কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষা কেন প্রয়োজন

ড. শাহ জে মিয়া
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অস্ট্রেলিয়া থেকে
আলোচনাটা কিছু প্রশ্ন দিয়ে শুরু করতে চাই। যেমন-বাংলাদেশে কেন এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সিস্টেম প্রয়োগ করা প্রয়োজন? প্রয়োগ না করার ফলে বাংলাদেশ কী কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে এবং কীভাবে বহির্বিশ্ব থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে? প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর খুঁজে বের করার আগে আমাদের আরও জানতে হবে, বাংলাদেশের বর্তমান আইসিটি কি কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে? যদি হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো কী কী? বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি স্তরে যে আইসিটির ব্যবহার হচ্ছে, তার প্রধান অন্তরায় হলো-এগুলো অস্থিতিশীল, পরিবর্তনহীন, গতিহীন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অচল। যখন এ সিস্টেমগুলো তৈরি করা হয়, তখন প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কাগজ-কলমের ব্যবহার থেকে বের হয়ে এসে কাজগুলোকে কম্পিউটারের মাধ্যমে করা। আপনি এটাকে প্লেইন অটোমেশনও বলতে পারেন। একটা সময় ছিল যখন আমরা কাগজহীন দপ্তর অথবা পেপারলেস অফিস পরিচালনার কথা বলতাম, যেখানে কোনো কাগজের ব্যবহার থাকবে না, কাগজ অপচয়ের চিন্তা থাকবে না, এটা সম্পূর্ণ অ্যানালগ সিস্টেমকে ডিজিটালে রূপান্তর করবে। এ ধরনের আইটি ব্যবস্থাকে বলা হয় ট্র্যাডিশনাল আইটি সিস্টেম।
এখন আপনি জানতে চাইতে পারেন, ট্র্যাডিশনাল আইটি বলতে আমি কী বোঝাচ্ছি বা এখানে কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকে? এটি মূলত একটি আইটি অবকাঠামো, যেখানে কম্পিউটিং ডিভাইসগুলো একটি দূরবর্তী সার্ভারের সঙ্গে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে এবং সব ডেটা সেই সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে। এখানে যে সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো শুধু কম্পিউটিং ডিভাইসগুলোতে প্রদানকৃত ডাটাগুলোকে একটি স্ট্রিমলাইন প্রসেসের মাধ্যমে সার্ভারে সংরক্ষণ করে এবং প্রয়োজন মতো সরবরাহ করে রিপোর্ট প্রদান করে। এখানে আপনি কোনো ইনোভেশন নিয়ে আশা বা নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারবেন না। এখানে বুদ্ধিমত্তার কোনো ব্যবহার নেই। তাই এ ধরনের ট্র্যাডিশনাল আইটি সিস্টেম কিন্তু বুদ্ধিমান হয় না। এ সফটওয়্যারগুলোর সঙ্গে যখন আমরা যোগাযোগ অথবা ইন্টারেক্ট করি, তখন আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি।
পৃথিবী জ্ঞানবিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। আজকাল, আমরা খুব স্মার্ট উপায়ে, সূক্ষ্মভাবে কাজ করতে চাই-যেন আমাদের সময় বেঁচে যায় ও কাজের মানও ভালো হয়। এখন আমাদের অনেক কাজ, সবার জীবনে কাজের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গেছে, আমরা সবাই দিন-রাত প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে ডুবে আছি। দৈনন্দিন কাজগুলোকে অল্পসময়ে করার জন্য, এ কাজগুলোকে আরও ইন্টেলিজেন্টভাবে করার জন্য আমাদের অনেক স্মার্ট সিস্টেম দরকার, দরকার স্মার্ট সফটওয়্যার। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, স্মার্ট সিস্টেম আসলে কী? স্মার্ট সফটওয়্যারই বা কী? স্মার্ট সিস্টেম বা সফটওয়্যার দ্বারা আমরা এমন একটা সফটওয়্যার অথবা সিস্টেমের ধারণা চিন্তা করতে পারি, যাকে কিনা আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিতে পারব এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যদি সফটওয়্যারগুলো প্রয়োজন মতো তৈরি করে নিতে পারি, তাহলে ওই সিস্টেমগুলো আমাদের পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলোকে নিজেরাই সমাধান করে দেবে, যার ফলে আমাদের অনেক সময় বেঁচে যাবে। এটাই হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি প্রয়োগ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আসলে এমন যে, মানুষের ব্যবহার তাকে অটোমেট করে সফটওয়্যারের ব্যবহারে রূপান্তরিত করে ফেলে। যার ফলে সফটওয়্যারগুলো আরও ভালোভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারবে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত কোনো কার্যকর আইসিটি অথবা সিস্টেম ব্যবস্থার বাস্তবায়ন এবং ব্যবহার শুরু হয়নি। ফলে দেখা যাচ্ছে, দেশে স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে পরিবহণ সেবা, শিক্ষা, আইন, বিচার, কৃষি, যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, জনপ্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সেবা, সেবার মান, সেবার চাহিদা প্রয়োজন মতো পূরণ করতে পারছি না। সেবাগুলোর মানোন্নয়ন করা যাচ্ছে না, মানুষের কল্যাণে জনপ্রশাসন যেভাবে কাজ করছে, তা সাধারণ জনগণকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না।
বর্তমানে পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে, মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন, তাতে রয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে তৈরিকৃত বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার, যার অধিকাংশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত। মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছে; কিন্তু এর ব্যবহার করছে না, এটি হতে পারে কি?
বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যদি আমরা চলতে চাই, তাহলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত সিস্টেম বা আইসিটি কি জিনিস তা জানতে ও শিখতে হবে। এ লেখায় আমি তুলে ধরব, কেন আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত সিস্টেম ব্যবহার করব এবং কেন এ সম্পর্কিত জ্ঞান ধারণ করব। যেটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য একটা অত্যন্ত ভালো কিছু হতে পারে।
উদাহরণ দিই, সাধারণত আমাদের বড় বড় পদে যারা থাকেন, তারা অনেক কাজে ব্যস্ত থাকেন। তিনি একজন এপিএস রাখেন যিনি তাকে কোথায় যেতে হবে, কি করতে হবে না হবে-তার খবর রাখেন এবং সময়মতো তাকে জানিয়ে দেন। কিন্তু এ কাজগুলো যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত একটা অ্যাপ্লিকেশন বা ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট করতে পারে, তাহলে ক্ষতি কোথায়? আমরা যে ডিকটেশন দেব সেটা কথার মাধ্যমে বলতে পারি, বাংলা ভাষায় দিতে পারি, লিখে দিতে পারি, যেমন-‘আপেল সিরি’ সেট গ্রহণ করতে পারবে। শিডিউলে যদি কোনো ধরনের অসুবিধা থাকে যেমন-টাইম টেবিল পরিবর্তন হয়, খুবই অল্পসময়ের ব্যবধানে মিটিং শিডিউল থাকে, একটা মিটিংয়ের মধ্যে আরেকটা মিটিংয়ের সময় চলে আসে, তখন এ ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ‘সিরি’ সুন্দরভাবে সেগুলো সমাধান করতে পারে, এলার্ট দিতে পারে ও রেকর্ড রাখতে পারে। এটার জন্য তো আমাদের কাউকে নিয়োগ করতে হচ্ছে না।
চিন্তা করে দেখুন, সারা বাংলাদেশের সব সরকারি কর্মকর্তার টাইম শিডিউল একটা সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এবং সিস্টেমটা এতটাই শক্তিশালী যে, কারও সঙ্গে কারও সময়ের জাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেই মতো পর্যবেক্ষণ করছে। বিষয়টি চিন্তা করলে অনেকটা সব কর্মকর্তার জন্য একজন এপিএস নিয়োগের মতো মনে হবে। আপনি যদি হিসাব করেন, তাহলে বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের এপিএসের মোট হিসাব মিলিয়ে শেষ করতে পারবেন না। তাদের বেতনভাতায় সরকারি কোষাগারের যে পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে, তা মূলত জনগণের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকা। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো সম্ভব। এখানে আরেকটি প্রশ্ন করতে পারেন, যদি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত সিস্টেম দিয়ে দেশের সব সরকারি এপিএসের কাজ করে দেওয়া যায়, তাহলে এ বিপুলসংখ্যক জনগণের আয়ের কি ব্যবস্থা হবে? তারা তো তাদের চাকরি হারালো, এতগুলো পরিবারের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেল। আসলে না, সেট হলো না। এই পরিমাণ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তাদের মেধা আরও ভালো কোথাও কাজে লাগানোর সুযোগ পেল। তারা তাদের জ্ঞান, মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে নিজেরা কিছু করতে পারবে, উৎপাদন করতে পারবে, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে এবং সরকারি সহযোগিতা পাবে, সেটা প্রশিক্ষণমূলক হোক অথবা অর্থনৈতিক হোক।
আমরা যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত সিস্টেমের মাধ্যমে কর্মঘণ্টা বাঁচাচ্ছি, সেটা কখনই ফেলনা নয়। আমরা এ কর্ম ঘণ্টাগুলো ব্যবহার করতে পারব আরও উন্নতির জন্য। এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো একটা সময় অনেক বড় উন্নয়ন সাধন করতে পারে। যেমন: সরকার যদি চিন্তা করে দেশের কোনো একটা জায়গায় একটা বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করা প্রয়োজন। এখন যদি তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সিস্টেম থাকে, যেটি সাধারণ জনগণের বিভিন্ন কমেন্ট, মতামতগুলোকে পর্যালোচনা করে তার প্রভাবগুলোকে পরিমাপ করবে। বিপুল পরিমাণ পাবলিক ডেটাকে বিশ্লেষণ করে সেটি সুন্দরভাবে এর প্রভাবগুলোকে পরিমাপ করতে পারবে, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও চাহিদার পরিপূরক ধারণা দিতে পারবে। এ পরিমাপের ওপর ভিত্তি করে হাসপাতালটা কোন অঞ্চলে, কোথায় স্থাপন হলে ভালো হবে এবং সেখানে কোন কোন ধরনের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকলে ভালো হবে, ওই অঞ্চলের মানুষের স্থানীয় প্রয়োজন কীভাবে সম্পূর্ণরূপে পূরণ করা সম্ভব হবে-তা বলে দিতে পারবে। এ পর্যালোচনা যদি সরকারকে সার্ভের মাধ্যমে পরিচালনও করতে হতো, তাহলে তা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কয়েক বছর লেগে যেতে পারত, যেটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সরাসরি জনশক্তি ব্যবহার না করেই কয়েক দিনের মধ্যে করে ফেলা সম্ভব।
জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় যখন চীন, আমেরিকা, রাশিয়ার মতো উন্নত দেশে বিভিন্ন সিস্টেমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার হচ্ছে, সেখানে জাতি হিসাবে এ দেশের মানুষের পিছিয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এ লেখার মাধ্যমে আমি সেরকম সাপোর্ট সার্ভিসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত আইসিটির ব্যবহার প্রশ্ন আকারে বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে তুলে ধরব।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো মেশিন দ্বারা মানুষের বুদ্ধিমত্তার অনুকরণ। এটি ডেটা প্রসেস করতে, প্যাটার্ন চিনতে ও সিদ্ধান্ত নিতে বিভিন্ন ধরনের অ্যালগরিদম এবং মডেল ব্যবহার করে কাজ করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত সিস্টেমগুলোকে মানুষের মুখের ভাষা বুঝতে, ছবি প্রক্রিয়াকরণ অথবা ভিডিও বা ছবি থেকে তার বস্তু কিংবা কী হচ্ছে তার ধারণা পেতে এবং বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থান বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কাজগুলো সম্পাদন করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এ সিস্টেমগুলো প্রচুর পরিমাণে ডাটা ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও অধিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত করা যায়।
বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে; কিন্তু এর ব্যবহারের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা এবং ই-কমার্সের মতো শিল্পগুলো জালিয়াতি শনাক্তকরণ, চ্যাটবট ও গ্রাহক বিশ্লেষণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গ্রহণ করতে শুরু করেছে। স্থানীয় স্টার্টআপগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সিস্টেম তৈরি করতে চাচ্ছে ও আমাদের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষা কোর্স চালু করেছে। সর্বোপরি, সীমিত অবকাঠামো, দক্ষ পেশাদারের অভাব এবং প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ডেটা না থাকার মতো চ্যালেঞ্জগুলো খুবই দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।
সাধারণ মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত কিছু অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে শুরু করেছে। যেমন: আমরা বলতে পারি, Siri এবং Alexa-এর মতো ভার্চুয়াল সহকারী (virtual assistant)-এর ব্যবহার অনেক বেড়েছে, এর সঙ্গে অন্যান্য স্মার্ট হোম ডিভাইস, নেভিগেশন ডিভাইস ও সফটওয়্যার, ট্র্যাফিক আপডেটের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত অ্যাপের বহুল প্রচলন হয়েছে। এ ছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বাস্থ্যসেবাকে উন্নত, পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলোকে স্বয়ংক্রিয় করতে সাহায্য এবং স্মার্ট নজরদারি সিস্টেমের মাধ্যমে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আবহাওয়ার ধরন, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ এবং ফলনের পূর্বাভাসের জন্য ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফসলের ভালো ফলন নিশ্চিত করতে পারে। এরই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত সেন্সর ও ড্রোনের সাহায্যে মাটি এবং ফসলের স্বাস্থ্য নিরীক্ষণের জন্য নির্ভুল চাষে সহায়তা করতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত সিস্টেম চিকিৎসকদের রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে। যেমন, ইমেজিং ও ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে রোগ শনাক্ত করা। এটি টেলিমেডিসিনকে সহায়তা করতে পারে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারে এবং হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজগুলোকে আরও সহজ ও দ্রুত করতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনের সঙ্গে পাঠগুলোকে অভিযোজিত করে ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষাকে উন্নত করতে পারে। এটি প্রশাসনিক কাজগুলোকে স্বয়ংক্রিয় করতে পারে, অনলাইন শেখার প্ল্যাটফর্মগুলোকে সমর্থন করতে পারে ও স্থানীয় ভাষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত বিষয়বস্তুর মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে।
বাংলাদেশের কর্মসংস্থান তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুদূর প্রসারী ভূমিকা রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলোকে স্বয়ংক্রিয় করতে পারে, উৎপাদন, কৃষি এবং গ্রাহক পরিসেবার মতো শিল্পগুলোতে উন্নত করতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিকাশ, ডেটা বিশ্লেষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে চাকরি তৈরি হবে। কর্মীরা ওই প্রযুক্তি-সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষতা বাড়াতে পারে, বিশ্ববাজারে তাদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোজন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। যেমন-স্বয়ংক্রিয়তা কম দক্ষতার এবং পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলোকে প্রতিস্থাপন করতে পারে, যা নির্দিষ্ট সেক্টরে স্বল্পপরিসরে কিছু চাকরির স্বল্পতা তৈরি করতে পারে। ওই প্রযুক্তিচালিত শিল্পগুলোয় অসম প্রবেশাধিকার শহুরে এবং গ্রামীণ কর্মীদের মধ্যে ব্যবধান বাড়াতে পারে। নেতিবাচক প্রভাবগুলো কমানোর জন্য শিক্ষা এবং পুনঃস্কিলিং প্রোগ্রামগুলোর সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণের ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সমাধানের চাহিদা বাড়লে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইঞ্জিনিয়ার, মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ এবং ডেটা বিজ্ঞানীদের ভূমিকা বাড়বে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমগুলোকে সমর্থন করার জন্য ডেটা বিশ্লেষণ, ডেটা লেবেলিং ও ডেটাবেজ পরিচালনার সুযোগগুলো আবির্ভূত হবে। যেসব ম্যানেজার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহৃত প্রজেক্টের তত্ত্বাবধান করতে পারে এবং প্রযুক্তিগত ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে, তাদের চাহিদা অনেকগুণে বেড়ে যাবে। প্রোগ্রামিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত রোবটিক্স, উৎপাদন এবং কৃষিতে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের ব্যবহারে কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। কৌশলগত ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশ্লেষকদের চাহিদা ক্রমাগতই বাড়তে থাকবে। পেশাদাররা যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলকে প্রশিক্ষণ দেন বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণের বিষয়ে ব্যবসায়কে গাইড করেন, তাদের কদরও বাড়বে। গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং ও মিউজিক কম্পোজিশনের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুলস ব্যবহার করে কন্টেন্ট তৈরির ভূমিকা বরাবরের মতোই বাড়ছে এবং বাড়তে থাকবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডায়াগনস্টিক টুলস অপারেটর ও স্বাস্থ্যসেবা ডেটা বিশ্লেষকদের মতো পদগুলো চিকিৎসা ক্ষেত্রে সৃষ্টি করছে, যেগুলোর চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাবেই।
ড. শাহ জে মিয়া : প্রফেসর, নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া