
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২১ এএম
অবহেলায় ৪৪৩ বছরের খেরুয়া মসজিদ

নাজমুল হুদা নাসিম, বগুড়া
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
বগুড়ার শেরপুরে ৪৪৩ বছরের প্রাচীন (মুঘল আমলে নির্মিত) ঐতিহাসিক খেরুয়া মসজিদ অবহেলার শিকার। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ঐতিহাসিক মসজিদটির দায়িত্ব নিলেও প্রায় তিন যুগ সংস্কার করা হয়নি। তিনটি গম্বুজ ও বিভিন্ন স্থানে ফাঁটল ধরেছে। মসজিদের বাইরের অংশ মোটামুটি ভালো থাকলেও ভিতরে ইটগুলো ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছে। বৃষ্টি হলেই ভিতরে পানি পড়ে। মুসুল্লিরা অনেক কষ্টে নামাজ আদায় করে থাকেন। সচেতন এলাকাবাসী পর্যটক বাড়াতে ও ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে অবিলম্বে মসজিদটি সংস্কারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার ও শেরপুর উপজেলা সদর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকারটোলা এলাকায় ঐতিহাসিক খেরুয়া মসজিদ অবস্থিত। পূর্ব পাশে মসজিদের গায়ে একটি ফার্সি হরফে শিলালিপি রয়েছে। এর বাংলা অনুবাদে বলা হয়েছে, ১৫৮২ সালে নবাব মির্জা মুরাদ খান কাকশালের পৃষ্ঠপোষকতায় খেরুয়া মসজিদ নির্মিত হয়। স্থানীয় আবদুস সামাদ ফকিরের তদারকিতে সুলতানী ও মুঘল স্থাপত্যশৈলীতে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। মসজিদ চত্বরেই রয়েছে তার কবর।
প্রায় ৫৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের মসজিদের ওপরে রয়েছে তিনটি বড় গম্বুজ। চার কোণে অষ্টকোণী মিনার আছে। পূর্ব পাশে তিনটি, উত্তর পাশে একটি ও দক্ষিণ পাশে একটিসহ মোট পাঁচটি ছোট দরজা রয়েছে। দেওয়ালের পুরুত্ব প্রায় ছয় ফুট। পুরো মসজিদ ছোট ছোট ইট দিয়ে নির্মিত। মূল দরজার দুই পাশে বামে ফার্সি শিলালিপি রয়েছে। তবে ডান পাশেরটি পাকিস্তানের করাচি জাদুঘরে আছে। ভিতরে আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে অর্ধ গোলাকার মেহরাব ও কার্নিশগুলো বাঁকানো। বাইরের দেওয়ালে ফুলের ডিজাইন রয়েছে। ভিতরে তেমন কিছু নেই। মসজিদের ছাদের চার পাশে কবুতর ও শালিক পাখি বাস করে। প্রায় ৫৯ শতাংশজুড়ে মসজিদ চত্বরে রয়েছে বিভিন্ন জাতের ফলদ ও বনজ বৃক্ষ। গ্রিল ও ইটের প্রাচীরে ঘেরা মসজিদের প্রধান ফটকের পাশে রয়েছে প্রায় মিশে যাওয়া অস্পষ্ট নামফলকসহ ইতিহাস। নামাজের সময় ছাড়া মসজিদে কেউ প্রবেশ করেন না। মসজিদে তিনটি কাতারে ৯০ জন একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। রমজান মাসে তারাবি ও চত্বরে দুই ঈদে নামাজ আদায় হয়। বারান্দা না থাকায় ওয়াক্তিয়া ও জুমার দিন বেশি মুসুল্লি হলে মাঠে চট বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুস সালাম শাহীন, মিজানুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত বগুড়ার শেরপুরের ঐতিহাসিক খেরুয়া মসজিদ পরিদর্শন করতে প্রতিদিন ২৫ থেকে ১০০ জন পর্যটক আসেন। তবে মসজিদে যাওয়ার রাস্তাটির অবস্থা ভালো নয়। বৃষ্টি হলেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। মসজিদের অবস্থান জানাতে রাস্তায় কোনো সাইনবোর্ড নেই। তিনি বলেন, সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ঐতিহাসিক খেরুয়া মসজিদটি সংস্কার করে। এরপর আর সংস্কার করা হয়নি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ঐতিহাসিক মসজিদটি দেখভাল করতে ৩৭ বছর আগে স্থানীয় আবদুস সামাদ নামে এক ব্যক্তিকে সাইড পরিদর্শক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। আবদুস সামাদ জানান, স্বাধীনতার পর সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ছাড়া আর সেভাবে কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। বৃষ্টি হলে মসজিদে পানি পড়ে। ৯০ জনের অধিক মুসল্লি হলে মসজিদের বাইরে চট বিছিয়ে নামাজের ব্যবস্থা করতে হয়। মসজিদের ইটে নোনা ও গ্রিলে মরিচা ধরেছে। সংস্কার না করলে ইটগুলো ক্ষয়ে মসজিদ ধ্বংস হয়ে যাবে।
মিজানুর রহমান নামে এক পর্যটক বলেন, ঐতিহাসিক মসজিদটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া হতাশার। তিনি মোঘল আমলের এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে অবিলম্বে সংস্কার দাবি করেন।
বগুড়ায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। শিগগিরই খেরুয়া মসজিদ পরিদর্শনে যাবেন। এ বছরের শেষে সম্ভব না হলে আগামী বছরের শুরুতে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।