প্রিয় হেলাল হাফিজ, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। এই লেখাটি যখন লিখতে বসছি তার ঠিক সাত ঘণ্টা আগেও আপনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মেসেঞ্জারে সজীব ছিলেন। অথচ এখন আপনার মেসেঞ্জারে উঁকি মেরে দেখি আপনার মেসেঞ্জারের উপরে লেখা আছে- অ্যাক্টিভ সেভেন আওয়ারস এগো, আপনি এখন অন্য কোথাও। সবশেষ আমার প্রতি আপনার ভালোবাসার প্রশ্নটি ছিল- আলী তোমরা কেমন আছো? এই কেমন আছির উত্তর আমি আর কোনো দিন দিতে পারব না। আপনি আমাকে ও আমাদের ক্ষমা করবেন।
কবি ও সাংবাদিক জুন্নু রাইন ফোনে জানাল আপনি আমাদের সবাইকে ছেড়ে শান্তির পায়রায় উড়ে চলে গেছেন। বিগত ছয়-সাতটি বছর চরম একাকীত্বকে নিজের করে নিয়ে শাহবাগের সুপার হোমের ছোট্ট রুমে চিরন্তনী মৃত্যুর অপেক্ষা করেছেন। আপনি একাকীত্ব ভালোবাসতেন, আপনাকে অনেকে সঙ্গ দিতে চেয়েছে কিন্তু আপনি কেন জানি তা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। আপনি আপনার কবিতার মতোই ছিলেন- ‘একাই ছিলাম, পুনরায় একলা হলাম।’
আপনি একাই ছিলেন আবারও একা হলেন। আপনার একটা বিষয় আমি আমার আয়ুর শেষদিন পর্যন্ত বলে যাব আপনি আমার দেখা সবচেয়ে আত্মসম্মানী কবি। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আপনার কবিতার ওপর গবেষণার কাজ করতে গিয়ে যতবারই আপনার মুখোমুখি বসেছি, কথা বলেছি বরাবরই আপনার একটা কবিতার চরণ আমার বুকে বেজে উঠত- ‘আমি আর কতটুকু পারি? এর বেশি পারেনি মানুষ!’ আপনি যতটুকু পেরেছেন তা এ দেশের কোটি তারুণ্য মনে রাখবে অনন্তকাল, এর বেশি আর আপনার পারার দরকার নেই।
হেলাল ভাই আপনার সঙ্গে আমার বহু স্মৃতি, অনেক কথা- এগুলো আমি সময় ও সুযোগ আসলে বলব। আপনার বুকের উষর জমিনজুড়ে মমতার একটা পাহাড় ছিল, প্রতি শুক্রবার আমাদের খবর নিতেন ফোনে অথবা মেসেঞ্জারে। ২০২২ সালের অক্টোবরের ৭ তারিখ শীতের এক শুক্রবার আপনার জন্মদিন। আপনার শিশুর মতো নরম শরীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিনে আশ্রিত। বিশ্বসাহিত্যের হলরুমে আপনার কবিতার ওপর লেখা আমার গবেষণাগ্রন্থ হেলাল হাফিজের কবিতা- ফুল ও ফুলকির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হচ্ছিল। আপনি আপনার কবিতার মতোই আচমকা এসে আপনার অনুরাগীদের একটানা দশটি কবিতা আবৃত্তি করে শুনালেন, শ্রোতাদের কেউ বুঝতে পারল না- এ আপনার শেষ কবিতা শুনানো। তারপর কেটে গেল আরও বহু শুক্রবার, আর ১৩/১২/২০২৪ শুক্রবারে আপনি চির নিঃসঙ্গতার সতিন হলেন।
হেলাল হাফিজ সেই দুর্লভ কবিদের একজন, যিনি নিতান্তই অপরিমেয় সৃষ্টি-সম্ভার সত্ত্বেও জয় করেছেন তুঙ্গস্পর্শী জনমানস। সমান্তরালে শিল্প-সিদ্ধিতেও যা পরিপ্লুত। তার কবিতার প্রসঙ্গ (subject) ও প্রকরণ (from) যুগপৎ মেলবন্ধন সার্থক, কালোত্তীর্ণ। নিতান্ত স্বল্প সৃজনীতেও তিনি বরাবরই প্রাসঙ্গিক ও প্রোজ্জ্বল; কিন্তু হেলাল হাফিজের কবিতার প্রাণশক্তি কী? বস্তুত তিনি যেমন স্ফুট করেছেন ব্যক্তিক মনোলোক নিগূঢ় অন্তর্বীক্ষণে, তেমনি সময়ের স্রোত বেয়ে এগিয়ে গেছেন। একক সত্তা যখন নিজের মুখোমুখি দাঁড়ায়, তখন প্রলেপ বা নিয়ামক রূপে প্রতিভাত হেলাল হাফিজের কবিতা। আবার ব্যষ্টির অনুভব, চারিত্র্য, সংক্ষোভ-দ্রোহও তার কবিতার ভরকেন্দ্রের উজ্জ্বল উদ্ধার। বিগত অর্ধশতাব্দীকাল হেলাল হাফিজের উন্মাতাল উপস্থিতি তার কবিতারই অন্তর্নিহিত সন্মোহক ও সামূহিক শক্তি। নিউট্রন বোমা বোঝ/মানুষ বোঝ না কিংবা ‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’- জনশ্রুতি বা প্রবাদবাক্যে রূপান্তরিত এরকম পঙক্তিগুলো কাল ছাপিয়ে কালান্তরের দরজায় কড়া নাড়ে। কবি হেলাল হাফিজের নান্দনিক সব কবিতা আমার যৌবনের গুরুত্বপূর্ণ সব স্মৃতি, প্রীতির ও দ্রোহের সঙ্গে জড়িয়ে। যৌবনের প্রথম প্রহরে আমার হৃদয় দরজার কপাট খুলে বিমূর্ত করেছিল তার কবিতা। এ অনুসন্ধানে হেলাল হাফিজ কেন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলেন তার যৌক্তিক ব্যাখ্যার পূর্বে আমাকে একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে।
ত্রিশ দশকের পাঁচজন কবির পর বাংলাদেশের কবিতায় পঞ্চাশের দশকের উল্লেখযোগ্য কবি- শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক, শহীদ কাদরী প্রমুখ। শামসুর রাহমান নাগরিক চেতনার কবি, স্বাধীনতার কবি। আল মাহমুদের কবিতায় উঠে এসেছে লোকজ অনুষঙ্গ। প্রথম দিকে তার কবিতায় দর্শনের চেয়ে রূপমুগ্ধতাই ছিল প্রবল। শহীদ কাদরীও নাগরিক ধারার কবি। তার প্রথম কাব্যে সংযত আবেগ লক্ষণীয়, পরে ‘কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই’ গ্রন্থে আবেগ অনেকটা মুক্ত ও ছড়ানো। সৈয়দ হক স্বল্প আবেগের স্ট্রাকচারাল কবিতায় সাবলীল। এরপর ষাটের দশকের উল্লেখযোগ্য কবি- সিকদার আমিনুল হক, আবদুল মান্নান সৈয়দ, মোহাম্মদ রফিক, রফিক আজাদ, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, সমুদ্র গুপ্ত, হুমায়ূন আজাদ, মুহাম্মদ নুরুল হুদা, আবুল হাসান, হেলাল হাফিজ প্রমুখ।
ত্রিশের পর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সফল কবির আবির্ভাব ষাটের দশকে। ষাটের শেষলগ্নে আধুনিক বাংলা কবিতার রহস্যময়ী দ্রোহী ও প্রেমিক যুবরাজ কবি হেলাল হাফিজের আগমন। একদিকে বাঙালির জাতীয় জীবনের ক্রান্তিকাল, দুঃসহ সময় অন্যদিকে তখন থেকেই শুরু হয় বাঙালি রেনেসাঁসের পুনরুজ্জীবন বা নতুন পথচলা। ’৫২-এর মহান ভাষা-আন্দোলন বাঙালিকে দিয়েছিল একটি একক জাতিসত্তাবোধ, পূর্ণাঙ্গ ও পরিশুদ্ধ ভাবনা। আর সেই ভাবনা থেকে ব্যক্তি ও হেলাল হাফিজ কখনো পৃথক ছিলেন না। সমসাময়িক লেখক বন্ধুদের ভাবনা থেকে একটু ভিন্ন ভাবনা ও প্রকাশভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশের কাব্যসহিত্যে তিনি নির্মাণ করেন একটি স্বকীয় কাব্যভুবন। হেলাল হাফিজ চারিদিকের রাজনৈতিক আলোড়ন, স্বেচ্ছাচার, মূল্যবোধহীনতা, মানুষের প্রত্যাহিক জীবন-যন্ত্রণা, যুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর বিপন্নতায় একজন দ্রোহী এবং সবশেষ প্রেমিক। ষাটের দশকের কবি হেলাল হাফিজ বিশ্বাসে সমাজতন্ত্রী। তবে গন্তব্য শেষ করেন প্রেমে ও মানবতাবাদে।
উল্লেখ্য তার পূর্বে, সমকালে অথবা নিকটতম পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের কবিতায় দ্রোহ ও প্রেম নিয়ে অনেকে এসেছেন, হয়তো আরও আসবেন। এখানে স্মর্তব্য বিদ্রোহী ও প্রেমিক দুই সত্তারই সার্থক প্রকাশ নজরুল সাহিত্যে। তার মধ্যে আবেগের প্রাধান্য অত্যাধিক। নজরুল সাহিত্যের স্থায়ী রূপ প্রেম। নজরুলের সাহিত্যে প্রবঞ্চিত মানুষের ব্যথা যেভাবে ব্যক্ত হয়েছে তা বাংলা সাহিত্যে অভিনব। বৈষম্যজর্জরিত কবি হৃদয়। সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিদ্রোহ। আবার হেলাল হাফিজের সমকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা আবুল হাসান চারিদিকের রাজনৈতিক আলোড়ন, স্বেচ্ছাচার, মূল্যবোধহীনতা, মানুষের প্রত্যাহিক জীবন-যন্ত্রণা, যুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর বিপন্নতা নিয়েও প্রেমিক ও দ্রোহী কবি। ঠিক পরবর্তী সত্তর দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ও প্রাসঙ্গিক। প্রেম ও দ্রোহের মিশেলে রুদ্র শিল্পের মোড়কে জীবনকে, বাস্তবতাকে, সমাজকে, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে চিত্রিত করেছেন তার কবিতায়। দ্রোহ ও প্রেম নিয়ে বাংলা সাহিত্যে অনেকেই কবিতা লিখেছেন। তবে হেলাল হাফিজের দ্রোহ, প্রেম ও সমকাল ভাবনা একটু ব্যতিক্রম। নান্দনিকতার ছকে বাঁধা তার শিল্পোত্তীর্ণ সব কবিতা। মাত্র একটি কাব্য (পরবর্তীতে দ্বিতীয় বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’, প্রকাশ ২০১৯) প্রকাশ করেছেন দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী নবাগত রাষ্ট্রের বেদনা, ব্যক্তিগত প্রেম, সংক্ষোভ ইত্যাদি। তার ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ বইটির কবিতাগুলো যেন একেকটি প্রেম আর দ্রোহের আকর। ভাষার এমন সুন্দর ব্যবহার, শব্দের এমন চমৎকার চয়ন, বিমোহিত করে তাবৎ কাব্যপ্রেমীকে।
হেলাল হাফিজ বাংলাদেশের কবিতায় প্রেম-বিরহ, যুদ্ধ-শান্তি, অস্ত্র, চুম্বন, নারী, প্রকৃতি সমানভাবে প্রোথিত। এসবের মধ্যে বিরোধের চেয়ে সংহতি বেশি, বিপরীতের চেয়ে ঐক্য। তার কবিতা পাঠকের কানে, মগজে বেজে ওঠে বেশি। কবিতার শব্দ, বাক্য, চিত্রকল্প দীর্ঘদিন স্মৃতি কুঠিরে জমে থাকে এবং ক্ষণে ক্ষণে বেজেই চলে। মূলত কবির বেদনাবিদ্ধ হৃদয়ই কবিতার জন্মভূমি। সময় বিশেষ কোনো একটি বিশেষ সূত্রকে অবলম্বন করে কবির আনন্দ বেদনা যখন প্রকাশের পথ পায়, তখনই কবিতার জন্ম। তার প্রায় প্রতিটি কবিতা কবির কোমল হৃদয়ের তীর্থস্থান থেকে জাত, সহগামী হয়ে আছে সময়, সমাজ ও রাষ্ট্রবেদনা। তিনি সত্য ও সুন্দরের পূজারি। তার প্রেম ও দ্রোহের সংযমী কবিতা ফুল ও ফুলকি হয়ে ফুটে ওঠে চেতনার বাগানজুড়ে। যদি বলি হেলাল হাফিজের কবিতার অভিনবত্ব কী? তা হলো সহজ কথার কবিতা। এই সহজ কথার কবিতার সুর গত পঞ্চাশ বছর বেজেই চলছে। আধুনিক বাংলাদেশের কবিতার আড়ম্বরহীন সংযত শক্তিশালী এই কবির কবিতাকে আমি ফুল তথা প্রেমের আবার ফুলকি তথা দ্রোহের কবি হিসেবেই চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। দ্বিতীয় বইয়ের কবিতা এবং প্রথম বইয়ের কয়েকটি কবিতা ও যথারীতি বেদনা গুচ্ছে এঁকেছে প্রেম, মানবিকতা, সত্য সুন্দরের বুননে।
হেলাল হাফিজের কবিতার শক্তি কী?
সহজভাবে বলতে গেলে তার কবিতা এতই সুরেলা যে, এ যেন গহীন অরণ্যের বুক চিড়ে মাঝরাতের বাঁশির মোহনীয় সুর; যা পাঠকের হৃদয়ে ঝর্ণার স্বচ্ছ জলের ধারার মতো অবিরাম বাজতে শুরু করে। কবিতার সহজিয়া শরীরে পাঠক সহজেই খুঁজে নিতে পারে নিজেকে অথবা নিজের আনন্দ বেদনার বিগত ফিরিস্তি। উঠতি কিশোর থেকে পরিণত যেকোনো পাঠককে এক চুম্বকীয় আকর্ষণে নিজের ডেরায় বেঁধে ফেলেন তার বিচিত্রগামী সব কবিতা। কবিতার সংখ্যা ও তিনি কাব্যভুবনে একেবারেই অদ্বিতীয়। তার কবিতা যেকোনো পাঠকের কাছে যেন চেনা স্বর এবং অমৃত আস্বাদ। যেন নিজের বিগত প্রেমের গল্প, স্মৃতির সৌষ্ঠব প্রসাদ, দ্রোহ, অপূর্ণ প্রেমের বিবৃতি, রাষ্ট্রযন্ত্রণা, নষ্ট রাজনীতি, ভুল নেতা, অলিগলি, মাতৃহীন স্মৃতির শৈশব, শুদ্ধ সব মৌলিক অধিকার, প্রতিরোধ, প্রতিবাদ। এতসব মৌলিক অনুষঙ্গে যে কবিতা তা আবার সংখ্যা ও প্রকাশেও মেদহীন। খুব অল্পেই সচেতন পাঠক উদ্ধার করে নিতে পারে যাবতীয় কাব্যরস ও চাহিদা। ফলে অণুতেই মিলে পরম আয়ুর আয়ুর্বেদিক সাতকাহন। তবে অনুরাগীদের বিরাট একটি অংশের অনুযোগও কবিকে মেনে নিতে হয়েছে। এখনো হচ্ছে। তার একটি নান্দনিক ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন। আমার মতে কবিতার মতো রহস্যময়ী মানবিক জাদুমন্ত্রের এই কবির কবিতা ও কবি নিয়ে গবেষণার পরিসর ভবিষ্যতে বাড়বে। হেলাল হাফিজের অল্পে জমে যাওয়া মিথকথনের মতো কবিতা অচিরেই একাডেমিক প্রাসঙ্গিকতায় বিচার্য হবে। সময়, ইতিহাস, ব্যক্তিক প্রেম, সংগ্রাম, স্বৈরশাসনে রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়া সব কবিতা ভাবী গবেষককে ভাবিয়ে তুলবে। রুখে দাঁড়ানো তার সব কবিতা নিয়ে আমাদের কঠিন সময়ে ইতিহাসের মোড়ে মোড়ে অপেক্ষা করবে হেলাল হাফিজ। হেলাল হাফিজের কবিতার একটি উদ্ধৃতি দিয়ে জানতে ইচ্ছে করছে- ‘এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো। জানি আপনি আমাকে আর কখনো মেসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করবেন না ‘কেমন আছো প্রিয় আলী?
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চবি।
হেলাল হাফিজের কবিতা নিয়ে রচিত প্রথম গবেষণাগ্রন্থ ‘হেলাল হাফিজের কবিতা : ফুল ও ফুলকি’ গবেষণা গ্রন্থের রচয়িতা।