ছবি: সংগৃহীত
সুগার ফ্রি চাল উৎপাদন করে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতের মুর্শিদাবাদের জাব্বার শেখ নামের এক চাষি। তার উৎপাদিত বিশেষ এক ধান পুরোপুরি সুগারমুক্ত। যা ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য উপযোগী। তার এই অভিনব উদ্যোগ মুর্শিদাবাদের কোলান গ্রামে নজর কেড়েছে সবার। দূরদূরান্ত থেকে গ্রামবাসীরা আসছেন তার জমিতে এই বিশেষ ধরনের ধান দেখার জন্য।
এই বিশেষ ধানের উৎপত্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে গণমাধ্যমকে জাব্বার বলেন, বহুদিন ধরে ভাবছিলাম মানুষের জন্য এমন কিছু করব যাতে তারা উপকৃত হয়। তবে আর্থিক সমস্যার কারণে কোনো বড় উদ্যোগ নিতে পারছিলাম না। পরে বর্ধমানে একটি কাজের সূত্রে গিয়ে এক কৃষকের কাছ থেকে জানি এই সুগার ফ্রি ধানের কথা। তার থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এক কেজি বীজ সংগ্রহ করে আমার জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ করি। এভাবেই পাঁচ কাঠা জমিতে প্রথমবার এই ক্যাডবেরি রঙের ধানের চাষ শুরু হয়।
এই বিশেষ ধান দেখতে কিছুটা চকোলেটের মতো, আর তাই গ্রামবাসীরা এর নাম দিয়েছেন ‘ক্যাডবেরি ধান’। ধানের শিষের বিশেষ রং এবং এর সুগার ফ্রি বৈশিষ্ট্যই এই ধানের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়িয়ে তুলেছে। দূরদূরান্ত থেকে উৎসাহী মানুষ আসছেন জাব্বারের জমিতে এই নতুন ধরনের ধান দেখতে এবং এর গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে। সাধারণ সোনালি রঙের ধানের তুলনায় এই ধানের রং একেবারেই আলাদা এবং সে কারণেই এটি সহজেই নজরে পড়ে।
জাব্বারের এই উদ্যোগ এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
এলাকাবাসী বলছে, এই ধান শুধু জাব্বারের নয়, মুর্শিদাবাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদে এমন অভিনব উদ্ভাবন সত্যিই আনন্দের এবং এতে কৃষকদের নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেন এলাকার বাসিন্দারা।
এই প্রসঙ্গে ওই এলাকার এক ব্যক্তি ভারতীয় একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা মুর্শিদাবাদবাসী হিসেবে গর্বিত, কারণ এখানে আমাদের যুবক জাব্বার এমন এক নতুন প্রকারের ধান চাষ করেছে যা শুধু খাদ্য নয়, স্বাস্থ্যসুরক্ষার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
জাব্বার শেখ জানান, সাধারণত ধান থেকে চাল তৈরির সময় শর্করা থাকে যা ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু এই বিশেষ ধরনের ধান সেই সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। এটি শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে ডায়াবেটিস আক্রান্তরাও নিশ্চিন্তে ভাত খেতে পারবেন এবং এর চাহিদা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, আমার ইচ্ছে ছিল জমিতে নতুন কিছু করে দেখানো। সেই অনুযায়ী চেষ্টা করেছি, আর এতে কিছু সফলতাও পেয়েছি। তবে আর্থিক সাহায্য পেলে হয়তো এই ধানের চাষ আরও বেশি জমিতে করতে পারব এবং অন্য চাষি ভাইদের জন্য ও এটি উপকারী হয়ে উঠবে।
তিনি সরকারের কাছে কিছু সাহায্যের আবেদন করেছেন যাতে এই ধানের চাষে বৃহৎ পরিসরে বিনিয়োগ করতে পারেন এবং আরও চাষীদের এই বিশেষ ধান সম্পর্কে জানাতে পারেন। তিনি জানান, এই উদ্যোগ যদি সফল হয়, তাহলে এটি মুর্শিদাবাদসহ গোটা রাজ্যের কৃষিকাজের পরিসরে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
জাব্বারের কথায়, মানুষজনকে নতুন কিছু উপহার দেওয়াই আমার লক্ষ্য। আশা করি, আগামী দিনে এই ধান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চাষ হবে এবং ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
এদিকে এই বিশেষ ধান চাষের বিষয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধান চাষের এমন প্রকারভেদ ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যনিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যদি এই ধরনের চাষ আরো বিস্তৃত হয়, তাহলে তা কৃষিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
সামাজিক মাধ্যমে এই সুগার ফ্রি ধানের প্রচার প্রচলিত হওয়ায় জাব্বারের এই অভিনব উদ্যোগ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে এবং সহযোগিতা করতে অনেকে যোগাযোগও করছেন। ইতোমধ্যেই অনেক কৃষক এই বিশেষ ধান চাষে আগ্রহী হয়েছেন এবং পরবর্তী চাষের সময় জাব্বার তাদের পরামর্শও দেবেন বলে জানান।