তিনি ফিরে এসেছেন দিগভ্রান্ত এক জাতির ক্যাপ্টেন হয়ে। ফিরে এসেছেন ঝঞ্জা-বিক্ষুব্ধ বৈরী সময়ে একমাত্র কাণ্ডারি হয়ে। এসেছেন অন্ধকারে আলোর দিশারি হয়ে। পিতামাতা, ভাই ও আত্মীয়-পরিজন হারিয়ে শোকে বিহ্বল থাকার সময়টুকুও তিনি পাননি। স্বদেশের মাটি ও মানুষের অমোঘ ডাক সেদিন উপেক্ষার উপায় জানা ছিল না তার। দিনটি ছিল ১৭ মে ১৯৮১। রোববার। আর দশটি দিনের মতো রৌদ্রোজ্জ্বল ছিল না সে দিনটি।
একদিকে ঝড়বৃষ্টিতে বৈরী প্রকৃতি আর অপরদিকে স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু ও ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। এসব কিছুই উপেক্ষা করে তিনি ফিরলেন বীরকন্যা হয়ে বাংলার মাটিতে। তিনি ইতিহাসের কালজয়ী মহামানবের কন্যা, তিনি বাঙালির মুক্তির মহানায়কের যোগ্য উত্তরসূরি। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সংকল্পে তিনি অবিচল। প্রগাঢ় দেশপ্রেম আর নির্ভিক চিত্ত তাকে পরিণত করেছে দুর্গতদের কণ্ঠস্বরে। নির্যাতিত মানুষের অধিকারের প্রশ্নে তিনি আপসহীন। দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতায় তিনি অনন্য। তিনি শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, সেদিন বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছেন কোটি বাঙালির আশার প্রদীপ হয়ে। তিনি এসেছেন পিতার পথে পথ মিলিয়ে বাঙালি জাতিকে আলোর ঠিকানায় পৌঁছে দিতে।
১৭ মে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। কী ব্যাকুল প্রতিক্ষা মানুষের! ঠিক যেন বঙ্গবন্ধু ফিরছেন স্বদেশের মাটিতে। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাকে শুধু একনজর দেখার জন্য ছুটে আসা জনতার কণ্ঠে সেদিন ধ্বনিত হচ্ছিল— ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’; ‘ঝড়বৃষ্টি আঁধার রাতে আমরা আছি তোমার সাথে’; ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’। দিশাহারা বাঙালির দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ছয় বছরের নির্বাসন শেষে স্বদেশের মাটিতে পা রাখলেন শেখ হাসিনা। এদিন বিকাল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। দেশের মানুষের ভালোাবাসায় আপ্লুত বঙ্গবন্ধুকন্যা সেদিন জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন— ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।‘ সেদিন তিনি আরও বলেছিলেন, আমার আর হারানোর কিছুই নেই। পিতামাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। তিনি সেদিন এও বলেছিলেন, আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আমি আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে থাকতে চাই।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা তখন ছোটবোন শেখ রেহানা ও দুই সন্তানসহ স্বামীর কর্মস্থল পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন, বিধায় তারা প্রাণে বেঁচে যান। পশ্চিম জার্মানি থেকে সেই সময় ভারত সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন শেখ হাসিনার স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী এমএ ওয়াজেদ মিয়া। ২৫ আগস্ট সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটযোগে দিল্লি পৌঁছান শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, ওয়াজেদ মিয়া এবং তাদের দুই সন্তান। বিমানবন্দর থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির ডিফেন্স কলোনির একটি বাসায়। সেখানে কারও সঙ্গে যোগাযোগ এবং পরিচয় না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল তাদের। শুরু হয় তাদের কঠিন নির্বাসিত জীবন। পরে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দেশে গণতন্ত্র ও প্রগতিশীল রাজনীতি ফিরিয়ে আনা এবং মানুষের হাত অধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে দুই শিশুসন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াদেজ পুতুলকে ছোটবোন শেখ রেহানার কাছে রেখে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা।
অথচ ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! যার পিতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও দেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি, তার স্বদেশে ফেরা ছিল কন্টকাকীর্ণ। তবু জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তিনি সেদিন দেশে ফিরেছিলেন মাটির টানে আর মানুষের মায়ায়। সেই সময় ক্ষমতাসীন জিয়াউর রহমান ও তার দোসররা জাতির পিতার কন্যাকে দেশে ফিরতে বাধা দেওয়ার সব ধরনের চেষ্টাই করেছিল। এমনকি তার দেশে ফেরা ঠেকাতে ‘শেখ হাসিনার আগমন প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন হয়েছে, কুরুচিপূর্ণ লিফলেট-পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে। এতে অবশ্য বঙ্গবন্ধুকন্যার মনোবল এতটুকু টলানো যায়নি। সাহসী সংকল্প আর জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফিরতে এতটুকু পিছপা হননি। তবে দেশে ফিরে এক বৃহৎ শূন্যতায় নিজেকে আবিষ্কার করলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার ঘর নেই, ঘরের আপনজনও কেউ নেই। দেশে ফেরার আবেগসিক্ত প্রতিক্রিয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা নিজের লেখা গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন ঠিক এভাবে— ‘আমার দুর্ভাগ্য, সব হারিয়ে আমি বাংলাদেশে ফিরেছিলাম। লক্ষ মানুষের স্নেহ-আশীর্বাদে আমি সিক্ত হই প্রতিনিয়ত।
কিন্তু যাদের রেখে গিয়েছিলাম দেশছাড়ার সময়, আমার সেই অতিপরিচিত মুখগুলো আর দেখতে পাই না। হারানোর এক অসহ্য বেদনার ভার নিয়ে আমাকে দেশে ফিরতে হয়েছিল’ (ড. আবদুল মতিন চৌধুরী: আমার স্মৃতিতে ভাস্বর যে নাম, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, পৃ: ৭৪)। দেশে ফেরার পর জাতির পিতার কন্যার থাকার জায়গাটুকুও দেওয়া হয়নি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িটি ছিল জিয়াউর রহমান সরকারের দখলে। ১৭ মে সন্ধ্যায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের জনসভা শেষে সে বাড়িতে থাকা দূরের কথা, শ্রদ্ধা নিবেদন ও মিলাদ পড়ার জন্য পর্যন্ত তাকে যেতে দেওয়া হয়নি। পরের দিনগুলো তার কেটেছিল অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো। আজ এখানে তো কাল ওখানে। তবু দমে যাননি বঙ্গবন্ধুকন্যা। ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চ সামরিক শাসন জারির দুদিন পর স্বাধীনতা দিবসে একমাত্র শেখ হাসিনাই সাভার স্মৃতিসৌধে গিয়ে বলেছিলেন— আমি সামরিক শাসন মানি না, মানব না। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবই করব’।
রাজনীতির হাতেখড়ি যার খুব ছোটবেলা থেকে, ছাত্ররাজনীতিতে যার বর্ণাঢ্য বিচরণ আর ধমনিতে যার বঙ্গবন্ধুর রক্ত, তিনি দেশে ফিরে রাজনীতির মূলধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হলেন। লড়াই শুরু করলেন জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত টানা ৯ বছর রাজপথে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। নেতৃত্বের কোন্দল আর ষড়যন্ত্রে বিভাজিত দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার চ্যালেঞ্জেও তিনি সফল হয়েছেন। তার নেতৃত্বেই ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা পরিবর্তন করে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
পরে ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নেতৃত্বে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২১ বছর পর পথ হারানো বাংলাদেশ আবার সঠিক পথে চলতে শুরু করে। প্রশাসন ও অন্যান্য স্তরে তখন স্বাধীনতাবিরোধী ও আওয়ামী বিরোধীদের উপস্থিতি সুস্পষ্ট। এমন জঞ্জাল নিয়েই সরকারের দায়িত্ব নিতে হয় তাকে। দক্ষ নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় তখন তিনি সব সামলে নেন। প্রধানমন্ত্রী হয়েই দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বণ্টনে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি করেন। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে কয়েক দশকের চলমান চরম সংকট নিরসন করে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে ২০০৮, ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সরকারের টানা তিন মেয়াদে বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। তার রাষ্ট্র পরিচালনার মুন্সিয়ানায় সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানব উন্নয়নসহ প্রায় সব সূচকে পাকিস্তানকে অতিক্রমসহ অনেক সূচকে বিশ্বের অনেক দেশকে আমরা ছাড়িয়ে গেছে। মাথাপিছু আয়, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। এটিই অভিজ্ঞ রাজনীতিক ও দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার অনবদ্য সাফল্য। তার মতো নেতৃত্ব পেয়েছি বলেই সব প্রতিকূলতা জয় করে আজ আমরা উন্নয়নশীল বিশ্বে পদার্পণ করছি। উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে বিনির্মাণের পথে দ্রুতলয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এ দেশের মানুষ আজ সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছেন। গৃহহীন ও আশ্রয়হীন মানুষ বিনামূল্যে ঘর পাচ্ছেন। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা বিধান করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, যার মাথাপিছু জিডিপি আঞ্চলিক প্রতিবেশীর চেয়ে অনেক বেশি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৯ বিলিয়ন থেকে ৪৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, গড় আয়ু ৪৭ বছর থেকে বেড়েছে ৭৩ বছরে এবং সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি। খাদ্য উৎপাদন, দারিদ্র্য হ্রাস, উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ প্রশমনসহ আর্থ-সামাজিক খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে বাংলাদেশ। এ সব কিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায়।
স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর একের পর এক চ্যালেঞ্জ জয় করে বীরদর্পে এগিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। অন্তত ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও দমে যাননি তিনি। সব বাধাবিপত্তি আর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে শেখ হাসিনা অন্ধকার থেকে আলোর পথে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় দেশকে শামিল করেছেন। যিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক, লক্ষ্য যার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ, তার গতি রোধ করার সাধ্য কারও নেই। শেখ হাসিনা শত প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও অবিচল থেকেছেন, হয়েছেন বিজয়ী। এটি বিশ্বের বিস্ময়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকিসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে তাকে। সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনা গোটা বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। শেখ হাসিনা আজ বিশ্ব পরিমণ্ডলে দুর্গতদের কণ্ঠস্বর, তিনি প্রাচ্যের নতুন তারকা, তিনি মানবতার জননী, তিনি বিশ্বের অন্যতম সৎ ও পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রী, তিনি বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে অনুপ্রেরণাদায়ী, অনুসরণীয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে এবং বিশ্ব পরিমণ্ডলে তিনি অনিবার্য।
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পুনর্জন্ম দিয়েছেন। তিনি ফিরে এসে বাঙালি জাতির মুক্তির স্বপ্ন যেমন দেখেছেন, তেমনি বাঙালিকে মুক্তির স্বপ্ন দেখা শিখিয়েছেন। তার আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় স্বৈরতন্ত্রের অবসান শেষে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন হয়েছে। তিনি এসেছিলেন বলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ পুনরায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে; স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের দর্প চূর্ণ হয়েছে। তার মতো অকুতোভয় রাজনীতিক ও মানবিক রাষ্ট্রনায়ক বিশ্বে বিরল। নীতি ও আদর্শে বঙ্গবন্ধুর মতোই দৃঢ় ও সাহসী রাজনীতিক শেখ হাসিনা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুকন্যা দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ প্রায় ৪২ বছর দলের প্রধান এবং ২০ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা স্বদেশে না ফিরলে বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।
একজন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের গল্প তাই এভাবেই লেখা যায়, অতঃপর তিনি এলেন/তিনি এলেন পিতার পথে পথ মিলিয়ে/আলোর পথ খুঁজে দিতে/তিনি এলেন/রুদ্ধ শেকল ভেঙে, গলিয়ে/জাতিকে আপন করে পেতে।
শ ম রেজাউল করিম : এমপি, মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়