দেশ অস্থিতিশীল হলে কার লাভ-কার ক্ষতি এটা আমজনতাও বুঝতে পারেন। ফলে সাধারণভাবেই ধরে নেওয়া যায় লাভের আশায় একটি গোষ্ঠী শান্তিপ্রিয় এই বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন; কিন্তু এরা সত্যিকারের দেশ প্রেমিক হলে দেশের প্রতি মায়া ভালোবাসা থাকলে শান্তির বিকল্প ভাবতেন না। বাংলাদেশ সম্প্রদায়িক সম্প্রতির দেশ, এই দেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার কোনোভাবেই হবে না।
চলমান সমস্যা আমাদের সবারই জানা রয়েছে। সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গত ২৫ নভেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেফতারের খবরে তার একদল অনুসারী রাজধানীর ডিবি কার্যালয়ে সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করে। এর আগে গত ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়। সে মামলাতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। তাকে গ্রেফতার ও জামিন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর জামিন আবেদন ঘিরে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছে। ২৬ নভেম্বর দুপুরে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আদালতে হাজির করার পর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত। গ্রেফতারের প্রতিবাদে কলকাতাতেও বিক্ষোভ হয়েছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আটকের বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন)। তিনি 'বাংলাদেশে ইসকনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা' উল্লেখ করে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অবশ্য এর আগে যদিও আটই নভেম্বর একটি সংবাদ সম্মেলনে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ইসকনের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার তথ্য জানিয়েছিল সংগঠনটি।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেফতারের পর চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে মহানগর আদালতে তার জামিনের শুনানির সময় নির্ধারিত ছিল। সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে শত শত হিন্দু ধর্মাবলম্বী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে শুরু করেন। পাশাপাশি আদালত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর আদালত চত্বরেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহনকারী প্রিজনভ্যানটি ঘিরে ধরে বিক্ষুব্ধরা।
একপর্যায়ে মিছিল ও স্লোগান দেন সমর্থকরা। সেই সময় অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় আদালতসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা। ভাঙচুর করা হয় আশপাশের বিভিন্ন দোকানসহ স্থাপনায়। ওই সময় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের নৃশংস হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ। এ হত্যাকাণ্ডের পর দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক অশান্তির আশঙ্কাও দেখা দেয়।
কিন্তু না, যারা দেশে শান্তি চায়, তারা কখনো কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিকে উসকে দেবে না। আশার বিষয় হচ্ছে, দেশের বুদ্ধিজীবী ও আলেম সমাজ চলমান পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে শান্ত থাকতে বলছেন, আমরা সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই। কোনো সম্প্রদায়িক উসকানি চাই না। সম্প্রীতির মাধ্যমে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে চাই। কারণ কেউ যাতে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে না পারেন।
লেখক: হাসান আল বান্না, সাংবাদিক ও কলামিস্ট