গণ-আকাঙ্ক্ষার রাষ্ট্র সংস্কার

মনিরুজ্জামান বাদল
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আমাদের বাংলাদেশে সবচেয়ে বহুল আলোচিত, অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বাক্য-‘রাষ্ট্রের সংস্কার চাই’, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে’, ‘রাষ্ট্রের সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হলে চালু হবে নতুন বন্দোবস্ত’, ‘এই তো সুযোগ নতুন রাষ্ট্র গড়ার’, ‘এ সুযোগ কাজে না লাগালে ব্যর্থ হবে বাংলাদেশ’। এবংবিধ নানা শব্দ-বাক্য, কথামালার সুললিত শব্দতরঙ্গ-সুর ভাসছে আকাশে বাতাসে, ঝড় তুলছে ছোট-বড়, চা-স্টলের গণআলাপে কিংবা জ্ঞানী-গুণী পণ্ডিতদের আড্ডাস্থল-ক্লাব, হোটেল, রেস্তোরাঁয়।
একটি বড় উপন্যাস, সৈয়দ শামসুল হক বিরচিত শেষ উপন্যাস-‘নদী কারো নয়’ পড়লাম সম্প্রতি; ৩৬ জুলাই ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আগেই। এ উপন্যাসের মূল সুর বলা আছে শেষ পাতায়-‘পৃথিবীর সব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নই প্রথমত উত্থাপিত হয় সাধারণ মানুষের কণ্ঠে। এবং সে কণ্ঠের উচ্চারণ উত্তরবিহীন মিলিয়ে যায় বাতাসে। ইতিহাস নয় বরং জীবনটাই হচ্ছে বেয়াড়া বলদ, কখন যে কোন দিকে ধাবমান হবে, তার ঠিক নাই, তার নিয়ন্ত্রণও সবসময় আমাদের হাতে থাকে না’।
আসলে আমরা যারা কেন্দ্রে থাকি ক্ষমতার বৃত্তবলয়ে, তারা টের পাই না বাতাসে ভাসছে গণ-আকাঙ্ক্ষা। অবশ্য গণ-আকাঙ্ক্ষার আদৌ কোনো মূল্য আছে কিনা, সে আকাঙ্ক্ষা শক্তিবলয়ে ঠাঁই পায় কিনা, সে এক বড় প্রশ্ন আজ। কোন যোগসূত্রে, ঈশ্বরের কোন ইশারা-আশীর্বাদে কে যে কখন বসে ক্ষমতার মসনদে, জনতা টের পায় না, কিংবা টের পেলেও বলে না অথবা গুটিয়ে নেয় নিজের শরীর, আত্মা-অবয়ব নিজের ভেতরে কেবলই জীবন রক্ষা!
জুলাই-আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যূত্থানের পর সবাই বলতে পারছে কথা, ব্যক্ত করছে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা, দাবি তুলছে ন্যায্য পাওনা আদায়ের। এমনকি প্রান্তিকজন-কুলি-মজুর-শ্রমিক ছিলেন যারা বাকরুদ্ধ, তাদের মুখেও ফুটছে অধিকার আদয়ের কথা। তারা না বোঝে শব্দের তাৎপর্য, না বোঝে বাক্যের মারপ্যাচ, তারা চায় সহজ সরল সমাধান।
এ বাংলাদেশ ছিল না ১৯৭১ সালের আগে, এ মানচিত্র হয়নি তো আমাদের ১৬ ডিসেম্বরে বিজয়ের আগে। অবশ্য মনে মনে ছিল, কল্পনায় ছিল, আবেগে, ভালোবাসায়, অনুভূতিতে ছিল; আবেগ ঘনীভূত না হলে ঝড়-তুফান হয় না; সবকিছু লন্ডভন্ড না হলে নতুন সৃষ্টি হয় না। একটি নতুন কিছু হঠাৎ করে আকাশ ফুঁড়ে নেমে আসে না; অবশ্য ঈশ্বর কিংবা তার প্রতিনিধি দাবিদার কিছু মানুষ এবং রাষ্ট্র ছাড়া।
রাষ্ট্রের ধারণা ছিল না আদিম সমাজে, দাসযুগেও সীমানা চিহ্নিত ছিল শক্তিধর জনপদের খেয়াল খুশিমতো। সামন্ত যুগে শোষণের প্রলেপ হিসাবে শিল্প-সাহিত্য ছিল রাজাদের হাতিয়ার। রাজ্য কিংবা সম্রাজ্য যাই বলি না কেন, কেন্দ্রের নিয়ম-ব্যাকরণ একটাই-‘রাজাই ঈশ্বর, ঈশ্বরই রাজা’, প্রজাদের কেউ নন অংশীদার, এমনকি বেঁচে থাকাটাও নির্ভর করে রাজার ইচ্ছা কিংবা রাগ-অনুরাগের ফসল হিসাবে। বহু সংগ্রাম, বিদ্রোহ-বিপ্লবে রক্তদানের বিনিময়ে যাত্রা শুরু রাষ্ট্র নামক একটি প্রতিষ্ঠানের। পরিবার, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, বিভিন্ন পদবাচ্যে মানুষের সামষ্টিক অস্তিত্ব বা সত্তা থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিক সত্তা হলো রাষ্ট্র। বিবর্তনের চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের জন্ম, বেড়ে ওঠা, এগিয়ে চলা। এটি কোনো স্থির, অনড়, অচল কোনো বিষয় নয়-এটা জানি; তবে এটাও সত্য যে, এর কাঠামোর মৌল উপাদান এমন ভঙ্গুর নয় যে, যে যখন যা খুশি গড়বে, ভাঙবে, খেলবে, খেলা শেষ হলে চলে যাবে নিজ নিজ ঠাঁই।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, রাষ্ট্রের মৌল খুঁটি বা উপাদান চারটি-নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ড, জনগোষ্ঠী, সার্বভৌমত্ব এবং সরকার। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে ৩০ লাখ শহিদ এবং ৭ কোটির অধিক বাঙালি ও অন্য জনগোষ্ঠীর কষ্ট-যন্ত্রণার বিনিময়ে পাওয়া আমাদের বাংলাদেশেও এ চারটি মৌল উপদানেই গড়া। কাজেই রাষ্ট্র সংস্কারের কথা যখন আমরা যারাই বলি, মনে রাখতে হবে এদেরকে। হ্যাঁ, সংস্কার করব, করতেই হবে; অন্যসব জীবের মতোই সংগঠনও জীবন্ত, বিশেষ করে যে সংগঠনের সদস্যরা জীবন্ত মানুষ, উদ্ভিদ, প্রাণী সবাই।
কিন্তু কী কী সংস্কার চাই, কেন চাই, করব কীভাবে? এ সবই বিচার-বিশ্লেষণের দাবি রাখে। যেন যুক্তি-তর্ক, বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে নিতে পারি সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত। আমরা যেন পথ না হারাই শব্দের চোরাবালিতে, বাক্যের চাতুরীতে। একটি শব্দ শুধু নয় অক্ষরের সমষ্টি, একটি বাক্য নয় শুধু শব্দের বিন্যাসের সমাহার-প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্যের সঙ্গে আছে প্রাণের সংযোগ, আছে ভালোবাসা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিপীড়ন নির্যাতনের ইতিহাস।
‘রাষ্ট্র সংস্কার’-এ শব্দগুচ্ছের আবেগ, অনুভূতি, তাৎপর্য আমাদের বুঝতে হবে। আগেই বলেছি, রাষ্ট্রের ধারণা বা এ সংগঠনের উৎপত্তির সঙ্গে প্রথম মৌল উপাদান একটি নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ড, যা মানচিত্র হিসাবে চিহ্নিত, প্রকাশিত এবং সর্বজনস্বীকৃত। বাংলাদেশের একটি মানচিত্র আছে; এর কোনো পরিবর্তন চায় কি জনগণ? অবশ্যই না, এ-মানচিত্রের আকার, অবয়ব, হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে কিংবা ন্যায্য পাওনা নিশ্চিতকরণের জন্য আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুদ্ধও আবশ্যক হয়ে পড়ে। ’৭১-এর মানচিত্র আমরা বদলাতে চাই না। যদি কেউ চায়ও, তারা খুবই নগণ্য, আমলে নেওয়ার মতো নয়। এবার আসি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বিষয়ে-এটারও নিষ্পত্তি হয়েছে ওই ’৭১ সালে। হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ঘাসফুল, শস্য-বৃক্ষ, পোকামাকড়, নদী-পর্বত, জলাভূমি সবাই আছে শামিল। কাউকে বাদ দেওয়া বা বিতাড়িত করা বা বাইরের কাউকে অনুপ্রবেশ করানোর সুযোগ নেই। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন বা সংস্কার প্রয়োজন তো নেই-ই বরং উহা অপাঙ্তেয়ও বটে।
এবার আসি বিমূর্ত কিন্তু রাষ্ট্রের আবশ্যক মৌল বিষয়-সার্বভৌমত্বের কথায়। এটা এমন একটা বিষয় যে, এখানে চুল পরিমাণ বিচ্যুতিরও কোনো সুযোগ নেই-‘কম গণতন্ত্র, বেশি উন্নয়ন’-এমন ফালতু বিষয়ের অবতারণা করা দূরে থাকুক, উচ্চারণেরও কোনো সুযোগ নেই যে, বেশি নিরাপত্তা বা উন্নয়নের বিনিময়ে অল্প সার্বভৌমত্ব নেওয়া যাবে। তাহলে সবশেষে রইল সরকার। হ্যাঁ, এ বড় রহস্যময় উপাদান, এর চরিত্রই আসলে নির্ধারণ করে রাষ্ট্রের চরিত্র।
সরকারের চরিত্র আবার নির্ধারণ করে জনগণ। জনগণ যা চায় অথবা মেনে নেয়, সরকারও তেমনই আচরণ করে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে সামাজিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ সমাজ যেমন, রাষ্ট্রও হবে তেমনই। আগেই বলেছি সাম্রাজ্যের আগেও সমাজ ছিল, এখনো আছে। সামষ্টিক সত্তার নিওক্লিয়াস পরিবার, তবে তাকেও মোটা দাগে বলা যায় ব্যক্তিসত্তা। সমাজই হলো প্রাথমিক এবং সামগ্রিকভাবে সামষ্টিক সত্তা। সমাজ সুস্থ থাকলে বলতে পারি অন্য সব প্রতিষ্ঠান সুস্থ থাকবে। যদিও নিশ্চত হই না কোথায় কোন গোপন কোটরে মরণঘাতী ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া বেঁধেছে বাসা। এসব কিছু বাদ দিয়েও যদি প্রশ্ন রাখি নিজের অন্তরে-কতটা যত্ন নিয়েছি সমাজের, কতটুকু দিয়েছি অগ্রাধিকার? উত্তর পেয়ে যাব, যদি হিসাব করি রাষ্ট্রীয় খরচের খাত। রাষ্ট্রের মালিকানা তো জনগণের, সমাজের, কাজেই হিসাব নেওয়ার অধিকার তো আছেই।
রাষ্ট্র তো ক্ষমতা প্রয়োগের বৈধ অস্ত্র। কোথায়, কখন, কীভাবে করছে প্রয়োগ, সে হিসাব করি কীভাবে? কীভাবে নিয়ে আসি তাকে জবাবদিহিতার মধ্যে? সব রাষ্ট্রের ইতিহাস যদি দেখি, এক পলকে, খুঁজে পাই একটি সরল সূত্র-স্বৈরাচারী সরকার বেশি মনোযোগ দেয় বাহ্যিক অবকাঠামো নির্মাণে, ঝলমল উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখায় সে। কিন্তু নিচে পড়ে থাকে অসহায় সমাজ। সত্যি বলতে কী, গত ৫৩ বছরে আমরা নেইনি কোনো যত্ন-আত্তি আমাদের সমাজের। তাই তো সে কেমন জানি নির্জীব, ফ্যাকাসে। ’৭১-এর আগে আমাদের সমাজ ছিল সবচেয়ে প্রতিবাদী, বিদ্রোহী হতেও করেনি কোনো দ্বিধা। কিন্তু এখন বড় বেশি হতাশার চিত্র দেখি।
যদিও আশায় বাঁধি বুক নতুন প্রজন্ম দেখে; ওরাই ঘটিয়েছে অভ্যুত্থান ২৪, মানেনি পঞ্জিকার সীমা, দীর্ঘায়িত করেছে, নাম দিয়েছে ৩৬ জুলাই। ’৭১-এর পর এত বড় বিদ্রোহ-সংগ্রাম হয়নি কখনো। শহিদের সংখ্যা, যন্ত্রণাক্লিষ্টদের সংখ্যা খুবই কম ’৭১-এর তুলনায়। তবে যদি প্রশ্ন করি, ’৭১-এ যুদ্ধ করেছি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। কিন্তু ২৪ করলাম যা, সে তো নিজের দেহে বসবাসকারী বেনিয়া-দালাল-স্বৈরাচারের ভয়াবহ ধ্বংস খেলার সমাপন ঘটাতে। যদি হেরে যেতাম, ৪-৫ আগস্ট, ২০২৪-এ কী হতো বাংলাদেশের জমিনে? হয়তো বা পৃথিবীর জঘন্যতম নারকীয় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতো দেশে। আমি ভাবতে পারি না, কল্পনাতেও ঠাঁই দিতে গিয়ে দুচোখ বন্ধ করে রাখি রাষ্ট্রীয় দানব বাহিনীর ভয়ে। কীভাবে কেমন করে রাষ্ট্রের কর্ণধার হত্যা করতে পারে নিরীহ নাগরিকজন, বিশেষ করে নবীন কিশোর ছাত্র-জনতা।
আমার কাছে এখনো অজানা-কেমনে, কীভাবে হলাম জয়ী স্বৈরাচার দানবের নখরের বিষকামড় থেকে। নিশ্চয়ই ওইদিন ঈশ্বর তার সব কাজ ফেলে স্বয়ং এসেছিলেন নেমে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করিবার তরে। প্রাথমিক রক্ষা তো পেয়েছি, মানে জীবনে আছি বেঁচে। কিন্তু তারপর! আবার যে পথে চলেছি, সে তো নয় আলোকোজ্জ্বল, ঘন কুয়াশায় ঢাকা আছে এখনো। আলোর পথে যদি চলি, তবে অবশ্যই বহু জরাজীর্ণ পুরানো বিষয়গুলোকে পেছনে রেখে, টেবিলে রাখব সত্য, কল্যাণের পথে চলার ব্যাকরণ। সত্যি বলতে কী, এ ব্যাকরণ আমাদের নতুনভাবে রচনা করার দরকার নেই। লেখা হয়েছে লাখো-কোটি মানুষের হৃদয়ের অক্ষরে, রক্ষিত আছে হৃদয় মন্দিরে। শুধু দূর করতে হবে বেনিয়া-শোষক-দালাল-চরিত্রহীন-পুঁজিপতিদের আধিপত্য। বাংলাদেশের মালিকানা যারা ছিনিয়ে নিয়েছিল, ওদের কাছ থেকে করতে হবে উদ্ধার।
কালের পরিক্রমায় সরকার তথা শাসনব্যবস্থারই বেশি পরিবর্তন হয়েছে, হচ্ছে এবং হবেও। এমনকি এর পরিবর্তন রাষ্ট্র নামক সংগঠনের অস্তিত্ব থাকা না থাকার নিয়ামকও হয়েছে বটে। সরকারের প্রকাশিত তিনটি অঙ্গ-আইন বিভাগ, প্রশাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ। এদের সমন্বয়ে গঠিত ব্যবস্থা, যাকে বলি শাসনব্যবস্থা, সেটাই নির্ধারণ করে রাষ্ট্রের আত্মা, জনগণের অবস্থা। সংস্কার এখানেই দরকার, কারণ ক্ষমতার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্র বা মাঠ এটাই। এ তিনটি বিভাগের মধ্যে এমন ভারসাম্য অবস্থা তৈরি করা দরকার, যেন তা নিশ্চিত করে ‘সর্বাধিক জনগণের সর্বাধিক কল্যাণ’। তবে এ কথার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কিন্তু এটাও যে, কেউ নয় উপেক্ষিত বা বঞ্চিত, সবাই থাকবে বৃত্তের ভেতরে। ’৭১-এর সাম্যের এ সুর রচনা করে, অন্তরে ধারণ করে, মুখে উচ্চারণ করে, সংগ্রাম করে, যুদ্ধ করে প্রতিষ্ঠা করলাম স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু শুরু থেকেই, মানে ’৭২ থেকেই চললাম ভুল/বিচ্যুতির পথে, মানে জনগোষ্ঠীর সাধারণ ইচ্ছার বিপরীতে। সেই যে শুরু, চললাম ৫৩ বছর, এখনো চলছি বিচ্যুতিতে। বিগত শাসনপর্বগুলোর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে পাই ভয়ংকর চিত্র। কেবলই চলছি দানবীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথে। প্রতিযোগিতায় নেমেছি : কে, কত বেশি স্বৈরাচারী হতে পারি, কে কত বেশি শোষণ করতে পারি, বঞ্চনার পাহাড়কে কত বেশি বড় করা যায়! ইতিহাসের এ গাণিতিক ধারা/সিরিজ অনৈক্যের বৃত্তকে শুধু বড়ই করেনি, বাংলাদেশকে করে তুলেছে ভূ-রাজনীতির খেলার উর্বর ক্ষেত্র-চরম ঝুকিপূর্ণ আমাদের অবস্থা!
জনগণ কিন্তু টের পেয়েছে সব সময়, সর্বকালে পথের বাঁক, নদীর ঘূর্ণিস্রোত, প্রবল ঝড় সবই। তবুও সইতে সইতে খাদের কিনারে কিংবা ঝড়ের কবলে পড়ে দাঁড়িয়েছে শুধু দুবাহু তুলে নয়, সমস্ত শরীর, মন দিয়ে; রক্ষা করেছে মাতৃভূমিকে। আমাদের শেষ আশ্রয় এটাই।
কাজেই শাসনব্যবস্থার সংস্কারের প্রথম কাজ হবে জনগণের মালিকানা নিশ্চিত করা; সরকারের কোনো অঙ্গই যেন না করতে পারে এ মালিকানাকে উপেক্ষা; শুধু ভোটের দিনের রাজা নয়, জনগণ সব সময়ই রাজার আসনে থাকবে। ভোট যেন না হয় বাজারের পণ্য, নির্বাচনব্যবস্থা যেন না হয় একচেটিয়া কিংবা দুষ্টচক্রের সংঘবদ্ধ বাজারব্যবস্থা, এটা নিশ্চিত করতে জনগণও যেন শক্তিশালী থাকে, সর্বদা সেজন্য সমাজ সংস্কারের কাজ থাকবে চলমান। সমাজ সংস্কার তথা রাজনীতি, অর্থনীতি শিক্ষা-সংস্কৃতির সংস্কার কর্মসূচি চলবে নিয়মিত সাম্যের মাপকাঠিতে নিরন্তর।
মনিরুজ্জামান বাদল : অতিরিক্ত সচিব