Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

ইচ্ছামতো ইনহেলার ব্যবহারে মৃত্যুঝুঁকি!

Icon

ডা. মুশফিক নেওয়াজ আহমেদ

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৩, ০৯:৩১ পিএম

ইচ্ছামতো ইনহেলার ব্যবহারে মৃত্যুঝুঁকি!

আজ ২ মে পালিত হলো বিশ্ব অ্যাজমা (হাঁপানি) দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য- Asthma Care For All. অ্যাজমা চিকিৎসায় সবার সমান অধিকার! অ্যাজমা চিকিৎসা বিশ্বব্যাপী সার্বজনীন হোক, চিকিৎসা সামগ্রী সহজলভ্য হোক এবং সবস্তরের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে হোক- এটাই মূল চাওয়া। আমাদের দেশে ওষুধের খরচ উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম হলেও বাস্তবতা বলে দীর্ঘমেয়াদি অসুখগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত অসুখটি অ্যাজম-হোক রোগী চিকিৎসক বা অচিকিৎসক।

নিজের ইচ্ছামতো উপশমকারী ইনহেলার/ব্লু ইনহেলার ব্যবহার অথবা কোনো এককালে চিকিৎসকের পরামর্শে দেওয়া প্রতিরোধকারী ইনহেলার অল্প সময় ব্যবহার অথবা কয়েক মাস বা সারাবছর মন্টিলুকাস্ট খেয়ে যাওয়া-অ্যাজমার এই যে সেল্ফমেড চিকিৎসা তা আদতে খুব নিরীহ মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে রোগীর জন্য ধ্বংসাত্মক।

মনে রাখতে হবে, অ্যাজমা চিকিৎসার অনুষঙ্গ মূলত দুটি- প্রয়োজনীয় জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এবং ওষুধ। অ্যালার্জি উদ্রেককারী উপাদান যেমন-ধুলাবালি, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, পরাগরেণু, যেকোনো স্প্রে, প্রাণির লোম বা পাখির পালক ইত্যাদি থেকে সতর্ক থাকা, খাবারের কোনো উপাদানে অ্যালার্জি থাকলে তা চিহ্নিত করা ও পরিহার করা, ধূমপান ত্যাগ করা, কাজের পরিবেশগত ঝুঁকি যাচাই করা, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক উৎকণ্ঠা বা দুশ্চিন্তা না করা, কিছু ওষুধ সেবনের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাক্সিন নেওয়ার মাধ্যমে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে সম্ভব! ওষুধের মধ্যে মূলত দুই ধরনের ওষুধ অ্যাজমাতে কার্যকরী-উপশমকারী এবং প্রতিরোধক।

উপশমকারী ওষুধ সাময়িক আরাম দেয়, প্রতিরোধক ওষুধ রোগের ধরন বা প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, ভবিষ্যৎ অ্যাজমা এটাকে প্রতিরোধ করে, ক্ষেত্রবিশেষে কমবয়স্ক রোগীদের অ্যাজমা নিরাময়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুখে খাওয়ার ওষুধ থাকলেও অ্যাজমাতে ইনহেলারই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে। উপশমকারী ইনহেলারগুলো সাধারণত নীল রঙয়ের ও প্রতিরোধকারী ইনহেলারগুলো সাধারণত গোলাপি বা বেগুনি রঙয়ের হয়ে থাকে। এই কালার কোড অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর মেডিসিন হিস্ট্রি নেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সুবিধা দেয়।

অ্যাজমা রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় যে ইনহেলার সেটি হচ্ছে উপশমকারী ইনহেলার বা ব্লু ইনহেলার; যাতে আছে সালবিউটামল-দাম তুলনামূলক সবচেয়ে কম এবং খুব দ্রুত কাজ করে শ্বাসকষ্ট অনেক সময় মুহূর্তে কমিয়ে আনতে পারে এটি। এ কারণে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ বা ফলোআপ আর না করে মোবাইলের মতো ব্যাগে বা পকেটে এটিকে নিত্যসঙ্গী বানান-চিকিৎসা বন্ধ রেখে বা অনিয়ম করে শ্বাসকষ্ট বাড়ান এবং সেই সময় ব্লু ইনহেলার ব্যবহার করে সাময়িক আরাম নিশ্চিত করেন।

গবেষণা বলছে, সঠিক চিকিৎসা অনুসরণ যদি কেউ না করে এবং এর জন্য যদি কাউকে সালবিউটামল ইনহেলার (বা ব্লু ইনহেলার) গড়ে প্রতিদিন দুই চাপ করে মোট দুইশ চাপ (এক ক্যানিস্টার বা এক ইনহেলার=দুইশ চাপ) ইনহেলার ৩ মাসের মধ্যে নিতে হয়, তাহলে তার ভবিষ্যতে তীব্র অ্যাজমা এটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, কারো যদি সালবিউটামল ইনহেলার বা ব্লু ইনহেলার গড়ে প্রতিদিন ছয় চাপ করে মোট দুইশ চাপ (এক ক্যানিস্টার বা এক ইনহেলার=দুইশ চাপ) ইনহেলার ১ মাসের মধ্যে নিতে হয় এবং প্রতি মাসে যদি তার একটি ইনহেলার হিসেবে সারাবছর মোট ১২টি ইনহেলার বা তার বেশি প্রয়োজন হয়, তাহলে তার মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি।

অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে তাই ব্লু ইনহেলারের ইচ্ছামতো ব্যবহার আর নয়। চাই সঠিক জীবনাচরণ এবং সঠিক চিকিৎসা। চাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিয়মিত ফলোআপ। প্রশান্তির শ্বাস হোক নিত্যসঙ্গী।

লেখক: বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম