Logo
Logo
×

বাতায়ন

মিঠে কড়া সংলাপ

স্বীকার করছেন, ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন?

Icon

ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্বীকার করছেন, ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন?

দিনের পর দিন সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। বিশেষ করে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষসহ সীমিত আয়ের চাকরিজীবীদের পরিবারের সদস্যরা ভীষণ অসুবিধায় পড়েছেন; এ শ্রেণির মানুষের এখন নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এ অবস্থাতেও দুর্দশাকবলিত মানুষের কথা না ভেবে অতি মুনাফালোভী একশ্রেণির ব্যবসায়ী দেদার তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ মুহূর্তে তারা আলু নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে কারসাজি শুরু করেছে। আর সময়ে সময়ে সুযোগ পেলেই এভাবে তারা গরিব মানুষের পকেট কেটে চলেছে। উল্লেখ্য, দেশে উৎপাদিত আলু গরিব মানুষের একটি সাধারণ খাদ্য হিসাবে বিবেচিত। কারণ, ধনী তথা মেদবহুল শ্রেণির মানুষ সাধারণত আলুকে এড়িয়ে চলেন। আলুতে যে কার্বহাইড্রেট এবং ফ্যাট থাকে, তাতে মেদবহুল মানুষের আরও মেদ হওয়ার আশঙ্কা থাকায় উপরতলার একশ্রেণির মানুষ আলু তেমন একটা খান না বলেই মনে হয়। আর সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশে আলুকে মধ্যবিত্ত এবং গরিবের খাদ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং প্রধান খাদ্যশস্য চালের পরই তারা আলুর দিকে হাত বাড়ান। তাছাড়া একসময়ের গরিবের আমিষ বা গোশত হিসাবে বিবেচিত ডালের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় গরিব মানুষের খাদ্য তালিকায় আলুর প্রাধান্য আরও বেশি করে বেড়ে গেছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও এখন বিপত্তি দেখা দিয়েছে; কারণ, ডিমের পর এবার আলু ব্যবসায়ীরাও সিন্ডিকেট সৃষ্টির মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে আলুর মূল্যবৃদ্ধি করে ফেলেছে।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশের একশ্রেণির ব্যবসায়ী ব্যবসার নামে যা করেন, তাকে ব্যবসা না বলে অর্থ উপার্জনের একটি নিকৃষ্ট বা হীনপন্থা বললেও কম বলা হয়। কারণ, ব্যবসার নামে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তারা নিজেদের ফায়দা লুটে নেন। ইতোমধ্যে তারা সিন্ডিকেট তৈরি করে ডিমের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে বেশ কয়েকবার ফায়দা লুটে শতকোটি টাকার অতিরিক্ত মুনাফা পকেটে ঢুকিয়েছে। আর সে অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিদেশ থেকে ডিম আমদানির হুমকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা ডিমের মূল্য কিছুটা কমিয়ে দেয়।

কিন্তু এভাবে আর কতদিন এ শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? কারণ, তারা যদি দিনরাত অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনের ধান্ধাবাজিতে লিপ্ত হয়ে দেশের মানুষকে প্রতারিত করার মাধ্যমে টাকা রোজগার করে নিজেদের ধনভাণ্ডার স্ফীত করে চলে, তাহলে তো তাদের এসব কর্মকাণ্ডে লাগাম টানার জন্য সরকারের তরফ থেকেও একটি জুতসই এবং টেকসই প্রক্রিয়া বা প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন। আর শুধু টিসিবিকে দিয়েও তা সম্ভব নয়। কারণ, টিসিবির পক্ষে ডিম বা আলু এ জাতীয় পণ্যের বিপণন সম্ভব নয়। চাল, ডাল, তেল এসব ক্ষেত্রে টিসিবি কিছুটা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় এমন অনেক দ্রব্য আছে, যেসব ক্ষেত্রে টিসিবির করণীয় কিছু নেই।

এ অবস্থায় একশ্রেণির ব্যবসায়ীরূপী বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কাজটি করার জন্য, তথা দেশের মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরও উন্নত পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আরও স্মার্ট হতে হবে। আর একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার নীতিতে যেহেতু সরকারি কর্মকাণ্ড এগিয়ে চলেছে, সুতরাং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলে চলবে না। অসৎ ব্যবসায়ী চক্রের হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সব সময় এক ধাপ এগিয়ে থাকতে হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কাজটি করতে হবে। যে কোনো একটি ভোগ্যপণ্য নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সক্রিয় হওয়ার আগেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যদি বিষয়টি আঁচ করতে পারে এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, তাহলে অসাধু সিন্ডিকেট চক্র সুবিধা করতে পারবে না। আর সে অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেও আমরা স্মার্ট বলতে পারব।

এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের এমন অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চাই, দেশের সাধারণ মানুষকে অসৎ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারের কার্যকর ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। কারণ, অসৎ ব্যবসায়ী চক্র সংগঠিত অবস্থায় অসংগঠিত জনগণের ঘাড়ে কাঁঠাল ভেঙে খাচ্ছে, আর তাদের অতি মুনাফালোভী চরিত্রের কারণে জনগণ উপযুক্ত বা কাঙ্ক্ষিত মূল্যে দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারছেন না। সারাদিন বা মাস শেষের পারিশ্রমিক, পারিতোষিকের সম্পূর্ণ অংশই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর পেছনে ব্যয় করতে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের থলিতে ফেলতে হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে তারা যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছেন, সে তুলনায় পণ্যসামগ্রী ঘরে নিতে পারছেন না। অর্থাৎ সিন্ডিকেটের মারপ্যাঁচে তাদের ব্যয় করা অর্থের মূল্য আরও বিশ-পঁচিশ শতাংশ কমে যাচ্ছে। আর এ দুর্দিনে তাদের অর্থ এভাবে চোরা পথে হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জনসাধারণের বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে; বিশেষ করে নিম্নবিত্ত এবং দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।

লেখাটির উপসংহার টেনে আরও বলতে চাই, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসংক্রান্ত সিন্ডিকেট নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে যতটা চিনি এবং জানি, তাতে মনে করি, তিনি একজন অত্যন্ত ভদ্রশ্রেণির সজ্জন ব্যক্তি। সুতরাং, তার সদিচ্ছার বিষয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই বা থাকা উচিতও নয়। কিন্তু তার ভদ্রতা বা সজ্জন চরিত্রের কারণে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে সিন্ডিকেট বারবার ফায়দা লুটুক সে বিষয়টি কাম্য নয়। একজন প্রতিমন্ত্রীও আছেন, যিনি একশ্রেণির ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন এবং পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা-ও ভয়াবহ! সুতরাং, বাণিজ্যমন্ত্রী তথা সরকারের উদ্দেশে সবশেষে বলতে চাই, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে আমরা বাজারে যেসব ক্ষেত্রে অযৌক্তিক অগ্নিমূল্যের সম্মুখীন হই, সেসব ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট আছে। সুতরাং, সিন্ডিকেটের হাত থেকে আমাদের কে রক্ষা করবেন-সেটাই এখন একটি মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন।

ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম