Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

করোনা মোকাবেলায় দরিদ্র দেশগুলোর ঋণ মওকুফ দরকার

Icon

জর্জ সরোস (বিশ্বের ২২তম ধনী) ও ক্রিস কারাভান (মার্কিন অর্থনীতিবিদ)

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২০, ১১:৫৫ পিএম

করোনা মোকাবেলায় দরিদ্র দেশগুলোর ঋণ  মওকুফ দরকার

করোনাভাইরাসের কারণে জনস্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে। ছবি:এএফপি

কোভিড-১৯ মহামারী উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক মুষ্ট্যাঘাত। এটি শুধু ওইসব দেশের বার্ষিক বাজেটে অত্যধিক চাপ দেবে না, জনস্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে এবং ঘূর্ণায়মান অর্থনীতি সাজাতে মরিয়া হয়ে পড়তে হবে। একইসঙ্গে তারা উদীয়মান বাজার থেকে মূলধন হারাবে।

জেপি মর্গান চেজ অ্যান্ড কোম্পানি এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, উদীয়মান বাজার সম্মৃদ্ধ প্রতি পাঁচ দেশের একটি ঋণ খেলাপিতে পড়বে। অভাবনীয় এ পরিস্থিতিতে ঋণ মওকুফের মতো নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিতে হবে। সব ধরনের আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের অবশ্যই উন্নয়নশীল দেশ, এমনকি বিবেচনাযোগ্য মধ্যম আয়ের দেশগেুলোকে অন্তত এক বছরের জন্য সব ধরনের ঋণ মওকুফ করতে হবে।

জি-২০ জোটের নেতারা ১৫ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনে ঋণ ছাড়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু তারা এটি শুধু দরিদ্র দেশগুলো জন্য এবং শুধু দাফতরিক ঋণদাতাদের পক্ষ থেকে হওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন। গরিব দেশগুলোকে ঋণ মওকুফের জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকেও আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে তারা চাপ নিতে চাইছে না। তবে এটিই যথেষ্ট নয়। এর কারণ আমরা নিচে বর্ণনা করেছি।

ঋণ মওকুফ না করলে ঋণগ্রহীতা দেশগুলো কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। এতে তাদের অর্থনীতি এক দশক বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বা তাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্যকে পেছনে রেখে ঋণ পরিশোধে মনোযোগী হতে হবে। এ পরিস্থিতিতে বহু দেশ ঋণ খেলাপিতে পড়বে। এছাড়া ১৯৮০-এর দশকে ল্যাটিন আমেরিকার চেয়ে এবং ১৯৯০-এর দশকে এশিয়ার চেয়ে ঋণ সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে।

এর মানে, দাফতরিক এবং ব্যক্তিকÑ উভয় ঋণদাতাদের ঋণ মওকুফের ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। আর এতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং প্যারিস ক্লাবের বোঝা কিছুটা কমবে। ইতোমধ্যে ৯০টিরও বেশি দেশ আইএমএফের কাছে জরুরি সহায়তা চেয়েছে। করোনভাইরাসের তাণ্ডব পরবর্তী ঝুঁকি এড়াতে দাফতরিক ঋণদাতাদের এখনই ঋণ মওকুফের ঘোষণা দিতে হবে। প্রাইভেট ঋণদাতাদেরও একই কাজ করতে হবে। দাফতরিক ঋণদাতাদের আরও কিছু পদক্ষেপ রয়েছে। তারা প্রাইভেট ঋণদাতাদের অংশগ্রহণে উৎসাহ জোগাতে পারে।

জি-২০ জোটের নেতারা দরিদ্র দেশগুলোর ঋণ মওকুফের ঘোষণা দিয়েছেন। এটি একটি সঠিক দিকনির্দেশনা, কিন্তু দুটি ক্ষেত্রে এটি অসঙ্গতিপূর্ণ।

প্রথমত, ঋণ মওকুফ শুধু দরিদ্র নয়, উন্নয়নশীল মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্যও প্রয়োজন। সব দেশকে এ মহামারীর ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে সুযোগ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, এ ঋণ মওকুফের বোঝা প্রত্যেক আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের বহন করতে হবে; সেটি ধনী দেশ, প্রাইভেট বন্ড হোল্ডার, বহুজাতিক উন্নত ব্যাংক, চীন বা অন্য দাতাদের সবাইকে।

সব দাতাদের উচিত একই বোঝা বহন করা। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে প্রধান ঋণদাতা গোষ্ঠী ও দাতা দেশের মধ্য থেকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব আসতে হবে। এ নেতৃত্ব আসতে পারে চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি, আইএমএফ বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকেও। সময় খুবই কম। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে জি-২০ জোটই উচিত এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া।

জর্জ সরোস : হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান বিলিয়নিয়র ও বিশ্বের ২২তম ধনী  ও সরোস ফান্ড ম্যানেজমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা

ক্রিস কারাভান : মার্কিন অর্থনীতিবিদ ও সরোস ফান্ড ম্যানেজমেন্টের পরিচালক

মার্কিন দৈনিক ব্লুমবার্গে প্রকাশিত নিবন্ধ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম