Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

দেশের আক্রান্ত এলাকাগুলো শাটডাউন করে দিন

Icon

কাকন রেজা

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২০, ০৫:৪৭ পিএম

দেশের আক্রান্ত এলাকাগুলো শাটডাউন করে দিন

কোভিড নাইনটিন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে এখন আর লুকোছাপা করে লাভ নেই। সরকার একজনের মৃত্যুর কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে। কিন্তু মাত্র ১৪ জন আক্রান্তের মধ্যে একজনের মৃত্যু, এ হিসাবটা মানতে চাইছে না সাধারণ মানুষ। কারণ তাদের কাছেও গণ ও সামাজিকমাধ্যমের কল্যাণে একটা গ্রাফিক্যাল চিত্র রয়ে গেছে। 

সে কারণেই পরিসংখ্যানটা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। আর এই সংশয়টা যে খুব একটা মিথ্যা ছিল না, তা বোঝা গেলো হঠাৎ করেই মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে কমিউনিটিতে ছড়িয়ে যাবার বিষয়টি সামনে আসাতে। এতদিন ধারণা দেয়া হচ্ছিল, বিদেশ ফেরত ও তাদের পরিবারের সদস্যরাই শুধু আক্রান্ত। এমন একটা ধারণায় মানুষ মোটামুটি স্বস্তিতে ছিল। সেই স্বস্তিটা কমিউনিটি ছড়িয়ে যাবার খবরে অস্বস্তি থেকে এখন আতংকে পরিণত হয়েছে। 

সত্যি বলতে দেশ আজ ভয়ংকর পরিস্থিতির সমুখে দাঁড়িয়ে। বলতে পারেন গত একশ বছরে আমাদের দেশ এমন পরিস্থিতির সমুখে পড়েনি। আমাদের সবার চোখের সমুখে থাবা পেতে আছে মৃত্যু। কিন্তু এমন অবস্থায় আমাদের প্রস্তুতি কী? যেখানে দ্রুতগতিতে সব লকডাউন বা শাটডাউন করার কথা ছিল সেখানে হলো গড়িমসি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চারজন চিকিৎসক কোয়ারান্টিনে যাওয়ার ঘটনা জানিয়ে দেয় আমরা কী পরিমাণ নজর-আন্দাজ করছি বিষয়টি। 

সাধারণ সর্দি-কাশির রোগী বলে যাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল তাদের মধ্যে থেকে চারজনকে তারা আইইডিসিআরে পাঠিয়েছিলেন। পাঠানো সবাই কোভিড নাইনটিনে আক্রান্ত বলে পরীক্ষায় জানা গেছে। অর্থাৎ এ থেকে পরিষ্কার আইইডিসিআর অনেক তথ্য জানতে পারছে না আক্রান্ত ও তাদের সংখ্যা সম্পর্কে। যারা চিকিৎসকের কাছে আসছেন লক্ষণ উপসর্গ তাদের মধ্যেও যেহেতু কোভিড নাইনটিনে আক্রান্ত রয়েছেন, তা থেকে নিশ্চিত এই ভাইরাস এখন ছড়াচ্ছে গাণিতিক হারে। 

এমন অবস্থার আগেই আমাদের লকডাউনটা জরুরি ছিল। আকাশ পথটা বন্ধ করে দেয়া জরুরি ছিল। দোয়ার উদ্দেশ্যে বিশাল সমাবেশের কোনোই প্রয়োজন ছিল না। আতশবাজি দেখতে হাজার লোকের জমায়েত হওয়া নিরুৎসাহিত করা শুধু নয় প্রয়োজনে বন্ধ করে দেয়াই ছিল উচিত পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে উচিত ছিল মালয়েশিয়ায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণটা মনে রাখা। 

মালয়েশিয়ায় তাবলীগ জামায়াতের একটি গ্রুপ হতে ছড়িয়ে পড়েছিলো কোভিড নাইনটিন। যার ফলে পরিস্থিতি সামলাতে মালয়েশিয়াকে হিমশিম খেতে হয়েছে এবং হচ্ছে। আর আমাদের এখানে বিশাল পরিমাণ মানুষ একসঙ্গে জমায়েত হয়েছিল দুটি জায়গাতেই। তারপর রাজনৈতিক ভাঁড়ামিতো চলছেই। লোকজন নিয়ে করোনা বিরোধী প্রচারণা চলছে। একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপনির্বাচন। সত্যিই বিচিত্র এই দেশ। 

ইতালি, স্পেন, জার্মান সব লকডাউন। অথচ আমাদের সাড়া মিলছে খুবই ধীরে। এসব দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে আমাদের কোনো তুলনাই চলে না। আমাদের এখানে ভেন্টিলাইজেশনের অবস্থা করুণ। বিশেষ কয়েকটি হাসপাতাল ছাড়া জেলা উপজেলায় কোনো হাসপাতালেই ভেন্টিলাইজেশন ব্যবস্থা নেই। 

প্রয়োজনীয় অক্সিজেনও নেই এসব হাসপাতালে। এমন অবস্থায় ‘সোশ্যাল ডিসটেন্সিং’টা খুবই জরুরি। আর এই ‘সোশ্যাল ডিসটেন্সিং’ এর পর্যায়টা এখন আর শুধু সামাজিক দূরত্বের মধ্যে নেই, তা এখন পরিণত হয়েছে এলাকা থেকে এলাকার দূরত্বে। অর্থাৎ পরিস্থিতিটা চলে গিয়েছে আক্রান্ত এলাকাগুলো শাটডাউনের দিকে। এখনো তা করা না গেলে হয়তো পুরো দেশই শাটডাউন করতে হতে পারে। 

একটা বড় ভুল হয়ে গেছে। আমাদের আইইডিসিআর থেকে জানানো হয়েছে কয়জন রোগী পাওয়া গেছে এমনটা। কিন্তু কোথা থেকে পাওয়া গেছে তা জানানো হয়নি। যা সম্ভবত অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি জানানো হতো, অমুক এলাকা থেকে রোগী পাওয়া গেছে। তবে তৎক্ষণাৎ ওই এলাকা শাটডাউন করা গেলে ভাইরাসের বিস্তার অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো। তেমনি যেসব এলাকায় প্রবাসী মানুষ বেশি এসেছেন। 

যেখানে তারা হোম কোয়ারান্টিনের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করছেন না, তেমন এলাকাগুলোও যদি শাটডাউন করা যেত, তাহলেও হয়তো সারাদেশে ভাইরাসের প্রসার বিলম্বিত করা যেত। একইসঙ্গে সেযব জায়গাতেও ভাইরাসের বিস্তার কিছুটা হলেও রোধ হতো। সেখানে শাটডাউনের ফলে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পেতো। আর প্রবাসীরাও তখন বাধ্য হয়ে কোয়ারান্টিনে যেত। অথচ এই ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি মোটেই। 

তবে এখনো সময় আছে। এ মুহূর্তেই কিছু এলাকা শাটডাউন করে দেয়া হলে এই ভাইরাসের বিস্তারের গতি কমানো সম্ভব হতো। গতি কমানোর সবচেয়ে বড় উপকারটা হলো চিকিৎসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়া। আমাদের হাসপাতালগুলোর যে অবস্থা, তাতে হঠাৎ করে রোগী বৃদ্ধি পেলে চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে একটা বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। 

মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। যার ফলে উদ্ভূত হতে পারে যে কোন পরিস্থিতির। বিস্তারের গতি কমলে রোগী বাড়বে ধীরে ধীরে ফলে তাদের চিকিৎসা দেয়া সহজ হবে। মানুষ অন্তত চিকিৎসা পাবে। এখন গাণিতিক হিসাবে যে হারে বাড়ছে বর্তমান আক্রান্তের সংখ্যা, তাতে কদিনেই পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াবে। 

এখনো সময় রয়েছে, এখনো বাংলাদেশের সব জায়গায় ব্যাপকভাবে ছড়ায়নি ভাইরাসটি। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট এলাকাগুলো শাটডাউন করে দিলে অন্যান্য জায়গাগুলো কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকবে। না হলে এমন এক সময় আসবে যে পুরো দেশটাতেই শাটডাউন করে দিতে হতে পারে। 

তখন বিপর্যয় সব দিক দিয়েই দেখা দিবে। স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ের সঙ্গে দেখা দিবে, অর্থনৈতিক বিপর্যয়। আক্রান্তদের আশি ভাগ হয়তো সাত দিনেই সুস্থ হয়ে যাবেন। পুরো দেশ শাটডাউনের ফলে ওই সুস্থ লোকগুলোর কাজের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। তারা উপার্জন করতে পারবে না। 

ফলে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে উঠবে। দেশটাকে স্বাস্থ্যের সঙ্গে মানবিক মানবিক বিপর্যয় সামাল দিতে হবে। আামাদের মতন ভঙ্গুর অর্থনীতি সে ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারবে কিনা সেটাই চিন্তার বিষয়। আবারো বলছি, এখনো সময় আছে। এখনো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলো অনেক বড় মাশুল দিতে হবে। 

লেখক: কাকন রেজা, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম