Logo
Logo
×

বাতায়ন

ক্ষতিকর বাণিজ্যিক ওষুধ ও অপ্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক টেস্ট

Icon

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ক্ষতিকর বাণিজ্যিক ওষুধ ও অপ্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক টেস্ট

ফাইল ছবি

আমাদের দেশে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে পেশেন্ট কাউন্সেলিং বা রোগীকে পরামর্শদান বলে যেন কোনো বিষয় নেই। ইদানীং অনেক রোগী বহু চিকিৎসককে বিশ্বাসও করে না। তারা সংগত কারণেই মনে করে, চিকিৎসকরা অনেক অপ্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক টেস্টের জন্য রোগীকে বাধ্য করেন এবং ডায়াগনস্টিক টেস্টের রিপোর্ট আসার আগেই রোগীকে অনেক ওষুধ ধরিয়ে দেন। আমি অনেক প্রেসক্রিপশন ও ডায়াগনস্টিক টেস্টের রিপোর্ট দেখে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর সত্যতা পেয়েছি। আমি প্রায়ই দেখি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডায়াগনস্টিক টেস্টের রিপোর্টের সঙ্গে প্রদত্ত ওষুধের কোনো সম্পর্ক নেই। আর মাত্রাতিরিক্ত ডায়াগনস্টিক টেস্টের পরামর্শদানেরও কোনো যুক্তি নেই। বেশিরভাগ ডায়াগনস্টিক টেস্টের সুপারিশ করা হয় ব্যবসায়িক কারণে ও রোগী ঠকানোর জন্য। চিকিৎসকের আত্মীয় বা পরিচিত রোগী হলে ডায়াগনস্টিক টেস্টের লিস্টের পাশে চিকিৎসক মহোদয় এটিও লিখে থাকেন ‘৪০ বা ৫০ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট’। ডায়াগনস্টিক টেস্টের মোট বিল যদি ১০ হাজার টাকা হয় এবং তা থেকে যদি ৫০ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়, তাহলে বাকি থাকে ৫ হাজার টাকা। আমার প্রশ্ন, এ বাকি ৫ হাজার টাকার মধ্যে টেস্টগুলো করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ কত টাকা খরচ হয়, কত টাকা মুনাফা রাখা হয় এবং কত টাকা চিকিৎসককে কমিশন দেওয়া হয়? ডিসকাউন্ট দেওয়ার পরও যদি মুনাফা থেকে থাকে, তাহলে ডিসকাউন্ট দেওয়া না হলে মুনাফার অঙ্কটা কেমন দাঁড়াত? অনেকেই হয়তো বলবেন, ডিসকাউন্টের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা কমিশন নেন না। তার মানে চিকিৎসকরা অনৈতিকভাবে কমিশন নেন এবং তার ভার বইতে হয় নিরীহ-দরিদ্র রোগীকে।

আমি অনেক প্রেসক্রিপশন দেখি, যার মধ্যে বেশিরভাগই অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর ওষুধ। আমি এমন একটি প্রেসক্রিপশন পেয়েছি, যেখানে রোগীকে দশটি ওষুধ প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ছয়টি ওষুধই অপ্রয়োজনীয়। এসব অপ্রয়োজনীয় ওষুধকে অভিহিত করা যায় ‘বাণিজ্যিক’ ওষুধ হিসাবে। প্রেসক্রিপশনে বর্ণিত রোগের সঙ্গে এসব ওষুধের কোনো সম্পর্ক নেই। রোগের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও এসব ওষুধের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে কোম্পানির মুনাফা এবং চিকিৎসকের কমিশনের সঙ্গে।

কোম্পানির মুনাফা এবং চিকিৎসকের কমিশনের জন্য অসহায় গরিব রোগীর ওপর যদি এক গাদা অপ্রয়োজনীয় ওষুধের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে রোগী একাধিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমত, রোগীকে প্রচুর টাকা খরচ করে এসব ওষুধ কিনতে হয়। রোগী যদি গরিব হয়, তবে পরিবারের অত্যাবশ্যকীয় খরচ বাদ দিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে অনাহারে-অর্ধাহারে রেখে হলেও তাকে চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত অপ্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে হয়। দ্বিতীয়ত, এসব অপ্রয়োজনীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়াকেও ধর্তব্যের মধ্যে নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, প্রতিটি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়া রয়েছে এবং কোনো কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়া ভয়ংকর হতে পারে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়ায় প্রায় আট লাখ মানুষ মারা যান। তৃতীয়ত, অপ্রয়োজনীয় ওষুধের কারণে রোগীর শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়া দেখা দিলে তার চিকিৎসার জন্য রোগীকে আবার চিকিৎসকের কাছে দৌড়াতে হয় এবং চিকিৎসক তাকে নতুন করে আরও বেশকিছু ডায়াগনস্টিক টেস্ট ও ওষুধ ধরিয়ে দেন। এ হলো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা, যা সইবার ক্ষমতা দেশের বেশিরভাগ রোগীরই নেই।

ব্যতিক্রমী কিছু প্রেসক্রিপশন আমার হাতে আসে, যাতে খুব সীমিতসংখ্যক ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয় এবং সেগুলো প্রয়োজনীয়ও বটে। অনেক চিকিৎসক একান্ত প্রয়োজন ছাড়া রোগীকে ডায়াগনস্টিক টেস্টের পরামর্শ দেন না। চিকিৎসা পেশার নীতির অনুসারী অনেক মেধাবী চিকিৎসক এ দেশে রয়েছেন, যারা অনৈতিক আর্থিক ফায়দার জন্য কোনোদিন নীতি-আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে প্র্যাকটিস করেননি এবং এখনো করেন না। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই।

আমরা অনেক সময় বুঝে উঠতে পারি না, আমরা যত বেশি ওষুধ গ্রহণ করব, সমস্যাগুলো সেই অনুপাতে বাড়বে। আশপাশে বহু মানুষ আছে, যারা প্রতিদিন ৫ থেকে ১০টি ওষুধ গ্রহণ করে। এসব ওষুধের মধ্যে হয়তো ১টি বা ২টি হলো মূল রোগের জন্য, বাকিগুলো এ ওষুধের কারণে সৃষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিরাময়ের জন্য। ওষুধ জীবন রক্ষাকারী বস্তু বলেই আমরা জানি। বিশ্বের সর্বত্রই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও মিথস্ক্রিয়ার কারণে আরও বহু লক্ষ মানুষ অসুস্থতা ও পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকে। সুতরাং রোগ মুক্তির নামে যখন-তখন ওষুধ গ্রহণের আগে গুরুত্বসহ ভাবা দরকার, আদৌ সেই ওষুধ দরকার আছে কিনা। আর ওষুধ গ্রহণের আগে এটাও ভাবা দরকার, যে রোগের জন্য ওষুধ গ্রহণ করা হচ্ছে তা নিজের সৃষ্ট কিনা। রোগের জন্য নিজেই দায়ী হলে রোগ প্রতিরোধ করা দরকার। রোগ প্রতিরোধ করা গেলে আর ওষুধের দরকার হয় না।

ওষুধের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হলো-ওষুধ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগের মূল কারণ দূর না করে উপসর্গ নিরসনে ব্যবহৃত হয়। ধরা যাক সংক্রামক রোগের জন্য কারও জ্বর হয়েছে। এক্ষেত্রে মূল রোগ সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল প্রদানের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেউ অফিসে দিনের পর দিন মানসিক চাপের মধ্যে কাজ করে মাথাব্যথায় আক্রান্ত হলে সে ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল হয়তো ব্যথা সাময়িকভাবে সারবে। কিন্তু ক্রমাগত মাথাব্যথা আর ধারাবাহিক মানসিক চাপের কারণে কেউ যদি হৃদরোগ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়, তবে তা মাথাব্যথার চেয়ে কয়েক লক্ষগুণ বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। সুতরাং, ওষুধ গ্রহণের আগে ঠিক করা দরকার-সমস্যার মূল কারণটা কোথায় লুকিয়ে আছে। সমস্যা খুঁজে বের করে তার সমাধানের দিকে দৃষ্টি দিলে জটিল রোগে আক্রান্ত হতে হবে না, ওষুধেরও প্রয়োজন হবে না।

শীতকাল এলে এক ধরনের ওষুধের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় সর্দি, কাশি, জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যায়। ভাইরাসজনিত এসব সমস্যা ওষুধ ছাড়াই এমনিতে ভালো হয়ে যায়। তারপরও চিকিৎসকরা বহু মানুষকে সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথার জন্য গাদা গাদা ওষুধ প্রদান করে। কাশিতে কফ সিরাপ কাজ করে না। এতে থাকে ক্ষতিকর উপকরণ। অ্যান্টিহিস্টামিন উপকারের চেয়ে অপকার করে বেশি, বিশেষ করে শিশুর ক্ষেত্রে।

আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্থবিত্ত, সম্মান, যশ-প্রতিপত্তির পেছনে অসম প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতে গিয়ে বেসামাল জীবনযাপন করি বলে আমাদের অজান্তেই শরীর মনে বাসা বাঁধে নানা রোগ। তখন দরকার ওষুধের। সেই ওষুধের প্রয়োজন সাময়িক নয়, হয়তো সারা জীবনের জন্য। ওষুধ গ্রহণের প্রবল প্রবণতা মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। আর ওষুধ কোম্পানিগুলো ভালোভাবেই এটি জানে। একটু লক্ষ করুন, আপনি অসুস্থ নন, তারপরও যদি আপনাকে অসুস্থ বলে ওষুধের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, তখন সেটি আপনার জন্য কত বড় মানসিক রোগের কারণ হয়ে পড়ে। শুধু মানসিক চাপের কথাই বলি কেন। অর্থবিত্তের দিকটা খাটো করে দেখার এখানে কি অবকাশ আছে? এর পর রয়েছে আপনার শরীরের ওপর ওষুধের হরেকরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে সারা বিশ্বে প্রতিবছর লাখো মানুষ মৃত্যুবরণ করে।

রোগের কারবারিদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া সহজ সাধ্য ব্যাপার নয়। নতুন নতুন রোগ তৈরি করে সুস্থ মানুষদের অসুস্থ করে তোলার এ সার্বিক প্রক্রিয়ায় অসংখ্য শক্তিশালী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী জড়িত আছে। বলির পাঁঠা হিসাবে আমরা যা করতে পারি তা হলো-নিজের অবস্থানকে নিজেই অনুধাবন করার শক্তি অর্জন করা। ওষুধ কোম্পানিগুলো আমার, আমার পরিবারের সদস্যদের ওপর ব্যবসায়িক আগ্রাসন চালাবে এটি আমরা হতে দিতে পারি না। শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা আর মৃত্যুর ব্যাপারে মানুষ দুর্বল থাকে, ভয়ভীতি সব সময় তাড়িয়ে বেড়ায়। আর তাই একটু ভালো থাকা, সুস্থ থাকা আর বেশিদিন বাঁচার তাগিদে আমরা ওষুধ কোম্পানিগুলোর ফাঁদে পা দেই। এটা কাম্য হতে পারে না। তাই প্রত্যেক মানুষের দরকার মনস্তাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সুস্থ জীবনযাপনে তৎপর হওয়া।

অসুস্থ হলে জীবন স্বাভাবিক নিয়মে চলে না। সর্বক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, জীবনের সুখ-শান্তি নষ্ট হয়, টাকা-পয়সার অপচয় হয়। পর্যাপ্ত ব্যায়াম, সুষম খাবার, পর্যাপ্ত পানি পান, পর্যাপ্ত ঘুম, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপনসহ আরও গুটিকয়েক নিয়ম মেনে চলে জীবনকে সুস্থ সুন্দর রাখা খুব কঠিন কাজ নয়।

কেউ যদি নিয়মিত ব্যায়াম করে, সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খায়, ধূমপান বর্জন করে, প্রয়োজনীয় ঘুমসহ পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয় এবং বদভ্যাস ত্যাগ করে, তবে তার হৃদরোগের ঝুঁকি ৮০ শতাংশ, ডায়াবেটিস ৯০ শতাংশ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে যায়।

সুস্থ জীবনের জন্য ব্যায়ামের বিকল্প নেই। অলস জীবন মানেই অসংখ্য রোগের আশঙ্কা। প্রতিদিন দুই মাইল বা তিন কিলোমিটার হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রথমদিকে অল্প দূরত্ব টার্গেট করে হাঁটা শুরু করা দরকার। আস্তে আস্তে দূরত্ব ও হাঁটার গতি এমন পর্যায়ে বাড়ানো উচিত, যাতে হৃদস্পন্দন বাড়ে। হাঁটার জন্য নরম ও হালকা-পাতলা জুতা ব্যবহার করলে হাঁটতে গতি ও আরাম পাওয়া যায়। বাইরে খোলামেলা জায়গায় দূষণমুক্ত বাতাস ও সূর্যের আলোয় হাঁটার উপকারিতা ও আনন্দই আলাদা। এতে সারা দিনের শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি, অবসাদ ও দুশ্চিন্তা দূর হবে। ব্যায়াম করলে রাতের ঘুম ভালো হয়। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য বিশেষ প্রয়োজন।

সুস্থ শরীরের জন্য খাবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেসব খাবার পরিবেশিত হয়, তা খেতে সুস্বাদু হলেও মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিশেষ করে ৪০ থেকে ৪৫ বয়ষোর্ধ্ব মানুষের জন্য। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও ক্যানসার-ধরনের প্রাণঘাতী রোগ থেকে বাঁচতে হলে সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে ঘি, বাটার, ডালডা, চর্বি বা প্রচুর তেলসমৃদ্ধ পোলাও, রোস্ট, বিরিয়ানি, খাসি ও গরুর গোশত খাওয়া কমাতে হবে। জাঙ্কফুড স্বাস্থ্যকর খাবার নয়। এসব খাবারে পুষ্টি কম, চর্বি বেশি। এ ছাড়া এসব খাবারে রয়েছে প্রচুর লবণ, চিনি, মেয়নেজ সোডিয়াম গ্লুটামেট ও টাট্রাজিন জাতীয় বিতর্কিত খাদ্যপোকরণ। অন্যান্য দরকারি খাবারের মতো জাঙ্কফুডে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও আঁশ কম থাকে। ম্যাকডোনাল্ড, বার্গারকিং, কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন, পিৎজা, হ্যামবার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই জাঙ্কফুডের কিছু উদাহরণ। জাঙ্কফুডে প্রচুর চিনি ও চর্বি থাকে বলে এমন খাবার খেলে ওজন বেড়ে যাওয়াসহ উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, ক্যানসারের মতো বহু জটিল রোগের উৎপত্তি হতে পারে।

স্বাস্থ্যকর খাবার সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য। খাবার হতে হবে কম ক্যালোরিযুক্ত এবং বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। জৈব খাবার শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। জৈব খাদ্য বলতে বোঝায়, যা কীটনাশক এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ছাড়াই উৎপাদন করা হয়। আমাদের খাবারে কম করে হলেও অর্ধেক হতে হবে জৈব শাকসবজি ও ফলমূল। বাকি খাদ্যের মধ্যে থাকতে হবে অর্গানিক ভূসিসমৃদ্ধ শস্য, বাদাম, বিভিন্ন ধরনের বিচি ও তেল। সবচেয়ে ভালো তেল হলো তিসি বিচির তেল, জলপাই থেকে প্রাপ্ত তেল, যাকে আমরা অলিভ অয়েল বলে থাকি। সয়াবিন তেলই আমরা বেশি খাই অন্যান্য তেলের দাম বেশি বলে। পরিশোধিত বা পরিমার্জিত শর্করা, চিনি, সাদা রুটি, ময়দা, পেস্তা, কেক, কুকিজ, পিৎজা ও পেস্টি বর্জন করে অঙ্কুরিত এবং সম্পূর্ণ পেসতা বা আটা খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। খাসি ও গরুর গোশত কম খেতে হবে। প্রোটিন হিসাবে মাছ ও মুরগির গোশত উৎকৃষ্ট। মাংসের চেয়ে শরীরের জন্য মাছ ভালো। ট্রান্সফ্যাট হৃদরোগ সৃষ্টির সহায়ক। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁচা লবণ খাওয়া ছেড়ে দেওয়া দরকার। অর্গানিক ডিম, দুধ ও দই স্বাস্থ্যকর খাবার। ভিটামিন-সি, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-ই, সেলেনিয়াম ও পলিফেনোল শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সব অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎকৃষ্ট উৎস ফলমূল, শাকসবজি ও সবুজ চা।

রোগাক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সঠিক ওষুধ সঠিক মাত্রায় সঠিক সময়ে জন্য গ্রহণ করুন। সব রোগের জন্য ওষুধের প্রয়োজন হয় না। আমরা বিনা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করে শরীরের ক্ষতি করি। তবে তার অর্থ এই নয়-প্রয়োজনে আমরা ওষুধ সেবন করব না। বহু ক্ষেত্রে মানুষের জীবনে এমন সব রোগের উৎপত্তি হয়, যা নিয়ে হেলাফেলা করলে জীবন বিপন্ন হতে পারে। আপনি যদি ইতোমধ্যে রোগাক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে দুশ্চিন্তা না করে জীবনকে সহজভাবে গ্রহণ করুন ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হোন। জটিল রোগে আক্রান্ত বহু রোগী নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে খুব সুস্থ থাকেন। আপনি যদি শরীর ও মনের প্রকৃত চাহিদা ও সমস্যা বোঝেন, তবে শরীর ও মন আপনাকে সুস্থ-সুন্দর জীবনের প্রতিশ্রুতি দেবে।

পানি মানে জীবন। আমাদের শরীরের ৭২ শতাংশ ওজন আসে পানি থেকে। এমনকি হাড়ের এক-চতুর্থাংশ, পেশির তিন-চতুর্থাংশ এবং মস্তিষ্কের ৮৫ শতাংশ হলো পানি। আমাদের রক্ত ও ফুসফুসের ৮০ শতাংশ পানি দিয়ে গঠিত। জীবনের জন্য অক্সিজেনের পরই পানির স্থান।

রোদ বা সূর্যালোক উপভোগ করুন। কারণ সূর্যালোক সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, যা ছাড়া শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয় না। আর ভিটামিন ডির ঘাটতি হলে শরীরের ক্যালসিয়াম বিশোষণে বিঘ্ন ঘটে। ক্যালসিয়াম শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি উপকরণ। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সূর্যস্নান করা দরকার।

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ : প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, ফার্র্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

drmuniruddin@gmail.com

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম