Logo
Logo
×

বাতায়ন

সংসদে পেশাজীবীদের জন্যও একটি কক্ষ থাকা উচিত

Icon

মোহাম্মদ হোসেন

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সংসদে পেশাজীবীদের জন্যও একটি কক্ষ থাকা উচিত

দেশে গণতন্ত্রের সংকট ও উত্তরণ নিয়ে লেখালেখি, আন্দোলন-সংগ্রাম কম হয়নি। কিন্তু গণতন্ত্রের এবং গণতন্ত্রকামী মানুষের ভাগ্যের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারপরও গণতন্ত্রের সংকটটা বুঝতে চেষ্টা করছি নিজের মতো করে। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের একটি বাণী-‘অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায় ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়’। সুকান্তের কবিতায় আছে, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়/ পূর্র্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’। আমাদের গণতন্ত্রের সংকটের সঙ্গে এ দুটি পরিস্থিতির একটি গভীর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দারিদ্র্যের সঙ্গে গণতন্ত্রেরও ওইরূপ শত্রুতার সম্পর্ক। অনেকটা দুষ্টচক্রের মতো, গণতন্ত্র নেই বলে দারিদ্র্য কমানো যাচ্ছে না। আবার দারিদ্র্য আছে বলে গণতন্ত্রের উন্নতি হচ্ছে না। এ চক্রব্যুহ ভেদ করা কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। গণতন্ত্রকামী কিছু মানুষ যারপরনাই প্রাণান্ত চেষ্টা করছে নানা পদ্ধতি, সূত্র, তত্ত্ব আবিষ্কার করে গণতন্ত্রের সংকট উত্তরণের। কিন্তু ‘সকলের তরে সকলে আমরা/ প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’ নীতির পরিবর্তে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনরা ‘নিজের তরে নিজেরা আমরা/ সকলে তোমরা আমার তরে’ নীতি গ্রহণ করায় প্রকৃত গণতন্ত্রকামীদের ক্ষুদ্র প্রয়াস সর্বদাই পদদলিত হয়েছে। যা হোক, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের ফলে জাতির সামনে আরেকবার সুযোগ এসেছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে নতুনভাবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিষ্ঠার যাত্রা আরম্ভ করার। গণতন্ত্র একটি দীর্ঘ সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা। একশ দিনে বা এক হাজার দিনে আমরা এ অভীষ্ট অর্জন করতে পারব না। কিন্তু যাত্রাটি যাতে শুদ্ধ হয় সে চেষ্টা তো করতে হবে। যাত্রা যদি অশুদ্ধ হয়, তাহলে শত সহস্র বছরেও আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। ’৭২ থেকে গত ৫২ বছরে, নিদেনপক্ষে ’৯০-এর পর গত ৩৪ বছরে প্রমাণিত হয়েছে যে, আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি।

আমাদের গণতন্ত্রের আরেক জটিল সমস্যা চাটুকারিতা, যার নিষ্ঠুর ভুক্তভোগী আমরা। এ চাটুকারিতার ফলে রাজনীতিতে একক ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা গড়ে ওঠে, যার পরিণাম ফ্যাসিবাদ। ফ্যাসিবাদেরও একটা আদর্শ থাকে। কিন্তু বাংলায় ফ্যাসিবাদের কোনো আদর্শও নেই। আর যদি কারও যুক্তিতে আদর্শ দেখতে পাওয়া যায়, তা হলো মুষ্টিমেয় ব্যক্তির স্বার্থ চরিতার্থ করা এবং প্রতারণার ফুলঝুরি দিয়ে জনগণকে বোকা বানানো। আমার নেতা তোমার নেতা স্লোগান দিয়ে পাতিনেতারা তাদের নেতার চেয়ে বুদ্ধিমান আর যোগ্য কেউ নেই এমন ধোঁয়া তুলে জনগণ ও প্রকৃত নেতার সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রতারণা করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কিছু ভালো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। আমরা এ মনোভাবকে স্বাগত জানাই, সাধুবাদ জানাই।

বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পথে আরেকটি বড় বাধা হলো টাকা এবং কালোটাকা। কে কোথা থেকে টাকা পেল এরূপ বিবেচনা যেহেতু দেশে নেই, বরং টাকা দিয়ে যা খুশি তা-ই করা যায়, কাজেই টাকা গণতন্ত্রের বিকাশের পথে একটি পর্বতসমান বাধা। বর্তমান সময়ে টাকার ওপর যার নিয়ন্ত্রণ আছে, সবকিছুর ওপরই তার কর্তৃত্ব আছে, দু-চারটি অনুল্লেখ্য ব্যতিক্রম ছাড়া। টাকার সঙ্গে আবার ক্ষমতার খুবই হরিহর আত্মার সম্পর্ক। টাকা থাকলে ক্ষমতা পাওয়া যায়, ক্ষমতা থাকলে টাকা আপনা থেকে ক্ষমতার কাছে ছুটে আসে। দারিদ্র্য আর প্রেমের সম্পর্কের বিপরীত সম্পর্ক টাকা আর ক্ষমতার। একই ব্যক্তি একাধিকবার নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ, নির্বাচিত পদগুলোর দীর্ঘমেয়াদ, ধারাবাহিকভাবে পরপর বা লাগাতার নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ ইত্যাদি থাকা গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়।

আমাদের প্রচলিত রাষ্ট্রাচার, প্রাধিকার, সংস্কৃতি, আইনি কাঠামো, জীবনচর্চা ইত্যাদি বহু বিষয় আছে, যা আমাদের গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে দেয়নি। এসব ব্যবস্থার অপনয়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক উপদল বা সামাজিক-অর্থনৈতিক স্বার্থ দ্বারা আবদ্ধ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃস্থানীয়দের ক্ষমতাকেন্দ্রে অঙ্গীভূত করার মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা চর্চা করার সুযোগ দেওয়া এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে দায়বদ্ধ করার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা প্রয়োজন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন জাতীয় আইনসভায় তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন দাবি করছে। তাদের প্রতিনিধিত্বের ছদ্মবেশে তারা রাজনৈতিক ক্ষমতার অংশীদারত্ব চাইছে। যাদের টাকা-পয়সা আছে, তারা টাকার বিনিময়ে প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারত্ব হাসিল করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সমাজে আরও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছে, যারা অন্তর্ভুক্তি চাচ্ছে। কিন্তু টাকার দারিদ্র্যে তারা বরাবরই বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু রাষ্ট্রের উন্নয়নে কাজ করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পেশাজীবী সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, শিক্ষকের সংগঠন, সাংবাদিকদের সংগঠন, আইনজীবীদের সংগঠন, চিকিৎসকদের সংগঠন, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন আমাদের সমাজে বিদ্যমান আছে। এ ধরনের সামাজিক বা পেশাজীবী সংগঠনের মধ্য থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করে একত্রে ১০০ সদস্যের সমন্বয়ে আইনসভার একটি উচ্চকক্ষীয় মানের পেশাজীবী কক্ষ (Proffessionals House/ Chamber) গঠন করা যায়। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, আইনসভার অবশিষ্ট ২টি কক্ষ কীভাবে কাদের দ্বারা গঠিত হবে। এ বিষয়ে সাধারণভাবে বিভিন্ন দেশের প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের House of representative এবং Senate। প্রতিনিধি পরিষদ বা নিম্নকক্ষ জনসাধারণের পপুলার ভোটে নির্বাচিত হবে বর্তমানে যেভাবে জাতীয় সংসদের সদস্যরা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়। প্রতিনিধি পরিষদের ভোটে অংশগ্রহণকারী দলগুলো দেশব্যাপী যে ভোট পেয়েছে তার সংখ্যানুপাতিক হারে সিনেটে আসন পাবেন। দলগুলো নির্ধারিত আসনের বিপরীতে তুলনামূলকভাবে রাজনীতি স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের মধ্য থেকে দ্বিগুণ সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। তাদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি পরিষদের ভোটে নির্বাচিত সংখ্যক সিনেট সদস্য নির্বাচিত হবেন। তাহলে আইনসভার প্রথম কক্ষ বা নিম্নকক্ষ জনগণের সরাসরি নির্বাচনে নির্বাচিত হবেন। দ্বিতীয় কক্ষ বা সিনেট; (সিনেটকে অভিভাবক কক্ষ হিসাবেও নামকরণ করা যায়) সংখ্যানুপাতিক হারে প্রতিনিধি পরিষদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। তৃতীয় কক্ষ বা পেশাজীবী কক্ষ তাদের স্ব স্ব সাংগঠনিক সদস্যদের গণভোটে নির্বাচিত হবেন।

তৃতীয় কক্ষের জন্য নির্বাচনি এলাকা নির্ধারণ করতে হবে। সেজন্য প্রথমে পেশাজীবীদের সেক্টর চিহ্নিত করতে হবে। ওই সেক্টরে যেসব সংগঠন আছে তাদের মধ্যে গণতন্ত্রায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্টরভুক্ত পেশাজীবীদের সংগঠনগুলোর সদস্য সংখ্যার অনুপাতে নির্বাচনি এলাকা বিভাজন বা স্থির করতে হবে। ধরা যাক চিকিৎসকদের একটি অ্যাসোসিয়েশন আছে। চিকিৎসকদের জন্য ৩টি নির্বাচনি আসন নির্ধারণ করা হলো। ওই তিনটি আসনের বিপরীতে যেসব প্রার্থী থাকবেন তাদের বিষয়ে সমগ্র দেশের রেজিস্টার্ড চিকিৎসকরা তাদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে আইনসভার তৃতীয় কক্ষের সদস্য নির্বাচন করবেন। তাদের জন্য একটি বিশেষায়িত ভোটার তালিকা থাকবে। অনুরূপভাবে বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমিক সংগঠনের জন্য নির্বাচনি আসন নির্ধরাণ করতে হবে। শ্রমিক ফেডারেশনভুক্ত শ্রমিকদের সমন্বয়ে একটি বিশেষায়িত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হবে এবং ওইসব সংগঠনের নেতাদের মধ্য থেকে নির্ধারিত সংখ্যক প্রতিনিধি আইনসভার তৃতীয় কক্ষে সদস্য নির্বাচিত হবেন। একইভাবে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, এদের জন্য আসন নির্ধারণ করে তাদের সদস্যদের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আইনসভার তৃতীয় কক্ষে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

এভাবে একটি জ্ঞানদীপ্ত এবং নৈতিক মানে বলীয়ান তৃতীয় কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন করা সম্ভব হলে সংকটের সময়ে তাদের মধ্য থেকে কেউ না কেউ অন্তত একটি ন্যায্য ঝাণ্ডা তুলে ধরতে পারবেন। পেশাজীবী শ্রেণির সমন্বয়ে গঠিত এ তৃতীয় কক্ষ গঠন করা হলে এবং দেশ পরিচালনার জন্য নীতিমালা, বিধিবিধান, আইন প্রণয়নকালে নিজ নিজ ক্ষেত্রে ওইসব আইন-কানুনের সুফল-কুফল বিশ্লেষণ করে তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারবেন। ফলে সরকারের নির্বাহী বিভাগ বৈষম্যমূলক আইন-কানুন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করলে তারা তা প্রতিহত করতে পারবেন বলে আশা করা যায়। একপেশে আইন-কানুন, নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নের পরিবর্তে ভারসাম্যমূলক এবং সবার জন্য হিতকর নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

উচ্চ পদগুলোর নিয়োগে ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হলে ওইসব পদের মান-মর্যাদা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং জনস্বার্থ অধিক মাত্রায় রক্ষিত হবে। এছাড়া সরকারের কিছু উচ্চ পদধারী নির্বাহীকে এ তৃতীয় কক্ষের সদস্য হিসাবে মনোনীত করা যায়, যেমন তিন বাহিনীর প্রধান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পুলিশ প্রধান ইত্যাদি। এসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে তৃতীয় কক্ষের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে এসব ব্যক্তি জাতির সংকটকালে অন্তত আইনসভায় দাঁড়িয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদে আওয়াজ তুলতে পারবেন। জাতীয় নির্বাচনকালে প্রতিনিধি পরিষদ এবং রাজনৈতিক নির্বাহী কর্তৃপক্ষ (রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভা) পদত্যাগ করলে সিনেট এবং এ পেশাজীবী তৃতীয় কক্ষ রাষ্ট্রের নির্বাহী কর্তৃত্ব গ্রহণ করে নিরপেক্ষভাবে একটি নির্বাচন পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন। সিনেট এবং পেশাজীবী কক্ষে যারা সদস্য হবেন তারা ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। তাহলে তুলনামূলকভাবে তাদের নিরপেক্ষতার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে বলেই আশা করা যায়। এছাড়া গণতন্ত্রের স্বার্থে আইনসভার সব কক্ষের মেয়াদ চার বছর হওয়া উচিত। পর পর ধারাবাহিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগও রদ করা দরকার।

গণতান্ত্রিক কাঠামোতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা জাতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং দলীয় রাজনৈতিক পদ্ধতির জন্য একটি লজ্জাজনক ব্যাপার। এটা রাজনীতিবিদদের বিশ্বাসযোগ্যতাই প্রশ্নবিদ্ধ করে। কাজেই রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যেই এমন একটি কাঠামো নির্মাণ ও কৌশল বা পদ্ধতি স্থাপন দরকার যে কাঠামোতে রাজনৈতিক ব্যর্থতার লজ্জা কিছুটা কমে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও অব্যাহত থাকে। সর্বোপরি রাজনৈতিক সংস্কৃতি উৎকর্ষের দিকে যায়। এক্ষেত্রে আইনসভার তৃতীয় কক্ষ একটি উপায়-অবলম্বন হতে পারে। কাজেই এ ধারণাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

আইনসভার তৃতীয় কক্ষে মোট ১০০টি আসন নির্ধারণ করা যেতে পারে। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য সংখ্যা নিরূপণ করে দেশব্যাপী ওই সেক্টরের একটি বিশেষায়িত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হবে। প্রাথমিকভাবে অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং বিশিষ্ট সেক্টরগুলোকে এ প্রক্রিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, আর্থিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মানদণ্ডে গুরুত্ব বিবেচনাপূর্বক প্রতিটি সেক্টরের মধ্যে আসন বিভাজন করা দরকার। অতঃপর ওই সেক্টরের বিশেষ তালিকাভুক্ত ভোটাররা দেশব্যাপী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে সরাসরি ভোটে তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। ভোটারদের উচিত হবে তুলনামূলক দায়িত্বশীল এবং সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণকামী ব্যক্তিদের নির্বাচিত করা। তাহলে যেসব মানুষ নিজের কাছে দায়বদ্ধতা অনুভব করে সে স্বাভাবিকভাবেই সাধারণের জন্য ভালো কাজ করার চেষ্টা করবেন।

পরিসংখ্যানের বাস্তবতার কারণে ঢালাও নির্বাচনে দেশের জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের পক্ষে আইনসভায় নেতৃত্বের আসনে নির্বাচিত হয়ে আসার সুযোগ থাকে না, তাদের জন্য আইনসভার তৃতীয় কক্ষে পেশাজীবীদের প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। এভাবে আমাদের গণতন্ত্রের অভিপ্রায়ে একটি জাতীয় জাগরণ এবং আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রা শুরু হতে পারে। এরূপ একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমরা বিদ্যমান সুযোগে করে দেখতেই পারি। তাই বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য সব মহলের কাছে নিবেদন রাখছি।

মোহাম্মদ হোসেন : লেখক ও বিশ্লেষক

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম