
প্রিন্ট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৩ পিএম
হঠাৎ বাথরুমের পানির চাপ নিয়ে ট্রাম্পের লড়াই কেন?
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৪ পিএম

আরও পড়ুন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার (৯ এপ্রিল) এক নির্বাহী আদেশে বাথরুমে শাওয়ারের পানির প্রবাহে পূর্ববর্তী ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বারাক ওবামার আরোপ করা সীমাবদ্ধতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
দেশটিতে পানির সাশ্রয় ও সংরক্ষণ বাড়াতে বাইডেন ও ওবামা বেশকিছু নির্দেশনা চালু করেছিলেন। মূলত এই নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের উভয়েরই লক্ষ্য ছিল পরিবেশ রক্ষা।
সেখানে নতুন এক নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ‘মেক আমেরিকা’স শাওয়ার’স গ্রেট এগেইন’ (আমেরিকার শাওয়ারগুলোকে আবার দুর্দান্ত করুন)। এতে আরও বলা হয়, আমেরিকায় বাথরুমের শাওয়ারগুলো আর দুর্বল ও মূল্যহীন থাকবে না।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই নিয়ম পরিবর্তনের ফলে তিনি তার ‘সুন্দর চুল’ ভালোভাবে ধুতে পারবেন। আদেশটি এমন এক সময় আসে, যখন তার নতুন শুল্কনীতি মার্কিন শেয়ারবাজারে কয়েকশো কোটি ডলারের ক্ষতি ডেকে এনেছে। পরে অবশ্য হঠাৎ করেই তিনি বেশিরভাগ দেশের ওপর থেকে শুল্কের বিধিনিষেধ তুলে নেন।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে কী আছে?
ট্রাম্প এই আদেশে জ্বালানি মন্ত্রী ক্রিস রাইটকে ওবামা-বাইডেন যুগের শাওয়ারহেড-এর সংজ্ঞা বাতিল করতে নিদের্শ দিয়েছেন। শাওয়ারহেড সম্পর্কে বাইডেনের সংজ্ঞা ছিল ১৩ হাজার শব্দের। অথচ অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি একটি মাত্র বাক্যে শাওয়ারহেডের সংজ্ঞা দিয়েছে বলে ঘোষণা পত্রে বলেছে হোয়াইট হাউস।
ঘোষণায় আরও বলা হয়, ট্রাম্প ১৯৯২ সালের একটি ফেডারেল শক্তি আইনে ফিরে যেতে চান, যেখানে শাওয়ারের পানির চাপ প্রতি মিনিটে সর্বোচ্চ ২.৫ গ্যালন (প্রায় ৯.৫ লিটার) থাকার উল্লেখ আছে। পরবর্তী সময়ে নতুন ডিজাইনের শাওয়ারহেডে একাধিক নোজল বা স্প্রে সিস্টেম (যেসব ছিদ্র দিয়ে শাওয়ারের পানি বের হয়) যুক্ত হতে থাকে।
২০১৩ সালে বারাক ওবামা প্রশাসন এতে নতুন নিয়ম যোগ করেন। যাতে বলা হয়, শাওয়ারে একাধিক নোজল থাকলেও সবগুলো দিয়ে প্রতি মিনিটে সর্বোচ্চ ২.৫ গ্যালনের বেশি পানি বের করতে পারবে না ব্যবহারকারীরা।
কিন্তু ট্রাম্পের আদেশ অনুসারে, এখন প্রতিটি নোজল দিয়ে প্রতি মিনিটে ২.৫ গ্যালন পর্যন্ত পানি বের করতে পারবেন। অর্থাৎ একটি শাওয়ারহেডে যদি চারটি নোজল থাকে, তাহলে তা দিয়ে প্রতি মিনিটে ১০ গ্যালন পর্যন্ত পানি ছাড়া যাবে।
ওবামা যুগের নিয়মকে ‘চরম পরিবেশবাদী এজেন্ডার অংশ’ আখ্যা দিয়ে হোয়াইট হাউস বলেছে, ‘এ ধরনের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ আমেরিকার অর্থনীতিকে দমিয়ে রাখে, আমলাতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং ব্যক্তিস্বাধীনতাকে খর্ব করে।’
এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভালো করে গোসল করতে চাই, আমার সুন্দর চুলের যত্ন নিতে চাই। আমাকে ১৫ মিনিট ধরে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কিন্তু পানি টিপটিপ করে পড়ে, এটা হাস্যকর।’
আগেও কি ট্রাম্প নিয়ম শিথিল করেছিলেন?
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদেও ট্রাম্প ওবামার শাওয়ারহেডের সেই নিয়ম বাতিল করেন। তখনও ট্রাম্প নিয়ম করেন, প্রতিটি নোজল আলাদা আলাদাভাবে ২.৫ গ্যালন পানি ছড়াতে পারবে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি চূড়ান্তভাবে কার্যকর হয়।
ট্রাম্প ২০১৯ সালের এক নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছিলেন, ‘শাওয়ারহেডে আপনি চান গোসল করতে, কিন্তু পানি বের হয় না। হাত ধুতে চান, পানি আসে না। তাহলে আপনি কী করবেন? বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকবেন? আপনাদের কী অবস্থা জানি না, কিন্তু আমার চুল ধুতে হবে নিখুঁতভাবে।
২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্পের সেই শিথিলকরণ বাতিল করে আবার ২০১৩ সালের নিয়মে ফিরে যায়। এতে শাওয়ারহেডে একাধিক নোজল থাকলেও সবগুলো দিয়ে ২.৫ গ্যালনের বেশি পানি ব্যবহার করা যেত না।
হোয়াইট হাউস বলেছে, ‘বাইডেন শাওয়ারহেডের অগ্রগতিকে রুখে দিয়েছেন এবং শাওয়ার যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।’
এর প্রভাব আমেরিকানদের ওপর কী হতে পারে?
মার্কিন পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার তথ্য মতে, একটি পরিবার পানি ব্যবহারে বছরে গড়ে ১ হাজার ডলার (প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার টাকা) খরচ করে। সংস্থার ২৪ মার্চ হালনাগাদ করা এক তথ্যে বলা হয়েছে, যদি পরিবারগুলো ‘ওয়াটার সেন্স’- লেবেলযুক্ত ফিক্সচার ও শক্তি-সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে, তবে তারা বছরে প্রায় ৩৮০ ডলার (প্রায় ৪৬ হাজার টাকা) পর্যন্ত সাশ্রয় করতে পারবেন।
যদি একটি শাওয়ারহেডের মাধ্যমে প্রতি মিনিটি সর্বোচ্চ দুই গ্যালন (৭.৬ লিটার) পানি প্রবাহিত হয়, তাহলে তা ওয়াটার সেন্স লেবেল পায়।
২০১৯ সালে প্রকাশিত এক মার্কিন সরকারি রিপোর্টে সতর্ক করে বলা হয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অনেক অঞ্চলে পানির ঘাটতির ঝুঁকি বাড়ছে।