সাক্ষাৎকার
একটি কৃষিবান্ধব ডেটা সেন্টার জরুরি: মো. ফজলুল কাদের
জুননু রাইন
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মো. ফজলুল কাদেরের জন্ম চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এবং আইবিএ থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে পড়াশোনা করেছেন। ‘মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন ২০০৬’ প্রণয়নে তিনি নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ‘মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি রুলস ২০১০’ প্রণয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে তিনি পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনে (পিকেএসএফ) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে কর্মরত আছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন : জুননু রাইন
যুগান্তর : গত কয়েক বছরে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের যে উন্নতি হয়েছে তা টেকসই করা জরুরি। এ বিষয়ে আপনাদের ফাউন্ডেশন কী ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে?
মো. ফজলুল কাদের : ১৯৯০ সালের কৃষির দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে, তখন আমাদের কৃষির প্রকৃতি ছিল-যেটাকে আমরা বলি খোরপোশের কৃষি। যেখানে কৃষক মূলত তার পারিবারিক খোরাকিগুলো উঠে যাওয়ার পর যদি সামান্য কিছু উদ্বৃত্ত থাকে, সেগুলো বিক্রির মাধ্যমে অন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতেন। সেই কৃষির মধ্যে কিন্তু ছদ্মবেশী বেকারত্ব ছিল। তখন আমরা চিন্তা করলাম, কৃষকের দুর্গতি যদি দূর করতে হয়, তবে তার উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। আর উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে আমাদের ফসল খাতে কর্মসংস্থানের ভার লাঘব করে অফসল খাতে প্রণোদনা জোগাতে হবে। তাহলে ফসল খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ার ক্ষেত্র তৈরি হবে। এ ধারণা থেকে আমরা অকৃষিজ খাতে প্রণোদনা দেওয়া শুরু করি। এভাবে প্রায় এক দশকের বেশি সময় চলার পর আমরা একটি আন্তর্জাতিক বহুপাক্ষিক সংস্থার প্রতিবেদনে দেখতে পাই সেখানে বলা হয়েছে-১৯৮০ থেকে প্রায় ২০০২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কৃষিতে প্রকৃত বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়েনি। বরং কিছুটা কমেছে। তখন আমরা ২০০৩ সাল থেকে দুটি কৌশল নিয়ে কাজ শুরু করলাম। একটি হলো-অকৃষি খাতে অর্থায়নের সঙ্গে সঙ্গে অতি নিম্নআয়ের নাগরিকদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে অকৃষি খাতে তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে। অন্যটি হলো-২০০৫ সাল থেকে আমরা কৃষিতে প্রযুক্তির সরবরাহ বাড়াতে শুরু করলাম। এ দুই ক্ষেত্রেই আমরা দুটি বিশেষায়িত প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করি। এ সময় কৃষি খাতে কৃষি মন্ত্রণালয়ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, যাতে সেচ, বিভিন্ন ইনপুট সরবরাহ ও কৃষিতে ফসলের বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ হয়েছে। নতুন নতুন টেকনোলজিক্যাল ইনোভেশন, অর্থায়ন, ইতিবাচক অনুকূল পরিবেশ ইত্যাদি নানা কারণে বাংলাদেশে আমরা এখন প্রবেশ করেছি কমার্শিয়াল কৃষি জগতে এবং আমরা দেখেছি ছোট ছোট ফার্মগুলো এখন কমার্শিয়ালি সাসটেইনেবল হতে পারে।
যুগান্তর : আমরা বিভিন্ন সময় মাইক্রো এন্টারপ্রাইজের কথা শুনতে পাই। এ নিয়ে একটু বিস্তারিত যদি বলেন।
মো. ফজলুল কাদের : আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকাণ্ডগুলোতে ব্যক্তির আংশিক কর্মসংস্থান হয়। এতে মূলত তাদের অব্যবহৃত শ্রমশক্তির আংশিক ব্যবহারের মাধ্যমে কিছুটা অতিরিক্ত আয়ের সংস্থান হয়, যা মূলত তাদের নিজ মজুরি। এতে নিম্নআয়ের নাগরিকদের ভোগের ধরন কিছুটা উন্নত হলেও পুঁজি সৃষ্টির মাধ্যমে সম্পদ সৃষ্টির সুযোগ থাকে অত্যন্ত সীমিত। এসব কর্মকাণ্ডকে অতি ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলা যায়। পক্ষান্তরে মাইক্রো এন্টারপ্রাইজগুলোয় পূর্ণকালীন আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি মজুরিভিত্তিক পরিবারবহির্ভূত ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি উদ্যোক্তার পুঁজি সৃষ্টির সুযোগ সৃষ্টি হয়। চীনে এ মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বাংলাদেশের বিচারে সেটাকে স্মল এন্টারপ্রাইজ বলা যায়। তারা সেখানে এমন পণ্য তৈরি করছে, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে এবং একটা ব্র্যান্ডভ্যালু তৈরি করেছে। এটি তাদের কর্মসংস্থানে একটা শুভচক্রের সৃষ্টি করেছে। আমরা বাংলাদেশেও মাইক্রো এন্টারপ্রাইজকে এ পর্যায়ে নিতে চাই।
যুগান্তর : কৃষিতে বিনিয়োগ লাভজনক ও টেকসই করতে আমাদের বাজারব্যবস্থাকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়?
মো. ফজলুল কাদের : মার্কেটিং ডেভেলপ করার জন্য আমরা কাজ করছি। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। মাঠ পর্যায়ে আমরা এখন ছোট ছোট মিট প্রসেসিং প্ল্যান্ট করছি। এগুলো বাণিজ্যিকভাবে
সফলতার সঙ্গে চলছে। এখানে লোকজন ঋণ নিয়ে নিজের পুঁজি বিনিয়োগ করে কমার্শিয়ালি চালাচ্ছে। দেশি মুরগি পালন হচ্ছে। এগুলোকে ড্রেসিং-প্যাকেজিংসহ প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্টের জন্য আমরা সার্টিফিকেট নেওয়া শুরু করেছি। এটি এ পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের জন্য খুব চমকপ্রদ ব্যাপার। আমাদের অনেক কৃষি উদ্যোক্তা বিএসটিআইর অনুমোদন নেওয়া শুরু করেছেন। এর বাইরে ডেইরি সেক্টরে আমরা অনেক ধরনের ডাইভারসিফাই করেছি। লাবাং থেকে শুরু করে চিজ, নানা ধরনের মাখন, প্রোটিন ড্রিংকস। ডেইরি প্রডাক্টের ক্ষেত্রে এ ধরনের বৈচিত্র্যের কারণে দুধের চাহিদা বাড়বে এবং এতে ডেইরি সেক্টরে মানুষ বেশি বেশি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাবে। এরপর সরিষার তেলের ক্ষেত্রে আপনারা জানেন কোল্ড প্রেস্ড মাস্টার্ড অয়েলের একটা চাহিদা আছে। এখন অনেকেরই সেই ক্রয়ক্ষমতা রয়েছে। আমরা অনেক কৃষি উদ্যোক্তাকে দিয়ে এ ধরনের ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছি এবং আমরা তাদের অর্থায়ন ও পরামর্শ দিচ্ছি। এরপর মহিষের দুধ নিয়ে কাজ করছি। মহিষের দুধ থেকে যে ধরনের ঘি হয়, সেটি কিন্তু গাওয়া ঘির মতো নয়। মহিষের দুধ থেকে কটেজ চিজও হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা প্রাইমারি কৃষিপণ্যে ভ্যালু সংযোজনের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় সার্টিফাইড পণ্য উৎপাদনকে উৎসাহিত করছি। কারণ, প্রাইমারি পণ্য বিক্রির মাধ্যমে আমরা কখনোই লাভবান হতে পারব না। তাই প্রাইমারি পণ্য বিক্রির স্থলে যত বেশি ভ্যালু অ্যাড করা যায়, তত ভালো। এতে নতুন নতুন ভ্যালু সংযোজনকারী কর্মসংস্থানমূলক খাতেরও সৃষ্টি হবে।
যুগান্তর : বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন মেনে আমাদের কৃষিতে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিশেষ বিশেষ ফসলের ক্ষেত্রে ৪ থেকে ৮ শতাংশ সুদে কৃষিঋণ দিচ্ছে। সরকারের এ ঋণের বিপরীতে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মাঠপর্যায়ে যে ঋণ বিতরণ করছে, তার ইন্টারেস্টে একটা পার্থক্য দেখা যায়। ব্যাপারটাকে কীভাবে দেখছেন?
মো. ফজলুল কাদের : ব্যাংকের মাধ্যমে যদি স্বল্পসুদে ব্যাপক হারে কৃষকদের এ ঋণ দেওয়া সম্ভব হয়, তবে নিশ্চিতভাবেই ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় ব্যাংকের সঙ্গে পেরে উঠবে না। তবে কিছু প্রশ্ন এখানে আছে। একটা হলো, এখানে ভর্তুকির পরিমাণ কী রকম। কিছু ফসলের ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ নজর দেওয়ার দরকার পড়ে, অর্থাৎ সেসব পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি যেন না হয়। তাই সোশ্যাল কস্ট বেনিফিট অ্যানালাইসিস করে সেসব ফসলের ক্ষেত্রে কম সুদহারে ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। সোশ্যাল বেনিফিট লক্ষণীয়ভাবে কস্টের চেয়ে বেশি হলেই কেবল এ ধরনের ভর্তুকি সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট হিসাবে জাস্টিফাইড হয়। আর মাইক্রো ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রে যেটি সবচেয়ে বেশি বলা হয় সেটা হলো-এর রেট অব ইন্টারেস্ট বেশি। এটার একটা কারণ হলো মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলো (এমএফআই) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঋণ দেয় কৃষককে; কৃষিকে না। আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে দেখি, আমাদের কৃষক কিন্তু সারা বছর কম-বেশি তিন-চারটি পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। শুধু কৃষির ওপর তারা নির্ভরশীল নন। কৃষক মাইক্রো ফাইন্যান্স থেকে যে টাকা পান, সেটি ক্রস ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের অ্যাকটিভিটিসে ব্যবহার করেন। যদিও ৫০ শতাংশের বেশি টাকা কৃষিতেই যায়। এখানে মাইক্রো ফাইন্যান্সের ইন্টারেস্ট রেট বেশি হওয়ার কারণ হলো, কস্ট অব কালেকশনও এর সঙ্গে যুক্ত হয়। মাইক্রো ফাইন্যান্স
প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সদস্যদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কিস্তির টাকা সংগ্রহ করে। এটি না করে যদি সদস্যদের নিজেদের অফিসে এসে টাকা দেওয়া লাগত, সেক্ষেত্রে তাদের মোট খরচ আরও অনেক বেড়ে যেত। এটি কিন্তু আমরা হিসাব করি না। তাই কস্ট অব কালেকশন যদি বাদ দেওয়া যায়, তাহলে মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউটের রেট অব ইন্টারেস্ট ব্যাপকভাবে কমে যাবে। আর এর জন্য দরকার ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং। ডিজিটাল ফাইন্যান্সিংয়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারের এবং বিশেষভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভালো কিছু পলিসি আছে এবং তারা সেটাকে প্রমোট করছে এবং এমএফআইরা ডিজিটাল ফাইন্যান্সিংয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তবে সেই জায়গায় অনেক আচরণগত পরিবর্তন আনতে হবে।
যুগান্তর : শুষ্ক মৌসুমে আমাদের কৃষকের সেচের জন্য অনেক খরচ করতে হয়, অনেক পানি অপচয়ও হয়ে থাকে। সেই পানি তুলতে অনেক বিদ্যুৎ ও ডিজেলের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে স্প্রিঙ্কলার ইরিগেশনের মতো পানি সাশ্রয়ী যে প্রযুক্তিগুলো আছে, সেগুলো আনার ব্যাপারে আপনাদের কি কোনো প্রচেষ্টা আছে?
মো. ফজলুল কাদের : জেনে খুশি হবেন, আমরা ইতোমধ্যেই এটি শুরু করে দিয়েছি। শুধু স্প্রিঙ্কলার নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে ড্রিপ ইরিগেশনও আছে। আসলে আমাদের ধানের খেতে অনেক বেশি পানির অপচয় হয়। আমরা অনেকেই জানি না, ধান আসলে কোনো ওয়াটার বর্ন ফসল নয়, বরং এটি ওয়াটার টলারেন্ট ফসল। এখানে যে বিপুল পরিমাণ পানির অপচয় হয় এবং সেটার পরিবেশগত ব্যয় যদি আমরা হিসাব করি, তবে এক কেজি চালের দাম ১০০০ টাকার বেশি হয়ে যাওয়ার কথা। আমাদের এখানে এক কেজি চাল উৎপাদনে প্রায় চার হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। এত পানির আসলে সত্যিই কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের অনেক ধরনের অভ্যাসগত সমস্যা আছে।
যুগান্তর : বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্বল্পতায় দেশে আমদানি সীমিত করা হয়েছে। তবুও আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ দিন দিন কমছে। এমন অবস্থায় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান মাধ্যম তৈরি পোশাক খাত এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?
মো. ফজলুল কাদের : বর্তমানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্র কিন্তু সীমিত। মূলত অদক্ষ প্রবাসী শ্রমিক এবং তৈরি পোশাক খাতই আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান ক্ষেত্র। তৈরি পোশাক খাতে আমরা সিভিসি আইটেমের এবং বাল্ক প্রডাকশনে থাকার ফলে বাল্ক বায়ারদের কাছে আমরা বাধা পড়ে আছি। এতে করে আমরা কিন্তু ফাইনাল কনজ্যুমার প্রাইসের খুব সামান্য অংশ পেয়ে থাকি। অন্যদিকে নিজেদের পণ্যে বৈচিত্র্য থাকায় চীন ফাইনাল কনজ্যুমার প্রাইসের অনেক বড় অংশ পেয়ে থাকে। তাই ফাইনাল কনজ্যুমার প্রাইসে আমাদের অংশ বৃদ্ধি করতে সেখানে অবশ্যই বৈচিত্র্য আনতে হবে। আবার, অদক্ষ প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্সের ভবিষ্যৎ কিন্তু খুব ভালো নয়। কারণ বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রবেশ করছে। এমন বাস্তবতায় অদক্ষ শ্রমিক যেমন-ক্লিনার, ওয়েটার, মালীর কাজ রোবট করবে। দেখা যাবে একটি রোবট পঞ্চাশজনের কাজ করছে আরও কম সময়ে, কম অর্থ ব্যয়ে। সেক্ষেত্রে আমাদের অদক্ষ প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে ফিরে আসতে হবে। যেটি আমাদের জন্য অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেজন্য আমি মনে করি, সরকারের উচিত এখন থেকেই মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ সেক্টরকে বড় ধরনের প্রণোদনা দেওয়া। সেই সঙ্গে যারা এ সেক্টরে কাজ করে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে অনেক কিছুকে নতুন করে রিভিউ করা উচিত। এক্ষেত্রে যারা মাঠে গিয়ে প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে কাজ করেন, তাদের কাজে লাগাতে পারি।
যুগান্তর : কৃষিতে ঝুঁকি কমানোর উপায় কী?
মো. ফজলুল কাদের : কৃষিতে অর্থায়ন সর্বকালে সর্বদেশে একটি বিশেষ অর্থায়ন প্রোগ্রাম। কারণ, সব দেশের কৃষিতেই ঝুঁকি থাকে। কৃষিতে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য অর্থনীতিতে আলাদাভাবে কৃষি অর্থনীতি বিষয়টি গড়ে উঠেছে। এক কথায় বলতে গেলে, নানা কারণে কৃষি সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ। একটি কারণ হলো-তথ্যের অসামঞ্জস্য। যেমন-এ বছর গরুর দাম বেশি পেলে পরের বছর অনেক লোক গরুতে বিনিয়োগ করেন এবং অধিক সরবরাহের কারণে এর দাম কমে যেতে পারে। তখন মানুষ হতাশ হয়ে পরের বছর আবার কম বিনিয়োগ করবে, সরবরাহ কম থাকায় দাম আবার বেড়ে যেতে পারে। এটি হয় তথ্যের অসামঞ্জস্যের কারণে। এটি দূর করার জন্য অনেক দেশ কৃষির প্রাথমিক তথ্য আহরণে ডেটা সেন্টার তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়ায় স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে কোনো কৃষক তার কতটুকু জমিতে কী চাষ করবে, সেই প্ল্যান আগেই জমা দিতে হয়। তখন সব দেশের কৃষক সেটা দেখতে পারে। ফলে কোন ফসলের কী পরিমাণে চাহিদা রয়েছে, কোনটায় ভালো ফল পাওয়া যাবে তার একটা যথাযথ সিদ্ধান্ত কৃষক নিতে পারে। আমাদের দেশে এখনো এমন কৃষিবান্ধব ডেটা সেন্টার নেই। তবে বর্তমানে ড্রোন বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো যেসব প্রযুক্তি এসেছে, সেগুলোর সাহায্যে সহজেই এমন সেন্টার তৈরি করা সম্ভব।
যুগান্তর : আমরা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে শক্তিশালী করতে অনেক ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমাদের এসব কর্মকাণ্ডে পরিবেশে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে?
মো. ফজলুল কাদের : আমরা প্রায় সবাই জানি, প্রতি বর্গকিলোমিটারের হিসাবে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এ বাস্তবতায় আমাদের সমৃদ্ধ বাংলাদেশের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা পূরণ করতে গেলে প্রতি বর্গকিলোমিটারে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘনত্ব বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে আমরা সেই আলামত দেখতে পাচ্ছি। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে পরিবেশের টেকসই সংরক্ষণ। আমরা যদি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারি, তবে বাংলাদেশ একটি ভাগাড়ে পরিণত হবে। এর সঙ্গে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও আমাদের আক্রান্ত করছে। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ছে এবং খরার লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। এগুলোকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য আমরা সার্কুলার ইকোনমিকে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সার্কুলার ইকোনমিকে শক্তিশালী করার অর্থ হলো-জিরো ওয়েস্ট। অর্থাৎ বর্জ্য বলে কিছুই থাকবে না। প্রকৃতিতে বর্জ্য বলতে আসলে কিছুই নেই, সবই সার্কুলেটরি সিস্টেমের অংশ। প্রতিটি বর্জ্যই রিসাইকেলড হয়ে ফিরে আসে। উদাহরণস্বরূপ, সাতক্ষীরার জিওলা গ্রামে প্রচুর ডেইরি ফার্ম গড়ে ওঠার কারণে সেখানকার রাস্তাঘাট, পুকুর, ডোবা সবকিছুই গোবরে ভরে থাকত। সেই গোবরকে কাজে লাগিয়ে একটিমাত্র গ্রাম থেকে আমরা এখন প্রায় বছরে ৩ হাজার টন ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছি। অর্থাৎ এটি এখন একটি বিজনেস সলিউশন হয়ে উঠেছে। এমন আরও অনেক উদাহরণ আছে।
যুগান্তর : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
মো. ফজলুল কাদের : ধন্যবাদ।