পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের উদ্যোগ—নাগরিক হয়রানি বন্ধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩ পিএম
প্রতীকী ছবি
সরকারি চাকরি, পাসপোর্টসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা গ্রহণে বহুল প্রচলিত পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রথা অবশেষে তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী আজ ঘোষণা দিয়েছেন—‘চাকরি কিংবা অন্য যেকোনো সেবার ক্ষেত্রে পুলিশের ভেরিফিকেশন আর বাধ্যতামূলক থাকছে না। এটি কোথাও আর থাকবে না।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট পাওয়া সবার অধিকার। পাসপোর্টের জন্য পুলিশের ভেরিফিকেশন কেন প্রয়োজন? উন্নত দেশে যেমন পাসপোর্ট সরাসরি আবেদনকারীর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়, তেমনটাই আমাদেরও করা উচিত।’
এই ঘোষণাটি নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী এবং সময়োপযোগী। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছিল এক বিরক্তিকর ও হয়রানিকর প্রক্রিয়া। চাকরি, পাসপোর্ট কিংবা অন্য কোনো সরকারি সেবা নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে বারবার পুলিশের তদন্তের মুখোমুখি হতে হতো। বাস্তবে এটি ছিল অনেক ক্ষেত্রেই শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা। তদুপরি এই প্রক্রিয়া দুর্নীতির আরেকটি উৎসে পরিণত হয়েছিল।
ভেরিফিকেশনের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় একটি ওপেন সিক্রেট। পাসপোর্ট বা চাকরির মতো সেবার ক্ষেত্রে পুলিশের পকেটে নিয়মিত ঢুকত এক থেকে দেড় হাজার টাকা। এই দুর্নীতি যেমন নাগরিকদের হয়রানি বাড়াত, তেমনি প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমিয়ে দিত।
তবে প্রযুক্তির অগ্রগতির এ যুগে পুলিশ ভেরিফিকেশন একটি অপ্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং আধুনিক তথ্যভাণ্ডারের মাধ্যমে সহজেই একজন নাগরিকের পরিচয় ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করা সম্ভব। ডিজিটাল ডাটা বেইস ব্যবহার করলে নাগরিকদের আর পুলিশের দরজায় ঘুরতে হবে না। ফলে সময়, অর্থ এবং হয়রানি—সবই কমে আসবে। একই সঙ্গে দুর্নীতির পথও রুদ্ধ হবে।
এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। একজন নাগরিক তার অধিকারভিত্তিক সেবা পেতে আর কোনো অনৈতিক পথ বেছে নিতে বাধ্য হবেন না। তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় তথ্যভাণ্ডারকে আরও শক্তিশালী ও নির্ভুল করতে হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে নাগরিকদের তথ্যের অপব্যবহার না হয়।
পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের মাধ্যমে সরকার একটি স্বচ্ছ, প্রযুক্তিনির্ভর ও হয়রানিমুক্ত সেবাব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি শুধু নাগরিকদের জীবনযাত্রা সহজ করবে না বরং প্রশাসনের প্রতি আস্থাও বাড়াবে। তবে উদ্যোগটি যেন কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। একে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে এটি হবে নাগরিক হয়রানি বন্ধে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
ইমেইল: me@arbulbul.com