌক্তিক দাবিগুলো আদায়ের চেষ্টা সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা
বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া, দাবির আন্দোলনগুলোর কারণে রাজধানী ঢাকার যানজট, ব্যবসা-বাণিজ্যে
ব্যাঘাত, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় অসুবিধা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
শেষ কথা
দাবির আন্দোলন
থামানো এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই আন্দোলনগুলো থামাতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে
আনতে হবে, অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে হবে এবং সামাজিক অসন্তোষ দূর করতে হবে। এছাড়া, সরকারের
পক্ষ থেকে দাবিগুলো মেটানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। শুধু তখনই দাবির আন্দোলন
থামবে এবং দেশের সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী