প্রেমের টানে মানুষের রেকর্ডকে হার মানিয়েছে তিমি

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:০০ পিএম

ফাইল ছবি
প্রেম টানে মানুষ যে কী কী করতে পারে তার কোনো শেষ নেই। ছোট বেলায় রূপকথার গল্পে পড়েছিলাম সাত সমুদ্র তের নদী পার করে নিজের রাজকন্যাকে আনতে গিয়েছিলেন রাজকুমার। বাস্তবে সেই রাজকুমারের হদিস পাওয়া গেল।
সাত সমুদ্র না হলেও প্রেমিকার টানে ১৩ হাজার ৪৬ কিলোমিটার পারি দিয়েছে সেই রাজকুমার। শুনলে চমকে যাবেন, সে কিন্তু কোনো মানুষ নয়। একটি হাম্পব্যাক তিমি মাছ। নিজের প্রেমিকাকে খুঁজতে ৮ হাজার ১০৬ মাইল পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আফ্রিকায় পৌঁছেছে। যা দেখে গবেষকরা বলছেন, প্রেমের টানেই হয়তো রেকর্ড গড়ে ফেলেছে সেই তিমি। এ যাবতকালে কোনো তিমি এত দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করেনি। এ ঘটনা তিমির অভিবাসন ক্ষমতার নতুন দিকও উন্মোচন করেছে।
রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্সের প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এ অসাধারণ যাত্রার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সেই গবেষণার তথ্য অনুসারে, এই প্রথমবার একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ হাম্পব্যাক তিমিকে প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের মধ্যে ভ্রমণ করতে দেখা গিয়েছে।
গবেষকরা তিমির গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী টেড চিজম্যানের প্রতিষ্ঠিত হ্যাপি হোয়েল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন। ২০১৩ সালে কলম্বিয়ার কাছে প্রথম দেখা যায় ওই তিমিকে। কয়েক বছর পরে একই অঞ্চলে আবার তিমিটি দেখা যায়। তবে, ২০২২ সালে অপ্রত্যাশিতভাবে ওই তিমিকে আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে জাঞ্জিবারের কাছে ভারত মহাসাগরে দেখতে পাওয়া যায়।
সাধারণত একটি প্রাপ্ত বয়স্ক হাম্পব্যাক তিমি প্রায় ৪ হাজার ৯৭১ মাইল (৮ হাজার কিলোমিটার)-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। তবে এই তিমিটির বিশাল যাত্রাপথ তার দ্বিগুণ। হঠাৎ করে কেন এত দীর্ঘ পথ যাত্রা করল ওই তিমি?
গবেষকদের মধ্যে অন্যতম চিজম্যানের ধারণা কলম্বিয়ায় নিজের সঙ্গীর জন্য ক্রমাগত প্রতিযোগিতা এবং খাবারের ঘাটতির কারণে তিমিটি আফ্রিকায় নিজের জন্য নতুন অঞ্চল খুঁজতে গিয়ে থাকতে পারে। চিজম্যান বলেন, ‘তিমিরা স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের অধিকারী, বিভিন্ন আশ্চর্যজনক কাজ করে। মহাসাগরগুলি একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত। তিমিরা অনেক সময় নিজেদের সীমানা ছাড়িয়ে এগিয়ে যায়।’
সাধারণত প্রতি বছর একই প্রজনন ক্ষেত্রগুলিতে ফিরে আসে তিমিরা। কিন্তু এই তিমিকে বিভিন্ন মহাসাগরে দুটি পৃথক প্রজনন ক্ষেত্রের মধ্যে বিচরণ করতে দেখা গিয়েছে। যা তিমির প্রজননের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলেই ধারণা।
হ্যাপি হোয়েল প্ল্যাটফর্মে এখন প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার তিমির তথ্য রয়েছে। যদিও এই বিশেষ তিমির বর্তমান অবস্থান অজানা। গবেষকরা এখনো সেই তিমির সন্ধানে রয়েছেন। গবেষণার মতে, ক্রমাগত অস্বাভাবিক স্থানান্তরের ফলে হাম্পব্যাক জনসংখ্যার মধ্যে আরও বেশি সংযোগ তৈরি হতে পারে।