৮০ হাজার বছর পর আবার পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে যে ধূমকেতু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩২ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
অক্টোবর মাসে বিরল এক মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হতে যাচ্ছেন পৃথিবীবাসী। রাতের আকাশে দেখা যাবে একটি ধূমকেতুকে, যেটি কিনা শেষবার দেখা গিয়েছিল নীয়ান্ডারথালদের সময়।
নতুন আবিষ্কৃত এই ধূমকেতুটির নাম সি/২০২৩ এ৩ (সুচিনশান–অ্যাটলাস)। শনিবার (১২ অক্টোবর) পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি আসতে যাচ্ছে এটি। আকাশপ্রেমীরা এই বিরল দৃশ্যটি হয়তো মিস করতে চাইবেন না, কারণ এটিকে আবার আকাশে দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরও ৮০ হাজার বছর!
ধূমকেতু সি/২০২৩ এ৩ গত ২৭ সেপ্টেম্বর সূর্যের সবচেয়ে কাছের বিন্দুতে (পেরিহেলিয়ন) পৌঁছেছিল এবং সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের শুরুতে দক্ষিণ গোলার্ধের মানুষদের জন্য দৃশ্যমান ছিল। বর্তমানে এটি সূর্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং উত্তর গোলার্ধের মানুষ এটি অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত দেখতে পাবেন বলে জানিয়েছে নাসা।
শনিবার ধূমকেতুটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৭১ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর দিয়ে অতিক্রম করবে। এটি পৃথিবীর নিকট দিয়ে প্রথমবারের মতো উড়ে যাচ্ছে বলে নাসার তথ্য থেকে জানা গেছে। ৮০ হাজার বছরের দীর্ঘ কক্ষপথের কারণে এটি শেষবার পৃথিবীর আকাশে দেখা গিয়েছিল নীয়ান্ডারথালদের সময়ে।
যারা দুর্লভ এই মহাজাগতিক দৃশ্যের সাক্ষী হতে চান, তাদেরকে সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের দিকে নজর রাখতে হবে বলে জানিয়েছে বৈজ্ঞানিক ওয়েবসাইট এবং সংস্থা আর্থস্কাই। ধূমকেতুটি আকাশে উজ্জ্বল আগুনের গোলার মতো দেখাবে, যার পেছনে থাকবে দীর্ঘ এক লেজ।
নাসার মিটিওরয়েড এনভায়রনমেন্ট অফিসের প্রধান বিল কুক জানিয়েছেন, ধূমকেতুটি দেখার জন্য একটি জোড়া দুরবিন ব্যবহার করলে আরও ভালোভাবে দেখা যাবে। এটি উল্কাপিণ্ডের মতো দ্রুত আকাশের দিকে ছুটে যাবে না, বরং স্থির থাকবে এবং প্রতিরাতেই একটু একটু করে তার অবস্থান পরিবর্তন করবে।
কুক বলেন, আপনি যদি খালি চোখে ধূমকেতুটি দেখতে পারেন, তবে দুরবিন ব্যবহার করলে আপনার অভিজ্ঞতা আরও দারুণ হবে।
ধূমকেতুটি ২০২৩ সালে চীনের সুচিনশান মানমন্দির এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাটলাস টেলিস্কোপের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়, তাই এর নামকরণ করা হয়েছে সুচিনশান–অ্যাটলাস।
ধূমকেতুটি ওর্ট মেঘ থেকে এসেছে, যা আমাদের সৌরজগতের বাইরের অংশে থাকা একটি গোলাকার ধূমকেতুদের সংগ্রহ। এটি সূর্য থেকে অনেক দূরে অবস্থিত বলে জানিয়েছেন অ্যারিজোনার লোয়েল মানমন্দিরের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. টেডি কারেটা।
বিজ্ঞানীরা প্রথমে নিশ্চিত ছিলেন না যে বরফ, জমাট গ্যাস এবং পাথর দিয়ে গঠিত এই ধূমকেতুটি সূর্যের চারপাশে ভ্রমণ করে অক্ষত অবস্থায় ফিরতে পারবে কিনা।
তবে বিল কুক জানিয়েছেন, ধূমকেতুটি সফলভাবে অক্ষত রয়েছে এবং এটি সঠিকভাবে তার কক্ষপথ সম্পন্ন করেছে
কুক বলছেন, সূর্যের কাছাকাছি আসার কারণে ধূমকেতুটি ‘ফরওয়ার্ড স্ক্যাটারিং’ নামে পরিচিত একটি প্রভাবের সম্মুখীন হবে, যার ফলে এর গ্যাস এবং ধূলিকণার ওপর সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে ধূমকেতুটি আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। তবে সূর্যের তীব্র আলোর কারণে এটি কয়েকদিন পর দৃশ্যমান হবে।
তিনি বলছেন, আপনার অবস্থান এবং আশেপাশের আলোর দূষণের ভিত্তিতে, ধূমকেতু সি/২০২৩ এ৩ (সুচিনশান-অ্যাটলাস) দেখার জন্য এমন একটি স্থানে যাওয়া ভালো, যেখানে শহরের কৃত্রিম আলো কম। ভালো পর্যবেক্ষণ স্থানের সন্ধানে থাকলে অনলাইনে আলোর দূষণের মানচিত্র ব্যবহার করতে পারেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী গিব জানিয়েছেন, বাইনোকুলার বা ছোট টেলিস্কোপ ব্যবহার করলে দেখার অভিজ্ঞতা আরও ভালো হবে, বিশেষ করে যদি আপনি ধূমকেতুর ১৫ ডিগ্রির লম্বা ধূলিকণার লেজ দেখতে চান। তবে অক্টোবরের শেষে এটি খালি চোখে দেখার মতো উজ্জ্বল থাকবে না।
ধূমকেতু এ৩-এর আগমন বিজ্ঞানীদের জন্যও একটি দারুণ সুযোগ। কারণ ধূমকেতু গবেষণার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো, ধূমকেতুর গতিপথ অনুযায়ী সবসময়ই পর্যবেক্ষণ যন্ত্র বা মানমন্দিরের অবস্থান সুবিধাজনক হয় না।
গিব বলেন, আমাদের কাছে এই অসাধারণ ধূমকেতুগুলো আসে, কিন্তু আমরা সবসময় সেগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারি না, কেবলমাত্র সেগুলো আকাশে যেখানে থাকে তার অবস্থানগত কারণে।
ধূমকেতুটি পৃথিবীর কাছাকাছি এলেই বিজ্ঞানীরা নতুন পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হবেন। যা ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য মূল্যবান হতে পারে। পৃথিবীর কাছাকাছি এসে ধূমকেতুটি আবার সৌরজগতের বাইরের দিকে ফিরে যাবে। এটি ৮০ হাজার বছরের লম্বা সফর শুরু করবে, এবং মানবসভ্যতা যদি ততদিন টিকে, তবেই একদিন আবার এর দেখা মিলবে।