সেই এসিল্যান্ডের মাফ চাওয়াই কি সব?

ডা. তারাকি হাসান আল মেহেদী
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০১৯, ১১:১৩ এএম

মৌলভীবাজার সদরের এসিল্যান্ড ম্যাজিস্ট্রেট সুনজিৎ কুমার চন্দ
ধূমপানে আসক্ত মৌলভীবাজার সদরের সেই এসিল্যান্ড ও ম্যাজিস্ট্রেট সুনজিৎ কুমার চন্দ অবশেষে নিজের অপরাধের জন্য মাফ চাইলেন নির্যাতিত ডাক্তারের কাছে।
কিন্তু এটাই কি ঘটনার শেষ? আমরা চাই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। নতুবা গত বছর কুমিল্লা, এই বছর মৌলভীবাজার- এভাবে চলতেই থাকবে।
গত ২১ জুন কিশোরগঞ্জ থেকে জয়ন্তিকা ট্রেনে করে সিলেট যাচ্ছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের লেকচারার ডা. রাফিউল সিরাজ।
এরপর বিকাল ৫টায় মনতলা স্টেশনে ট্রেন থামতেই জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে ট্রেনে ওঠে ফুঁকতে থাকেন এক ব্যক্তি। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সবার কাছে সিগারেটের ধোঁয়া অসহনীয় লাগায় একপর্যায়ে তাকে ধূমপান না করার জন্য অনুরোধ করেন ডা. সিরাজ। কিন্তু সেই ব্যক্তি তো কথা শুনলেনই না বরং উল্টা বলেন, ‘তোদের বাড়ি কই, আমারে চিনস? দাঁড়া সামনের স্টেশনে তোদের সব কয়ডারে বানামু।’
ট্রেন পরের স্টপেজ শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে থামলে হঠাৎ ওই লোকটার ডাকে ২০-২৫ জন ট্রেনে উঠে ডা. সিরাজসহ তাদের কলার ধরে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে মারধর করে। সন্ত্রাসীদের আক্রমণ ভেবে এ সময় কামরার অনেকেই ভয়ে পালিয়ে যায়।
জানা যায় যে, ধূমপানে আসক্ত ওই লোকটি আসলে মৌলভীবাজার সদরের এসিল্যান্ড ও ম্যাজিস্ট্রেট, যার নাম সুনজিৎ কুমার চন্দ।
পরে হামলাকারীরা জোর করে তাদের ওই ম্যাজিস্ট্রেটের পায়ে ধরানোর চেষ্টা করে। তার পা ধরতে রাজি না হওয়ায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
পরে টুটুল নামে রেল পুলিশের এক এসআই এসে ডা. সিরাজকে জেলে ঢোকানো এবং ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয়। এসিল্যান্ড তার ধূমপানে প্রতিবাদকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বছরের সাজা দেওয়ার হুমকি দেন।
এরপর সঙ্গে থাকা লোকজন তাকে জোর করে পা ধরতে বাধ্য করে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।
এরপর কিশোরগঞ্জ বিএমএ ও মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ স্যারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন। যার ফলে সেই এসিল্যান্ড সুনজিৎ শনিবার (৭ জুলাই) সকালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষের কক্ষে এসে বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে ডা. সিরাজের কাছে মাফ চান। কিন্তু মাফ চাওয়াই কি সব?
ধূমপানে আসক্ত মেজাজের ভারসাম্যহীন মৌলভীবাজার সদরের এসিল্যান্ড আজ একজন চিকিৎসকের সঙ্গে এমন আচরণ করেছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে যে তিনি কী করেন তা সহজেই অনুমেয়। তিনি যা করেছেন তা সম্পূর্ণ ক্ষমতার অপপ্রয়োগ। পাবলিক প্লেসে ধূমপান শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একে তো একটা আইন ভঙ্গ করেছেন, এছাড়া তার যে মুখের ভাষা মিডিয়ার মাধ্যমে এসেছে তাতে তিনি সিগারেটের সাথে অন্য কিছুতে আসক্ত কি না তারও তদন্ত করা দরকার।
এসব কর্মকর্তার কারণে প্রশাসন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।
এসব ক্ষেত্রে ক্ষমা চাওয়া, মীমাংসা কোন স্থায়ী সমাধান না। এটা গ্রামের জমিতে ছাগলের ঘাস খাওয়া নিয়ে গন্ডগোল নয় যে দুই পক্ষ বসে মীমাংসা করে ফেলা হল। গত বছরের কুমিল্লার ঘটনা থেকেও শিক্ষা নেওয়া উচিত সবার।
তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার ও মেজাজের ভারসাম্যহীন হওয়ায় ভবিষ্যতে যাতে তিনি মোবাইল কোর্ট না চালাতে পারেন সেই ব্যবস্থাও করা দরকার।
কারণ তার যে মেজাজের ভারাসাম্যহীনতা, এটা ঠিক না হলে এতে ভবিষ্যত আরো অনেকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা থেকে যায়।
লেখক: ডা. তারাকী হাসান মেহেদী, লেখক ও চিকিৎসক