আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখার চিত্রায়ণ
সাঈদ খান
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
‘সবার বাংলাদেশ’-এ ধারণাটি একান্তভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাম্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতীক। তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শন ও বক্তব্যে এ ধারণাটি বারবার উঠে এসেছে। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক স্লোগান নয়; বরং এটি একটি স্বপ্ন, একটি লক্ষ্য এবং একটি প্রতিশ্রুতি, যা বাংলাদেশের জনগণের অধিকার, মর্যাদা এবং সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে।
তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র কেবল একটি শাসনব্যবস্থা নয়, এটি মানুষের অধিকার রক্ষার হাতিয়ার। একনায়কতন্ত্র, দুর্নীতি, বৈষম্য এবং সামাজিক অবিচার থেকে মুক্তি পেতে হলে জনগণকে সচেতন এবং সক্রিয় হতে হবে।
তার পিতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ ছিল একটি সর্বজনীন এবং অবৈষম্যমূলক ধারণা। এ জাতীয়তাবাদ কেবল একটি রাজনৈতিক তত্ত্ব নয়; বরং এটি ছিল দেশের জনগণকে একত্রিত করার একটি অনন্য রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক রসায়ন। জিয়াউর রহমানের ভাষায়, ‘ভাষা যদি একটি ফুল হয়, ধর্ম আরেকটি ফুল। ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ফুল নিয়ে যে তোড়া বেঁধেছি-এটিই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।’
এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে তারেক রহমান তার রাজনীতিতে ‘সবার বাংলাদেশ’-এর কথা বলেছেন। তারমতে, একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘুর পার্থক্য থাকতে পারে না। প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই তার রাজনৈতিক লক্ষ্য।
তারেক রহমানের মতে, ‘সবার বাংলাদেশ’ মানে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ-যেখানে সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্র এবং গোষ্ঠীর মানুষের অধিকার ও সুযোগ সমান। তিনি বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিষ্টান-এমন প্রশ্ন ছিল না। তাই স্বাধীন বাংলাদেশেও তথাকথিত সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু নিয়ে চিন্তার কোনো অবকাশ নেই।’
তার এ দৃষ্টিভঙ্গি শুধু একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়; এটি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের গভীর বিশ্বাস। তিনি মনে করেন, প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র পরিচয় হলো তিনি একজন বাংলাদেশি।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তারেক রহমানের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ ঐক্য ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য একটি দৃঢ় পদক্ষেপ।
‘সবার বাংলাদেশ’ বলতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন: যেখানে জনগণের বাকস্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের অধিকার থাকবে। কোনো ধর্ম, বর্ণ, কিংবা জাতিগত ভেদাভেদ থাকবে না। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হবে।
‘সবার বাংলাদেশ’ হলো এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন, যেখানে কোনো স্বৈরাচার কিংবা ফ্যাসিস্ট শাসনের জায়গা নেই। এটি এমন একটি বাংলাদেশ-যেখানে জনগণের ঐক্য, গণতন্ত্র এবং মানবিক মূল্যবোধই রাষ্ট্রের প্রধান ভিত্তি। তার এ দর্শন কেবল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য নয়; বরং এটি দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশনা।
‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ’-বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল প্রেরণা ছিল গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশটি কেবল একটি ভূখণ্ড নয়; এটি ছিল স্বাধীনভাবে মানুষের অধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং ন্যায়ের পরিবেশে বসবাসের একটি প্রতিশ্রুতি। তবে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। এখন সময় এসেছে, গণতন্ত্রের বিকাশ ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার-যাতে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে ‘সবার বাংলাদেশ’ হয়ে উঠতে পারে।
গণতন্ত্র কেবল একটি শাসনব্যবস্থা নয়; এটি মানুষের অধিকার, মর্যাদা এবং নিরাপত্তার প্রতীক। গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো জনগণের মতামত এবং অংশগ্রহণ। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রকে বহুবার বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পেছনে সাধারণ মানুষের যে ত্যাগ, তা কেবল সুশাসন এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করলেই সার্থক হবে।
তারেক রহমানের ভাষায়, ‘এখন গণতন্ত্রকে নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে। আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারলেই দেড় যুগব্যাপী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহিদদের আত্মদান সার্থক হবে।’
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, জনগণের কাছে সরকার এবং রাষ্ট্রের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। আইন-আদালত থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্র টেকসই করার জন্য প্রয়োজন একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
আইনের শাসন গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ। কোনো নাগরিকের অধিকার যাতে অন্যায়ভাবে লঙ্ঘিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং কার্যকর আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্র কেবল রাষ্ট্রক্ষমতার হাতবদল নয়, বরং এটি জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রতীক। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, দারিদ্র্যবিমোচন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্র অর্থবহ হবে না। সমাজের সব শ্রেণি, পেশা এবং গোষ্ঠীর মানুষের মতামত শুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুস্থ আলোচনা এবং বোঝাপড়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
তারেক রহমানের মতে, ‘গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের অধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই বিএনপির লক্ষ্য। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে কেউ নিপীড়িত হবে না, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং দুর্নীতি থাকবে না।’
বিএনপি সরকার গঠন করলে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা, সব নাগরিকের জন্য সমান অধিকার এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা, ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, যুবসমাজের কর্মসংস্থান, নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা এবং কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাসহ তথ্যপ্রযুক্তি, জ্ঞানবিজ্ঞান এবং শিক্ষা খাতকে শক্তিশালী করে ভবিষ্যৎমুখী উন্নয়নের বাস্তব পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে মানুষ শান্তি ও উন্নয়নের পথ ধরে এগিয়ে যাবে। জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করে সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ কেবল জনগণের অধিকার রক্ষা করবে না, বরং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি উন্নত এবং প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলবে। এজন্য প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অটল প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রত্যেকের দায়িত্ব পালন করা।’
‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’-স্বাধীনতা, সাম্য, বৈষম্যহীনতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই স্বপ্ন কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। বাস্তবতা হলো, একটি স্বাধীন ভূখণ্ড অর্জিত হলেও জনগণের আর কোনো আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি।
তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমাদের আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। দুঃস্বপ্নকে দূরে ঠেলে দেশের জনগণের সামনে একটি বৈষম্যহীন, নিরাপদ, মানবিক বাংলাদেশ গড়া বিএনপির আগামী দিনের লক্ষ্য।’ বিএনপি সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আসছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে।
বিএনপি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, ক্ষমতায় গেলে সব মত ও পথের মানুষের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময় এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে, যেখানে সামাজিক বৈষম্য দূর করা হবে। জ্ঞানবিজ্ঞান এবং তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে ভবিষ্যৎমুখী মানবিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে। প্রতিহিংসা এবং প্রতিশোধের রাজনীতিকে পরিহার করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন ও ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। বিএনপি একটি এমন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে, যেখানে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, পেশার ভেদাভেদ ভুলে সবাই স্নেহ ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে।
‘সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র’-শান্তি, সহাবস্থান এবং ঐক্যের এক অনন্য উদাহরণ হলো সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র। এটি এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা এবং সংস্কৃতির মানুষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে একত্রে বসবাস করে। এখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে একটি ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে তোলা হয়। বৈচিত্র্যের মধ্যেও একতা প্রতিষ্ঠা সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য, যা শান্তি, ন্যায়বিচার এবং সমৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করে।
সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলার অর্থ কেবল একটি রাষ্ট্রকে শান্তিপূর্ণ রাখা নয়, বরং নাগরিকদের মধ্যে এমন একটি বন্ধন সৃষ্টি করা-যা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। বরং এটি একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে সমাজের প্রতিটি মানুষ নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে সম্মিলিত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র’-অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র হলো এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেখানে সব নাগরিকের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার সমানভাবে রক্ষিত হয় এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। এটি এমন একটি কাঠামো তৈরি করে, যা ন্যায়সংগত, বৈষম্যহীন এবং অংশীদারত্বমূলক সমাজ গঠনের ভিত্তি স্থাপন করে। এখানে কোনো গোষ্ঠী, জাতি, ধর্ম বা শ্রেণি প্রাধান্য পায় না; বরং সব নাগরিক সমান মর্যাদা এবং সুযোগের অধিকারী হয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অংশীদার হতে পারে। এটি ন্যায়, সাম্য এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তারেক রহমান বলেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা পেশার ভেদাভেদ ছাড়াই প্রতিটি নাগরিকের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সম্পদের সুষম বণ্টন এবং দারিদ্র্যদূরীকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য মানসম্মত শিক্ষা এবং সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হবে। সমাজের সব ধর্ম, জাতি, ভাষা এবং লিঙ্গের মানুষের মর্যাদা রক্ষা করা হবে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং অনগ্রসর জনগণের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাষার সুরক্ষা এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হবে। জনগণের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং কার্যকর স্থানীয় সরকারব্যবস্থা করা হবে। প্রত্যেক নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা, সম্পদের সুরক্ষা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করা করা হবে। প্রত্যেককে নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা হবে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হলো একটি এমন সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি নাগরিক নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমান সুযোগ পেয়ে ব্যক্তিগত ও জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
‘নির্বাচিত সরকার’-বিএনপি মনে করে, ‘একমাত্র অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্র-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারত্ব তৈরি হয়। বাংলাদেশ কিংবা যে কোনো দেশেই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। তাই জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে, রাখবে। তবে কোনো একপর্যায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিও কিন্তু নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয়।
সুতরাং, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব সংস্কার কার্যক্রমের প্রথম এবং প্রধান টার্গেটও হওয়া জরুরি। এজন্যই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জবাবদিহিমূলক সরকার এবং সংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সামনে রেখেই সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া দরকার। কারণ, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া, সংস্কার কার্যক্রমের প্রক্রিয়ায় জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া, উন্নয়ন-গণতন্ত্র কিংবা সংস্কার কোনোটিই টেকসই এবং কার্যকর হয় না।’
সাঈদ খান : সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
sayed.reporter@gmail.com