Logo
Logo
×

বাতায়ন

ভারতের নদী-সংযোগ মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশের করণীয়

Icon

ড. মনজুর আলম

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভারতের নদী-সংযোগ মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশের করণীয়

ভারতের নদী-সংযোগ মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশের করণীয়

ভারতের নদী-সংযোগ মহাপরিকল্পনা যে বাংলাদেশের জন্য এক মরণ পরিকল্পনা, তা বুঝতে রকেট বিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভারত কর্তৃক ৩০টি নদী-সংযোগ করার কথা। এগুলো হচ্ছে-ব্রহ্মপুত্র-গঙ্গা, কোশি-ঘাগড়া, গান্ধাক-গঙ্গা, ঘাগড়া-যমুনা, সারদা-যমুনা, যমুনা-রাজস্থান, রাজস্থান-সাবরমতি, চুনার-শোন ব্যারাজ, শোনবাঁধ-গঙ্গার দক্ষিণের শাখাগুলো, গঙ্গা-দামোদর সুবর্ণরেখা, সুবর্ণরেখা-মহানদী, কোশি-মেচি, ফারাক্কা-সুক্তদরবন, ব্রহ্মপুত্র, মহানদী-গোদাবরী, গোদাবরী (ইনচমপল্লী নিচু বাঁধ)- কৃষ্ণা (নাগার্জুন টেইলপন্ড), গোদাবরী (ইনচমপল্লী)-কৃষ্ণা (নাগার্জুন সাগর), গোদাবরী (পোলাডরম)-কৃষ্ণা, কৃষ্ণা (আলমাত্তি)-পেন্নার, কৃষ্ণা (শ্রীমঙ্গল)-পেন্নার, কৃষ্ণা (নাগার্জুন সাগর)-পেন্নার (সোমাসিলা), পেন্নার (সোমাসিলা)-কাবেরী (গ্রান্ড অ্যানিকুট), কাবেরী (কাত্তালাই) ভাইগাই-গুন্ডর, কেন-বেতওয়া, পার্বতী-কালীসিন্ধু-চম্বল, পরতাপি-নর্মদা, দামনগঙ্গ-পিঞ্জল, বেদর্তি-ভর্দা, নেত্রবতী-হেমবতী, পম্বা-আচনকোভিল-ভাইপ্রর। এরপরও ৭৪টি বিশাল জলাশয় এবং আরও বাঁধ তৈরি করা হবে, যেখানে সংযুক্ত থাকবে ৩৮টি নদনদী।

প্রথম এ পরিকল্পনার কথা ফাঁস হয়ে গেলে, ভারত বিষয়টি জরিপ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানায়। তখন বাংলাদেশ বিষয়টি মন্ত্রিপর্যায়ের আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে ভারত এটিকে গুরুত্বহীন অভিহিত করে আপত্তি জানায়। ভারত একই চাতুরী করেছিল ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের সময়-আলোচনার কথা বলে ঠিকই বাঁধ নির্মাণ শেষে একতরফা পানি প্রত্যাহার শুরু করেছিল। তাই আমাদের জানতে হবে, আন্তর্জাতিক পানিসংক্রান্ত বিষয়ে ভারতের অবস্থান কী। ভারত আন্তর্জাতিক চুক্তি, কনভেনশন, প্রটোকল ও আদালতের পানিসম্পদসংক্রান্ত রায় নিয়ে কী ভাবছে। নদী-সংযোগ পরিকল্পনা, এমনকি ফারাক্কা বাঁধ কতটুকু আইনানুগ ও যুক্তিসংগত? এ প্রেক্ষাপটে নদী-সংযোগ পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের করণীয় কী। কী উপায়ে ভারতের মতো বৃহৎ শক্তিকে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিরত রাখা যায়। এ দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জরুরি পদক্ষেপগুলো কী। তবে এখনই এ ভয়াবহ সমস্যা সম্পর্কে দেশের জনগণকে জানাতে হবে। বিশ্ব জনমতকে পক্ষে আনতে আন্তর্জাতিক ফোরামে আমাদের অবস্থান তুলে ধরতে হবে। এ পরিকল্পনার ভয়াবহতা সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত তথ্য, উপাত্ত ও প্রামাণ্যচিত্র বিভিন্ন কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক আদালতে সরবরাহ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বা গরান কাঠের বনাঞ্চল (৫৭৭ ২৮৫ হেক্টর) আজ ধ্বংসপ্রায়-সুন্দরবনের প্রবাহিত নদী, খাল ও শাখা-প্রশাখার লবণাক্ততা গরান কাঠের বৃদ্ধিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান। যদিও ১৯৭৬ সালে আইন সংগঠনের মাদ্রিদ সম্মেলনে গৃহীত ষষ্ঠ অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা আছে, আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহে কোনো ধরনের দূষণরোধ ও নিয়ন্ত্রণে পুরো অববাহিকায় আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনায় এক কর্মপদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু ভারত এ অনুচ্ছেদের প্রতি কোনো সম্মান না দেখিয়ে ১৯৬১ সালে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ থেকে আজ অবধি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত আইন অবজ্ঞা করছে। ভারতের নদী-সংযোগ পরিকল্পনা অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র নদীর বাঁধ প্রকৃত অর্থে তাদের বাংলাদেশের প্রধান একটি নদীর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দিয়ে দেবে। এর সঙ্গে টিপাইমুখে বারাক নদীর বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনায় বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম নদী মেঘনার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাও তাদের কবজাগত হবে। বারাক নদীর বাঁধ যে শুধু মেঘনার জন্য মরণফাঁদ তাই নয়, বরং বাংলাদেশের অপর দুটি বৃহৎ নদী-সুরমা ও কুশিয়ারাকে শুকিয়ে দেবে, যার ফলে বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ মরুভূমি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদী প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল এ অঞ্চলের সব কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। ভারত নিচে উল্লিখিত পানিবিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রীতিনীতি, চুক্তি, প্রটোকল, কনভেনশন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় এবং সমঝোতার কোনো তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে নিজস্বার্থ প্রতিষ্ঠা করছে।

১. ১৯৯২ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত UNESCO World Heritage Convention Concerning the Protection of the Cultural and National Heritage.

২. ১৯৯২ সালের ২৭ মার্চের Helsinki Convention on the Protection of the Transboundary Eatervourses and International Lakes Agreement.

৩. ১৯৮৯ সালে বুলগেরিয়াতে অনুষ্ঠিত CSCE সম্মেলনে Protection of the Environmentসংক্রান্ত সমঝোতা।

৪. ১৯৭৭ সালে সম্পাদিত আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের সমঝোতা।

৫. ১৯৮২ সালের আন্তর্জাতিক পানি-দূষিতকরণ সম্মেলনে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক।

৬. ১৯৯৭ সালের মে মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে (Convention on the non-Navigational uses of International Watercourses) গৃহীত সিদ্ধান্ত।

৭. ১৯৯৮ সালে অনুষ্ঠিত Bio-Diversity Convention-এর সিদ্ধান্ত।

৮. ১৯৯২ সালের Rio Declaration and Agenda 21.

৯. ১৯৯৫ সালের ৫ এপ্রিল স্বাক্ষরিত Agreement on the Cooperation for the Sustainable Development of the Mekong River Basin.

১০. ১৯৭২ সালের International Law Commission আয়োজিত সুইডেনের স্টকহোমে ‘আন্তর্জাতিক পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ প্রস্তাব।

১১. ১৯৭৭ সালের মার ডেল পাটা সম্মেলনের সুপারিশগুলো (বস্তুত এর ওপর ভিত্তি করেই জাতিসংঘে The Convention on the Law of the Non-Navigational Uses of International Watercourses গৃহীত)।

১২. SADC Convention with Water Protocol, UNICEF Helsinki Convention with Water and Health Protocol, The Protocol on Water and Health.

১৩. ১৯৩৩ সালের বিখ্যাত Montevideo Declaration of American States-এর ৭ম অনুচ্ছেদ।

১৪. ১৯৫৭ সালের Buenos Aires Resolution of Inter American Bar Association-এর সম্মেলনের স্বীকৃত মতামত।

১৫. ১৯৫৭ সালের স্পেন ও পর্তুগালের মাঝে লেক লানোক্সের ব্যবহার নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালত সমস্যার নিষ্পত্তিসংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালের মতামত।

১৬. ১৯৮২ সালে কানাডার মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত International Law Association-এর সম্মেলনে গৃহীত International Water Resources Law Resolution No. 12.

তৃতীয় কোনো পক্ষের সহায়তা না নিয়ে ভারতের নিজ ক্ষমতা চাপিয়ে দেওয়ার অভিপ্রায়, অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পানি সমস্যার যুক্তিযুক্ত সমাধানের বিরোধিতা ও আন্তর্জাতিক পানিসম্পদের ওপর প্রতিবেশী দেশের যুক্তিযুক্ত ও ন্যায়সংগত অধিকার মেনে না নেওয়ার ইতিহাস, পানিদূষণ সম্পর্কিত সমঝোতার বরখেলাপ, যা নদী অববাহিকায় অবস্থিত অপর দেশকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে-এসব কিছুই আমাদের জন্য অত্যন্ত চিন্তার বিষয়, যা জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেয়।

বর্তমানে পানিসম্পদের যথাযথ ব্যবহারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নীতিমালা এক শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। যেহেতু, ভারতের পরিকল্পনাসৃষ্ট সমস্যাটি বাংলাদেশের জন্য বাঁচামরা এবং দেশ হিসাবে টিকে থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই প্রতিবেশীর বোধোদয়ের প্রত্যাশার পাশাপাশি পানির ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশের করণীয়

১. পানিসম্পদবিষয়ক সমস্যা (আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ নীতিমালার প্রেক্ষাপটে) আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার পাশাপাশি এক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কাউন্সিল গঠন করা জরুরি। দেশের প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও পানি উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সুচিন্তিতভাবে এটি গঠন করতে হবে।

২. ভারতকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে, আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি অনুসারে ভারত কোনো ধরনের চুক্তি ব্যতিরেকে উভয় দেশে প্রবাহিত ৫৪টি নদীর পানি একতরফাভাবে সরিয়ে নিতে পারে না। তাদের অবশ্যই বারাক নদীর ওপর বাঁধের কাজ বন্ধ করতে হবে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে গ্রহণযোগ্য ও সম-অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক নীতিমালার আলোকে চুক্তি করতে হবে।

৩. বাংলাদেশের নাগরিকরা ভারতের বা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আদালতে একক ও যৌথভাবে (ভারতের পানি প্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করা বা একতরফা পানি সরিয়ে নেওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত) নিজের পক্ষে বা অপরের পক্ষে বিচার চেয়ে নালিশ করতে পারে। এতে সমস্যাটি দেশে-বিদেশে দৃষ্টিগোচর হবে।

৪. বিশ্ব বিবেকের কাছে ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি যে অন্যায় করছে তা তুলে ধরতে হবে-ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায় তারা সর্বনাশা কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে।

৫. বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের পানি সমস্যাসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত চিত্র এবং ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। তাছাড়া পৃথিবীর প্রতিটি দেশে বাংলাদেশ নদী-রক্ষা সহায়ক কমিটি (প্রবাসীরা এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন) গঠন করে গণ-সংযোগ ও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

৬. বাংলাদেশ International Court of Justice-এ বারাক নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ ও অপরাপর নদীর পানি একতরফা সরিয়ে নেওয়ার ভারতীয় পরিকল্পনার ব্যাপারে আদালতের সাহায্য চাইতে পারে।

৭. বাংলাদেশ Global Infrastructure Fund (UNDP, UNEP, and the World Bank), যা অতীতে আগ্রহ দেখিয়েছে বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে দ্বিতীয় গঙ্গা-সেচ বাঁধসহ তিস্তা, মুহুরি, কালীদাশসহ অপরাপর সেচ-বাঁধ নির্মাণের জন্য সহায়তাবিষয়ক আলোচনা শুরু করতে পারে।

৮. জনগণকে ‘দেশ উন্নয়ন ফান্ড’ (বন্যা প্রতিরোধ)-এ উৎসাহিত করে দেশীয় অর্থায়নে বিভিন্ন সেচ-বাঁধ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে। সঠিক প্রচারণা, পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলে দেশের স্বার্থে জনগণ ও বিশেষ করে প্রবাসীরা এ ফান্ডে অর্থ জোগান দিয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন।

৯. বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, সাহায্য সংস্থা, সহায়তা কনসোর্টিয়াম, ইসলামি সাহায্য সংস্থা, বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে তহবিলসংক্রান্ত একটি পরিকল্পিত ও সমষ্টিগত কর্মসূচি প্রণয়ন করতে পারে।

১০. ভারত একতরফা পানি সরিয়ে, বিবিধ কাঠামো, বাঁধ ও প্রকল্প গ্রহণ করে নদনদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বিঘ্ন ঘটিয়ে বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে ব্যাপক পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে-পানি আইন অনুসারে ভারত এসব ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতে এ ক্ষতিপূরণ দাবি উত্থাপন করতে পারে।

১১. বাংলাদেশ অনতিবিলম্বে জাতিসংঘে পানি সমস্যা তুলে ধরার পদক্ষেপ নিতে পারে এবং নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরা সব রাষ্ট্রকে ভারতের অ-প্রতিবেশীসুলভ কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য, উপাত্ত ও প্রকৃত অবস্থার সচিত্র প্রতিবেদন প্রদান করে তাদের সহায়তা কামনা করতে পারে।

১২. ভারত বারাক নদীর ওপর বাঁধের কাজ বন্ধ না করা পর্যন্ত রাইমঙ্গল ও জাকিগঞ্জ নদী দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের মাঝে চলাচলরত নৌ-ট্রানজিটসহ সব নদীপথসংক্রান্ত চুক্তি স্থগিত করার কথা বিবেচনা করতে পারে।

১৩. বাংলাদেশ UNCED Agenda 21, যা বিভিন্ন জাতীয় নীতিমালার আওতায় শতাধিক ক্ষেত্রে সহায়তা করছে, সেখানেও প্রকল্প সহায়তা চাইতে পারে।

পানিসম্পদসংক্রান্ত সমস্যা নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, কৃষি পানি সেচের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় ও গাণিতিক হারে মানুষ বৃদ্ধির কারণে পানিসম্পদ সম্পর্কিত সমস্যা প্রতিদিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। আগামী দিনে এ সম্পদ নিয়ে ব্যাপক সহিংসতা হতে পারে বলে আশঙ্কা। কিন্তু অতীতে অনেক ক্ষেত্রে এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে এবং বর্তমানেও হচ্ছে।

সৎ প্রতিবেশীসুলভ মনোভাব ও আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে অপরের অধিকারকে সম্মান প্রদর্শন করলে এ সমস্যার শুধু যে সমাধান সম্ভব তাই নয়, বরং এ সমস্যা সমাধানের পথই সমঝোতা, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সবার জন্য লাভজনক ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। সম্পদের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য নয়, বরং সম্পদের সুষম বণ্টন ও সর্বোত্তম ব্যবহারের মধ্য দিয়েই আজকের সমস্যা আগামীর সম্ভাবনা হয়ে উঠতে পারে। এতে সবারই মঙ্গল।

ড. মনজুর আলম : সহযোগী অধ্যাপক হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়, ফিনল্যান্ড; শাসনতান্ত্রিক সংস্কার বিশেষজ্ঞ, ইইউ উন্নয়ন প্রকল্প

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম