স্পষ্টতই বিএনপি সংস্কারকে ভয় পাচ্ছে। তারা ভাবছে- এর মধ্য দিয়ে তাদেরও রাজনৈতিক শক্তি খর্ব হবে এবং এই ফাঁকে শক্ত অপজিশন পার্টি দাঁড়িয়ে যাবে। অথচ বিএনপির উচিত ছিল সংস্কারকে আরও বেশি সমর্থন করা। তাহলে দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রীয় যে ব্যবস্থাপনা ভেঙেচুরে গেছে, তা মেরামতের ঝক্কি নিতে হবে না তাদের। তারা একটা মসৃণ পথ পাবে।
নতুন রাজনৈতিক সেটেলমেন্ট না হলে বিএনপিও যে স্বৈরাচার হয়ে উঠতে পারে, তার নজির তারা পূর্বেই রেখেছে। তারাই প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নাকচ করেছিল। কেন? সেটা কি গণতন্ত্রের স্বার্থে ছিল?
এই সরকার কি বিএনপির সরকার না? তারা কি শুধু ভোটের দাবিতে জুলাই আন্দোলনে নেমেছে? তারা তাদের আহত কর্মীদের জিজ্ঞেস করুক, শহিদ পরিবারকে জিজ্ঞেস করুক যে, তারা কেন মাঠে নেমেছিল? শুধু একটা স্বৈরাচার সরিয়ে ফেয়ার নির্বাচন এগিয়ে আনতে নাকি যেই সিস্টেম ফেয়ার নির্বাচন বন্ধের পথ সুগম করেছিল সেই সিস্টেম ভেঙে একটা নতুন বন্দোবস্ত আনতে?
কী মনে হয়, এই সরকার এখন যেমন করে এগোচ্ছে, আর্মি যদি বিএনপির হাতে দেশ ছেড়ে দিত তাহলে এর চেয়ে ভালোভাবে তারা দেশ চালাতে পারত? কেউ সেটা বিশ্বাস করবে? একটা পোস্ট তখন ভাইরাল হয়েছিল যে, একদল ১৬ বছর খেয়েছে, আরেক দল ১৯ বছরের ভুখা। বহু চাঁন্দাবাজ রিপ্লেসমেন্টের ঘটনা কি সেটাই প্রমাণ করে না?
বিএনপির উচিত তাদের নিজেদের ভেতরে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি চালানো, যেন দেশের মানুষ যে তাদের ফেইলুরের কারণে স্বৈরাচার জেঁকে বসেছিল, সেই ধারণা থেকে বের হতে পারে। বৃদ্ধ জরাজীর্ণদের সরিয়ে তরুণদের সামনে আনা; এক ইশরাকের ‘আল্লাহু আকবার’ বলার চ্যালেঞ্জ যে বিএনপি সামাল দিতে পারে না, তাদের ক্যাপাসিটি সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে।
হ্যাঁ, তাদের পার্টি পুরাতন এবং দেশব্যাপী তাদের নেটওয়ার্ক আছে, যা একমাত্র আওয়ামী লীগের ছিল এবং নতুন কেউ সেটা করতে পারেনি এখনো। তবে তরুণদের যেই মানসিকতা ও নেতৃত্ব গড়ে উঠছে, বছর দুয়েক সময় পেলে তার চেয়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে, ভরসা করার বহু যুক্তি আছে।
বিএনপির এখন শুধু জমিদারি হারানোর ভয়। নয়া তরুণদের কর্মসূচি এবং অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি ভয় না পেয়ে বিএনপির উচিত নিজের শেকড়পচা দানবীয় দলটাকে ভয় করা যে, কবে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে। আর কানটাকে শুধু আওয়ামী লীগের গুজবের দিকে না রেখে এই মাটির দিকে রাখা- কী আওয়াজ আসছে গহিন থেকে।
লেখক: তরুণ আলেম ও অ্যাক্টিভিস্ট