Logo
Logo
×

বাতায়ন

এখন প্রয়োজন একটি শুদ্ধি অভিযান

Icon

আশাফা সেলিম

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এখন প্রয়োজন একটি শুদ্ধি অভিযান

দেশ-বিদেশের নেতিবাচক পরিস্থিতি উপেক্ষা করেই অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদও গঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবার এবং সব মিলে পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন। তার কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। এখন জরুরিভিত্তিতে একটি শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন। প্রথম ধাপে অভিযানটি পরিচালনা করতে হবে ক্ষমতাসীন দলে ও সরকারের সব দপ্তরে। তারপর ধাপে ধাপে সারা দেশের সব সেক্টরে চালাতে হবে এ অভিযান। তাতে করে দেশের মানুষ শান্তি পাবে। দেশ-বিদেশের নিন্দুকদের অতিবচনও কমে আসবে। তার প্রতি প্রকৃতি ও সৃষ্টিকর্তার কৃপা বর্ষিত হবে।

দেশ তো এখন অনেকটাই উন্নত হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাকে তো বাংলাদেশের না, মনে হয় কোনো উন্নত দেশের রাজধানী। আর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নির্মাণ; পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ উল্লেখযোগ্য মেগা প্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সফলতা তো এশিয়া, এমনকি বিশ্বেরও বিস্ময়! এভাবে চলতে পারলে এ দেশ শিগগির ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ও হবে। একদিন উন্নত বিশ্বের কাতারেও পৌঁছে যাবে নিশ্চয়ই। তাই, অর্থনৈতিক কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি এখন সমানতালে প্রয়োজন মানবিক বোধের উন্নয়ন ও শুদ্ধতা; যার অভাব জাতিকে কুরে কুরে খাচ্ছে। ছাঁকুনির মাধ্যমে শুদ্ধতা আনয়নই পারে এতসব উন্নয়নকে আরও অর্থবহ-সার্থক করে তুলতে। আর সে কারণেই এখন একটি শুদ্ধি অভিযান খুব প্রয়োজন। এ দেশের বেশিরভাগ মানুষের অন্তরের চাওয়াও হয়তো একই। অবশ্য নতুন সংসদ গঠনে চমকের মাধ্যমে শুদ্ধি অভিযানের কিছুটা ছাঁকুনিপর্ব ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে; কিন্তু শুধু ক্ষমতার বাইরে রাখলেই অশুদ্ধরা শুদ্ধ হয়ে যায় না। তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, অগ্রহণযোগ্যভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আর কিছু মানুষের নোংরা কায়দায় ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ উপার্জনের মাত্রা জনগণের সহ্যসীমা ছাড়িয়েছে। মানুষ আর নিতে পারছে না। এসব ঘটনার বিচার ও প্রতিকারপ্রত্যাশী মানুষের মাঝে নানা সমীকরণ ও গুঞ্জন চলছে অনেক দিন ধরেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর গণমাধ্যমের বদৌলতে সব ধরনের তথ্যই এখন সহজেই সবার সামনে চলে আসে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, শুদ্ধি অভিযান চালানোটা দুরূহ; কারণ, তার ফলে আবার লোম বাছতে কম্বল উজাড় না হয়। কিন্তু আমার বিশ্বাস, এখনো ততটা ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়নি। একটি বিজ্ঞানসম্মত স্মার্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে এখনো হয়তো কম্বল উজাড় হবে না।

আপাতত গত ১৫ বছরের, বিশেষ করে ৫ বছরের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ইতিহাস, ট্র্যাক রেকর্ড ঘেঁটে, তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে শত কোটি, হাজার কোটির কালো অর্থশালী-ধনকুবেরদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা যেতে পারে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সেই তালিকা থেকে প্রথমে ৫-৭ শতাংশ ‘অবৈধ অর্থলোভী’ খুঁজে বের করতে হবে; যারা সমাজের চোখে ‘দুর্গন্ধযুক্ত দুর্নীতিবাজ’ হিসাবে চিহ্নিত। এরা কখনোই দেশ গঠনে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখে না। শুধু চাঁদা দেওয়া আর অধিকতর ক্ষমতাবান হতে চাওয়া ছাড়া দলের জন্যও তেমন কিছু করে না। দেশ ও জাতির কল্যাণেও এদের কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান থাকে না। সেই যোগ্যতাও এদের নেই। এরা শুধুই দল ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। এরা দলের, সমাজের, তথা দেশের জন্য বোঝা। এদের আদর্শ ও প্রধান লক্ষ্য অবৈধ পথে অনেক টাকা বানানো। দেশ-বিদেশে বাড়ি-গাড়ি আর অগাধ সম্পদের মালিক হওয়া। এরা সমাজের দুষ্টু প্রকৃতির ছোঁয়াচে চুলকানি। স্টেরয়েড চিকিৎসা না করলে এরাই একসময় সারা গায়ে ছড়িয়ে পড়বে।

তাই উপার্জনের উৎসের সঙ্গে বেমানান-অস্বাভাবিক-অসামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থসম্পদের পরিমাণের ভিত্তিতে এদের কালো তালিকাভুক্ত করে সেই তালিকাটি সারা দেশের জনগণের সামনে উন্মুক্ত করা দরকার। দেশের মানুষ যেন এসব কালো তালিকাভুক্তকে ‘কালো মানুষ’ হিসাবেই চেনে। প্রথম ধাপে কত টাকার উপরের টাকাওয়ালারা কালো তালিকাভুক্ত হবেন কিংবা কত টাকার নিচের টাকাওয়ালারা কালো তালিকাভুক্ত হবেন না, সেটি সুনির্দিষ্ট ইন্ডিকেটরের ভিত্তিতে, কালো তালিকা বানানোর আগেই নির্ধারণ করতে হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৪ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘আবার সরকার গঠন করতে পারলে, ভুলগুলো শোধরানোর সুযোগ পাব।’ সুযোগ তো এসেছে। এবার কাজে লাগানোর পালা। প্রচলিত আইনের আওতায় সম্ভব না হলে, এদের ধরার জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। আইন তো দেশ ও জনগণের স্বার্থেই প্রণীত হয়। এরকম নতুন আইন প্রণয়নই হতে পারে বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ২০০৭-২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অফিস-আদালতে পরিবেশের সামান্য ইতিবাচক পরিবর্তনের নিদর্শন সৃষ্টি হয়েছিল। সেই শাসনের মিশ্র অভিজ্ঞতার মধ্যেও সেটুকু ভালো দিকগুলোই মানুষ আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রেখেছে। আর উল্লিখিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তিনি হতে পারেন কিংবদন্তিতুল্য নেতা।

হাজার কোটি, লক্ষ কোটি অবৈধ টাকা কোনো একজন ব্যক্তি বা একটি পরিবারের কাছে থাকাটা অযৌক্তিক। এ দেশে বসবাসকারী একজন ব্যক্তির বিদেশে অবিশ্বাস্য সংখ্যার বাড়ি কিংবা হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকাটা বেমানান। বিচারাধীন ‘মালেক ড্রাইভার’, ‘ওসি প্রদীপ’, ‘জিকে শামীম’, ‘রিজেন্ট সাহেদ’ কিংবা একজন ‘পিকে হালদার’দের মতো অনেকেরই অবৈধভাবে শত কোটি/হাজার কোটি টাকার মালিক হতে পারার সুযোগ পাওয়াটা দুঃখজনক। দেশের মানুষ এ ধরনের উদাহরণ আর দেখতে চায় না। কারণ, এসব কারণে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। উন্নয়ন হয় শুধু অল্প কিছু ব্যক্তি বা পরিবারকেন্দ্রিক। তাতে তো দেশের সবাই মিলে ভালো থাকতে পারবে না। তাই, হাজার কোটি, লক্ষ কোটি অবৈধ টাকার মালিকদের অবৈধ টাকাগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেওয়া উচিত। এর জন্য একটি নতুন তহবিল সৃষ্টি করা যেতে পারে। সেই তহবিলের নাম হবে ‘শুদ্ধি অভিযান তহবিল’। দেশে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য যেটুকু আছে, এ তহবিলের টাকায় ধীরে ধীরে অনেকটাই তা দূর করা যাবে। তাতে করে সবাই মিলে ভালো থাকার একটি পথের সূচনা হবে।

জানি, এসব কঠিন কাজ। এতে দল ও ক্ষমতার অস্তিত্বে আঘাতের ঝুঁকি থাকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো প্রায়ই বলে থাকেন, তার হারানোর কিছু নেই, আছে শুধু দেওয়ার। তাই, তার নেতৃত্বে এবার আরেকটা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হতে পারে। সেটা সারা পৃথিবীর কাছে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হবে। এসবের কল্যাণে এ দেশের মানুষও তাকে শত শত বছর মনে রাখবে।

আশাফা সেলিম : ছড়াকার ও উন্নয়নকর্মী

ashafa.salim@gmail.com

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম