যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছরের কম বয়সিদের সুখী থাকার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। এ কারণে বিশ্বের শীর্ষ ২০টি সুখী দেশের তালিকায় দেশটির জায়গা হয়নি। এর আগে দেশটির ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিরা তাদের আগের প্রজন্মের চেয়ে সুখী ছিল। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে চিত্র পালটে যেতে থাকে। বর্তমানকালের তরুণরা আগের প্রজন্মের মানুষের তুলনায় কম সুখী। পশ্চিম ইউরোপেও এমনটি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সুস্থতার বার্ষিক পরিমাপক ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েলবিং রিসার্চ সেন্টার, গ্যালাপ এবং ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক পরিচালিত বিশ্বের ১৪০টি দেশের ওপর গবেষণা করে সুস্থতার বার্ষিক পরিমাপক ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
এ প্রতিবেদন সম্পর্কে দ্য গার্ডিয়ানকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ চিকিৎসক ডা. বিবেক মূর্তি বলেন, বর্তমানকালের তরুণরা সত্যিই সংকটে আছে। সাধারণত মাঝবয়সে মধ্যবয়সি সংকটে (মিডলাইফ ক্রাইসিস) ভোগে মানুষ। কিন্তু বর্তমান সময়ের তারুণরা তারুণ্যকালেই এ সংকটে ভুগছে। সতর্ক করে তিনি বলেন, শিশুদের সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া তাদের ওষুধ দেওয়ার মতো নিরাপদ বলে প্রমাণিত নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক প্ল্যাটফর্মকে আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের ব্যর্থতা ছিল রীতিমতো অস্বাভাবিক। তিনি বলেন, উত্তর আমেরিকাজুড়ে তরুণরা এখন বয়স্কদের তুলনায় কম সুখী। এ পরিবর্তন পশ্চিম ইউরোপেও ঘটতে পারে।
গবেষণার ফলাফলকে অশনিসংকেত হিসাবে আখ্যা দিয়ে ডা. বিবেক মূর্তি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের এখন ভালো থাকার জন্য লড়তে হচ্ছে। তবে সারা বিশ্বের চিত্রই অনেকটা একই রকম।
তিনি বলেন, এমন পরিসংখ্যান দেখার অপেক্ষায় তিনি আছেন, যা সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোকে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য নিরাপদ হিসাবে প্রমাণ করবে। তরুণরা যেন বাস্তবে সামাজিক যোগাযোগগুলোকে উন্নত করতে পারে সেজন্য আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানান তিনি।
ডা. বিবেক মূর্তি বলেন, মার্কিন কিশোর-কিশোরীরা সামাজিক মাধ্যমে দিনে গড়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ব্যয় করছে। এক-তৃতীয়াংশ ডিভাইস নিয়ে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে থাকে। সামাজিক প্ল্যাটফর্মের ‘লাইক’ অপশন এবং অসীম সময় ধরে স্ক্রল করার সুযোগসীমিত বা একদম বাদ দেওয়ার মাধ্যমে তরুণদের ক্ষতি কমাতে অবিলম্বে আইন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েলবিং রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও গবেষণার সম্পাদক প্রফেসর জ্যান ইমানুয়েল ডি নেভে বলেছেন, উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের তরুণরা অনেক বেশি অসুখী।
তিনি বলেন, বিশ্বের কিছু অংশে শিশুরা ইতোমধ্যেই মধ্যবয়সি সংকটের সমতুল্য অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে। এ পরিস্থিতি অবিলম্বে নীতিগত পদক্ষেপের দাবি রাখে। তিনি আরও বলেন, উত্তর আমেরিকার শিশু ও তরুণ-তরুণীদের সুস্থতার মাত্রা সুপ্রতিষ্ঠিত এ ধারণার বিপরীত যে, শৈশব ও কৈশোরে সুখী থাকার পর তারা মধ্যবয়সি কিছু সংকটের সম্মুখীন হয়। এরপর সেটা তারা কাটিয়েও ওঠে।
ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে আবারও শীর্ষ সুখী তিন দেশ হলো- ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড। এতে বলা হয়- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সব বয়সীদের মধ্যেই সুখী মানুষের সংখ্যা কমেছে। তবে তরুণরা অনেক কম সুখী। ২০১০ সালে তরুণরা মধ্যবয়সিদের তুলনায় বেশি সুখী ছিল। সামগ্রিক সুখের র্যাঙ্কিংয়ে আট ধাপ নেমে ২৩তম অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। তবে শুধু ৩০-এর কম বয়সিদের ক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান ৬২তম। গুয়াতেমালা, সৌদি আরব এবং বুলগেরিয়ার পরে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ৬০ বা তার বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ১০ম সুখী দেশ। সুখী দেশের তালিকায় মলদোভা, কসোভো এমনকি এল সালভাদরের মতো দেশের নিচে যুক্তরাজ্যের অবস্থান। যুক্তরাজ্যের ষাটোর্ধ্বদের মানসিক অবস্থা আবার বিপরীত।
প্রতিবেদনে এ পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। তবে সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্রমবর্ধমান ব্যবহার, আয়ের বৈষম্য, আবাসন সংকট এবং শিশু ও তরুণদের সুখের ওপর যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।