মিঠে কড়া সংলাপ
আমরা কি একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছি?
ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন।’ তাছাড়া তিনি নিজেও একসময় ছাত্রলীগ করতেন এবং সেই সুবাদে তিনি অমর একুশে হল কমিটির নেতৃত্বেও ছিলেন। অতঃপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে তিনি আজকের অবস্থানে এসেছেন। তার এ বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। কারণ, সময়ের প্রয়োজনে তিনি যথাযথ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। দেশের মানুষের স্বার্থে নিজের জীবনবাজি রেখে রাজপথে নেমে তিনি প্রমাণ করেছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ন্যায়সংগত। আর শুধু তিনি কেন, আরও এমন অনেককে জানি ও চিনি, যিনি বা যারা একসময় ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ করতেন, তাদের কেউ কেউ বিগত সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনাসহ শেষদিকে সরকারি দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তাদের সেসব সমালোচনা, বিরোধিতা সরকারের উচ্চমহলে পৌঁছেনি বা তাদের কথায় কেউ কর্ণপাত করেননি। কারণ, সরকারের সর্বোচ্চ পদ থেকেই বলে দেওয়া হয়েছিল, কে কী বলল না বলল, লিখল না লিখল, তাতে কিছু যায়-আসে না! সুতরাং, সারজিস আলমদের রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো গত্যন্তর ছিল না; আর সেই সঙ্গে বিবেকবান আরও অনেক ছাত্রলীগ, আওয়ামী নেতাকর্মীও বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন প্রদান করেছিলেন। যেমন আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক এক ব্যক্তিকে সেদিন রাস্তায় নেমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেছিলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে না, তারা লুটপাট করে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে, তাই এখনো এ সরকারের পতন না ঘটলে দেশের আরও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আবার কানাডাপ্রবাসী সাবেক একজন ছাত্রলীগ নেতা সেসময় ছুটি কাটাতে দেশে এসে ছাত্র-জনতার মিছিলে যোগদান করায় তাকে জিজ্ঞাসা করেও একই ধরনের জবাব পেয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বারবার ব্যর্থ হওয়ায় তিনিও রাস্তায় নেমেছেন। বিশেষ করে ’১৮ ও ’২৪-এর নির্বাচনি ফলাফল তিনি মেনে নিতে পারেননি।
এ অবস্থায় নিঃসন্দেহে বলা চলে, শেষদিকে সরকারি দলের অনেক নেতাকর্মী-সমর্থকও শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার মানসিক অবস্থান এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, সেসব নেতাকর্মীর কথা তার কানে পৌঁছেনি বা সেসবের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার মনমানসিকতা তার ছিল না! তাছাড়া তিনি এমন একদল স্বার্থপর ও লুটেরাচক্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন, তার দলের কোনো ত্যাগী নেতা যিনি বা যারা দলের এবং দেশের মানুষের মঙ্গল চান, কল্যাণ চান, তাদের পক্ষে তার ধারেপাশে ঘেঁষাও সম্ভব ছিল না। অথচ সেসব সৎ, নির্লোভ, জনদরদি নেতাকে তিনি যদি তার কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিয়ে মাঝেমধ্যে তাদের কথা শুনতেন, তাহলে হয়তো তিনি দেশ তথা দেশের মানুষের দুর্গতির কথা এবং তার নিজ দলের দুর্নীতিপরায়ণ নেতাদের আসল তথ্য জানতে পারতেন।
সারজিস আলমের অতি সাম্প্রতিক কিছু কথা নিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম। আবার সেই প্রসঙ্গে একটু ফিরে যেতে চাই। তিনি তার বক্তব্যে সবচেয়ে মূল্যবান যে কথাটি বলেছেন, তা হলো, ছাত্রলীগ করলেই তাদের সবাইকে ধরে ধরে জেলে ঢোকানো যাবে না বা সে কাজটি ঠিক হবে না। কারণ, ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীই স্বৈরাচারের দোসর বা সমর্থক ছিলেন না; অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীও শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী আচরণ ও কর্মকাণ্ডের বিরোধী ছিলেন এবং তাদের অনেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন।
এ অবস্থায় তার কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের অনেকেই দেশের অর্থ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকায় এসবের প্রতিবাদে ছাত্রলীগসহ অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীও শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের বিপক্ষে চলে গিয়েছিলেন। কারণ, আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীই বিবেকহীন ছিলেন, লুটেরা চরিত্রের ছিলেন, দুর্নীতি করে অর্থ উপার্জনে মত্ত ছিলেন, এমনটিও নয়। আওয়ামী লীগের মধ্যেও অনেক ভালো মানুষ, জনদরদি মানুষ যারা নিজের কষ্টার্জিত অর্থ দ্বারা জনসেবা করেন, তেমন মানুষও ছিলেন বা আছেন। কিন্তু তারা কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন; কারণ দলীয় প্রধানের কাছে সেসব ভালো মানুষের কোনো মূল্য ছিল না। দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি অপকর্মে পারদর্শী লোকসহ একশ্রেণির খারাপ মানুষ এবং পুলিশকে কাছে টেনে নিয়ে তিনি তার শাসনকাল দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিলেন। সে অবস্থায় আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও জনবান্ধব ব্যক্তিদের এক কোনায় পড়ে থাকা ছাড়া কোনো গতি ছিল না। তবুও মাঝেমধ্যে তারা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে তাদের অভিমত ও বক্তব্য বিভিন্নভাবে তুলে ধরে সরকারের ভুলত্রুটি বা অন্যায় কাজের সমালোচনা করতেন। আবার কিছু সাহসী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং সমর্থক শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অন্যদের তুলনায় বেশি সোচ্চার ছিলেন। সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের বিরোধিতা করতেও তারা দ্বিধা করতেন না; সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য, লেখনী ইত্যাদির মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের যে কোনো অন্যায় কাজের বা দুর্নীতির অনেক কথা তুলে ধরে সময়ে সময়ে তারা সাবধানবাণীও উচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু তাদের সেসব কথা অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হয়েছিল। আর ইতোমধ্যে রিমান্ডে নেওয়া আওয়ামী লীগের কিছু রাঘববোয়ালও সেসব কথা স্বীকার করেছেন। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, শেখ হাসিনা কারও কথাই শুনতেন না। সুতরাং, আওয়ামী লীগে কোনো ভালো লোক ছিলেন না বা নেই, এ কথাটিও কিন্তু ঠিক নয়। এ অবস্থায় ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের সবাই খারাপ; তাদের সবার নামেই মামলা দিয়ে ধরে ধরে জেলে ঢোকাতে হবে এমন মনোভাব নিয়ে যারা বসে আছেন, তারাও কিন্তু ইতিহাসের সেই ভুল বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছেন! সে ক্ষেত্রে সারজিস আলম এবং তার কোনো কোনো সহযোগী ছাত্রনেতা পাইকারি হারে মামলা দিয়ে পুলিশি হয়রানিসহ গণগ্রেফতার না করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে মনে করি। তবে সে কথাটি শুধু সারজিস আলমদের বললেই চলবে না; বর্তমানে যারা সরকার চালাচ্ছেন বা সরকারকে চালাচ্ছেন, তাদেরও কথাটি বুঝতে ও মানতে হবে। অন্যথায় যে লাউ সে কদুর মতোই অবস্থা হবে। অতীতেও যেমন পাইকারি হারে মামলা দিয়ে গণগ্রেফতার চালানো হয়েছে, এখনো যদি প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কেউ তেমন মানসিকতায় যার-তার নামে মামলা দিয়ে যখন-তখন যাকে-তাকে গ্রেফতার করেন বা গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে স্বার্থ হাসিল করেন, তাহলে এই যে বলা হচ্ছে, ‘দ্বিতীয় দফায় আমরা স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করছি’-সে কথাটি কিন্তু ধোপে টিকবে না। কারণ, অতীতে যেমন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো আপাদমস্তক একজন ভদ্রলোক রাজনীতিকের নামে ডজন ডজন মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হয়েছে, তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করা হয়েছে, রুহুল কবির রিজভীর মতো একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে মামলার পর মামলা দিয়ে তার জীবন বিপন্ন করা হয়েছে, সেই বৃত্ত ভেদ করে বের হয়ে না এসে এখনো পাইকারি হারে মামলা দিয়ে একেকটি মামলায় শত শত আসামি করে আরও অজ্ঞাত শখানেক ব্যক্তিকে আসামি করার সুযোগ রেখে সেসব মামলার আসামিদের পুলিশি হয়রানির মুখে, নির্যাতনের মুখে ঠেলে দিলে জনগণের সহানুভূতি কিন্তু আবার সেসব নির্যাতিত মানুষের পক্ষে চলে যাবে; অতএব সাধু সাবধান!
উল্লেখ্য, মামলাসংক্রান্ত ওপরের কথাগুলো অবতারণা করার কারণ হলো, ঢাকাসহ মফস্সল এলাকায় এসব ভূতুড়ে মামলায় জনজীবন আবার অতিষ্ঠ হতে চলেছে। একশ্রেণির মামলাবাজ যত্রতত্র যার-তার নামে মামলা দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ মামলার ভয় দেখিয়ে স্বার্থ হাসিল করে চলেছেন। কেউ আওয়ামী লীগ করতেন বা সমর্থন করতেন বা কারও সন্তান ছাত্রলীগ করতেন, তাদের প্রায় সবাই এখন মামলার ভয়ে আছেন। কারণ কেউ সক্রিয় আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হোন অথবা তারা নিষ্ক্রিয় বা শুধু সমর্থক হোন, তাদের প্রায় সবার দিকেই একশ্রেণির ধান্দাবাজ চোখ পাকিয়ে আছেন, তাক করে আছেন, কখন কাকে কোন মামলায় ফাঁসিয়ে দেবেন! ৫ আগস্টের পর হাজার হাজার মামলার এফআইআরএ হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা আসামির কথা উল্লেখ থাকায় এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত শত্রুতাসহ জায়গাজমিসংক্রান্ত বিরোধ ইত্যাদি কারণেও অনেকের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে! যেমন অ্যাডভোকেট জেডআই খান পান্না বলেছেন, তার নিজ এলাকায় শত্রুতার কারণে ঢাকা শহরের একটি হত্যা মামলায় তার নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে! যদিও তিনি আগাম জামিন গ্রহণ করেছেন এবং তার নাম এফআইআর থেকে বাদ দেওয়া হবে বা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে অজ্ঞাত-অখ্যাত ব্যক্তিদের কী অবস্থা, সে বিষয়টিও ভেবে দেখা প্রয়োজন। কারণ জেডআই খান পান্না একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি বলেই হয়তো তিনি ভূতুড়ে মামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। কিন্তু ঢাকাসহ অন্যান্য মফস্বল শহরে যেসব নিরীহ, নির্দোষ ব্যক্তি এ ধরনের মামলার শিকার হচ্ছেন, ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে যাদের টার্গেট করে এ ধরনের মামলা দেওয়া হচ্ছে এবং এসব ক্ষেত্রে যারা স্বনামধন্য নন বা যাদের লোকবল, অর্থবল নেই, তাদের অবস্থা কী, সে বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা দরকার।
এ বিষয়ে যদিও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘To every action there is an equal and opposite reaction’. অর্থাৎ প্রত্যেক কার্য, ক্রিয়া বা ঘটনারই সমপরিমাণ রিঅ্যাকশন আছে এবং এক্ষেত্রে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন মামলার প্রসঙ্গ টেনেই তিনি কথাটি বলেছেন। আসিফ নজরুলকে আমি অন্তর থেকেই শ্রদ্ধা করি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এবং আমার মেয়েটিও সেখানে শিক্ষকতা করে, এ অবস্থায় তার প্রতি আমার অন্তরের শ্রদ্ধাটুকু অটুট রেখেই বলব, বর্তমান অবস্থায় পুলিশি কেস তথা মামলা সম্পর্কে এমনটি বলা তার উচিত হয়নি। কারণ, অতীত সরকারের কোনো খারাপ কাজের পুনরাবৃত্তি করে সেটাকে আগের সরকারের কাজের রিঅ্যাকশন বলে চালিয়ে দেওয়ার ঘটনা আসিফ নজরুলের ন্যায়নিষ্ঠতা, নৈতিকতা কোনো কিছুর সঙ্গেই খাপ খায় না। আর সে অবস্থায় কিন্তু তিনি বিগত আওয়ামী সরকারকে ‘স্বৈরাচারী’ বলার নৈতিক অধিকারও হারিয়ে ফেলেন।
যাক সে কথা। বর্তমান সরকারের আমলে পাইকারি হারে মামলা ও গণগ্রেফতারসংক্রান্ত আমার জানা দুটি ঘটনার উল্লেখ করেই আজকের লেখাটি শেষ করতে চাই। মফস্সল শহরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন আওয়ামী লীগ নেতা আমাকে জানালেন, প্রায় প্রতিদিন তাকে গ্রেফতারের ভয় দেখানো হলে, বর্তমান অবস্থায় একজন প্রভাবশালী নেতার দ্বারস্থ হওয়ায় তাকে অন্য একজন পাতি নেতার কাছে পাঠানো হয়। সে অবস্থায় সেই পাতি নেতার কাছে গেলে তাকে বলা হয়, নিরাপদে থাকতে হলে তাকে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হবে, পুলিশসহ অনেককে ম্যানেজ করতে হবে। উল্লিখিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ব্যক্তিটি একজন নিম্নবিত্তশ্রেণির এবং তিনি তার ইউনিয়নের একজন নিম্নপর্যায়ের নেতা বিধায় চাহিদামতো মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সে অবস্থায় তিনি আক্ষেপ করে বললেন, বড় নেতারা শত শত কোটি টাকা কামিয়ে ভারত পালিয়ে গিয়ে সেখানে দিব্যি আরামে আছেন, অথচ তার মতো নিম্ন-আয়ের এবং নিম্নশ্রেণির ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাকে কোনো দোষ না করা সত্ত্বেও ঘরসংসার ছেড়ে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
অপর একটি ঘটনায় এক ব্যক্তি জানালেন, তার পরিবার আওয়ামী লীগ ঘরানার হওয়ায় তার এক আত্মীয়ের নামে মামলা দেওয়া হলে পুলিশ এসে তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। অথচ যে মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই মামলার ঘটনার অকুস্থলের ধারে-কাছেও তিনি ছিলেন না। সে অবস্থায় ভুক্তভোগীর বাবা থানায় গেলে তার সামনে ছেলেকে বেধড়ক প্রহার শুরু করায় আসামির বাবা করজোড়ে তাকে না মারার আবেদন জানালে বলা হয়, তাকে আরও মারা হবে এবং আগামীকাল আদালতে তুলে রিমান্ডে এনে আবার প্রহার করা হবে। এ অবস্থায় আসামির বাবা বলেন, আমার সন্তান নির্দোষ, আপনারা মামলা দিয়েছেন, ধরে এনেছেন, মামলা চলুক, কিন্তু তাকে মারধর না করার জন্য আমি অনুরোধ করছি। তখন তার কথার জবাবে বলা হয়, পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলে তাকে প্রহারও করা হবে না বা রিমান্ডেও আনা হবে না। সে অবস্থায় আসামির বাবা কোনোমতে জোগাড় করে ২৩ হাজার টাকা দিলে তার পুত্রটি প্রহারের হাত থেকে রক্ষা পায় এবং তাকে রিমান্ডেও আনা হয় না।
সবশেষে বলতে চাই, পাইকারি হারে মামলা দিয়ে যেসব নির্দোষ ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে, সে অবস্থায় অতীতের মতো বর্তমানেও একশ্রেণির পুলিশ ফায়দা লুটে চলেছেন কি না, সে বিষয়টিও ভেবে দেখা দরকার। তবে সরকার যদি ভেবে থাকে, রাতারাতি পুলিশের চরিত্র পালটে গেছে বা সব শ্রেণির সব পুলিশ সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন, সেক্ষেত্রে ভিন্নকথা। কারণ, পুলিশের মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ করা গেলেও এবং আগের তুলনায় তাদের সততা বৃদ্ধি পেলেও সব শ্রেণির সব পুলিশ সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন, বর্তমান সরকারও বোধহয় এমন গ্যারান্টি দিতে পারবে না। আর সে অবস্থায় মামলা দেওয়াসহ পুলিশি হয়রানির ক্ষেত্রে দেশের মানুষ সেই অতীতের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছেন বলেই মনে হয়।
ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, বীর মুক্তিযোদ্ধা