Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

নটর ডেম কলেজের ৭৫ বছরের পথ

Icon

অধ্যাপক নির্মল সরকার 

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:১১ পিএম

নটর ডেম কলেজের ৭৫ বছরের পথ

দেশধন্য এক কলেজের নাম নটর ডেম। ২০২৪ সালে কলেজটি পঁচাত্তরে পা রাখবে; পরিচয় হবে ৭৫-বর্ষী এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে। জানুয়ারি ২৮ তারিখে ৭৪ বছরপূর্তি পালন অনুষ্ঠান সে খবরটি দিয়ে গেল ডেমিয়ানদের। 

সুখের কথা— এই কলেজে সুযোগ হয়েছিল আমার কাজ করার। সময়টি কম দীর্ঘ নয়; সেপ্টেম্বর’ ১৯৮৭ থেকে জুন ২০০৮, একুশ বছরের কাছাকাছি। নানা স্মৃতিতে ভরপুর ছিল সেই দিনগুলো। সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে (১৯৯৯) অংশগ্রহণের স্মৃতি আজও অমলিন। কলেজের বিশেষ দিনগুলো এখনো আমাকে তাড়িত করে। তবে কেন ছাত্রদের নটর ডেমকে মনে রাখা দরকার সে প্রেক্ষাপটে নিচের ধারণার মতামত। 

নটর কলেজের নানা দিকের সুখ্যাতি দেশজুড়ে। অনেকের জিজ্ঞাসা— কেমন করে এটা সম্ভব হলো? মজার কথা— কলেজের দৃশ্যমান কিছু অবস্থা সে উত্তর বলে দেয়। যেমন— কলেজের অবস্থানিক ও প্রাকৃতিক শোভা, বিশাল বিশাল শ্রেণিকক্ষসমেত সুরম্য বিল্ডিং, শ্রেণিকক্ষের পাঠদান উপযোগী শিক্ষাপোকরণ, উন্মুক্ত সবুজ মাঠ সে উদাহরণ। উল্লেখ্য, কলেজের এই প্রাকৃতিরাজি অন্য কেউ এসে গড়ে দিয়ে যায়নি; গড়েছেন কলেজের দুজন স্বনামধন্য শিক্ষক এবং সহায়তা করেছেন বাগান মালীরা। চারদিকের ফুল-ফলাদির বাগান ও গাছের কথাও লোকের মুখে মুখে। কলেজের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় সবাই মুখ ফিরিয়ে দেখে নেন এ শোভা।  

আর কলেজের অদৃশ্য কাঠামো হলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্রম, কলেজের সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম এবং ছাত্র-শিক্ষক-প্রশাসনের চেষ্টা। 

সাম্প্রতিক সময়ে সবার দৃষ্টি কেড়েছে কলেজের সঙ্গে ছাত্রদের মা-বাবার সহযোগিতা। এখন মা-বাবারা কলেজে এসে দেখেন ছাত্রদের চলাচল, লেখাপড়ার ধরন এবং আচার-অনুষ্ঠানের সমাহার। এই প্রমাণগুলো এখন সবার কাছে পরিষ্কার। তা ছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয়— একজন শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হলেই অনুভবে নেয় সে এই কলেজের একজন সদস্য। এর পর কলেজের শিক্ষক, প্রশাসন এবং সহকর্মীদের আচরণ তাদের ভাবতে সুযোগ করে দেয় কলেজ একটি পরিবার। এমন ভাবনা দেশের অন্য কোথাও সামান্য বিরল।  

কলেজের দীর্ঘ চুয়াত্তর বছরে হাজার হাজার ছাত্র অধ্যয়ন করেছে এই কলেজে। এদের সবাই বহন করছে কলেজ এবং নিজেদের উদাহরণ। ঘটা করে বলার অপেক্ষা রাখে না এরা ছাত্র হিসেবে যেমন উদাহরণ; তেমনি উদাহরণ দেশের নানান কাজে। কলেজের ছাত্রদের দেশের স্বাধীনতায় অবদান সবার জানা; শুধু যুদ্ধ করে নয়, দেশে দেশে স্বাধীনতার জন্য প্রচার করে অনেকেই দেশের খ্যাত ব্যক্তি হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা লিখে মস্ত দলিল গড়েছেন। 

দেশের সংবিধান, আইনপ্রণেতাদের কথা দেশের লোকেদের জানা এবং চেনা, আইনজ্ঞ হিসেবে অনেকেই দেশে অতিসুপরিচিত, শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের প্রিয়, লেখক ও সাংবাদিকতায় নজির, খেলার মাঠে তুখোড়, সংগঠনে অতুলনীয় মেধার পরিচায়ক। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মঞ্চনাটকে, বেতারে, টেলিভিশনে, নানা ঘরানার সংগীতের জগতে ডেমিয়ানদের নাম একবাক্যে সবাই মনে করতে পারেন। কলেজছাত্রদের রাজনীতি শেখায় না; কিন্তু ছাত্ররাজনীতি, সাম্প্রতিক সময়ের রাজনীতি, দেশরক্ষা, প্রশাসন, মন্ত্রিত্ব  নানা  ক্ষেত্রেই এদের পরিচয় মিলে। বিশ্বের কয়েকটি দেশে একযোগে ডেমিয়ানদের দেখা যায় রাষ্ট্রদূত হওয়ার সংবাদ। এগুলো কলেজের জন্য খুশির খবরই বটে!  

নিজে নিজে বা স্বউদ্যোগে কাজ করেও ধন্য অনেকে। ডাক্তার হয়ে কিংবা অন্যভাবে মানবিক সেবায়ও নিয়োজিতদের সংখ্যা কম নেই। ভূভাগের সর্বোচ্চ পর্বত হিমালয় জয়েও নটর ডেমের ছাত্র পিছিয়ে নেই।
  
সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম নটর ডেম কলেজের ছাত্রদের মেধা উন্নয়নে বিশেষ এক কাঠামো। শিক্ষকরা নিজেরা শেখান, নিজেরা শিখেন বলে আমি মনে করতাম আমার কাজের সময়ে। অনেক ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাদের বলেছি, শুধু তারাই আমার কাছে কিছু শিখেনি; আমিও তাদের কাছে অনেক কিছুই শিখেছি। অনেকের ট্যালেন্ট দেখে ব্যক্তিগতভাবে মনে মনে খুশি হয়েছি। দেশের বাইরে এসে এখনো শিক্ষা বোর্ডে কাজ করি বলে দেখি অনেক কিছু এসব স্কুলে উদযাপিত হয় এবং ছাত্রদের শিক্ষা বিষয়ে কাজ করে সেগুলো বাংলাদেশের মতো দূরের দেশেও আমরা করেছি। এ দেশে স্কুলগুলোয় ক্লাব আছে; নটর ডেম কলেজে এমন ছিল। দেশের অনেক ক্লাব নটর ডেম কলেজে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যেমন— বিজ্ঞান ক্লাব, অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব, ডিবেট ক্লাব।   

কলেজ দেশের নানা দুর্যোগে সাহায্যে সদা প্রস্তুত থাকে। এ সময় ছাত্ররা এ ক্লাবগুলোর মাধ্যমে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে এসব দুর্যোগে সাহায্যের কাজে অংশগ্রহণ করে। এতে তারা শিখে কেমন করে দেশের জন্য কাজ করতে হয় এবং ভবিষ্যতে কেমন করে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। পরবর্তী জীবনে নিজেরা ব্যক্তিগতভাবেও এসব কাজ করবে কলেজ এমন ভাবনাও ভাবে। তাই বলব, ছাত্রদের সঙ্গে কলেজের যেন থাকে উন্মুক্ত বন্ধন।  

*লেখক সাবেক অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, নটর ডেম কলেজ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম