Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের চাওয়া

Icon

হাসান আল বান্না

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৩১ পিএম

সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের চাওয়া

মানুষ সরকারের কাছে নগদ টাকা-পয়সা চায় না। সাধারণ মানুষের চাওয়াও খুবই অল্প। তারা নিরাপদে দুবেলা খেয়ে পরে বাঁচতে চায়। কিন্তু পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিটি যুদ্ধ করে বাঁচতে চান, বেঁচেও আছেন কিন্তু সেই বাঁচাটা মরে মরে বাঁচার সামিল। আমরা ঘুম থেকে উঠেই যখন খবরের কাগজে চোখ রাখি, তখন দেখি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। 

ব্যাংকের টাকা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে বের করে নেওয়া হচ্ছে। অনেক ব্যাংকের মূলধন আমানতের চাইতেও কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হতাশাজনকহারে কমছে। ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় প্রতি ডলারের মূল্য স্থিতিশীল থাকলেও সেই ডলার দীর্ঘদিন ধরে ১০০ টাকার ওপরে অবস্থান নিয়ে আর নামছে না। 

সমাজের সচেতন মানুষ ও সংশ্লিষ্টরা এসব সংবাদে টেনশনে থাকেন; কিন্তু দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা এসব খবর খুব একটা রাখেন না। শোনলেও আমলে নেন না। কারণ তারা মনে করেন এসব তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। তাহলে তারা আসলে কি নিয়ে ভাবেন বা স্বল্প আয়ের মানুষগুলো এবং হতদরিদ্ররা তাহলে কি নিয়ে ব্যস্ত? তারা চিন্তায় থাকেন কিভাবে সংসার চালাবেন। নির্ধারিত আয়ে সংসার চালাতে ক্রয় লিস্ট থেকে আর কি কি বাদ দিতে হবে তা নিয়ে। 

সমাজের যে কেউই জানেন, মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে অবস্থান করছে পণ্যমূল্য। খুবই ধনিক শ্রেণীর লোকদের কথা বাদ। যারা শিল্পপতি, কোটিপতি বা শত শত কোটি টাকার মালিক, বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিক, তারা নিজেরা বাজারে যান না। পণ্যমূল্য নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। থাকারও কথা নয়, কারণ তাদের যথেষ্ট আয় আছে তারা মূল্য বাড়লেও সমস্যায় পড়েন না।

অন্যদিকে যারা ঘুসখোর, সুদখোর, চাঁদাবাজি করে অনেক টাকা মালিক হয়েছেন, অথবা দুর্নীতি ও সরকারি টাকা লুটপাট করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন তারাও বাজারের উচ্চমূল্য নিয়ে চিন্তিত নন। তারা এসব ভাববারও সময় পাচ্ছেন না। কারণ, অবৈধপন্থীয় তিনি আয় করছেন, মূল্য যতো বাড়–ক না কেন, ব্যয় করতে গিয়ে তারা কোনো চিন্তা করেন না। ফলে এই দুই শ্রেণীর লোকেরা বাজার পরিস্থিতি যাই হোক চিন্তার করার সময় আসলেই তাদের হাতে নেই। 

কিন্তু দরিদ্র মানুষগুলোর কী অবস্থা? এটা ভাববার দায়িত্ব কিন্তু সরকারের। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সব শ্রেণীর জনসংখ্যার জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা এবং মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা; কিন্তু সেটি কি আসলেই সম্ভব হচ্ছে। স্বল্প আয়ের এবং দরিদ্র মানুষের স্থায়ী সবজি হচ্ছে গোল আলু। তিন মাসের বেশি সময় ধরে সেই আলু বিক্রি করা হচ্ছে অস্বাভাবিক মূল্যে। 

কোল্ডস্টোরেজ সংরক্ষিত আলুর মূল্য কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১৩ থেকে ১৫ টাকা হয়ে থাকে। অথচ সেই আলু ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হয়েছে দীর্ঘদিন। এখন সেই সংরক্ষিত পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। বাজারে নতুন আলু এছেছে প্রায় এক মাস ধরে, এক সপ্তাহ আগেও নতুন আলুর কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকায়। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। 

ঢাকায় বেসরকারি এক চাকরিজীবীর বউ ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলু কিনতে গিয়ে ৮০ টাকা দাম শুনে না কিনে ফিরে এসেছেন। এমন অনেক বধূরাই হয়তো প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পণ্য না কিনে ফিরছেন। এসব খবর যার বা যাদের রাখার কথা তারা কিন্তু রাখছেন না। তারা এয়ারকন্ডিশন রুমে বসে দরিদ্র এসব মানুষগুলোর ট্যাক্সের টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করছেন। 

মানুষ দুঃখ ক্ষোভ তাদের চোখে লাগে না। টাকার মৌচাকে দেশটিভি, দৈনিক ভোরের কাগজ ও বার্তা সংস্থা ইউএনবির কার্যালয় রয়েছে। ওই কার্যালয়গুলোর সামনে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) (ন্যায্য মূলে পণ্য বিক্রির গাড়ি) ট্রাকপণ্য বিক্রি করে। ওই ট্রাকের সামনে সাধারণ মানুষের ভিড় দেখলে যে কেউ আন্দাজ করতে পারবেন দেশের সাধারণ মানুষর পরিস্থিতিটা আসলে কতটা খারাপ।

ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইনে মানুষর অপেক্ষা আর ওই ট্রাকের তিনপাশে (লাইনের বাইরে থাকা) মানুষের হাহাকার চিত্র বলে দেয় মানুষ কমমূল্যে পণ্য কিনতে কতটা পেরেশান। মানুষ এই পেরেসানি চান না। স্বাভাবিক নিয়মে বাঁচতে চান। 
লেখক: হাসান আল বান্না, সাংবাদিক ও কলামিস্ট 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম