নিউইয়র্কের চিঠি
গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদে ট্রাম্পের পরিকল্পনা!

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের চিরদিনের জন্য উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর ইসরাইলি তরুণী মিরিয়াম মালনিক-এজাগুইয়ের কথা মনে পড়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইল গাজার ওপর হামলা শুরু করার মাসখানেক পর মিরিয়ামের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। আমার পরিচিত একমাত্র ইসরাইলি। পরিচয় ও কথা বলার মেয়াদ ছিল আট থেকে দশ মিনিট। আমাকে একটি কার্র্ড দিয়েছিল বলে তার নামটি মনে আছে। আমি গাজা ও পশ্চিম তীরের বাসিন্দা কোনো ফিলিস্তিনিকে জানি না। তবে স্কুলজীবন থেকে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশনের (পিএলও) নেতা ইয়াসির আরাফাত সম্পর্কে জেনে এবং তার অনেক সাক্ষাৎকার পড়ে ফিলিস্তিনিদের আপন মনে হয়েছে এবং ইসরাইলিদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেছি। যুদ্ধ পরিস্থিতি কোন্ দিকে গড়াতে পারে বলে তার ধারণা জানতে চাইলে মিরিয়াম মালনিক বলেছিল, আমেরিকা যা চাইবে, তা-ই হবে। ইসরাইল, ফিলিস্তিন বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কাজই হলো আমেরিকার নির্দেশ পালন করা।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মিরিয়ামের কথাই সত্যে পরিণত হতে যাচ্ছে। এক বছর তিন মাসের বেশি সময় ধরে গাজার ওপর ইসরাইল বিরামহীন বোমা ও গোলাবর্ষণ এবং স্থল হামলা চালিয়ে গাজা উপত্যকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিতে গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের কথা বলে বিশ্বকে হতবাক করেছেন। গাজাবাসীর পুনর্বাসনের জন্য মিসর ও জর্দানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাদের গ্রহণের জন্য, যা উভয় দেশ তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করেছে। ট্রাম্পের এ ধরনের একটি প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যে বিগত কয়েক দশক ধরে আমেরিকান নীতিমালার বিরাট এক পরিবর্তন বলে বর্ণনা করেছেন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষকরা। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প ইসরাইলকে বলেছেন, তার পরিকল্পনার অধীনে ইসরাইল গাজাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে এবং গাজার বাসিন্দারা আর গাজায় ফিরে আসতে পারবে না। ট্রাম্প যখন তার এ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, তখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র সফর করছিলেন এবং ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। মিরিয়াম মালনিক-এজাগুইরাও কী ট্রাম্পের মতো ভাবে এবং গাজাবাসীদের নিজ জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ পরিকল্পনাকে স্বাগত জানায়?
এক ঝড়-বর্ষণমুখর দিনে নিউইয়র্ক সিটি থেকে প্রায় ত্রিশ মাইল দূরে লং আইল্যান্ডের লিন্ডেনহার্স্ট সিটিতে গিয়েছিলাম একজন বাংলাদেশির জন্য ইন্টারপ্রেটেশনের কাজ করতে। ২ ঘণ্টায় আমার কাজ শেষ হয়েছিল, কিন্তু বৃষ্টি থামেনি, বাতাসের গতিও কমেনি। আসার সময় বৃষ্টির ছাঁটে আমার প্যান্ট পুরো ভিজে গিয়েছিল, ছাতায় কুলায়নি। বাতাসের তোড়ে মাঝেমধ্যেই ছাতা উলটে গেছে। নভেম্বর মাস। বৃষ্টি ও বাতাসে ঠান্ডার অনুভব আরও বেশি। স্টেশন পর্যন্ত কারও রাইড নেওয়ার কথা ভেবে পার্কিং লটে দাঁড়ালাম। কয়েকটি গাড়ি চলে গেল, গাড়িগুলোতে যাত্রীসংখ্যা বেশি ছিল বলে আমি তাদের অনুরোধ করিনি। এক তরুণী শ্বেতাঙ্গিনী তার গাড়ির দরজা খুলছিল, তার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম, ‘ক্যান ইউ প্লিজ ড্রপ মি অব অ্যাট দ্য লিন্ডেনহার্স্ট স্টেশন?’
মেয়েটি আপত্তি করল না, ‘নো প্রবলেম, গেট ইন দ্য কার। বাট আই ডোন্ট নো দ্য রোডস হিয়ার। আই কেম হিয়ার ফ্রম ম্যানহাটান ইউজিং মাই জিপিএস।’ আমি গাড়িতে উঠে সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলি, ‘ইউ ডোন্ট নিড টু ইউজ জিপিএস। ইট ইজ নট দ্যাট ফার ফ্রম হিয়ার। ইট উইল টেক এইট টু টেন মিনিটস বাই কার। আই ক্যান শো ইউ দ্য রোড আই কেম থ্রু।’ সে আমার নাম এবং আমি কোন দেশের জানতে চায়। আমি আমার নাম ও দেশের নাম বলি এবং ওর নাম ও দেশের কথা জানতে চাই। সে উত্তর দেয়, তার দেশ ইসরাইল এবং নাম উচ্চারণ করার পর ড্যাশবোর্ড থেকে একটি কার্ড বের করে আমার দিকে এগিয়ে দেয়-মিরিয়াম মালনিক-এজাগুই, কমিউনিটি হেলথ কাউন্সেলর। আমি তাকে বলি, ইসরাইলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, আমাদের অনেক প্রফেট শুয়ে আছেন ওখানে। কিন্তু হঠাৎ যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, কবে সেখানে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হবে কে জানে। তরুণী বলল, যে শনিবার রাতে সেখানে হামলা হলো, তার আগের রাতে আমরা কয়েকজন কথা বলছিলাম, শিগ্গির যাব বলে অনলাইনে টিকিট বুকিংও দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন সব পরিকল্পনা বাতিল হয়ে গেল। আমার বাবা-মা এবং সব আত্মীয়স্বজন ইসরাইলেই থাকে।’
আমি জানতে চাই, ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি কোন্ দিকে গড়াতে পারে বলে তুমি মনে করো?’ সে বলল, ‘এটা নির্ভর করে আমেরিকার ওপর। ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি অথবা আরবদের যতগুলো যুদ্ধ হয়েছে, তা যত না ইসরাইলের কারণে হয়েছে, তার চেয়ে আমেরিকার স্বার্থে হয়েছে বেশি। ইসরাইল, ফিলিস্তিন বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে আমেরিকার নির্দেশই মানতে হয়। ইসরাইলি জনগণ ও নেতারা জানে, আমেরিকা পাশে না থাকলে ইসরাইল থাকবে না; আরবরা জানে, আমেরিকা ইসরাইলের সঙ্গে আছে বলেই দেশটি টিকে আছে।’ কথা বলতে বলতেই স্টেশনে চলে এলাম। গাড়ি থেকে নেমে দরজা বন্ধ করার আগে ওকে ধন্যবাদ দিলাম আমাকে রাইড দেওয়ার জন্য। মেয়েটি গাড়ি ঘুরিয়ে ‘হ্যাভ অ্যা নাইস উইকএন্ড’ বলে বিদায় নিল।
কম বয়সি মেয়েটির মতো সবাই জানে, ইসরাইলের শক্তির উৎস আমেরিকা। সবাই এটাও জানে, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর অনৈক্য এবং আমেরিকার প্রতি তাদের নতজানু নীতিই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। এজন্য যদি এককভাবে সৌদি আরবের যুক্তরাষ্ট্রমুখী পররাষ্ট্রনীতিকে দায়ী করা হয়, তাহলে অমূলক হবে না। একথা বললেও অত্যুক্তি হবে না যে, যদিও সারা বিশ্বের মুসলমানদের কিবলা সৌদি আরবের মক্কা, কিন্তু সৌদি শাসকগোষ্ঠী, তথা সৌদি রাজপরিবারের কিবলা হচ্ছে ওয়াশিংটন ডিসি। জানুয়ারির আগ পর্যন্ত গত পনেরো মাস ধরে গাজাবাসীর ওপর ইসরাইল পরিচালিত নির্মম হত্যালীলা ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছে ইসরাইলের প্রতিবেশী মুসলিম দেশগুলো। গত প্রায় আট দশক ধরে গাজাবাসী ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলিরা যে নিপীড়ন চালিয়েছে, নিজ বাসভূমিতে তাদের বাস্তবে উন্মুক্ত এক কারাগারে বন্দি করে রেখেছে, তা সম্ভব হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আমেরিকাপ্রীতির কারণে।
১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে যতগুলো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সবগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র কখনো ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে আন্তরিক ছিল না। এবারের যুদ্ধে ইসরাইলের প্রতি আমেরিকার সমর্থন ছিল নগ্ন। গাজার ওপর ইসরাইলি হামলা শুরু হওয়ার দ্বিতীয় সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইল সফর করেন এবং ইসরাইলের প্রতি তার সার্বিক সমর্থন-সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তার ইসরাইল সফরের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিম আমেরিকান এবং বিশ্বজুড়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে, তা তার ধর্তব্যে ছিল না। কারণ মুসলিম দেশগুলোর অনৈক্য সম্পর্কে আমেরিকান প্রশাসন ভালো করেই জানে। এটা শুধু কোনো ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গি নয়। ইসরাইলের স্বার্থে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের ভূমিকা অভিন্ন।
কেউ যদি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজাকে জনশূন্য করার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা ফিলিস্তিন সমস্যা অথবা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতির আকস্মিক বা শুধু বর্তমান প্রেসিডেন্টের একক চিন্তাপ্রসূত প্রস্তাব, তাহলে তারা ভুল করবেন। গাজাকে জনশূন্য করার পর যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরাইলকে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব অর্পণ করে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ, তিনি তার প্রস্তাবে ইসরাইলকে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গাজা হস্তান্তর করতে। অর্থাৎ আমেরিকা গাজাকে এখন থেকেই ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ড বলে বিবেচনা করছে। ইসরাইল যে পরিমাণ ভূখণ্ড নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে প্রতিবারের যুদ্ধে তারা প্রতিবেশী দেশের ভূখণ্ড দখল করে তার চেয়েও বেশি ভূখণ্ডের অধিকারী হয়েছে এবং তা আর কখনোই দেশগুলোকে প্রত্যর্পণ না করে তাদের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ১৯৫৬-৫৭ ও ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল মিসরের সিনাই এলাকা দখল করে এবং সেখানে ইসরাইলি বসতি স্থাপন করেছে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান মালভূমির বড় অংশ দখল করে ইসরাইল। এছাড়া জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড একের পর এক দখল করে ফিলিস্তিনিদের কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে। গাজা উপত্যকার একই পরিণতি হতে যাচ্ছে এমন আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট মার্কো রুবিও ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে গত সপ্তাহে বলেছেন, আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে কতটা যত্নশীল তা তাদের প্রমাণ করার সুযোগ এসেছে। তাদের যদি আরও ভালো কোনো পরিকল্পনা থাকে, তাহলে আরও ভালো হয়। বেশ কয়েকটি আরব দেশের সরকার ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করলেও তারা হয়তো গাজা ও গাজাবাসীদের নিয়ে তাদের বিকল্প চিন্তাভাবনা করছে। এমনও জানা গেছে, মিসর, জর্দান, সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজার জন্য নিঃশব্দে তাদের বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রস্তাব আকারে ঘোষণা করার জন্য সমন্বয় করছে। তারা গাজা পুনর্গঠনের তহবিল সংস্থান ও তদারকিতে সহায়তা করতেও এগিয়ে যাবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব ও আরব দেশগুলোর ভাবনার মধ্যে মৌলিক একটি পার্থক্য রয়েছে; তা হলো, ট্রাম্প বলেছেন, গাজা নিয়ে তার চমৎকার পরিকল্পনা রয়েছে, গাজা কারও বাসস্থান হবে না এবং গাজাবাসী মিসর ও জর্দানে যাতে ভালোভাবে থাকতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে আরব দেশগুলোর ভাবনায় রয়েছে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা।
ইসরাইল রাষ্ট্র যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন ইসরাইলের জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া ভূখণ্ডে বসবাসকারী আরবদের বলা হয়েছিল সাময়িক সময়ের জন্য বর্তমান জর্দানের রাজধানী আম্মানে গিয়ে বাস করতে। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে তারা আবার নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু যারা এ আশ্বাসে বাড়িঘর ত্যাগ করেছিল, তারা আর কখনো নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে পারেনি। শরণার্থী শিবিরগুলোতে তাদের তৃতীয় প্রজন্ম কাটাচ্ছে; যারা ভাগ্যবান, তারা ভিন্ন দেশে পাড়ি জমাতে সক্ষম হয়েছে।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে এখন সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, যা শেষ হবে মার্চের প্রথমদিকে। আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর বেশ কয়েক দফা হামলা চালিয়েছে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। মার্চে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা শুরু হলে উভয়পক্ষ যদি ঐকমত্যে উপনীত হতে না পারে, তাহলে আবারও যুদ্ধ শুরু হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। গত ১৫ মাসের যুদ্ধে গাজার ২২ লাখ ফিলিস্তিনির মধ্যে ৪৮ হাজারের বেশি নিহত এবং আরও বহুসংখ্যক আহত হয়েছেন। আলোচনার দিন-তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। তবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আলোচনা শুরু হলে আলোচকরা প্রথমেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হওয়ার কৌশল নির্ধারণ করবেন। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারলে ইসরাইলি সেনাবাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে আবারও যুদ্ধ শুরু করবে। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলিদের সঙ্গে আলোচনায় ফিলিস্তিনিদের প্রধান দাবি হবে যুদ্ধের স্থায়ী অবসান এবং গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার। ইসরাইল একগুঁয়েমি করছে, হামাস সম্পূর্ণ ধ্বংস হলেই শুধু যুদ্ধ শেষ হতে পারে। তাছাড়া ইসরাইল হামাসকে গাজা নিয়ন্ত্রণ করতে দেবে না এবং গাজায় হামাসের অবস্থান মেনে নেবে না। শুধু তাই নয়, গাজা পরিচালনা করার জন্য ফিলিস্তিনিরা যদি হামাসের মডেল অনুসরণ করে, তাদেরও ইসরাইয়েল গ্রহণ করবে না। হামাসও পালটা বলেছে, হামাসকে অবশ্যই গাজায় অবস্থান করার অনুমতি দিতে হবে এবং ইসরাইলকে অবশ্যই গাজা ত্যাগ করতে হবে। উভয়পক্ষের কট্টর মনোভাব ও অনড় অবস্থানের কারণে বলা কঠিন শান্তি আলোচনার ফলাফল কী হতে পারে।
সবকিছুর ওপর প্রাধান্য পেতে পারে গাজার পুনঃনির্মাণ ও পুনর্গঠন উদ্যোগ। বিশ্বব্যাংক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের রিপোর্টে আভাস দেওয়া হয়েছে, গাজায় পাঁচ বছর মেয়াদি পুনঃনির্মাণ পরিকল্পনায় ৫৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হতে পারে। এত বিশাল পুনঃনির্মাণ পরিকল্পনা তখনই বাস্তবায়িত হতে পারে, যদি সব পক্ষ নিশ্চিত হয় যে, আবারও যুদ্ধ শুরু হবে না।
আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু : সিনিয়র সাংবাদিক, অনুবাদক