Logo
Logo
×

বাতায়ন

একই ভুল করা যাবে না

Icon

দিলীপ কুমার সরকার

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একই ভুল করা যাবে না

বর্তমানে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত একটি রাজনৈতিক দল। এ দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং অনেক ঐতিহাসিক অর্জনে দলটির অনেক অবদান থাকলেও তা আজ ম্লান হতে বসেছে। বিশেষ করে এ দলের শেষ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামল ছিল ব্যাপকভাবে সমালোচিত। এ সময়কালে সুশাসনের পরিপন্থি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে এবং সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে বিপুল প্রাণহানিতে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। পুঞ্জীভূত সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সৃষ্ট কোটা সংস্কার আন্দোলনে, চূড়ান্ত পর্যায়ে যা রূপ নেয় ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে। পরিণতিতে পতন ঘটে অগণতান্ত্রিক-কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী শাসনের। কিন্তু কীভাবে একসময়ের একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বদলে গেল? কীভাবে দলটি অবতীর্ণ হলো গণবিরোধী ভূমিকায়? এ কথা জানতে হলে আমাদের পেছন ফিরে তাকাতে হবে।

ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, দলটির জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। মুসলিম লীগের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া এ দলটির প্রথম নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। ভাষা আন্দোলনের পর সাম্প্রদায়িকতার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে ১৯৫৫ সালে সংগঠনটি ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নাম ধারণ করে। কেননা অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ভাষা আন্দোলন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিই পালটে দেয়। পাশাপাশি মানুষের কাছে এটিও পরিষ্কার হয়ে যায়, ১৯৪৭ সালে আমরা প্রকৃত অর্থেই স্বাধীনতা লাভ করিনি; বরং ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে ধর্মের নামে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাতে গিয়ে পড়েছি। আর এ উপলব্ধির কারণেই, যে মুসলিম লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের ফলে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে সেই মুসলিম লীগকে এ অঞ্চলের মানুষ ছুড়ে ফেলে দেয়। সেই নির্বাচনে বিপুল বিজয় লাভ করে যুক্তফ্রন্ট এবং যুক্তফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর মধ্যে সিংহভাগ আসনই পায় আওয়ামী লীগ। এরপর অনেক রাজনৈতিক ভাঙা-গড়ার খেলার পর ১৯৫৮ সালে জারি হয় আইয়ুবের সামরিক শাসন। সামরিক শাসন জারির আগেই ১৯৫৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে গঠন করেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)।

এ অঞ্চলের মানুষের কাছে ষাটের দশক পুরোটাই ছিল আন্দোলন-সংগ্রামের। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো ছিল শরীফ শিক্ষা কমিশনবিরোধী উত্তাল ছাত্র আন্দোলন, স্বাধীনতার পক্ষের একাধিক গোপন উদ্যোগ, রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসংগীত বর্জনের ষড়যন্ত্রবিরোধী আন্দোলনসহ বাঙালি সংস্কৃতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলন, স্বাধিকারের প্রশ্নে ১৯৬৬ সালে ৬ দফা পেশের পর গড়ে ওঠা রাজনৈতিক আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক ১১ দফা পেশ, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, স্বৈরশাসক আইয়ুবের পতন, ’৭০-এর জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন ইত্যাদি। এ সময়কালে গড়ে ওঠা প্রতিটি আন্দোলনের সঙ্গেই ছিল আওয়ামী লীগ; কখনো নেতৃত্বে, কখনো সহযোগীর ভূমিকায়। এভাবে গণমানুষের সঙ্গে থেকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে আওয়ামী লীগ যেমন ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, তেমনই দলটির দৃষ্টিভঙ্গিও বদলেছে। এভাবেই আওয়ামী লীগ বদলে গিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে গণমানুষের দলে পরিণত হয়েছিল। বদলে যাওয়া এ আওয়ামী লীগই সত্তরের নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয় লাভ করে এবং পরবর্তীকালে নেতৃত্ব দেয় মহান মুক্তিযুদ্ধের।

স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর দলটির নাম হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ, সংক্ষেপে বাকশাল এবং চতুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে এ বাকশালের নেতৃত্বেই একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ ঘটনাটিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুইভাবে ব্যাখ্যা করে থাকেন। এক. বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র হত্যা। দুই. বাকশালের কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রচেষ্টা। ১৯৭৫ সালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই রাজনৈতিক দলবিধি জারি করা হয়। এ দলবিধির আওতায় অন্যান্য দলের মতো এ দলটিও আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে। এ সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মভিত্তিক দলগুলোও একে একে আত্মপ্রকাশ করতে থাকে। পঁচাত্তর-পরবর্তীকালে প্রতিকূল পরিবেশে দল গোছানো শুরু করতে হয় আওয়ামী লীগকে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ, বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, এরশাদের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন ইত্যাদিতে যুক্ত ছিল দলটি। উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনকালে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একমঞ্চে বসে সংবাদ সম্মেলন করতে দেখা গেছে দলটির নেতাদের, যাকে অনেকে অশুভ রাজনৈতিক মৈত্রী বলে আখ্যায়িত করেন।

দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ১৯৯৬ সালের ১২ জুনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর ২১ বছর পর সরকার গঠন করে। ২০০১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা হারায় দলটি। এ সময়কালে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট দলটির জনসভায় গ্রেনেড হামলা করা হয়। এ ঘটনায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেকে আহত হন এবং কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদটির দিকে দৃষ্টি রেখে পছন্দের মানুষকে এ পদে বসানোর জন্য ২০০৪ সালে বিএনপি সরকার সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করলে আওয়ামী লীগ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। ২০০৬ সালে ব্যাপক সহিংসতাপূর্ণ এ আন্দোলনের মধ্যেই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি নিজেই প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। পরবর্তীকালে অনেক ধরনের জটিলতার কারণে এ সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং সেনাসমর্থনে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে গঠিত হয় ড. ফকরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যার অধীনে অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মধ্যে ৫ দফা চুক্তিনামা স্বাক্ষরিত হয় এবং ব্যাপক সমালোচনার পর তা বাতিল করা হয়।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আবারও সরকার গঠিত হয়। ক্ষমতা গ্রহণের পর উচ্চ আদালতের রায়ের অজুহাতে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দলটি। পরবর্তীকালে অনুষ্ঠিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। কিন্তু এ বিজয়গুলো ছিল কলঙ্কিত এবং কারসাজিপূর্ণ। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচন ছিল একতরফা, যাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অংশ নেয়নি। এ নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫৩টিতেই ক্ষমতাসীন দল ও জোটের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই মোট ভোটের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রদানের জোরালো অভিযোগ ওঠে। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ছিল এক পাক্ষিক। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ দলটির সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করেছিল। ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগপর্যন্ত একটানা সাড়ে পনেরো বছরেরও বেশি ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। আর এ সময়কালই ছিল সবচেয়ে বিতর্কিত।

বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ বিতর্কিত অবস্থানে চলে গিয়েছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছিল দলটি ক্ষমতাসীন থাকার সময়। প্রথমত, উচ্চ আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে কারসাজিমূলকভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা ও নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে জনগণের ওপর অগণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী শাসন চাপিয়ে দেওয়া; দ্বিতীয়ত, সব সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ব্যাপক দলীয়করণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া; তৃতীয়, লাগামহীন দুর্নীতি, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহা, ব্যাংকিং খাতে অরাজকতা, খেলাপি ঋণের ব্যাপকতা বৃদ্ধি, বিদেশে অর্থ পাচার রোধের বিরুদ্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা, প্রকল্প বাস্তবায়নে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়, ধারাবাহিকভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে ধস নামানো; চতুর্থ, অপহরণ, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপকতা বৃদ্ধি এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ইত্যাদির মধ্য দিয়ে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করা; পঞ্চম, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা; ষষ্ঠ, হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ধর্মান্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে অশুভ মৈত্রী গড়ে তোলা, এ গোষ্ঠীর চাপে শিক্ষা পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা, জাতীয় শিক্ষা পাঠ্যক্রম অনুসরণ না করা সত্ত্বেও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি প্রদান, সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান এবং বিভিন্ন দলীয় উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের প্রতিযোগিতায় নামার মধ্য দিয়ে দেশকে প্রতিক্রিয়াশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়া; সপ্তমত, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দলীয় অর্জন ও দলীয় বিষয়বস্তুতে পরিণত করা, বঙ্গবন্ধুকে দলীয় সম্পদে পরিণত করা, বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে যথেচ্ছ ব্যবহার করা; অষ্টম, মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী তাজউদ্দীন আহমদসহ মুক্তিযুদ্ধে যারা অসামান্য অবদান রেখেছেন, তাদের যথাযথ মূল্যায়ন না করা; নবম, পরিবেশ বিনষ্টকারী প্রকল্প গ্রহণ করা এবং পরিবেশ ও নদীরক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করা; দশম, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দেওয়া ইত্যাদি বিতর্কের মূল কারণ।

উপর্যুক্ত সমালোচনাগুলো সত্ত্বেও এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, আমাদের জাতীয় জীবনে আওয়ামী লীগের অনেক অবদান রয়েছে। রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক অর্জন। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অবদান হলো বিভিন্ন ধরনের লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার প্রেক্ষাপট তৈরির ক্ষেত্রে অসামান্য ভূমিকা রাখা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। এছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রগঠনের লক্ষ্য সামনে রেখে স্বল্পতম সময়ে একটি সংবিধান উপহার দেওয়া, যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ সম্পন্ন করা, যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নসহ (পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, মহাসড়কে অসংখ্য উড়াল সেতু, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল তৈরি ইত্যাদি) ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নয়ন, মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, ২১ ফেব্রুয়ারির শহিদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায় ইত্যাদি।

পরিশেষে বলতে চাই, আমি মনে করি, সারা দেশের লাখ লাখ নেতাকর্মী জড়িত আছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক অসৎ, দুর্নীতিবাজ ছিল। অন্যরা ভালোবাসা থেকেই দল করে। এদের অধিকাংশই ত্যাগী এবং দলের দুঃসময়ের সঙ্গী। প্রসঙ্গক্রমে বলতে চাই, শোনা যাচ্ছে, সরকারের একটি অংশসহ একটি মহল আইন করে কিছু সময়ের জন্য আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছে। এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে, দেশ যেমন কর্তৃত্ববাদী শাসনের আওতায় ছিল, তেমনই আওয়ামী লীগও এ কর্তৃত্ববাদের বাইরে ছিল না। তাই নেতৃত্বের দায় দলের ওপর চাপানো কোনোক্রমেই যৌক্তিক নয়। বিএনপি ছাড়া অতীতের নির্বাচন এদেশের মানুষের কাছে যেমন গ্রহণযোগ্য হয়নি, তেমনি আওয়ামী লীগ ছাড়াও ভবিষ্যতের কোনো নির্বাচন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। আন্তর্জাতিকভাবেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড হিসাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়। অন্তর্বর্তী সরকারকে মনে রাখতে হবে, তারা ‘অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া’ কাজ করার শপথ নিয়েছেন।

দিলীপ কুমার সরকার : কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম