কাপ্তাই সড়ক চারলেন-এ আর কত রক্ত চাই!
মো. শাহ জালাল মিশুক
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫৫ পিএম
মো. শাহ জালাল মিশুক
মানুষের জীবন বলতে কেবল একজন মানুষের একক জীবন বোঝায় নাহ! এর সাথে জড়িয়ে থাকে আরো অনেক মানুষের জীবন। তাই তো একটি জীবন বিচ্ছিন্ন হলে অন্য জীবনেও দুঃসহ যন্ত্রণার আঁধার নেমে আসে। তবে চিরসত্য মরণকে অস্বীকার করা যায় না। মরণ তো আসবেই, তবে এভাবে কেন? স্বাভাবিক মৃত্যুর বেদনা যেখানে সহ্য করা যায় না, সেখানে মানবসৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার মৃত্যুও কি মানা যায়? গত সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কে বেপরোয়া শাহ আমানত পরিবহনের বাস একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে প্রাণ যায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর দুইজন মেধাবী শিক্ষার্থীর।
চুয়েট পরিবারে নেমে আসে এক আবেগঘণ পরিবেশ। এবারই প্রথম নয় চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কে এর আগেও প্রাণ হারিয়েছে চুয়েট এর শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত মাসের ২১ মার্চ চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালী আপন ক্লাবের সামনে পিকআপের ধাক্কায় নিহত হন অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ আবদুল হান্নান (৩৪)। আহত হন আরো তিন শিক্ষার্থী। এভাবে চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কে ২০২৩ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ১৫ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী।
এগুলোকে দুর্ঘটনা বলা হবে কি না, তা এখন ভাবার সময় এসেছে। দুর্ঘটনা বললে দৈব বা প্রকৃতির ওপর দায় চাপানো হয়ে যায়। আসলে দুর্ঘটনা ঘটার সব উপকরণই এ সড়কে এখন নিয়মিত বিদ্যমান। তাই এটাকে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড বলা হবে কি না, তা নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়ক চার লেন এ উন্নীত করা ও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ছিল দীর্ঘদিনের দাবি। কিন্তু কেনো এই দাবি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি???
একটা দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না" প্রবাদবাক্যটির গভীরতা অনেক গভীরে প্রোথিত। কথায় আছে- "যে হারায়, সে-ই বোঝে"। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একটা সন্তান তাঁর পুরো পরিবারের কাছেই একেকটা স্বপ্নের বুনন। মা-বাবার বুকবাঁধা আশার পাদপ্রদীপ। আমাদের দেশে প্রতিটা দিন, হ্যাঁ প্রতিটা দিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনায় আমাদের আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-পরিজন অকালে চিরবিদায় নিচ্ছে। এই অকালে প্রিয়জন হারানো; এই ব্যথা দূর থেকে আমি-আপনি হয়তো পুরোপুরি বুঝতে সক্ষম হবো না কিন্তু যে বা যার পরিবার আপনজন হারায়, তাঁরাই বুঝতে পারে তাঁদের ক্ষতটা কতখানি; কী হারিয়েছেন তাঁরা।
উত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে ব্যস্ততম যোগাযোগ মাধ্যম হল চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়ক। কিন্তু নানা কারণে ব্যস্ততম এই সড়ক বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠছে। সড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা, বাড়তি গাড়ির চাপ, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালক ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটারে অন্তত ৪০টি বাঁক সড়কটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও বিশৃঙ্খল সড়কে পরিণত করেছে। এতে নিত্য ঘটছে দুর্ঘটনা, ব্যাপক যানজটে প্রতিনিয়ত কষ্ট পাচ্ছেন যাত্রীরা।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, চুয়েট।