ঢাকায় কর্মরত পেশাদার রিপোর্টারদের প্রাণের সংগঠন ‘ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’ (ডিআরইউ) প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পূর্তি হলো আজ রোববার (২৬ মে)।
রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত রিপোর্টারদের অধিকার আদায়, পেশাগত উন্নতি আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালের ২৬ মে ডিআরইউ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাই ২৬ মে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে নি:সন্দেহে একটি ঐতিহাসিক দিন।
সকলকে ডিআরইউ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর রক্তিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শফিকুল কবিরসহ যাদের মেধা শ্রম দক্ষতায় ডিআরইউ আজ এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে সেই মহান ব্যক্তিত্বদের প্রতি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ শুভক্ষণে বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংগঠনটি সাংবাদিকদের পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সংগঠনটি শৈশব, কৈশর পার করে এখন পূর্ণ যৌবনকাল অতিক্রম করছে।
আনন্দঘন পরিবেশে দুই যুগ পূর্তি উদযাপনের জন্য রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত সংগঠনের পক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে সকাল ১১টায় ডিআরইউ প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। বেলা ১১.৩০ মিনিটে র্যালী, বিকেল ৪টায় আলোচনা ও স্মৃতিচারণ, সন্ধ্যা ৬টায় কেক কাটা এবং সন্ধ্যা ৬ টা ৪৩ মিনিটে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
বর্তমানে ডিআরইউয়ের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৮০০। সদস্যদের দুপুরের খাবারের জন্য ডিআরইউ একটি ক্যান্টিন পরিচালনা করে আসছে। প্রতিদিন প্রায় ৫শ’ রিপোর্টার ভর্তুকি মূল্যে ডিআরইউ ক্যান্টিন থেকে দুপুরের খাবার গ্রহণ করে থাকেন।
ডিআরইউ প্রতিবছর ক্রিড়ায় নানা ইভেন্টসহ জাতীয় দিবসসমূহ পালন এবং সদস্য ও পরিবারের অংশগ্রহণে বার্ষিক বনভোজন আয়োজন করে থাকে।
পাশাপাশি সদস্যদের অসুস্থতাকালে চিকিৎসার জন্য অনুদান এবং প্রয়াত সদস্যদের পরিবারকে এককালীন ৩ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। প্রতিবছর প্রয়াত সদস্য সন্তান ও কৃতি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও সংবর্ধনার আয়োজন করে। এজন্য ডিআরইউ একটি কল্যাণ তহবিল পরিচালনা করছে। সংগঠনের সদস্য সন্তানদের জন্য রয়েছে গানের স্কুল ‘সারগাম’ ও আর্টের স্কুল ‘রংতুলি’।
২৪ বছর অর্থাৎ দুই যুগের পথপরিক্রমায় ডিআরইউ এখন জাতীয় পর্যায়ে একটি মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। মত-পথের পার্থক্য ঘুচিয়ে গণতান্ত্রিক চেতনা ধারণ করে সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিস্তৃত হচ্ছে ডিআরইউর কর্মকান্ড।
বাংলাদেশে সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত রিপোর্টারদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র সংগঠন হচ্ছে ডিআরইউ। সংগঠনটির মুখ্য কাজ হচ্ছে- সদস্য রিপোর্টারদের পেশাগত দক্ষতাবৃদ্ধি, প্রতিভা বিকাশ, পেশাগত মান উন্নয়ন, মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, স্বার্থ রক্ষা, বস্তুনিষ্ঠ ও সুস্থ সাংবাদিকতার বিকাশে প্রশিক্ষণসহ কল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি তা বাস্তবায়ন করা।
বর্তমানে এটি রিপোর্টারদের মিলনক্ষেত্র তথা পারস্পারিক মতবিনিময়ের কেন্দ্রস্থল হিসেবে গড়ে উঠেছে। সদস্যদের পেশাগত মান উন্নয়নে সহযোগিতার পাশাপাশি নানামুখী সেবা ও চিত্তবিনোদনমূলক কর্মসূচির আয়োজন করে আসছে ডিআরইউ।
এছাড়া প্রতিবছর নিয়মিতভাবে মিডিয়া ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বাংলা নববর্ষসহ জাতীয় দিবসসমূহে বৃহত্তর পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ডিআরইউ নিরন্তর এগিয়ে চলছে, যদিও নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে আমাদের। সংগঠনটির কমিটিতে ওতপ্রোতভাবে কাজ করার সুবাদে ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় এখন আমাদের সামনে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সংগঠটির স্থায়ী ঠিকানা, অর্থাৎ আমরা যে স্থানে রয়েছি সেই জায়গাটির মালিকানার স্থায়ী নিষ্পত্তি এবং নিজস্ব আয়ের ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা। ডিআরইউ সরকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে অনুদান নিয়ে সংগঠনের সদস্যদের জন্য কল্যাণমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। এই অনুদান নিয়ে আমরা আর কতদিন চলতে পারবো, সে বিষয়ে আমার মনে হয়, এখনই সম্মিলিতভাবে ভাবার সময় এসেছে।
রিপোর্টারদের ইউনিটি ডিআরইউ। ১৯৯৫ সালের ২৬ মে যে সংগঠনটির জন্ম, সেটি আজ হাঁটি হাঁটি পা পা করে পূর্ণ যৌবনে পদার্পণ করেছে। কিন্ত প্রকৃতপক্ষে আমাদের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সংগঠনটির নিজস্ব ভূমির বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া। এতে করে আমরা পারছি না স্থায়ী কোন অবকাঠামো উন্নয়ন করতে। যদিও ২০১৮ সালের কার্যনির্বাহী কমিটি ডিআরইউ ভবন অস্থায়ীভাবে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ হাতে নেয়, সেজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। ডিআরইউয়ের ভূমির বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য দরকার সমন্বিত যৌথ প্রয়াস ও উদ্যোগ এবং তার বাস্তবায়ন। এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি, প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তারা, শুভাকাঙ্খীসহ সকল সম্মানীত সদস্যদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি। জায়গার মালিকানা বিষয়টি নিষ্পত্তি করা গেলে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে।
লেখক : মুরসালিন নোমানী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।