Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

কানাডা-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর

Icon

দেলোয়ার জাহিদ

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:১২ এএম

কানাডা-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর

কানাডা-বাংলাদেশ সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর হলো। এর মাঝে প্রতিনিয়তই  দুই দেশের জনগণের যোগাযোগ বেড়েছে । ১৯৭২ সালে কানাডা বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
 
বর্তমানে বাংলাদেশের ঢাকায় কানাডার  প্রতিনিধিত্ব করেন  লিলি নিকোলস, হাইকমিশনার  এবং তার বিপরীতে অটোয়া কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড.খলিল রহমান। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার একটি সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বায়ন আধুনিক বিশ্বকে বদলে দিয়েছে, বদলে দিয়েছে লোকেদের ব্যবসা, বাণিজ্য ভ্রমণ ও পারস্পরিক সংযোগ। বদলে দিয়েছে রাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র নীতি, বদলে দিয়েছে উন্নয়ণ রাজনীতি ও ডিজিটাল কলা কৌশল।

যেহেতু ব্যবসা, বাণিজ্য, প্রযুক্তি সহ আরও অনেক কিছুতে দুই দেশের মধ্যে একটি দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে, সুযোগ রয়েছে  ভূরাজনীতি এবং প্রযুক্তি থেকে ভ্রমণ, সংস্কৃতি ও মিডিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন সম্পর্কের মাধ্যমে আন্তঃসংযোগকে বাড়িয়ে তোলার।

সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কানাডার সমৃদ্ধিতে প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি-কানাডিয়ান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই—যে দুই দেশের সম্পর্ক বাংলাদেশ সম্পর্কে অতীতের ধারণাকে অনেকটা বদলে দিয়েছে।  কানাডা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে শ্রমিক, বিভিন্ন সংখ্যালঘু গোষ্ঠী নারী ও মেয়েদের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে, কানাডা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে সম্মান নিশ্চিত করতে উৎসাহিত করে থাকে।

বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)কে কানাডায়  একটি সন্ত্রাসী সংগঠন ও বিপজ্জনক দল হিসেবে বিবেচনা করে।  বিএনপির সদস্যদের কানাডায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তথা অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। এ  দেশের ফৌজদারি কোডে ও সন্ত্রাসবাদকে যদিও এ ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে যে একজন ব্যক্তি সন্ত্রাসে জড়িত ছিল তা প্রমাণ করার ক্ষেত্রে, ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত আচরণের প্রমাণের উপর নির্ভর করতে হবে। আই.আর.পি.এ এর ৩৪(১) ধারায় বলা হয়েছে যে সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত একজন ব্যক্তি কানাডা প্রবেশের জন্য অগ্রহণযোগ্য হবে। এ নিয়ে কানাডা ও বাংলাদেশ সরকারের তেমন কোনো মাথা ব্যথা নেই। কারণ রাজনৈতিকভাবে নেতিবাচক প্রভাবের ভয়ে ২০১৭ সাল থেকে তা মেনে নিয়েছে বিএনপি। ত্বরিত কোনো পদক্ষেপ না নিলে শীঘ্রই যুক্তরাষ্ট্রেও এ ধরনের অগ্রহণযোগ্যতার ঘোষণা আসতে পারে।

বাংলাদেশের সাথে কানাডার সম্পর্ক যে সকল বিষয়ের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তা হলো— উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং মানুষ থেকে মানুষ সংযোগ বৃদ্ধি। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়  সাধারণ নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করার প্রচেষ্টা নেয়া শুরু করেছে। বিদেশী দূতাবাসগুলোকে আরও সচল, সক্রিয় ও গতিশীল করার  গুরুত্ব অনুভব থেকে ভারত, যুক্তরাজ্য ও  যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের পরিবর্তনের কথাও ভাবছে সরকার । বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, কানাডা ও ইউরোপের বেশ কটি দেশের  রাষ্ট্রদূতদের সতর্কতার সাথে দেশের  মানবাধিকার ও  আগামী নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার কার্যক্রমের জন্য গাম্বিয়াকে আর্থিকভাবে সহায়তা দেয়ার জন্য কানাডার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী হারজিত সজ্জনের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে মন্ত্রী এই মন্তব্য করেন। ঢাকায় প্রাপ্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়। ড. মোমেন এই বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহনের জন্য ও আহ্বান জানান। আশঙ্কা রয়েছে যে, এখানে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত অবস্থান শিবিরগুলোতে চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের সম্ভাব্য উত্থানের ফলে বিশাল নিরাপত্তা হুমকি ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার কারণ হতে পারে। ড. মোমেন বাংলাদেশের দৃঢ় প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করেন যে, কানাডা ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দণ্ডপ্রাপ্ত খুনি নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেবে।

কানাডার অনুরোধে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দুই মন্ত্রী স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করায় কানাডার প্রশংসা করেন। এলডিসি থেকে উত্তরণ সহ বাংলাদেশের চকমকপ্রদ অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করে কানাডার মন্ত্রী আশ্বাস দেন যে, তিনি কানাডার বাণিজ্য মন্ত্রীর সঙ্গে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ডিএফকিউএফের মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনা এবং এফটিএ বা পিটিএ স্বাক্ষরের সম্ভাবনা সম্পর্কেও আলোচনা করবেন। রোহিঙ্গা  ইস্যুতে তিনি বলেন, ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তিনি একমত প্রকাশ করেন যে, চূড়ান্ত সমাধান হতে হবে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের  মাধ্যমে। (সংবাদ সূত্র : বাসস, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২)।

বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে যে গত এক দশকে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দেশের  দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২০১৭ সালে ২.২৪ বিলিয়ন সিএডি থেকে ২০১৯ সালে CAD ৩.১ বিলিয়নে বেড়েছে। কানাডায় আরএমজি আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস ও বাণিজ্য ঝুড়ি এবং বাংলাদেশে কানাডিয়ান বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে। শিক্ষা, গবেষণা বৈজ্ঞানিক এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতার ও সহযোগিতা জোরদার করতে বাংলাদেশ হাইকমিশন সচেষ্ট।

বাংলাদেশ থেকে কানাডার প্রধান পণ্য আমদানির মধ্যে রয়েছে— বোনা পোশাক, বিবিধ টেক্সটাইল সামগ্ৰী, হেডগিয়ার এবং জুতা। বর্তমানে তৈরি পোশাকের কানাডিয়ান আমদানি সম্প্রসারণের সাথে যুক্ত হয়েছে পাট এবং মানসম্পন্ন পাটজাত পণ্য, সিরামিক, চীনামাটির বাসন, চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, টেবিলওয়্যার ও রান্নাঘরের পাত্র এবং অন্যান্য। উল্লেখ্য, ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ বেশিরভাগ পণ্যের জন্য কানাডায় শুল্কমুক্ত বাজার অ্যাক্সেস উপভোগ করেছে।

কানাডা বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর হলো। সময় হয়েছে এবার পিছু ফিরে দেখার- বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কতদূর এগোলো বাংলাদেশ, কতদূর এগোলো মানুষ, সমাজ, সভ্যতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। সেই পথপরিক্রমার গল্পগাথা রচনা করতে গাণিতিক পরিসংখ্যান বা এর সূচকে গুনলে নিশ্চয় এগুচ্ছে বাংলাদেশ। কানাডা বাংলাদেশের উন্নয়নের নিবিড় অংশীদার ১৯৭২ সাল থেকে; যা বর্তমান প্রোগ্রামিংয়ের অধীনে লিঙ্গ সমতা এবং নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য, দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং তৈরি পোশাক খাতে সহায়তার ক্ষেত্রকে উৎসাহিত ও পারস্পরিক অগ্রাধিকারকে সমর্থন করে। কানাডার নারীবাদী আন্তর্জাতিক সহায়তা নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এ উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলো। আগামী দিনে কানাডা-বাংলাদেশ সম্পর্ক নীতি, নৈতিকতা ও পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে আরও দৃঢ় ও শক্তিশালী হোক।

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম