Logo
Logo
×

বাতায়ন

নিউইয়র্কের চিঠি

অভিবাসী বহিষ্কার ও ৬০ কোটি টাকায় আমেরিকার নাগরিকত্ব!

Icon

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অভিবাসী বহিষ্কার ও ৬০ কোটি টাকায় আমেরিকার নাগরিকত্ব!

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে তার শপথে আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা অন্যান্য মন্ত্রীর শপথের মতো ‘অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ’ করার প্রতিশ্রুতি উচ্চারণ করতে হয় না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও করতে হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের শুধু ‘সংবিধান সংরক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তার’ শপথ নিতে হয়। সেজন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে কটাক্ষ করে কিছু বলতে অথবা তার কোনো বক্তব্য যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণাপ্রসূতও হয়, তা ব্যক্ত করতে তাকে সতর্কতা বা কৌশল অবলম্বন করতে হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের আইনই তাকে এবং সবাইকে এ স্বাধীনতা দিয়েছে। আমেরিকার সংবিধানে সুরক্ষিত বাক্স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের বদৌলতে কারও ঘৃণা-বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রত্যক্ষভাবে কিছু করতে পারে না। যদিও আমেরিকার কোনো আইনে ‘হেইট স্পিচ’ বা ‘ঘৃণামূলক বক্তব্য’ বলে কিছু নেই এবং দেশটির সুপ্রিমকোর্ট বিভিন্ন সময়ে এ রায় দিয়েছেন। পাশ্চাত্যের অনেক দেশে ঘৃণামূলক বক্তব্য বিচারযোগ্য অপরাধ হলেও আমেরিকার সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী ‘হেইট স্পিচ’ও আইন দ্বারা সংরক্ষিত; অর্থাৎ কারও প্রতি ঘৃণার প্রকাশ করা বা গালি দেওয়াও বাক্স্বাধীনতার অংশ।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বাক্স্বাধীনতার অবাধ প্রয়োগ করতে কোনো ছাড় দেন না। তিনি নিজেকে ও তার মতো গাত্রবর্ণের মানুষ বা ককেশীয়দের প্রতিনিধিত্ব করেন, অন্য কারও নয়। তিনি কেবল যুক্তরাষ্ট্রে নয়, শ্বেতাঙ্গপ্রধান বিশ্বে শ্বেতাঙ্গশ্রেষ্ঠত্বের প্রতিভূ। তার সেই শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ ঘটাতে তিনি সুযোগ পেলেই যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসকারী চাইনিজ, হিসপানিক, কৃষ্ণাঙ্গ এবং অন্যান্য অশ্বেতাঙ্গ জাতিগোষ্ঠীর মানুষ, যারা এমনকি ন্যাচারালাইজড সিটিজেন অথবা গ্রিন কার্ডধারী, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে দ্বিধা করেন না। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তার বিতৃষ্ণা প্রকাশে অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের প্রতি তার মনোভাব আড়াল করেননি। তিনি সোজাসাপ্টা বলে ফেলেন, এসব অভিবাসী আমাদের দেশের ‘রক্তকে বিষাক্ত করছে’। তিনি বিশ্বাস করেন, আমেরিকায় যত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটে, এর সিংহভাগ ঘটায় অভিবাসীরা এবং তাদের সিংহভাগ অশ্বেতাঙ্গ। দরিদ্র, অসহায় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান গ্রহণ এবং ৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বিত্তবান বিদেশিদের ‘গোল্ড কার্ড’ দিয়ে নাগরিক হওয়ার সুযোগদানের মধ্যে তিনি কোনো বৈপরীত্য দেখেন না। অর্থের কদর সর্বত্র অভিন্ন।

অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ধরপাকড় এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের ডিপোর্ট বা বহিষ্কার করার দায়িত্বে নিয়োজিত ফেডারেল প্রতিষ্ঠান ‘আইসিই’ (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) ইতোমধ্যে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের আটক করে সামরিক বিমানযোগে তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠানো শুরু করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা সর্বাধিক। আটক ভারতীয়ের সংখ্যাও অধিক। সেদিক থেকে আটক বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য নয়। জানুয়ারির শেষ নাগাদ মাত্র চারজন বাংলাদেশি ইমিগ্রান্টের আটকের খবর পাওয়া গিয়েছিল। ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের আটক করার প্রচেষ্টা জোরদার হওয়ার পাশাপাশি আটক ভারতীয়দের হাতকড়া পরানো অবস্থায় দেশে প্রেরণ শুরু হয়েছে। এ নিয়ে ভারতে বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো পার্লামেন্টে ও রাজপথে সরকারের সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছে। ‘আইসিই’র অভিযান এত জোরদার করা হয়েছে, গত এক মাসে বিভিন্ন দেশের ২০ হাজারের অধিক অবৈধ ইমিগ্রান্টকে তারা আটক করেছে এবং বিমানের প্রাপ্যতাসাপেক্ষে তাদের পর্যায়ক্রমে নিজ নিজ দেশে পাঠানো হচ্ছে। আইসিই জানিয়েছে, আটকাভিযানে বিরতি দেওয়া হবে না বা মন্থরও হবে না। আটককৃতদের তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব না হলেও অন্তত ৩০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে মূল ভূখণ্ডের বাইরে কিউবার গুয়ান্তনামো বে’তে রাখা হবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে দুটি কাজ তড়িঘড়ি শুরু করেছেন, তার একটি অভিবাসী বিতাড়ন এবং অন্যটি সরকারি জনবল ছাঁটাই করে অর্থ সাশ্রয়। অভিবাসী বিতাড়নের সঙ্গে নতুন যে উপসর্গ যোগ হয়েছে, তার মধ্যে বহু বছর আগে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে আগত তাদের শিশুসন্তান, যারা এতদিনে তরুণ বয়সি, তাদের জন্য ফেডারেল সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করার ঘোষণা। এর মাধ্যমে ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তার অবস্থানকে আরও কঠোর করেছেন। তাদের ফেডারেল সুবিধা বন্ধে তিনি একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, যে আদেশের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত ব্যক্তিরা আর কোনো সরকারি সহায়তা পাবেন না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী তাদের শিশু-কিশোর সন্তানরাও আর কোনো সরকারি সুবিধার আওতায় আসবে না। আমেরিকার অভিবাসনব্যবস্থাকে কঠোর করার পাশাপাশি ফেডারেল ব্যয় সংকোচন করা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রধান কারণ। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানরা শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা লাভ করত, তারা ট্যাক্স রিটার্নের সুবিধাও পেত। নতুন আদেশে এসব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে।

ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত আমেরিকার বেশ কিছু বড় শহর; যেমন, নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, স্যান ফ্রান্সিসকো, স্যান হোজে, বস্টন, ইলিনয়, ভারমন্ট, ফিলাডেলফিয়া, শিকাগো এবং বেশকিছু ডেমোক্রেট স্টেটকে ইমিগ্রান্টদের জন্য ‘স্যাঙ্কচ্যুয়ারি’ বা অভয়াশ্রম বিবেচনা করা হতো। এসব সিটি বা স্টেটের পুলিশ অবৈধ অভিবাসী আটক করার ক্ষেত্রে ‘আইসিই’র এজেন্টদের কোনো সহায়তা করত না। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন বড় সিটিগুলোর প্রশাসনকে বিভিন্ন টোপ দিয়ে বাগে আনার চেষ্টা করছে। এরই একটি দৃষ্টান্ত দেখা যায় আমেরিকার সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে জনবহুল নিউইয়র্ক সিটিতে। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস তার নির্বাচনি প্রচারাভিযানের জন্য সংগৃহীত তহবিলে বিদেশি ব্যবসায়ীর কাছে গোপনে অর্থ গ্রহণ করেছেন, এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করা হয়। অবস্থা যেদিকে যাচ্ছিল, তাতে মেয়র অ্যাডামসের গ্রেফতার হওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু এরই মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং তিনি শপথ নেওয়ার পর ট্রাম্পের সঙ্গে আপসে পৌঁছেন মেয়র। নিউইয়র্ক সিটি বহু বছর ধরে একটি ডেমোক্রেট সিটি এবং সে হিসাবে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের জন্য নিউইয়র্ক ছিল একটি ‘স্যাঙ্কচ্যুয়ারি সিটি’। কিন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে মেয়র অ্যাডামস হাত মেলানোর ফলে নিউইয়র্ক সিটি ইতোমধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বিপজ্জনক সিটিতে পরিণত হতে পারে। মেয়রের ভূমিকার কারণে তার প্রশাসন থেকে বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত আড়াই বছরে নিউইয়র্ক সিটিতে দুই লাখের বেশি অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ করেছেন। অভিবাসীবান্ধব এ সিটির ওপর চাপ সৃষ্টি রিপাবলিকানদের একটি কৌশল ছিল, মেয়র দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চাপের কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য হয়েছেন। এখন নিউইয়র্ক সিটির অবৈধ অভিবাসীরা ঢালাও ডিপোর্টেশনের কবলে পড়তে যাচ্ছেন।

কেবল নিউইয়র্ক সিটি নয়, ভীতি সৃষ্টি হয়েছে অভিবাসীবান্ধব সব সিটিতে বসবাসকারী অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে। আগে এসব সিটি থেকে অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার ও তাদের বহিষ্কার করা সহজ ছিল না এবং তারা সরকারি সুবিধাও ভোগ করতেন। ট্রাম্পের নতুন আদেশের ফলে এসব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ জারি করার ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সিটি ও স্টেটে বসবাসকারী অবৈধ অভিবাসী সংখ্যা ও তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘ফেডারেশন ফর আমেরিকান ইমিগ্রেশন রিফর্ম’-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ফেডারেল সরকার প্রতিবছর অবৈধ অভিবাসীদের জন্য প্রায় ৬৬.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করত, যার একটি বড় অংশ সাশ্রয় হবে ট্রাম্পের গৃহীত নতুন ব্যবস্থায়। অবৈধ লোকজনের পেছনে এ বিপুল ব্যয় হ্রাস করা সম্ভব হলে নিম্ন ও স্বল্প-আয়ের আমেরিকানরা আরও অধিক সুযোগ-সুবিধা পাবে। ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির সমর্থকরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট, বিলম্বে হলেও ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তারা মনে করেন, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর। প্রেসিডেন্ট ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদে এবং ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ৬ লক্ষাধিক অভিভাবকহীন শিশু যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিল, যাদের বয়স আঠারো বছরের নিচে। ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন এজেন্টদের নির্দেশ দিয়েছে এসব অবৈধ অভিবাসী শিশুকে খুঁজে বের করতে। তারাও ট্রাম্পের ব্যাপক বহিষ্কার কর্মসূচির আওতায় পড়তে যাচ্ছে।

অতীতেও দেখা গেছে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইসিই যখন অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়ে তোড়জোড় চালিয়েছে, তখন অবৈধ অভিবাসীরা তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে বেছে নিয়েছে চার্চ, মসজিদ, মন্দির, গুরুদুয়ারাসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। আইসিই এজেন্টরা সাধারণত এসব স্থানে হানা দিয়ে অভিবাসীদের গ্রেফতার করত না এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও আশ্রয়গ্রহণকারীদের তাড়িয়ে দিত না। তারা বরং বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ও ত্রাণ সংস্থার সহায়তা গ্রহণ করে ‘আইসিই’র অভিযান চলা পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষিত অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার অভিযানে প্রশাসন স্কুল, হাসপাতাল এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুমতি ছাড়াই আইসিইসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবাধ প্রবেশাধিকার দিয়েছিল। আইসিই এজেন্টরা বিভিন্ন স্টেটে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে বেশকিছু অভিবাসীকে গ্রেফতার করার পর একাধিক অভিবাসন অধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে মেরিল্যান্ডের এক ফেডারেল আদালতে মামলা করা হয়। বিচারক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তাদের প্রবেশকে আমেরিকার ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থি হিসাবে অভিহিত করে এসব প্রতিষ্ঠানে আইসিই বা অন্যান্য সংস্থার এজেন্টের অবাধ প্রবেশাধিকারের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।

এ ধরনের আরও কয়েকটি মামলা করা হয়েছে ম্যাসাচুসেটস, পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া ও ভার্জিনিয়া স্টেটে। বেশকিছু অভিবাসন অধিকার সংগঠন, যার মধ্যে ওয়াশিংটন স্টেটের সিয়াটলের ফেডারেল কোর্টে খ্রিষ্টান ও ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী দুই ডজনের বেশি সংগঠনের পক্ষে থেকেও আমেরিকার সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আইসিই’র আটকাভিযানের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে। কারণ, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালের মতো স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রবেশাধিকার নেই। বিশেষ পরিস্থিতিতে গ্রেফতার বা তল্লাশির প্রয়োজনেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিতে হবে। তা সত্ত্বেও ট্রাম্পের আদেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে। আইসিই’র অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই কাগজপত্রবিহীন অভিবাসী অনেক মানুষ প্রার্থনা করতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছাত্র উপস্থিতি উদ্বেগজনকহারে হ্রাস পেয়েছে, কারণ তাদের অনেকে অবৈধ অভিবাসীর সন্তান।

অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়ই ট্রাম্প প্রশাসনের একমাত্র অভিবাসন টার্গেট নয়। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রশাসন এখন থেকে সব অভিবাসন আইন প্রয়োগ করবে। বেছে বেছে আইন প্রয়োগ করা হবে না। প্রশাসন নিশ্চিত করতে চায়, আমেরিকার নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের জানা উচিত, দেশটিতে কে কে আছেন। সেই লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ১৪ বা তদূর্ধ্ব বয়সের অভিবাসী, যারা এখনো অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো ধরনের রেজিস্ট্রেশন করেননি, তাদের জন্য তা বাধ্যতামূলক করেছে। এর ব্যতিক্রম হলে সংশ্লিষ্ট অভিবাসীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে। ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস-এর ওয়েবসাইট অনুসারে, আমেরিকার ভিসার জন্য আবেদন করার সময় ১৪ বছরের অধিক বয়সি যারা রেজিস্ট্রেশন করেননি বা বায়োমেট্রিক করাননি এবং যারা ৩০ দিন বা আরও অধিক সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, তাদের সবাইকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। মূল কথা হলো, আমেরিকা যাতে সবার জন্য আর ‘ল্যান্ড অব অপরচ্যুনিটি’ না থাকে, সে ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি তিনি বিশ্বের যে কোনো দেশের সুবিধাভোগী বিত্তবানদের জন্য তার দেশের সুযোগ-সুবিধার দ্বার আরও উন্মুক্ত করবেন; যার একটি হলো ‘গোল্ড কার্ড’।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘গোল্ড কার্ড’ পাওয়া যাবে ৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ কোটি টাকা। এটি মূলত বিনিয়োগ করে স্থায়ী ভিসা প্রাপ্তির সুযোগ। এটি গ্রিন কার্ডের মতোই আমেরিকার নাগরিক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আড়াই লাখ মানুষ ‘গোল্ড কার্ড’ এর জন্য আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ কমার্স হাওয়ার্ড লাটনিক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, যারা আবেদন করেছেন, প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার হারে পাওয়া গেলে মোট ১.২৫ ট্রিলিয়ন ডলার জমা হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে।

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু : সিনিয়র সাংবাদিক ও অনুবাদক

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম