
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১২ পিএম
তরুণদের কর্মশক্তির উন্নতি ঘটাতে পারে জেনারেটিভ এআই

ড. শাহ জে মিয়া
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
জেনারেটিভ এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) আসলে এক ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা বিশেষ ধরনের মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতাকে অনুকরণ ও পরিবর্ধন করে থাকে। এ বিশেষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি নতুন কোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বা কিছু তৈরি করতে সরাসরি সাহায্য করে থাকে। যেমন, মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে এটি হিস্টরিকাল ডেটা যেমন-টেক্সট, ইমেজ, অডিও, ভিডিও বা এগুলোর মিক্সচার করতে পারে, যা একটি গ্রহণযোগ্য উত্তর তৈরিতে সক্ষম।
যখন সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যালগরিদমগুলো বেশকিছু ধরনের অ্যানালিটিক্যাল কাজ করে থাকে যেমন : প্রেডিকশন, ক্লাসিফিকেশন, প্রেডিকটিভ অ্যানালাইসিস, ট্রেন্ড অ্যানালাইসিস, সেখানে জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এ কাজগুলোর পাশাপাশি নতুন কিছু তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। আগে যেমন আমরা সেলস ডেটাকে প্রেডিক্ট করার জন্য মেশিন লার্নিং ব্যবহার করতাম, এখন আমরা জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে শুধু সেলস ডেটা নয়, আরও অনেক ব্যবসায়িক ডেটাকে নিয়ে কাজ করতে পারি। এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আমরা সাধারণত ব্যাখ্যা করে থাকি এভাবে : এটা হচ্ছে একটা বিশেষ ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যেটা রেনফোর্সমেন্ট লার্নিং দিয়ে কাজ করে। এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি পুরোনো ডেটা বা কনটেন্ট ব্যবহার করে নতুন ডেটা, কনটেন্ট অথবা এ ধরনের ডেটা আউটপুট তৈরির কাজে মনোনিবেশ করবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি যে কোনো ডেটা বা কনটেন্ট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং করতে থাকে, এবং এমনভাবে নিজেকে প্রশিক্ষিত করে থাকে যেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি নিজেই তার প্রশিক্ষণ ডেটার মতো ডেটা তৈরি করতে পারে, এবং তার প্রশিক্ষণ ডেটার সঙ্গে নতুন তৈরিকৃত ডেটার কোনো সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। অন্যভাবে বলা যায়, নতুন যে কনটেন্ট বা ডেটাটি তৈরি হচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন হতে পারে, যার সঙ্গে প্রশিক্ষণ ডেটার কোনো মিল নেই। যেটা পরবর্তীকালে বর্তমান ডেটার বা কনটেন্টের সঙ্গে তুলনা করে নতুন পর্যবেক্ষণ বা জ্ঞান প্রদান করতে পারে, যা মানুষের যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
এই বিশেষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি সাধারণত তিন ধরনের মূল দার্শনিক ধারণা অনুসরণ করে থাকে। প্রথমটি ফাউন্ডেশনাল মডেল, যেটা বৃহৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল ব্যবহার করে অনেকগুলো বা মাল্টিপল টাস্ক একবারে বা একসঙ্গে পরিচালনা করতে সক্ষম। এটাকে ফাউন্ডেশন মডেল বলা হচ্ছে এ কারণে যে, এখানে এটাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটা ফাউন্ডেশন হিসাবে ধরা হয়, যেখানে অনেক কাজ একসঙ্গে সম্পাদন করা যায়। দ্বিতীয়টি হলো ডিপ লার্নিংভিত্তিক দার্শনিক ধারণা। এ ধারণাটি মূলত মেশিন লার্নিংয়েরই ধারণা, কিন্তু এখানে আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক বা একাধিক মেশিন লার্নিং লেয়ার বা স্তর থাকতে পারে। এ লেয়ারগুলোতে ডেটা বিভিন্ন লেভেলে বিভিন্ন লার্নিং (মাইক্রো লেভেল) তৈরি করে থাকে। এসব লার্নিং কোনো কমপ্লেক্স প্যাটার্ন আকারেও প্রকাশ করা যেতে পারে। তৃতীয়টি হলো হাইব্রিডভিত্তিক দার্শনিক ধারণা, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলটি যা তৈরি করছে তা বিভিন্ন ফরম্যাটে থাকতে পারে। যেমন কিছু ডেটা বা কনটেন্টের অংশ টেক্সট থেকে এলো, আবার কিছু অংশ ইমেজ থেকে এলো। কিছু অংশ অডিও থেকে এবং ভিডিও থেকে এলো। এগুলোর সংমিশ্রণে একটি প্রম্প্ট রেসপন্স হিসাবে একটি জেনারেটেড রেসপন্স তৈরি করল, যেটা হাইব্রিড আকারে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম এ ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অনেক পরিশ্রমসাধ্য কাজ সম্পাদন করার দক্ষতা ধারণ করতে পারে। বিশেষ করে সফটওয়্যার তৈরিতে বা আইসিটি সম্পর্কিত কাজে এর প্রভাব অনেক বেশি। যেমন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা যে কোড লিখে থাকেন, তার পরিমাণ হয়ে থাকে লাখ লাখ লাইন সংবলিত। এখানে দেখা যাচ্ছে, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে যদি সুন্দরভাবে নির্দেশনা দেওয়া যায়, তাহলে এটি সুন্দরভাবে সফটওয়্যার কোডগুলো জেনারেট করে দিতে পারে। তার সঙ্গে এটাকে ব্যবহার করা যাবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা পার্সনালাইজড এক্সপেরিয়েন্স যেমন আর্টিস্টিক বা কোনো ব্যক্তির পার্সনালাইজড এক্সপেরিয়েন্স হিসাবে, যেটা শুধু তার মতো করেই তৈরি। তাছাড়াও কোনো কনটেন্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে বা কোনো ব্যক্তিগত ইমেইল লেখার ক্ষেত্রে এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো সৃজনশীল কনটেন্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে বা নতুন কোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগের ক্ষেত্রে, যেখানে কোনো নতুন আর্ট বা ডিজাইন বা পুঙ্খানুপুঙ্খ নকশা করার জন্য জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার অনস্বীকার্য। জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আমাদের তরুণ প্রজন্ম এমন কিছু করতে পারবে, যা আগে কারও দ্বারা কখনই সম্ভব ছিল না।
উল্লেখিত সুবিধাগুলো ছাড়াও এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি আমাদের এ মনুষ্য সমাজে এবং ব্যবসায় অনেক অসুবিধা তৈরি করতে পারে। প্রথমত নীতিগত সমস্যা। যেখানে গোপনীয়তাভিত্তিক বিভিন্ন বিষয় থাকতে পারে, বা পক্ষপাতমূলক বিষয় থাকতে পারে। একটি জেনারেটিভ মডেলের জন্য পক্ষপাতহীনতা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি জেনারেটিভ মডেলটি তৈরি করার সময় শুধু এক ধরনের ডেটা নিয়েই তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে সেই মডেলটি শুধু সেই ধরনের আউটপুট-ই জেনারেট করছে, যাকে আমরা এ নিদৃষ্ট ধরনের ডেটার প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট মনে করে থাকতে পারি। আরেকটি বড় অসুবিধা হলো কপিরাইটজনিত সমস্যা। সৃজনশীল ব্যক্তি বা ব্যবসার ক্ষেত্রে কপিরাইট অনেক বড় একটি সমস্যা। এ অসুবিধাগুলো ভুল তথ্য তৈরি করতে পারে, যা তথ্য যাচাইকে প্রভাবিত করে মিশিনফরমেশন করতে পারে, যেটা সমাজের ও ব্যবসার সাফল্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পৃথিবীতে চাকরির বাজারে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকার জন্য সব আধুনিক পেশার ক্ষেত্রে আপস্কিলিং ও রিস্কিলিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ আপস্কিলিং আর রিস্কিলিং শুধু চাকরিতে টিকে থাকতেই সাহায্য করবে না, বরং ভবিষ্যতে চাকরির বাজারের প্রতিযোগিতায় টেকসইভাবে টিকে থাকতে সাহায্য করবে। এখন জানা যাক আপস্কিলিং ও রিস্কিলিং জিনিসটি আসলে কী।
লিঙ্কেডিনের গবেষণা অনুসারে আপস্কিলিং বলতে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক থাকার জন্য নতুন দক্ষতা অর্জন বা বিদ্যমান দক্ষতা বৃদ্ধির অনুশীলনকে বোঝায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আপস্কিলিং বিশেষভাবে তরুণ সমাজের ক্যারিয়ারকে বর্তমান যুগের চাকরির বাজারের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বা বর্তমান ক্ষেত্র বা শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জ্ঞান অর্জনের ওপর দৃষ্টি রাখতে পারে। তরুণ প্রজন্ম নিজেদেরকে আপস্কিলিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মদক্ষতা উন্নত করতে বা আপ-টু-ডেট থাকতে হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দায়িত্বও যোগ হতে পারে। পুনঃদক্ষতা বা রিস্কিলিং বলতে সম্পূর্ণ নতুন দক্ষতা অর্জনকে বোঝায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পুনঃদক্ষতা চাকরির বাজারে বা ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারে পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবসা বা শিল্পের দিকে পরিচালিত করার জন্য বিভিন্ন পথের উন্মোচন ঘটাতে পারে। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানও তাদের কর্মীদের সম্মিলিত লক্ষ্য ঠিক করতে এবং কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করতে সহায়তা করতে পারে।
জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ট্রেনিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। তরুণ সমাজের আধুনিক শিক্ষা এবং উন্নয়নের সুযোগ ও দক্ষতা বৃদ্ধি শুরু করার দ্রুততম এবং সবচেয়ে সহজলভ্য উপায় হলো তাদের আগ্রহের জায়গা থেকে একটি বা একাধিক অনলাইন কোর্স বা ওয়েবিনারে ভর্তি হওয়া। তারপর এ কোর্সে যাওয়ার মূল শিক্ষাগুলো প্রতিফলিত করে নিজস্ব পোর্টফোলিও তৈরি, অ্যাপ্লিকেশন বা এর প্রয়োগ ঘটিয়ে জ্ঞানলাভ করতে পারে। জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রশিক্ষণের জন্য সবচেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম হলো coursera.org। এখানকার কোর্সগুলো উন্নতমানের ও সাশ্রয়ী। এ প্ল্যাটফর্মে কোর্সগুলো মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যারা মাত্র শেখা শুরু করেছে তাদের জন্য শিক্ষানবিশ পর্যায়ের কোর্স, তারপরে রয়েছে ইন্টারমিডিয়েট এবং সবশেষে প্রফেশনাল কোর্স করার সুবিধা। কোর্সের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ট্রেনিংগুলো ২ সপ্তাহ থেকে ১ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্য ট্রেনিংগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে আইবিএম কর্তৃক পরিচালিত Generative AI Fundamental কোর্সটি। এটি একটি ৬ মাসের দীর্ঘমেয়াদি কোর্স। তারপরেই রয়েছে ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি কর্তৃক পরিচালিত Generative AI Automation কোর্সটি। DeepLearning.AI কর্তৃক পরিচালিত Generative AI for Everyone এবং Generative AI for Software Development কোর্স দুটিও জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রশিক্ষণের জন্য অনেক সুপরিচিত কোর্স। তরুণ প্রজন্ম অনলাইন বা ব্যক্তিগত কোর্স, কর্মশালা, সম্মেলন বা অন্য কোনো শেখার ফরম্যাট তাদের চাহিদা অনুযায়ী বেছে নিতে পারে, যা নির্ভর করবে সময় ও বাজেটের ওপর। তারা চাইলে একটি ছোট ১-২ দিনের কোর্স থেকে শুরু করে কয়েক বছর ধরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন পর্যন্ত যে কোনো কিছু বেছে নিতে পারে। পিয়ার কোচিং বা পরামর্শদাতাও এ ক্ষেত্রে একটি শিক্ষার ফরম্যাটও হতে পারে, যদি প্রয়োজন হয়।
আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে, অসংখ্য জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্ল্যাটফর্ম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেখা যায়। আমাদের জন্য জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কোন প্ল্যাটফর্মের জ্ঞানটি বেশি জরুরি। প্রথমেই রয়েছে OpenAI-এর ChatGPT. ChatGPT এত জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ হলো আমাদের সমাজের যে সাধারণ সমস্যাগুলো আছে, এটি এগুলোর সমাধান সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। যেমন, কোনো মানুষ কোনো কিছু নিয়ে, বা তার বুদ্ধিমত্তার অধিবেশন (ব্রেইনস্টর্মিং) ধরনের কিছু যদি কিছু প্রয়োজন হয়, অথবা কোনো নতুন ধারণার অন্বেষণ (আইডিয়া এক্সপ্লোরেশন) ধরনের কোনো কিছু যদি হয়, তাহলে যে কেউ এই জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি ব্যবহার করতে পারবে। মজার ব্যাপার হলো, গত বছর আমেরিকায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, যেখানে ২০২২ সালে আমেরিকায় প্রোগ্রামারদের চাহিদা ছিল ২ লাখ ৬০ হাজারের উপরে, সেখানে ২০২৩ সালে এসে সেটা কমে হয়েছে মাত্র ৭০০। জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যে কোনো কঠিন সমস্যা সমাধানের জন্য যে কোনো প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে প্রোগ্রামিং কোড লেখা সম্ভব। সেটা হতে পারে সি++, জাভা অথবা পাইথন। যে কেউ যে কোনো সময় একটি বা একাধিক সফটওয়্যার কোড লিখতে পারে। যার কারণে প্রোগ্রামারদের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা এ যুগে অনেক গুণে বেড়ে যাচ্ছে। কঠিন প্রোগ্রামিং সমস্যার জন্য আমাদের প্রোগ্রামারদের প্রয়োজন কম হচ্ছে। টেকনিক্যাল কোম্পানিগুলোতে এখন শুধু আইটির মেধাসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন হচ্ছে প্রধানত দুটি ক্ষেত্রে। ছোট ছোট ইন্টিগ্রেশনের জন্য, এবং ডেটা সম্পর্কিত কানেক্টিভিটি এবং নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলার জন্য।
জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেমন ChatGPT-এর মতো আরও একটি নতুন অত্যন্ত জনপ্রিয় জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল গত বছরের শেষদিকে বাজারে এসেছে। DeepSeek নামের এ নতুন জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি আস্তে আস্তে সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে শুধু একটি কারণে-এটি কম খরচে ব্যবহারকারীদের ডেটা মডেল তৈরিতে সাহায্য করে। DeepSeek মডেলটি চীনের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল কম খরচে সর্বোচ্চ কর্মক্ষমতা ও গতিবেগ প্রদান করা। মডেলটিতে সর্বমোট ৬৭১ বিলিয়ন প্যারামিটার ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিভিন্ন কাজে ChatGPT থেকে ভালো এবং সুনিপুণ উত্তর তৈরি করতে সক্ষম। DeepSeek মডেলটি কিছুদিন আগে সবার জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। এরই মধ্যে এটি আমেরিকায় সর্বাধিক ডাউনলোডকৃত অ্যাপ্লিকেশন হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সম্প্রতি আলিবাবা নতুন আরেকটি জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল বাজারে নিয়ে এসেছে, যার নাম হলো QWQ-32B। মডেলটিতে সর্বমোট ৩২ বিলিয়ন প্যারামিটার আছে এবং বেশকিছু বেঞ্চমার্ক এ মডেলটি DeepSeek মডেলকে হার মানায়। তবে এ মডেল সম্পর্কিত উন্নত প্রশিক্ষণ এখনো অনলাইন মার্কেটে সহজলভ্য হয়নি।
আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য এ ধরনের জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জ্ঞান অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের যদি এ জ্ঞান না থাকে এবং বর্তমানে যারা আইসিটি সম্পর্কিত চাকরিতে আছে, তারাও যদি এ ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জ্ঞানের স্বল্পতায় ভোগে, তাহলে তারা আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে পিছিয়ে যাবে। আমরা কখনো চাই না বাংলাদেশের জন্য এ ধরনের সমস্যা তৈরি হোক। বিশেষ করে আমি চাই না এ ধরনের সমস্যা বাংলাদেশ তৈরি হোক, যা আমাদের তরুণ প্রজন্মের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করবে।
ড. শাহ জে মিয়া : প্রফেসর অব বিজনেস অ্যানালিটিক্স, নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া