Logo
Logo
×

বাতায়ন

ইসরাইলি বর্বরতার পরিণাম হবে আত্মঘাতী

Icon

পিটার বাওফু

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইসরাইলি বর্বরতার পরিণাম হবে আত্মঘাতী

৭ অক্টোবর ২০২৩ হামাসের নেতৃত্বে সশস্ত্র অনুপ্রবেশের পর ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দ্বারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চরম বর্বরতা শুধু ইসরাইলের (এবং দেশটির প্রধান সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের) জাতীয় নিরাপত্তাকেই বিপন্ন করবে না, বরং বিশ্বব্যাপী ইহুদি-বিদ্বেষের ঢেউ সৃষ্টি হয়ে তা ইহুদিদের জীবনকেও বিপন্ন করবে। স্বল্পকালীন লাভের জন্য দীর্ঘকালীন ক্ষতি ডেকে এনে ইসরাইল কি সুবুদ্ধির পরিচয় দিচ্ছে?

ইসরাইলের বর্বরতার প্রথম পরিণতি হলো একটি অনিরাপদ প্রতিবেশীর পাশে বিপজ্জনকভাবে বসবাস করা। হামাসের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র আক্রমণের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী গাজার বিস্তীর্ণ এলাকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। এ পর্যন্ত গাজায় প্রায় ২৪ হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন (যাদের দুই-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু)। সেই সঙ্গে খাদ্যের ভয়াবহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন ভয়ংকর মানবিক সংকট আর দেখা যায়নি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিনিয়র আইন উপদেষ্টা ক্লাইভ বাল্ডউইন তার এক সাম্প্রতিক নিবন্ধে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দ্বারা সংঘটিত কমপক্ষে পাঁচটি যুদ্ধাপরাধ চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হলো : ১. জীবনহানি, ২. রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার, ৩. সমষ্টিগত শাস্তি, ৪. গণবাস্তুচ্যুতি এবং ৫. অধিকৃত অঞ্চলে বসতি স্থাপন।

এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, এই ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে আরব বিশ্বের ক্ষোভ এতটাই ব্যাপক যে এ অঞ্চলের ‘মধ্যপন্থি’ সরকারগুলোর (যেমন-জর্ডান, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো ইত্যাদি) পক্ষেও, যারা ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছে বা রাখতে চায়, নীরব থাকা কঠিন।

হেনরি কিসিঞ্জার মৃত্যুর কিছুদিন আগে তার শেষ সাক্ষাৎকারে ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান’ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। কারণ গাজার যুদ্ধের পর অনিরাপদ প্রতিবেশীদের সঙ্গে ইসরাইল যে পরবর্তী বিপদের সম্মুখীন হবে, তিনি তা অনুধাবন করেছিলেন। তার মতে, ইসরাইলের দক্ষিণের প্রতিবেশী (গাজার হামাসের মতো) এবং উত্তরের প্রতিবেশী (লেবাননের হিজবুল্লাহর মতো) উভয়েই পূর্বদিকের শত্রুরাষ্ট্র (ইরানের মতো) দ্বারা সমর্থিত। কিন্তু কিসিঞ্জার তার ইহুদিবাদকে এর ‘মূল কারণ’ স্বীকার করতে অনীহ ছিলেন।

যতক্ষণ না ইসরাইল এবং তার প্রধান সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্বরতার এ আত্মঘাতী নীতি পরিত্যাগ করবে (উপরে পাঁচটি যুদ্ধাপরাধে দেখানো হয়েছে), ততক্ষণ এ অঞ্চলে শান্তি আসবে না। ফলে ইসরাইল ‘বিপজ্জনকভাবে’ (অথবা এই যুদ্ধের পর আরও বেশি ঝুঁকির মাঝে) বেঁচে থাকবে। প্রশ্ন হলো, এ অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা কি ইসরাইল সত্যিই চায়?

ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দ্বারা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন (উপরে পাঁচটি যুদ্ধাপরাধে দেখানো হয়েছে) মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এখন আরও বেশিসংখ্যক দেশ ইসরাইলের বর্বরতার বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ প্রকাশ করছে, যা প্রায়ই হয়ে ওঠে ইহুদি-বিদ্বেষ। এটি বিশ্বজুড়ে ইহুদিদের জীবন বিপন্ন করে তুলতে পারে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশ নানাভাবে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, শুধু লাতিন আমেরিকাতেই চিলি, কলম্বিয়া ও হন্ডুরাস ইসরাইল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও মেক্সিকো ইসরাইলি বর্বরতার নিন্দা করেছে। কিউবা, নিকারাগুয়া ও ভেনিজুয়েলা বহু দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলের আচরণের সমালোচনা করে আসছে। এবং বলিভিয়া ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক সম্পূর্ণ ছিন্ন করেছে।

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধাবসানের প্রতি বিশ্বব্যাপী সমর্থনের একটি শক্তিশালী প্রকাশ দেখা গেল ১২ ডিসেম্বর। এদিন গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বাত্মক ভোট পড়ে। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৫৩ সদস্য, বিপক্ষে ভোট দেয় ১০ সদস্য (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলসহ) এবং ভোটদানে বিরত থাকে ২৩ সদস্য। এটি এই ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বাকি বিশ্ব থেকে ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ইঙ্গিতবাহী। মাত্র কয়েকদিন আগে (৮ ডিসেম্বর) অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ার পর সাধারণ পরিষদের এই ভোটটি এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের এই ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতা বিশ্বজুড়ে ইহুদি-বিদ্বেষের একটি উদ্বেগজনক ঢেউয়ের ইঙ্গিত দেয়।

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দ্বারা সংঘটিত পাঁচটি যুদ্ধাপরাধের প্রতিক্রিয়ায় ইহুদি বিরোধিতার এই নতুন প্রবণতায় বিশ্বজুড়ে ইহুদি বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা এখন ভয়ের মধ্যে বাস করছে। ইসরাইল কি সত্যিই এটা চায়? নাকি দীর্ঘমেয়াদে সারা বিশ্বের ইহুদিদের মঙ্গল চায়? (সংক্ষেপিত)

প্রাভদা নিউজ থেকে ভাষান্তরিত

ড. পিটার বাওফু : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লেখক

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম