Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

করোনাভাইরাস: আমরা কেন লকডাউন হচ্ছি না?

Icon

এম. মিজানুর রহমান সোহেল

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২০, ০৬:৪০ পিএম

করোনাভাইরাস: আমরা কেন লকডাউন হচ্ছি না?

এখনও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এখনও সময় হয়নি। আচ্ছা, তার মানে আপনারা ইতালির মত পরিস্থিতি হওয়ার পর লকডাউন করবেন? অতীত নয় খুব সাম্প্রতিক সময়ে দেশে দেশে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখেও আপনারা শিক্ষা নেবেন না? 


লেখক কাকন রেজা লিখেছেন, ‘ফিলিপাইন করোনার জেরে লকডাউন। এতেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। জারি করেছে রাত্রিকালীন কারফিউ। অথচ ফিলিপাইনে এখনো ব্যাপকহারে কোভিড নাইনটিনে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি’। 

ইতালি, স্পেন, জার্মান সব লকডাউন। অথচ আমাদের সাড়া মিলছে খুবই ধীরে। এসব দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে আমাদের কোনো তুলনাই চলে না। আমাদের এখানে ভেন্টিলাইজেশনের অবস্থা করুণ। বিশেষ কয়েকটি হাসপাতাল ছাড়া জেলা উপজেলায় কোনো হাসপাতালেই ভেন্টিলাইজেশন ব্যবস্থা নেই। 

প্রয়োজনীয় অক্সিজেনও নেই এসব হাসপাতালে। এমন অবস্থায় ‘সোশ্যাল ডিসটেন্সিং’টা খুবই জরুরি। আর এই ‘সোশ্যাল ডিসটেন্সিং’ এর পর্যায়টা এখন আর শুধু সামাজিক দূরত্বের মধ্যে নেই, তা এখন পরিণত হয়েছে এলাকা থেকে এলাকার দূরত্বে। অর্থাৎ পরিস্থিতিটা চলে গিয়েছে আক্রান্ত এলাকাগুলো শাটডাউনের দিকে। এখনো তা করা না গেলে হয়তো পুরো দেশই শাটডাউন করতে হতে পারে। 

ফিলিপাইন চায় না তাদের পরিস্থিতি চীন, ইরান বা ইতালির মত হওয়ার পর লকডাউন করবে। আমরা তো এই দেশটি থেকেও শিক্ষা নিতে পারি। অবশ্য জাতি হিসেবে আমরা শিক্ষায় বিশ্বাসী নই। আগে সবাই আক্রান্ত হোক। রাস্তাঘাটে পথে প্রান্তরে আক্রান্ত মানুষ পরে মরে থাকুক। এরপর পরিস্থিতি দেখে চিন্তা করা যাবে ‘লকডাউন করা যায় কিনা’।

নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ার; যেখানে মানুষে গিজগিজ করে। আজ সেই টাইম স্কয়ার মানবশূন্য। লন্ডন ব্রিজে মানুষ হাটা বন্ধ করে দিয়েছে। পবিত্র কাবা গৃহের চারপাশে ঘুরছে না মুসলমান। বিশ্বের দেশে দেশে মুসল্লিহীন বন্ধ মসজিদ। মানুষহীন ভ্যাটিকান সিটি। ভেনিসের জলে ভাসছে না নব দম্পতি। কানাডার প্রধানমন্ত্রী তার স্ত্রীসহ গৃহবন্দি। কঠোরভাবে অবরুদ্ধ ইতালি। আকাশ শূন্য; উড়ছে না প্লেন। সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে না ট্রাক, বাস, ট্রেন। অদৃশ্য এক অজানা ভয়ে থমকে গেছে গোটা পৃথিবী। বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশ ভয়ে কাবু। শুধু গরিব বাংলাদেশ ‘পরিস্থিতি ঘটে যাওয়ার জন্য’ অপেক্ষা করছে! 

আপনার অনেক টাকা আছে। তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হলে কিন্তু আপনিও বাঁচবেন না। ভাবছেন আপনাকে কীভাবে করোনা ধরবে? আপনি তো আছেন সুরক্ষিত অট্টালিকায়। এই অট্টালিকায় কাজের লোক, আপনার বাসার ড্রাইভার, বাসার বাইরে থেকে দিয়ে যাওয়া পত্রিকা বা অন্য কোনো কিছু দিয়ে যায় যারা, আপনার নিরাপত্তা কর্মী এমনকি আপনার ঘরের প্রিয় মানুষের শরীর থেকেও আক্রান্ত হতে পারেন। 

আপনার অঢেল টাকা আছে। কিন্তু ইচ্ছে হলেই এখন আর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে যেতে পারবেন না। প্রতিবেশি দেশ ভারতের চেন্নাই, মুম্বাই যাওয়ার পথও বন্ধ। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যত খারাপই হোক সেখানের চিকিৎসা নিয়েই মরতে হবে। তখন দেশ লকডাউন করলে কোনো কাজে আসবে না। 

সুইডেন প্রবাসী রহমান ভাই বললেন, ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনী দিয়ে তাঁবু করে রোগীদের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা দিলে দ্রুত সুস্থ হয়ার সুযোগ থাকবে। হাসপাতালে সব রোগী একসঙ্গে রাখলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যেতে পারেন।  

বড় বড় দেশগুলোতে খাবার নাই, ওষুধ নাই, টিস্যু পেপার নাই, মাস্ক নাই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার নাই। আমরা আসলে কতটা প্রস্তুত এ জন্য? কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ অসংখ্য দেশ সবাইকে ঘরে বসে থাকতে বলেছে। তাদের খরচের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। আমরা আসলে কী করছি? আমাদের এখানে ভয়াবহতা হলে সামাল দেবেন কীভাবে? 

আক্রান্তের সংখ্যা কীভাবে বাড়ছে সে ব্যাপারে কী আপনার ধারণা আছে? ইতালিতে প্রথম সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছে ৩ জন, দ্বিতীয় সপ্তাহে ১৫২ জন, তৃতীয় সপ্তাহে এক হাজার ৩৬ জন, চতুর্থ সপ্তাহে ৬ হাজার ৩৬২ জন, পঞ্চম সপ্তাহে ২১ হাজার ১৫৭ জন। ইরানের কথা যদি বলি সেখানে প্রথম সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছে ২ জন, দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪৩ জন, তৃতীয় সপ্তাহে ২৪৫ জন, চতুর্থ সপ্তাহে ৪ হাজার ৭৪৭ জন, পঞ্চম সপ্তাহে ১২ হাজার ৭২৯ জন। বাংলাদেশের মত দেশে কী হতে পারে শুধু অনুমান করলেই বুঝতে পারবেন। 

যদিও দেরি করে হলেও ফ্লাইট, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পর্যটন স্পট, ওয়াজ মাহফিল, সভা সমাবেশ, সকল ধরনের খেলাধুলা বন্ধ করা হয়েছে। তবে আমার মনে হয় পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আগেই পুরো দেশ লকডাউন করা উচিত। যাতে আমাদের পরিস্থিতি দেখার জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। 

আমাদের গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষার জন্য প্রিয়.কমের প্রধান নির্বাহী জাকারিয়া স্বপন সবার আগে সংবাদ কর্মীদের ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ পোস্ট তাদের কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। এরপর বাংলা ট্রিবিউন, ঢাকা ট্রিবিউন, বার্তা ২৪, চ্যানেল আই অনলাইন, জুম বাংলাও সংবাদকর্মীদের ঘরে বসে কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছে। 

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলক সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য আগামীকাল শুক্রবার প্রথমবারের মতো ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। অন্যদেরও তার থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো উচিত। তবে সব কিছুর আগে দেশ লকডাউন করে সবার সুস্থতা নিশ্চিত করা দরকার। প্রয়োজনে কারফিউ জারি করে সবাইকে ঘরে রাখতে হবে। মানুষ বাঁচলে আগামীদের পৃথিবী সুন্দর হবে। না হলে একদিন এই পৃথিবী ক্ষুদে অদৃশ্য এক ভাইরাসের কবলে পরে জনশূন্য হয়ে যাবে।

লেখক: এম. মিজানুর রহমান সোহেল, বিভাগীয় প্রধান, যুগান্তর অনলাইন

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম