
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২১ এএম
পাহাড়ের চিরসবুজ বনে সুদর্শন ‘বাঁশ ঘুঘু’

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
বসন্তের বিকালে হু হু বাতাস বইছে পাহাড়ের চূড়ায়। চূড়া থেকে যতদূর চোখে দেখা যায় ততদূর চিরসবুজ গভীর বন। বনের নিচে বয়ে চলেছে পাহাড়ি ঝিরি। চারপাশে ভাদি, মেহগনি, শিমুল, অশ্বথ, ফুল শুমারীসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ। ভাদি গাছের নিচে লাল রঙের কামালা ফল। পাখির কাছে খুব প্রিয় এ ফল। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ফলটি খেতে আসে কয়েক প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে রয়েছে জলপাই বুলবুল, শ্বেতাক্ষী, কালো মাথা বুলবুল। বিকালে হলুদ আলোয় ঝোপ থেকে হঠাৎ উড়ে আসে সবুজ ঘুঘু। রোদের আলোয় পাখিটি আরও অপরূপ হয়ে উঠেছে। প্রায় পাঁচ মিনিটে বেশ কয়েকটি কামালা ফল খেয়ে আবারও উড়াল দিল ঘুঘুটি। বনের ভেতরে খুব কম উচ্চতায়ও বেশ দ্রুতগতিতে উড়তে পারে এ ঘুঘু। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের পাহাড়ি চিরসবুজ বনে সবুজ বা বাঁশ ঘুঘুর দেখা মেলে। অনেক অঞ্চলে রাজ ঘুঘুও বলে। ঘুঘু প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন বাঁশ ঘুঘু। এর শরীরজুড়ে সবুজ রঙের ছটা।
বাঁশ ঘুঘু (ইংরেজি: Common Emerald Dove, Green Dove, Green- winged pigeon; বৈজ্ঞানিক নাম: Chalcophaps indica)। কলাম্বিডি গোত্রের অন্তর্গত অত্যন্ত সুন্দর ঘুঘু।
স্থানীয় বাসিন্দা রবি চাকমা বলেন, পাহাড়ি ঝিরিতে ঘুঘু’র বাসা আছে। এটি বিহার এলাকায় হওয়ায় এখানে শিকার নিষিদ্ধ। এ কারণে পাখিসহ বিভিন্ন বণ্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল হয়ে উঠেছে। আশপাশের কেউ এখানে এসে শিকার করতে পারে না।
বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচটির সংগঠক সাথোয়াই মারমা বলেন, পুরুষ ঘুঘুর ডানা ধাতব সবুজ বা পান্না রঙের; পেটের দিক গোলাপি ধূসর বা উজ্জ্বল গোলাপি। মাথা ও ঘাড় ধূসরাভ। কপাল শুভ্র ও কাঁধ সাদা। ঠোঁট লাল, পা ও পাতা সিঁদুরে লাল। স্ত্রী জাতীয় ঘুঘুর রং প্রায় পুরুষের মতো তবে ফিকে, কপাল শুভ্র ধূসর, মাথা ও ঘাড় বাদামি, কাঁধে সাদা পট্টি নেই বা অস্পষ্ট। পিঠের ওপর সাদা ও কালো মোটা পট্টি। লেজ ও ডানার ডগা কালো। বাচ্চা দেখতে অনেকটা মায়ের মতো হলেও এদের ঠোঁট বাদামি-ধূসর, কপালে দুটো ধূসর দাগ, লেজের দিকটা লালচে-বাদামি, গলা ও দেহের নিচের অংশের পালকের প্রান্ত হলদে। তিনি আরও বলেন, পাহাড়ি বনে বিশেষত চিরসবুজ বনে সবুজ ঘুঘু দেখা যায়। এ ছাড়া যেসব এলাকায় বাঁশ বা ঘন ঝোপ জঙ্গল রয়েছে সেখানেও এদের দেখা যায়।
তবে শঙ্কার বিষয় হলো শিকারিদের উপদ্রবের কারণে বাঁশ ঘুঘু হারিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ে যেখানে শিকারের প্রবণতা বেশি সেখানে বাঁশঘুঘুসহ অনেক প্রাণীই হারিয়ে যাচ্ছে।
বাঁশ ঘুঘু দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার। এদের ওজন প্রায় সর্বোচ্চ ১৩৫ গ্রাম। ঘুঘু বাঁচে ছয় থেকে সাত বছর।
খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বলেন, বাঁশ ঘুঘু আমাদের একটি আবাসিক পাখি। পাহাড়ি বনে এদের দেখা যায়। বাংলাদেশে ২০১২ সালের বণ্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনানুসারে এ প্রজাতি সংরক্ষিত। পাখি শিকারে শাস্তির বিধান রয়েছে। আইন অনুযায়ী পাখি শিকার করলে সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, ফিলিপাইন, জাপান, পাপুয়া নিউগিনি, চীনের দক্ষিণাংশে সবুজ ঘুঘুর প্রধান আবাস।
এরা সাধারণত বর্ষার আগে, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ডিম দেয় বেশি। ছোট গাছ, বাঁশঝাড় বা ঝোপঝাড়ে কয়েকটি কাঠিকুটি জড়ো করে ছোট্ট ও অগোছালো বাসা বানায়।