Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

অগ্নিকাণ্ড: এক তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি

Icon

সায়েম খান

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩৮ পিএম

অগ্নিকাণ্ড: এক তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি

প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডই একটি বিশেষ কারণ ছাড়া ঘটার কথা না।  আগুনের উৎস ও উৎপত্তিস্থল, তার বিস্তার, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, হতাহতের সংখ্যা, নাশকতা হলে তার উদঘাটনের চেষ্টা, আগুন লাগার যৌক্তিক কারণ ইত্যাদি আগুন নেভানোর পর  প্রশাসনিকভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এর প্রতিবেদন তৈরি করা হয়ে থাকে। এ বছরের রমজান মাসে প্রতিনিয়ত আগুন লাগার ঘটনা শুনতে পাচ্ছি। বিশেষ করে ভয়াবহ এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রাজধানী ঢাকা শহরেই একের পর এক ঘটছে। আমরা জনগণ রোজা রেখে সংযমী হয়ে আগুনের লেলিহান শিখার বিস্তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছি না। একটু হাপিত্যেস করি হয় তো, এতে জাতিগতভাবে কারো টনক নড়ে বলে মনে হয় না।

তবে মজার বিষয় হলো- অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণের পর আমরা বেমালুম ভুলে যাই দুদিন আগে কী হয়েছিল। কারণ দুদিনের আগের ট্রেন্ডে আমরা নাই, আমরা লেটেস্ট ট্রেন্ডে নিজেদের মানিয়ে চলি। এই যেমন আজ নিউমার্কেটের অগ্নিকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ড। তাই আমারও আজ কলাম লেখা। ট্রেন্ডে গড্ডালিকা প্রবাহে আমরা নিজেদের গা ভাসিয়ে দিচ্ছি। তারপর আমাদের মনেও থাকে না প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে। তদন্ত অনুসারে এর সঠিক বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা, কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে কিনা, আইনি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি কতদূর, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া কী ইত্যাদি। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা এ প্রতিবেদনের বিষয়গুলোতে আর ওয়াকিবহাল না। 

আগুন যখন কোথাও লাগে, তখন অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিরূপনের চাইতে অগ্নিনির্বাপণই সবার কাছে খুব জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ।  আগুন নেভানোর পর আমরা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি এ কারণে যে, আমাদের বিপদ কেটে গিয়েছে। কিন্তু বিপদ যে আবারো আসন্ন, সেটা নিয়ে আমাদের সতর্কাবস্থানে থাকতে হবে, তা নিয়ে আমাদের সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে আমি মনে করি। 

রাজধানী ঢাকায় ঈদের কেনাকাটার সবচেয়ে বড় দুটি মার্কেট বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেট। দুটি মার্কেটই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা বা বেড়ে উঠা। যত্রতত্র দোকান বসানো, ঘিঞ্জি পরিবেশ, মানুষের অত্যধিক ভিড়, নিরাপত্তাহীনতা, যানজট, নানাবিধ অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয় এ মার্কেটগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। শুধু পরিকল্পনামাফিক এ দুটি মার্কেটে বিশেষ করে ঈদের কেনাকাটার জন্য সুশৃংখলভাবে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে ব্যবসা কি করা যেত না? এতে ক্রেতা আরামদায়ক পরিবেশে কেনাকাটা করতে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচতেন আর বিক্রেতাও তার পণ্য বিক্রি করে সন্তুষ্ট থাকতেন। আমাদের দরকার ছিল- একটি সুশৃংখল ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা; যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতার জানমালের নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়। এটার জন্য আমি মনে করি, প্রতিটি মার্কেটের কমিটির সদিচ্ছার দরকার। সিঙ্গাপুরেও ‘টেক্কা মার্কেট’ নামে একটি বিপণি বিতান আছে, যেখানে বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটের মতো সিঙ্গাপুরে বসবাসরত বাংলাদেশি ও ভারতীয়সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষ কেনাকাটা করেন। কিন্তু প্রতিবছর এরকম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা টেক্কা মার্কেটের ইতিহাসে আছে বলে মনে হয় না।

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে- ‘রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল’। ঠিক তেমনি বঙ্গবাজার যখন পুড়ছিল, কিছু মানুষ তখন সেলফি তুলছিলেন। আর আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা সেসব সেলফির বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছিলাম আমাদের ফেসবুক প্রোফাইল, পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল।  এসব ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আমাদের কাছে লাইক, কমেন্ট আর ভিউ বৃদ্ধির জন্য নিতান্তই কন্টেন্ট হিসেবে উপজীব্য। আজ হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও দোকানের কর্মচারী যখন নিঃস্ব হয়ে পথে পথে ঘুরছেন, কই তাদের নিয়ে তো নতুন করে কোনো কন্টেন্ট তৈরি হচ্ছে না।  তাদের খোঁজ খবরও আমরা কেউ নিচ্ছি না।  এদের দায় নিয়ে দায়বদ্ধ হলে না জানি আবার নিজের পকেটের পয়সা খসে না পড়ে যায়। ওই সব ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কষ্টের কথা, তাদের শুন্য থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলার কেউ নেই। আর এখানেই কবি নীরব!

বাংলাদেশে চোখ ধাঁধানো কাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পড়লেও অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা বহুগুণ পিছিয়ে আছি ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে। আমরা মনে করি আমাদের ফায়ার সার্ভিস কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানার পর থেকে প্রাণপণে চেষ্টা করে উদ্ধার কাজে। তাদের কর্ম তৎপরতা সত্যিই প্রশংসংনীয়।  তবে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আমাদের দেশে তেমন কোনো গবেষণা নেই। মিডিয়ার পাশাপাশি সরকারিভাবে এ নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করা যেতে পারে। 

একের পর এক ঢাকা শহরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আদৌ কি কাকতালীয় ঘটনা নাকি এটি ‘আগুন সন্ত্রাস' তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো দরকার বলে মনে করি।  

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম