অকল্পনীয় এক বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে সোনার বাংলায়। ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকারি দল ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বলপ্রয়োগকে কেন্দ্র করে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে।
শত শত ছাত্র-জনতার প্রাণ কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। কিন্তু সর্বস্তরের মানুষের বিল্পবী ও প্রতিবাদী অবস্থানে সেটি আর সম্ভব হয়নি।
ফলে তারুণ্যের অদম্য সাহস ও দৃঢ়তায় একটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। বিনির্মাণ হতে যাচ্ছে সাম্য, শান্তি ও সম্প্রীতির এক নয়া অধ্যায়। যেখানে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় থাকবে না দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ঘুষ ও নিয়োগ বাণিজ্য।
দল মত জাতি ধর্মের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। থাকবে সম্প্রীতির বন্ধন। মানুষের মধ্যে থাকবে উচ্ছ্বাস, তারা উদ্দীপনা নিয়ে নিয়োজিত থাকবে নিজের কর্মে। জনগণ প্রতিহিংসা পরায়ণ হবেন না, সবাই মিলে প্রিয় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দিনরাত সচেষ্ট থাকবেন।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সাম্য, শান্তি ও সম্প্রীতির পৃথিবী গড়তে সবসময়ই নারী-পুরুষের অবদানকে সমান চোখে দেখেছেন। তাইতো তিনি পুরুষদের সর্বেসর্বা মনোভাবকে প্রত্যাখ্যান করে তার কবিতায় তুলে এনেছেন অমোঘ সত্য;
দ্বিধাহীন কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন সাম্যের বাণী ‘সাম্যের গান গাই/আমার চক্ষে পুরুষ রমনী কোনো ভেদাভেদ নাই।/বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।/বিশ্বে যা কিছু এলো পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি/অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।’ কবি রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে নারী ও পুরুষকে সমানভাবে দেখেছেন। কোনো পার্থক্য করেননি।
আজকে সরকার পরিবর্তনে তারুণ ছাত্রসমাজ যে ভূমিকা রেখেছেন তাতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তরুণরাই আগামীর স্বপ্ন পূরণে পথ প্রদর্শক। এই তারুণ্যের সংগ্রামে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে অংশ নিয়েছে মেয়েরাও। তারা বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে দাঁড়িয়েছেন দৃঢ়তার সঙ্গে, রাজপথে দিয়েছেন প্রাণ বিসর্জন। জাতীয় কবির ভাষায়, ‘শষ্য ক্ষেত্র উর্বর হল,/পুরুষ চালাল হাল,/নারী সেই মাঠে শষ্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল।/নর বাহে হল/নারী বহে জল/সেই জল মাটি মিশে’/ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে।/অর্থ্যাৎ সফল অর্জনে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
আমরা চাই নতুন এক উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নবীন-প্রবীণ, নারী-পুরুষ সবাই মিলে কাজ করতে, তাহলেই আমরা কম সময়েই বেশি ফল লাভ করব। একটি সুন্দর ও উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমরাও ভূমিকা রাখতে চাই সাধ্যানুযায়ী। দেশবাসীর চাওয়া দ্বন্দ্ব-সংঘাত মুক্ত একটি বাংলাদেশ। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমিন।
লেখক: হাসান আল বান্না, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক