Logo
Logo
×

বাতায়ন

সংযমের মাসে পণ্যমূল্য নিয়ে কারসাজি বন্ধ হোক

Icon

মো. খসরু চৌধুরী

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সংযমের মাসে পণ্যমূল্য নিয়ে কারসাজি বন্ধ হোক

মাহে রমজান আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে মহান আল্লাহর কৃপা অর্জনের সুযোগ হিসাবে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এ পবিত্র মাসে আমরা আল্লাহর দরবারে যুদ্ধ ও হানাহানি থেকে মানবজাতিকে রক্ষার আকুতি জানাব। আল্লাহ যাতে আমাদের জন্য তাঁর রহমতের ভান্ডার খুলে দেন সে প্রত্যাশায় সিয়াম সাধনায় ব্রতী হব। আল্লাহর প্রতি সমর্পিত হওয়ার এ মাস ভোগবিলাস, অপচয় ও অসংযমের পথ থেকে মানুষকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়।

সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য রচনাকারী পবিত্র আল কুরআন নাজিল হয়েছিল মহিমান্বিত এ মাসে। আত্মসংযমের মাধ্যমে বিশ্বাসীরা যাতে ইন্দ্রিয় ও আত্মিক উভয় দিক থেকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানে নিয়োজিত হয়, সে উদ্দেশ্যে সব সুস্থ ও সাবালক নর-নারীর জন্য সিয়াম সাধনাকে অবশ্য পালনীয় ইবাদত হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্বাসী মানুষ পবিত্র এ মাসে যা কিছু অকল্যাণকর তা পরিত্যাগ করে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের প্রয়াস পায়।

রমজানে অসংযমী হওয়ার প্রবণতা থেকে সরে এসে নিজেদের আল্লাহর রহমতের যোগ্য করে তুলতে হবে। নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রোজাদারদের কষ্টের মুখে ঠেলে দেওয়া সামাজিক দৃষ্টিতে যেমন গর্হিত, তেমনি ধর্মীয় দিক থেকেও অপরাধ। প্রতি বছরই মাহে রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ায় অসৎ ব্যবসায়ীরা। ধর্মীয় দৃষ্টিতে তা যেমন মহাপাপ, তেমনি আইনের দৃষ্টিতেও নিন্দনীয়। এ গর্হিত কর্মকাণ্ড দমন সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে কারসাজি করে পণ্যমূল্য বাড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আবারও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, পণ্যমূল্য নিয়ে কেউ গুজবে কান দেবেন না। কেউ গুজব ছড়িয়ে মানুষের খাদ্য নিয়ে খেলতে পারবে না। রমজানে কেউ যাতে বাজার নিয়ে খেলতে না পারে, সে বিষয়ে সরকার সচেতন। ইচ্ছাকৃতভাবে বা কারসাজি করে কেউ দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সংসদ-সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘আপনাদেরও একটা দায়িত্ব আছে। বাজার মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে আপনারা সহযোগিতা করেন। তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে পারবে না।’

রোজার মাসে যারা কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘রমজান হচ্ছে সংযমের মাস। সংযমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে, যারা সংযমের পরিবর্তে আরও লোভী হয়ে পড়ে। যে পণ্যগুলো আমাদের প্রয়োজন সেগুলো মজুত করে রাখে, সেগুলো দাম বৃদ্ধি করে নানারকম কারসাজি করে থাকে। এ অসাধু ব্যবসায়ী এবং পাশাপাশি যারা চোরাকারবারি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’

রমজানে কেউ কোনো ধরনের মজুতদারি বা কারসাজির চেষ্টা করলে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সারা দেশে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে যাচ্ছে।

রমজানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ধনীদের মধ্যে দরিদ্র মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধি করানো। ধনীরা যেন বুঝতে পারে দরিদ্র মানুষের না খেয়ে থাকার পীড়া। তাই পবিত্র রমজানকে ভোজের আয়োজনে পরিণত করা উচিত নয়। পানাহারের প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়ার চেয়ে ইবাদতে মনোযোগী হওয়া উচিত। সামর্থ্যবানদের এত বেশি পরিমাণে বাজার করা উচিত নয়, যাতে গরিব মানুষ কেনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এসব রমজানের শিক্ষা ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থি।

দীর্ঘ এক মাস সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার, ভোগবিলাস ও অসৎ কর্ম থেকে বিরত থেকে মোমিনরা রোজা পালন করে আত্মশুদ্ধি ও কৃচ্ছ্রসাধনে ব্রতী হন। কেবল পানাহার ও ভোগবিলাস থেকেই বিরত থাকা সিয়ামের শর্ত নয়, প্রকৃত সিয়াম সাধনা হচ্ছে সব ধরনের অন্যায় ও অপকর্ম থেকে বিরত থাকা। এ শিক্ষা শুধু রোজার মাসের জন্যই নয়, বছরব্যাপী রোজার শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে।

সিয়ামের মাধ্যমে আত্মিক ও নৈতিক উন্নতি ঘটে। লোভ-লালসা, হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে রোজার মূল চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে। ক্ষমা চাইতে হবে নিজের পাপ ও গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য।

আশা করি, রমজানে ত্যাগ ও সংযমের চর্চায় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনও আলোকিত হবে। কেবল ব্যক্তিগত ত্যাগ ও সংযম নয়; রমজানের অবশ্য কর্তব্যগুলো পালনের মধ্য দিয়ে দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী অন্যান্য দেশের মুসলমানের সঙ্গে যে যোগসূত্র নবায়ন করে নেয়, তার সামষ্টিক তাৎপর্যও ব্যাপক। রোজার মাধ্যমে শুধু পান, আহার ও জৈবিক চাহিদা বর্জনই নয়; আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য অন্তরের লোভ-লালসা ও নেতিবাচক চিন্তার লাগাম টেনে ধরতে হয়।

রোজা রাখার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও দায়িত্ব রয়েছে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর। গরিব-দুঃখীদের বিপদে তাদের সহায়তা দান রমজানেরই শিক্ষা। এ মাসে দেশের সব মুসলমান ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ত্যাগ ও কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবে, এটাই প্রত্যাশা।

মো. খসরু চৌধুরী : সংসদ-সদস্য; সদস্য, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম